স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, ন্যায়ভিত্তিক, সুসংহত ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনের জন্য নিরাপত্তা ও উন্নয়ন অপরিহার্য। আর এ নিরাপত্তা ও উন্নয়নে আনসার বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দেশের তৃণমূল প্রশাসনিক স্তর পর্যন্ত বিস্তৃত এ বাহিনী নিরাপদ সমাজ কাঠামো গঠন, মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সামাজিক উন্নয়ন কার্যক্রম জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়ে এ ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী অবদান রাখছে।

উপদেষ্টা আজ বুধবার সকালে গাজীপুরের সফিপুরে বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি একাডেমিতে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪৫ জাতীয় সমাবেশ-২০২৫-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। 

বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি। 

উপদেষ্টা বলেন, দেশ সেবার ব্রত নিয়ে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে অবদান অনস্বীকার্য। তিনি বলেন, এ বাহিনীর ৩৯টি পুরুষ আনসার ব্যাটালিয়ন, ২টি মহিলা আনসার ব্যাটালিয়ন, একটি বিশেষায়িত আনসার গার্ড ব্যাটালিয়ন (এজিবি) সহ মোট ৪২টি আনসার ব্যাটালিয়ন রয়েছে। তার মধ্যে ১৬টি আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্যরা দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় ‘অপারেশন উত্তরণ’-এ নির্ভরশীল সহায়ক শক্তি হিসেবে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দায়িত্ব পালন করছে। সামাজিক সম্প্রীতি ও অসাম্প্রদায়িক বন্ধন দৃঢ়কল্পে শারদীয় দুর্গাপূজাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে একীভূত হয়ে রাষ্ট্রের অর্পিত যেকোনো দায়িত্ব আস্থার সাথে পালন করে যাচ্ছে এ বাহিনীর সদস্যরা। 

লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো.

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেন, ভূমিদস্যু প্রতিরোধ, ভেজাল বিরোধী অভিযান ও মাদকমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর অতন্দ্র প্রহরী সদস্যরা। দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে ও বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখতে দেশের কূটনৈতিক মিশনসমূহে নিরাপত্তা প্রদানে এ বাহিনীর ভূমিকা দৃশ্যমান। এই বাহিনীর বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত আনসার গার্ড ব্যাটালিয়ন (এজিবি)-এর সদস্যরা কেপিআইসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা বিধানে ভূমিকা রাখছে। তাছাড়া দেশের অভ্যন্তরে প্রাকৃতিক এবং মানবসৃষ্ট সকল দুর্যোগে আনসার-ভিডিপি সদস্য-সদস্যরা মানবতার সেবায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।

উপদেষ্টা আরো বলেন, সামাজিক নিরাপত্তার পাশাপাশি তরুণ সমাজকে ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থান ও সামাজিক ব্যবসার আওতায় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে দেশের সর্ববৃহৎ এই বাহিনীর প্ল্যাটফর্ম কার্যকর ভূমিকা রাখছে। বাহিনীর গ্রামভিত্তিক মৌলিক প্রশিক্ষণকে আধুনিক সিলেবাস ও যুগোপযোগী নীতিমালার আওতায় আনা হয়েছে, যেখানে সর্ববৃহৎ স্বেচ্ছাসেবক অঙ্গ সংগঠন ভিডিপির ডাটাবেজের ডিজিটালাইজেশন ও নতুন অবকাঠামোর সংযোজন করা হয়েছে। তিনি বলেন, স্বল্প সময়ে দেশসেবার মৌলিক চেতনায় নবাগত তরুণদের উদ্বুদ্ধ করতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তরুণদের অগ্রাধিকার দিয়ে বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক)-সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিকল্পনাও এ বাহিনীর বিবেচনায় রয়েছে।

তিনি এসময় দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যাটালিয়ন আনসার, অঙ্গীভূত আনসার ও ভিডিপি সদস্য-সদস্যারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নতুন উদ্যমে দেশ সেবায় নিয়োজিত হওয়ার অনুপ্রেরণা পাবেন মর্মে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

সমাবেশ অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ১৮ জন কর্মকর্তা, কর্মচারী ও অন্যান্য পদবির সদস্য-সদস্যাদের মাঝে কৃতিত্বপূর্ণ ও প্রশংসনীয় কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পদক প্রদান করেন।

উল্লেখ্য, এ বছর সেবা ও সাহসিকতার ৪টি বিভাগে মোট ৮টি ক্যাটাগরিতে কর্মকর্তা, কর্মচারী, আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্য এবং অন্যান্য পদবির সদস্য-সদস্যাসহ সর্বমোট ১৫৬ জন পদকপ্রাপ্ত হয়েছেন।

পরে উপদেষ্টা আনসার একাডেমি প্রাঙ্গণে বৃক্ষরোপণ করেন, ফটোসেশনে অংশ নেন ও কুটিরশিল্প প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আনস র সদস য সদস য র সদস য উপদ ষ ট

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমল ৭৫ পয়সা

রাজশাহীতে হিমাগারে আলু সংরক্ষণে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ সোমবার আলুচাষি, ব্যবসায়ী ও হিমাগারমালিকদের উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, হিমাগারে প্রতি কেজি আলু রাখার জন্য ভাড়া দিতে হবে ৫ টাকা ৫০ পয়সা। এর সঙ্গে যুক্ত হবে শ্রমিকের খরচ ৫০ পয়সা। সেই হিসাবে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমেছে ৭৫ পয়সা।

এর আগে গত মার্চে সরকার প্রতি কেজি আলু রাখার ভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর পর থেকে এ নিয়ে রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা বাড়তি ভাড়ায় আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। এ নিয়ে কয়েক দফা তাঁরা রাজপথে আন্দোলনও করেছেন। অন্যদিকে হিমাগারমালিকদের দাবি ছিল, প্রতি কেজি আলুর ভাড়া ৮ টাকা করা হোক।

রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন এবং রাজশাহী জেলা আলুচাষি ও আলু ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজশাহীতে হিমাগার থেকে বাড়তি ভাড়া না দিলে আলু ছাড়া হবে না। এর প্রতিবাদে ঈদের পর নতুন করে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা আন্দোলন করে আসছেন। তাঁদের দাবি, আলু রাখার খরচ আগের বছরের মতো চার টাকা করতে হবে। এ নিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তাঁরা। হিমাগার মালিকপক্ষ এ নিয়ে আলোচনায় বসার তাগিদ দিয়ে আসছিল।

এরই মধ্যে আলুচাষিনেতারা ১৪ জুন সেনাবাহিনীর কাছে এ নিয়ে একটি অভিযোগ দেন। পরে বিষয়টি আমলে নিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আজ দুপুরে সভা ডাকা হয়। সভায় সব পক্ষের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয় যে এ বছর সরকার নির্ধারিত প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সার বদলে ৫ টাকা ৫০ পয়সা ও শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা রাখা হবে। আর পেইড বুকিংয়ের ক্ষেত্রে শুধু শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে আলু রাখা চাষি ও ব্যবসায়ীদের। পরে বিকেলে ক্যান্টনমেন্টে হওয়া এই সিদ্ধান্ত প্রশাসনিকভাবে পাস করার জন্য রাজশাহী জেলা প্রশাসকের দপ্তরে সভা হয়।

সভায় আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি, হিমাগার মালিক সমিতি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি, পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামীকাল মঙ্গলবার রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে নতুন ভাড়ার বিজ্ঞপ্তি সব হিমাগারে প্রচার করা হবে।

এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এবার আলুর দাম কম। আবার এ নিয়ে দুই পক্ষের সংঘাতের আশঙ্কা ছিল। এ নিয়ে একটি অভিযোগ পান তাঁরা। পরে দুই পক্ষকে নিয়ে সভা হয়। সভায় সবার সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত বিকেলে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আরেকটি সভার মাধ্যমে পাস হয়েছে।

রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মিঠু আহমেদ বলেন, শুরু থেকেই তাঁরা বাড়তি ভাড়ার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। কয়েক দিন ধরে তাঁরা হিমাগার থেকে আলু নিতে পারছিলেন না। হিমাগারগুলোয় বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছিল। এ নিয়ে আন্দোলনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীকেও অবহিত করেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত একটি ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে।

রহমান সিডস স্টোরেজের ব্যবস্থাপক আবদুল হালিম বলেন, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি কেজি আলু রাখতে খরচ পড়বে ৫ টাকা ৫০ পয়সা আর শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা। এ ছাড়া যাঁরা আগে থেকেই টাকা দিয়ে অগ্রিম বুকিং দিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে আলুর কেজিপ্রতি শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, নতুন সিদ্ধান্ত সব হিমাগারমালিকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হবে।

আরও পড়ুনরাজশাহীতে হিমাগারে ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ-সমাবেশ১৫ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ