পরীক্ষায় পাস না করেও তদবিরে পোষ্য কোটায় ভর্তি
Published: 11th, February 2025 GMT
সম্প্রতি কোটাবিরোধী আন্দোলনের ফলে পোষ্য কোটা বাতিল করেছে রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। তবে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) এখনো বহাল রয়েছে।
ন্যূনতম পাস নম্বর পেলেই প্রতি বছর চরম বৈষম্যমূলকভাবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছেন পোষ্য কোটাধারীরা। অতীতে ন্যূনতম পাস নম্বর না পেয়েও ভর্তি হওয়ার রেকর্ড রয়েছে। ফলে ভর্তি হওয়া এসব শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অযোগ্যতার ভারে পরবর্তীতে একাডেমিক ক্ষেত্রেও বিপাকে পড়তে হয় এসব শিক্ষার্থীদের। এতে সেশনজটের মতো নানা একাডেমিক বিপত্তি সৃষ্টি ও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সেশনজট নিরসনে মানবিক দিক বিবেচনায় এসব কোটাধারীদের পাস করিয়ে দেন শিক্ষকরা।
এজন্য গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটির (জিএসটি) কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে এ কোটা বাতিল না করা হলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
জানা গেছে, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম ৩০ নম্বর পেলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ রাখা হয়।এছাড়া ইবির ডি ইউনিটের পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস মার্ক ২৪ নম্বর রাখা হয়। ফলে অন্য বছরের ন্যায় এ বছরও ২৪ ও ৩০ নম্বর পেয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন ২৩ জন পোষ্য। এভাবেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতি বছর ২০ থেকে ২৫ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি নিচ্ছে ইবি প্রশাসন।
এমনকি ন্যূনতম পাস মার্ক না থাকলে ভর্তি কমিটির সভা করিয়ে নম্বর আরো কমিয়ে নিজেদের সন্তানদের ভর্তি করানোর অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। ভর্তি কমিটির মিটিং বসিয়ে জোরপূর্বক শর্ত শিথিল করা ও পাস না করেও শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানোর অভিযোগ করেছেন খোদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই।
শর্ত শিথিলের জন্য বিগত প্রশাসনের আমলে এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড.
২০২৩-২৪ বর্ষে পোষ্য কোটায় ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের তথ্য পর্যালোচনা করে চরম বৈষম্যমূলক চিত্র দেখা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক শাখা ও আইসিটি সেলের তথ্য মতে, ২০২৩-২৪ সায়েন্স বিভাগ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর মেরিট পজিশন ছিল ১৮ হাজার ৭৫২তম (গুচ্ছ পরীক্ষার পজিশন)। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হয়েছেন।
অন্যদিকে, একই বিভাগ থেকে ৪৮ হাজার ৫৯৮তম পজিশনে থেকেও পোষ্য কোটায় প্রথম সারির ‘আইসিটি’তে ভর্তি হয়েছেন আরেক শিক্ষার্থী। এছাড়া মানবিক বিভাগ থেকে সর্বশেষ ৬ হাজার ১৩তম পজিশন নিয়ে ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হয়েছেন এক শিক্ষার্থী। অন্যদিকে আরেক শিক্ষার্থী ২৬ হাজার ৮১২তম পজিশন নিয়েও পোষ্য কোটায় আইন বিভাগে ভর্তি হয়েছেন।
এছাড়া বাণিজ্য বিভাগ থেকেও সর্বশেষ ৫ হাজার ৬৬তম পজিশন নিয়ে ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হয়েছেন এক শিক্ষার্থী। অন্যদিকে ১৯ হাজার ৩০০তম পজিশন নিয়েও পোষ্য কোটায় হিউম্যাস রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ভর্তি হয়েছেন আরেক শিক্ষার্থী। এমনকি অন্য সব কোটার তুলনায়ও সর্বনিম্ন মার্ক নিয়ে পোষ্য কোটায় ভর্তি হতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের।
ভর্তি হওয়া এসব শিক্ষার্থীরা যোগ্যতার কারণে একাডেমিক কার্যক্রমে বেগ পোহাতে হয় বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক বিভাগের সভাপতি।
তারা জানান, কোটায় ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের গুটিকয়েক একাডেমিক রেজাল্ট ভালো করলেও অনেকের একাডেমিক পথচলা ভালো হয় না। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সারির বিভাগগুলোর ক্ষেত্রে এমনটি দেখা যায়। কেউ কেউ রিটেক পরীক্ষা দিয়েও পাশ করতে পারেন না। পরবর্তীতে মানবিক দিক বিবেচনা করে শিক্ষকরা তাদের পাস করিয়ে দেন।
দীর্ঘদিন ধরে পোষ্য কোটাকে মেধার অবহেলা ও বৈষম্যমূলক আচরণ আখ্যা দিয়ে আসছেন শিক্ষার্থীরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইবি শাখার সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, “এ পদ্ধতি ২৪ এর জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফলাফলের পরিপন্থি। ২৪ ও ৩০ পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি চরম বৈষম্যমূলক। আমরা অনতিবিলম্বে এ কোটা বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।”
তিনি বলেন, “জিএসটি কেন্দ্রীয়ভাবে পোষ্য কোটা রাখা না রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে, সেদিন পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করছি। যদি পোষ্য কোটা বাতিল না করা হয়, তাহলে সেদিন থেকেই আমরা আন্দোলন গড়ে তুলব। এমন বৈষম্যমূলক নীতিকে কোনভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।”
শিক্ষকদের অবস্থানের বিষয়ে ইবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, “এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে।”
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, “গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কেন্দ্রীয় সভা পোষ্য কোটা না রাখার বিষয়ে সুপারিশ ও প্রস্তাব এসেছে। তবে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। যদি জিএসটি না রাখার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে আমরাও বাতিল করে দেব।”
ঢাকা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন য নতম প স এক ড ম ক হয় ছ ন পর ক ষ
এছাড়াও পড়ুন:
অন্য বছরের চেয়ে এই জুনে ডেঙ্গু বেশি
জুন মাসের মাঝামাঝি আসতেই এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে। ২০২৩ সালের মধ্য জুনে পরিস্থিতি এমন হয়নি। সে বছর বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। মৃত্যুও সবচেয়ে বেশি ছিল।
গতকাল শনিবার আরও ১৬৯ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম। আরও একজনের মৃত্যুর কথাও বলেছে। এই নিয়ে এ বছর ১ জানুয়ারি থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত সারা দেশে ৫ হাজার ৫৩৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আর মারা গেছেন ২৯ জন।
গত বছর এই সময়ে অর্থাৎ ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৩ হাজার ১৯৩ জন ভর্তি হয়েছিলেন। এই সময়ে ডেঙ্গুতে মারা গিয়েছিলেন ৩৯ জন।
এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯। আর মারা গিয়েছিলেন ১ হাজার ৭০৫ জন। ওই বছর ১ জানুয়ারি থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত
হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৮০২। আর ওই সময়ের মধ্যে মারা গিয়েছিলেন ২৮ জন।
সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, তিন বছরের মধ্যে এ বছরের জুনে রোগীর সংখ্যা বেশি। প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি রোগী বাড়ছে।
ঢাকা মহানগরে কমঅন্য প্রায় সব বছরে দেখা গেছে, ডেঙ্গু প্রকোপ প্রথমে ঢাকা শহরে বা দেশের বড় শহরগুলোতে দেখা দেয়। এরপর তা ক্রমান্বয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এ বছর দেখা যাচ্ছে, বেশি রোগী ঢাকা শহরের বাইরে, বিশেষ করে বরিশাল বিভাগে। এর মধ্যে বরগুনা জেলায় রোগী বেশি। দেশের দক্ষিণের এই জেলায় এ পর্যন্ত ১ হাজার ৬০৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। অন্যদিকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৩৫০ জন।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক মো. হালিমুর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বরগুনা শহরে ডেঙ্গু বেশি হওয়ার তিন কারণ আমরা আপাতত শনাক্ত করতে পেরেছি। পৌর কর্তৃপক্ষ মশা নিধনে কোনো কাজ করেনি। শহরে জলাবদ্ধতা আছে। এ ছাড়া মানুষ বৃষ্টির পানি ধরে রাখে। এগুলো মশার বংশ বৃদ্ধিতে সহায়ক।’