সাত ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন, ব্যয় হবে ১২৫৫ কোটি টাকা
Published: 11th, February 2025 GMT
আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ৫০ হাজার মেট্রিক টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল, ৬০ হাজার মেট্রিক টন সার, এক কার্গো এলএনজি আমদানিসহ সাত ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ২৫৫ কোটি ৩৬ লাখ ১৬ হাজার ৯১৬ টাকা।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে কমিটির সভায় প্রস্তাবগুলোতে অনুমোদন দেওয়া হয়। কমিটির চেয়ারম্যান অর্থ উপদেষ্টা ইতালিতে একটি সম্মেলনে যোগ দেওয়ায় তার অনুপস্থিতিতে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড.
সভা সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে টিএসপিসিএলের জন্য ৩০ হাজার মেট্রিক টন রক ফসফেট আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রতি মেট্রিক টন রক ফসফটের দাম ২২৮.৫০ মার্কিন ডলার হিসেবে ৩০ হাজার মেট্রিক টন কিনতে ব্যয় হবে ৮২ কোটি ২৬ লাখ টাকা। মেসার্স জেনট্রেড এফজেডই, ইউএই এসব রক ফসফেট সরবরাহ করবে।
রাশিয়া ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় অষ্টম লটের ৩০ হাজার মেট্রিক টন এমওপি সার আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রতি মেট্রিক টন এমওপি সারের দাম ২৯৪.৫০ মার্কিন ডলার হিসেবে মোট ব্যয় হবে ১০৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে প্যাকেজ-০৭ এর আওতায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল কেনার প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রতি মেট্রিক টন চালের দাম ৪৩৪.৭৭ মার্কিন ডলার হিসেবে ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানিতে ব্যয় হবে ২৬৫ কোটি ২০ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। সিঙ্গাপুরভিত্তিক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স অ্যগ্রোকরপ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড এসব চাল সরবরাহ করবে।
সভায় ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮’ অনুসরণে আন্তর্জাতিক কোটেশন সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় স্পট মার্কেট থেকে এক কার্গো এলএনজি কেনার প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রতি এমএমবিটিইউ গ্যাসের দাম ১৬.৭৭৫০ মার্কিন ডলার হিসেবে এক কার্গো এলএনজি আমদানিতে ব্যয় হবে ৭৭৯ কোটি ৩৯ লাখ ৭৮ হাজার ৬৯২ টাকা। সংযুক্ত আরব আমিরাতের মেসার্স ওকিউ ট্রেডিং লিমিটেড এসব এলএনজি সরবরাহ করবে।
কাতার এনার্জি এলএনজি এস (৩) এবং ওকিউ ট্রেডিং লিমিটেড (ওকিউটি) থেকে এলএনজি আমদানির ক্ষেত্রে লেট পেমেন্ট চার্জেস ইনভয়েসগুলোর ক্যালকুলেশনের জন্য সেলস অ্যান্ড পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্টে (এসপিএ) উল্লেখ করা লাইবরের স্থলে সফর ব্যবহারের লক্ষ্যে খসড়া অ্যামেন্ডমেন্ট-সংক্রান্ত পৃথক দুটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘ডিজাস্টার রিস্ক ম্যানেজমেন্ট এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট’এর আওতায় এর চুক্তির ভেরিয়েশনজনিত একটি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পের চুক্তিমূল্য ছিল ৫০ কোটি ৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৭৬ টাকা। চুক্তির বাইরে বেশকিছু অতিরিক্ত কাজ হওয়ায় অতিরিক্ত ২০ কোটি ৭০ লাখ ৭১ হাজার ২২৪ টাকা ব্যয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ফলে, প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৭০ কোটি ৭৫ লাখ ২২ হাজার টাকা।
এর আগে পরিকল্পনা উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অথনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে আটটি বিভাগীয় শহরে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য বিক্রির নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।
ঢাকা/হাসনাত/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হ জ র ম ট র ক টন ৫০ হ জ র উপদ ষ ট সরবর হ কম ট র আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
পাবনায় আগাম পাটের বাজার চড়া, বেশি দাম পেয়ে কৃষক খুশি
সপ্তাহ দুয়েক ধরে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বাজারগুলোতে নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে। গত বছরের তুলনায় এবার মণপ্রতি প্রায় এক হাজার টাকা বেশি দামে পাট বিক্রি করছেন কৃষকেরা। এ ছাড়া এবার পাটের ফলন যেমন ভালো হয়েছে, পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় জাগ দেওয়ার জন্য পানির অভাবও হয়নি। সব মিলিয়ে এবার পাটচাষিরা বেশ খুশি।
গত বছরের শুরুতে নতুন পাট বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৯০০ টাকা মণ দরে। এবার কৃষকেরা নতুন পাট বিক্রি করছেন মণপ্রতি ৩ হাজার ৭০০ থেকে ৩ হাজার ৮০০ টাকায়। এবার প্রতি মণে বাড়তি পাওয়া যাচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা।
উপজেলার আমাইকোলা গ্রামের কৃষক আরশেদ আলী বলেন, ‘এবার পাটের ফলনও ভালো হইছে, আবার দামও ভালো পাত্যাছি। এবার নতুন পাট বেইচ্যা মণে হাজার বারো শ টাকা লাভ পাত্যাছি। তয় এমন ভালো দাম কয়দিন থাকে কিডা জানে।’
উপজেলা কৃষি কার্যালয় ও স্থানীয় কয়েকজন কৃষকের সূত্রে জানা যায়, সাঁথিয়া উপজেলায় এবার ৭ হাজার ৮৪৫ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়ায় এবার প্রতি বিঘায় গড়ে ৯ মণ ফলন পাওয়া গেছে। এ ছাড়া গত বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় পাট জাগ দেওয়া নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন কৃষকেরা। কিন্তু এবার পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় তেমন পরিস্থিতি হয়নি।
তবে কৃষকদের অভিযোগ, গত বছরের তুলনায় এবার পাটের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। বিশেষ করে এবার শ্রমিক প্রতি খরচ বেশি পড়েছে। গত বছর দৈনিক ৭০০ টাকা মজুরিতে শ্রমিক পাওয়া গেছে; কিন্তু এবার পাট কাটা, জাগ দেওয়া ও ছাড়ানো বাবদ শ্রমিকপ্রতি দৈনিক ৮০০-৯০০ টাকা মজুরি দিতে হচ্ছে। এতে গত বছরের তুলনায় এবার পাট চাষের খরচ প্রতি মণে দেড় থেকে দুই শ টাকা বেড়েছে। গত বছর যেখানে প্রতি মণ পাটের উৎপাদন খরচ আড়াই হাজার টাকার কাছাকাছি ছিল এবার তা বেড়ে ২ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকা হয়েছে।
সোমবার সাঁথিয়ার করমজা চতুরহাটে সাপ্তাহিক পাটের হাট বসেছিল। এই হাটসহ উপজেলার বিভিন্ন হাটে দুই সপ্তাহ ধরে পাটের কেনাবেচা হচ্ছে। যেসব কৃষক মৌসুমের শুরুর দিকে পাটের আবাদ করেছিলেন, তাঁরাই আগে ভাগে এসব বিক্রি করতে পারছেন। ফলে হাটগুলোতে চোখে পড়ার মতো পাটের সরবরাহ হয়নি।
করমজা চতুরহাটে গতকাল পাট কিনতে যান উপজেলার চোমরপুর গ্রামের ব্যবসায়ী আবু তালেব। তিনি বলেন, এখন যত দিন যাবে, হাটে পাটের সরবরাহ ততই বাড়বে। তবে মৌসুমের শুরু হিসেবে হাটে মোটামুটি ভালোই পাটের সরবরাহ দেখা যাচ্ছে। সপ্তাহখানেক আগে পাটের দাম (মণপ্রতি) ৩ হাজার ৯০০ টাকায় উঠেছিল। সেই তুলনায় গতকালের হাটে মণে এক থেকে দেড় শ টাকা কমেছে। এর পরও যে দামে পাট বিক্রি হচ্ছে, তাতে কৃষক খুশি মনে বাড়ি ফিরছেন।
তবে আগামী দিনে সরবরাহ বাড়লে পাটের দাম পড়ে যাবে কি না, এমন আশঙ্কায় আছেন কৃষকেরা। শহীদনগর গ্রামের কৃষক সাদ্দাম হোসেন, ছেঁচানিয়া গ্রামের আলতাফ হোসেনসহ পাঁচ-ছয়জন কৃষক জানান, বর্তমান দামে কৃষক খুশি হলেও আগামী দিনগুলোতে সরবরাহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দাম কমে যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় আছেন। এখন বেশির ভাগ কৃষকই অল্প অল্প করে পাট কেটে সেই পাট জাগ দিয়ে ও শুকিয়ে বাজারে আনছেন। বাকি পাট বাজারে আনতে আরও দুই থেকে তিন সপ্তাহ লাগবে। অনেকের আবার এর চেয়েও বেশি দেরি হবে।
কৃষক ভালো দাম পেলে আরও বেশি জমিতে পাট চাষে আগ্রহী হবেন জানিয়ে সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, ‘আবহাওয়া, ফলন ও দাম অনুযায়ী এবার কৃষক পাট চাষে লাভজনক অবস্থায় আছেন। আমাদের হিসাবে বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী প্রতি মণে কৃষকের ১ হাজার ২০০ টাকার বেশি লাভ হচ্ছে। তবে এখনো হাটে পাটের সরবরাহ পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। তিন-চার সপ্তাহ পরে সরবরাহ স্বাভাবিক হলে বোঝা যাবে দাম কোথায় গিয়ে দাঁড়াল।’