আগামী শনিবার দুপুরের মধ্যে জিম্মিদের ফেরত দেওয়া না হলে গাজায় যুদ্ধবিরতি বাতিল এবং সেখানে আবার তীব্র লড়াই শুরু হবে বলে হামাসকে সতর্ক করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি গাজার ভেতরে এবং আশপাশে ইসরায়েলি বাহিনীকে জড়ো হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নতুন করে কোনো জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া স্থগিত করেছে হামাস। সংগঠনটির এই ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় নেতানিয়াহু এই নির্দেশ দেন।

নেতানিয়াহু বাদবাকি ৭৬ জিম্মির মুক্তির দাবি করেছেন নাকি শনিবার যে তিনজনকে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল, তাঁদের মুক্তির দাবি করেছেন, তা স্পষ্ট করেননি তিনি। তবে এক মন্ত্রী বলেছেন, তিনি সবার মুক্তির কথা বোঝাতে চেয়েছেন।

গুরুত্বপূর্ণ মানবিক সাহায্য আটকে দেওয়াসহ নানাভাবে ইসরায়েল তিন সপ্তাহের পুরোনো যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ করেছে হামাস। যদিও এ দাবি অস্বীকার করেছে ইসরায়েল।

নেতানিয়াহুর বক্তব্যের পর হামাস বলেছে, তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং যেকোনো জটিলতা কিংবা বিলম্বের জন্য ইসরায়েল দায়ী।

হামাস এই সপ্তাহান্তে নির্ধারিত জিম্মিদের মুক্তি বিলম্বিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাব করেন, ইসরায়েল চুক্তিটি সম্পূর্ণভাবে বাতিল করা হবে এবং শনিবারের মধ্যে ‘সব জিম্মিকে’ ফিরিয়ে না দিলে গাজাকে নরকে পরিণত করা হবে।

গতকাল মঙ্গলবার ইসরায়েলের নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভার চার ঘণ্টার বৈঠকের পর নেতানিয়াহু একটি ভিডিও বিবৃতিতে বলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দাবিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘হামাসের চুক্তি লঙ্ঘন এবং আমাদের জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়ার সিদ্ধান্তের আলোকে গত রাতে আমি আইডিএফকে (ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী) গাজা উপত্যকার ভেতরে এবং চারপাশে জড়ো হওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।’

নেতানিয়াহু বলেন, যদি হামাস শনিবার দুপুরের মধ্যে আমাদের জিম্মিদের ফিরিয়ে না দেয়, তাহলে যুদ্ধবিরতি শেষ হয়ে যাবে। হামাসের চূড়ান্ত পরাজয় না হওয়া পর্যন্ত আইডিএফ পুনরায় তীব্র লড়াই শুরু করবে। তাঁর এই আলটিমেটাম মন্ত্রিসভায় সর্বসম্মতভাবে অনুমোদন পেয়েছে।

যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপ ছয় সপ্তাহ স্থায়ী হওয়ার কথা রয়েছে। এ সময় গাজার প্রায় ১ হাজার ৯০০ ফিলিস্তিনি বন্দীর বিনিময়ে মোট ৩৩ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে।

গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৬ জন জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। চুক্তির শর্তাবলির বাইরে হামাস পাঁচজন থাই জিম্মিকে হস্তান্তর করেছে।

বাকি ১৭ ইসরায়েলি জিম্মিকে আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে মুক্তি দেওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ২ শিশু, ১ নারী, ৫০ বছরের বেশি বয়সী ৫ পুরুষ এবং ৫০ বছরের কম বয়সী ৯ জন পুরুষ। উভয় পক্ষই জানিয়েছে, এই জিম্মিদের মধ্যে আটজন মারা গেছেন, তবে কেবল একজনের নাম প্রকাশ করা হয়েছে।

আরও পড়ুনট্রাম্পের বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যে কি গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছে১৩ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনহামাসের জন্য নরকের সব দরজা খুলে দেওয়ার সময় এসেছে: ইসরায়েলের মন্ত্রী১১ ঘণ্টা আগে

২০২৩ সালে ৭ অক্টোবর সীমান্ত অতিক্রম করে ইসরায়েলে ভয়াবহ হামলা চালায়। এতে সেখানে ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়। জিম্মি করা হয় ২৫১ জনকে। এ হামলার জবাবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হামাসকে ধ্বংস করতে গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় ৪৮ হাজার ২১০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।

গাজার বেশির ভাগ মানুষ একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। প্রায় ৭০ শতাংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা, পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি ভেঙে পড়েছে। খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ ও আশ্রয় সংকটে আছে গাজার মানুষ।

আরও পড়ুনজিম্মি-বন্দী বিনিময়ের দরজা খোলা আছে: হামাস১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র মন ত র ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ