যেসব কারণে ম্যানসিটির কাছে হারতে পারে রিয়াল
Published: 11th, February 2025 GMT
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোয় যাওয়ার প্লে অফে আজ রাত ২টায় মুখোমুখি হবে ম্যানচেস্টার সিটি ও রিয়াল মাদ্রিদ। ম্যাচটি ম্যানসিটির মাঠ ইতিহাদে হবে। দুই লেগের প্লে অফে যারা হারবে গ্রুপ পর্বেই বিদায় লেখা হবে তাদের।
কাগজে-কলমে পেপ গার্দিওলার অধীনে সবচেয়ে বাজে বছর কাটাচ্ছে ম্যানসিটি। রদ্রির চোটে নাজেহাল দলটি। প্রিমিয়ার লিগ শিরোপার লড়াই থেকে একপ্রকার ছিটকে গেছে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্লে অফে এসেছে খুব কষ্টে গ্রুপের শেষ ম্যাচে জিতে।
রিয়াল মাদ্রিদের মৌসুম যাচ্ছে ভালো-খারাপের মিশেলে। লিগ টেবিলে শীর্ষে আছে তারা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্বে এসি মিলান ও লিভারপুলের বিপক্ষে হেরে সেরা আট নিশ্চিত করে সরাসরি শেষ ষোলোয় যেতে পারেনি গত আসরের চ্যাম্পিয়নরা। বার্সার কাছে বিধ্বস্ত হয়েছে সুপার কাপের ফাইনালে।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্লে অফের প্রথম লেগে তাই চাপে থাকবে দু’দলই। রিয়াল মাদ্রিদ শক্তির বিচারে কিছুটা এগিয়ে থাকলেও প্রথম লেগে ম্যানসিটির মাঠে হারের স্বাদ পেতে পারে।
তার অন্যতম কারণ দলটির ডিফেন্ডারদের ইনজুরি। এদের মিলিতাও মৌসুমের শুরুতে ইনজুরিতে পড়েছেন। অ্যান্তোনিও রুডিগার রিয়ালের রক্ষণভাগের ত্রাতা ছিলেন। তিনিও ইনজুরিতে। লম্বা সময় পর মাঠে ফিরেই আলাবা আবার ছিটকে গেছেন। ম্যানসিটির বিপক্ষে রিয়ালের একমাত্র বিশেষজ্ঞ সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার রাউল অ্যাসেনসিও। যার বয়স মাত্র ২১ বছর। রিয়ালের জার্সিতে খেলার অভিজ্ঞতা মাত্র ৪ মাসের।
চুঁয়ামেনিকে দিয়ে রিয়াল কোচ আনচেলত্তি সেন্ট্রাল ডিফেন্সের দায়িত্ব পালন করালেও ফ্রান্স মিডফিল্ডার এখন পর্যন্ত ব্যর্থই। রিয়ালের ফুলব্যাকরাও আছেন ইনজুরিতে। সব মিলিয়ে ‘রক্ষণহীন’ দল নিয়ে ম্যানসিটির মাঠে খেলা সহজ হবে না ব্লাঙ্কোসদের।
অন্য একটি কারণ ভিনিসিয়াস জুনিয়রের ফর্ম। ভিনি গত ১০ ম্যাচের ৮টিতে গোল পাননি। গত নভেম্বরের পর লিগে গোল নেই তার নামের পাশে। এমবাপ্পে ফর্মে ফিরতেই যেন হারিয়ে গেছেন ব্রাজিলিয়ান তারকা। দু’বার করে ইনজুরি পড়েই হয়তো ছন্দ হারিয়েছেন তিনি।
রিয়াল চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত বড় ম্যাচে ফ্লপ করেছে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে লিভারপুল ও এসি মিলানের বিপক্ষে হার এবং লা লিগায় বার্সার বিপক্ষে প্রথম লেগে ৪-১ গোলের হার ও সুপার লিগে ৪-০ গোলের হার সেটাই প্রমাণ করে। ম্যানসিটির বিপক্ষেও ‘বড় ম্যাচ ভীতি’ পেয়ে বসলে পার পাবে না ব্লাঙ্কোসরা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইনজ র
এছাড়াও পড়ুন:
লবণ শ্রমিকদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়
“প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে কাজ করি। লবণ তুলি, বস্তা ভরি। কিন্তু যে মজুরি পাই, তা দিয়ে এক বেলার চাল-ডালও কেনা যায় না। লবণ চাষের কাজ করলেও আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়।”
এ কথা কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার তাবলেরচর এলাকার লবণ শ্রমিক জাহেদ আলমের। হাজারো লবণ শ্রমিক দিনভর কড়া রোদে ঘাম ঝরালেও মিলছে না ন্যায্য মজুরি। নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন জাহেদ আলমের মতো শত শত লবণ শ্রমিক।
উত্তর ধুরুংয়ের লবণ চাষি রশীদ আহমদ বলেন, “এবার সাড়ে ৫ কানি জমিতে লবণ চাষ করেছি। এই বছর আবহাওয়া ভালো ছিল, উৎপাদনও হয়েছে। কিন্তু দাম পড়ে যাওয়ায় আমরা লোকসানে যাচ্ছি। প্রতিমণ লবণের উৎপাদন খরচ পড়ে ৩৫০ টাকার মতো, অথচ বিক্রি হচ্ছে ১৮০-১৮৫ টাকায়। এই লোকসান শ্রমিকদের মজুরিতেও প্রভাব পড়েছে।”
তিনি জানান, মজুরি দিতে না পারায় একদিকে শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অন্যদিকে চাষিরাও হতাশ হয়ে পড়ছেন।
আরমান হোসেন নামে আরেক শ্রমিক বলেন, “লবণের কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। লবণের দাম কম পেলেই চাষিরা আমাদের পারিশ্রমিকের ওপর লোকসান চাপিয়ে দেয়। এতে আমরা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হই। এই অনিয়ম দূর হোক।”
চাষিরা বলছেন, একদিকে জমির ইজারা, পলিথিন, লবণ পরিবহন, শ্রমিক মজুরি-সব খরচ বেড়েছে। অন্যদিকে বাজারে সিন্ডিকেট করে দাম নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রতি মণ লবণে তারা ১৭০ টাকার মতো লোকসান গুণছেন। এই লোকসানের কারণে লবণ শ্রমিকরাও দিশেহারা হয়ে পড়ছেন।
লেমশীখালীর চাষি বেলাল উদ্দিন আকাশ বলেন, ‘‘গত বছর এই সময় প্রতি মণ লবণ বিক্রি করেছি ৪৫০ টাকায়। এখন পাই ১৮৫ টাকা। এতে শ্রমিকের মজুরি দিতেও আমরা হিমশিম খাচ্ছি।”
চাষি আবুল বশর ও সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘সিন্ডিকেট করেই দাম নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে যাতে লবণ উৎপাদন কমে যায়। পরে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করার সুযোগ তৈরি হয়। অথচ এতে মাঠের হাজারো শ্রমিকের জীবিকা হুমকির মুখে পড়ছে।”
মহেশখালী লবণ চাষি ঐক্য সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘‘মজুরি না পেয়ে অনেক শ্রমিক লবণের মাঠ ছাড়ছেন। এইভাবে চলতে থাকলে শ্রমিক সংকট হবে।”
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) কক্সবাজার লবণশিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, “চাষিদের ন্যায্য দাম না পাওয়ার কারণে উৎপাদনে অনীহা দেখা দিচ্ছে। এর ফলে শ্রমিকদেরও চাহিদা কমে যাচ্ছে। বাজারে দাম কমে যাওয়ার পেছনের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে কক্সবাজার জেলার সদর, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, টেকনাফ এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় প্রায় ৬৮ হাজার একর জমিতে লবণ চাষ হচ্ছে। গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এসব অঞ্চলে উৎপাদিত হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন লবণ। মৌসুম শেষে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন, যা দেশের বার্ষিক চাহিদার সমান।