শিল্প খাতে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারের ওপর সারচার্জ বা সেবা মাশুল আরোপ করার বিষয়টি বিবেচনা করছে সরকার। একই সঙ্গে পানির পুনর্ব্যবহারে প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়টিও ভাবা হচ্ছে। এ উদ্দেশ্যে শিল্প খাতে পানির ব্যবহার অনুযায়ী শ্রেণিবিন্যাস করার কাজ চলছে। 
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীতে সাসটেইনেবল অ্যাপারেল ফোরাম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ কথা জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। রাজধানীর হোটেল র‍্যাডিসনে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জ (বিএই) এবং নেদারল্যান্ডস দূতাবাস। 
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এখন পর্যন্ত মাটির নিচের পানি ব্যবহার করতে সরকারকে কোনো টাকা-পয়সা দিতে হয় না। কারখানাগুলোয় ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারে কর বসানোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। এ ব্যাপারে একটি নীতিমালা তৈরির কাজ করছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। 
তিনি বলেন, শিল্পাঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমশ নিচে নেমে যাচ্ছে; যা স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করছে। পরিবেশ সচেতনতা থেকে আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক দু’পক্ষকেই টেকসই উন্নয়নে কাজ করতে হবে। একই সঙ্গে নবায়নযোগ্য ও টেকসই জ্বালানি উৎপাদনেও ব্যবসায়ী সমাজ এবং উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। 
আলোচনায় ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেন, বাংলাদেশ ও ইইউর মধ্যে অংশীদারিত্ব আরও শক্তিশালী ও বিকশিত হওয়া প্রয়োজন। পরিবেশসম্মত টেকসই উন্নয়নে ইইউর অব্যাহত সহযোগিতা দেওয়ার কথা জানান মিলার। 
নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের হেড অব মিশন এইচ.

ই. আন্দ্রে কার্স্টেনস বলেন, পরিবেশ সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সচেতনতা বাড়ানো, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলোকে মানসম্মত করা এবং সার্কুলারিটি ও ট্রেসেবিলিটি শক্তিশালী করতে বাংলাদেশের লক্ষ্যকে জোরালোভাবে সমর্থন করে তার দেশ।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় টেকসই পোশাক উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান তারা। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে সব পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। 
বিএইর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, টেকসই উন্নয়নে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সংযোগ স্থাপন এবং বিনিয়োগ বাড়ানোর সুযোগ তৈরির চেষ্টা করছেন তারা। এ উদ্যোগ অব্যাহত রাখা হবে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবহ র পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ