রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও উন্নয়নে আনসার বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
Published: 12th, February 2025 GMT
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, ন্যায়ভিত্তিক, সুসংহত ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনের জন্য নিরাপত্তা ও উন্নয়ন অপরিহার্য। আর এ নিরাপত্তা ও উন্নয়নে আনসার বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দেশের তৃণমূল প্রশাসনিক স্তর পর্যন্ত বিস্তৃত এ বাহিনী নিরাপদ সমাজ কাঠামো গঠন, মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সামাজিক উন্নয়ন কার্যক্রম জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়ে এ ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী অবদান রাখছে।
উপদেষ্টা আজ বুধবার সকালে গাজীপুরের সফিপুরে বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি একাডেমিতে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪৫ জাতীয় সমাবেশ-২০২৫-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি।
উপদেষ্টা বলেন, দেশ সেবার ব্রত নিয়ে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে অবদান অনস্বীকার্য। তিনি বলেন, এ বাহিনীর ৩৯টি পুরুষ আনসার ব্যাটালিয়ন, ২টি মহিলা আনসার ব্যাটালিয়ন, একটি বিশেষায়িত আনসার গার্ড ব্যাটালিয়ন (এজিবি) সহ মোট ৪২টি আনসার ব্যাটালিয়ন রয়েছে। তার মধ্যে ১৬টি আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্যরা দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় ‘অপারেশন উত্তরণ’-এ নির্ভরশীল সহায়ক শক্তি হিসেবে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দায়িত্ব পালন করছে। সামাজিক সম্প্রীতি ও অসাম্প্রদায়িক বন্ধন দৃঢ়কল্পে শারদীয় দুর্গাপূজাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে একীভূত হয়ে রাষ্ট্রের অর্পিত যেকোনো দায়িত্ব আস্থার সাথে পালন করে যাচ্ছে এ বাহিনীর সদস্যরা।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো.
উপদেষ্টা আরো বলেন, সামাজিক নিরাপত্তার পাশাপাশি তরুণ সমাজকে ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থান ও সামাজিক ব্যবসার আওতায় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে দেশের সর্ববৃহৎ এই বাহিনীর প্ল্যাটফর্ম কার্যকর ভূমিকা রাখছে। বাহিনীর গ্রামভিত্তিক মৌলিক প্রশিক্ষণকে আধুনিক সিলেবাস ও যুগোপযোগী নীতিমালার আওতায় আনা হয়েছে, যেখানে সর্ববৃহৎ স্বেচ্ছাসেবক অঙ্গ সংগঠন ভিডিপির ডাটাবেজের ডিজিটালাইজেশন ও নতুন অবকাঠামোর সংযোজন করা হয়েছে। তিনি বলেন, স্বল্প সময়ে দেশসেবার মৌলিক চেতনায় নবাগত তরুণদের উদ্বুদ্ধ করতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তরুণদের অগ্রাধিকার দিয়ে বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র (বিটাক)-সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিকল্পনাও এ বাহিনীর বিবেচনায় রয়েছে।
তিনি এসময় দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যাটালিয়ন আনসার, অঙ্গীভূত আনসার ও ভিডিপি সদস্য-সদস্যারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নতুন উদ্যমে দেশ সেবায় নিয়োজিত হওয়ার অনুপ্রেরণা পাবেন মর্মে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
সমাবেশ অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ১৮ জন কর্মকর্তা, কর্মচারী ও অন্যান্য পদবির সদস্য-সদস্যাদের মাঝে কৃতিত্বপূর্ণ ও প্রশংসনীয় কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পদক প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, এ বছর সেবা ও সাহসিকতার ৪টি বিভাগে মোট ৮টি ক্যাটাগরিতে কর্মকর্তা, কর্মচারী, আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্য এবং অন্যান্য পদবির সদস্য-সদস্যাসহ সর্বমোট ১৫৬ জন পদকপ্রাপ্ত হয়েছেন।
পরে উপদেষ্টা আনসার একাডেমি প্রাঙ্গণে বৃক্ষরোপণ করেন, ফটোসেশনে অংশ নেন ও কুটিরশিল্প প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আনস র সদস য সদস য র সদস য উপদ ষ ট
এছাড়াও পড়ুন:
বাণিজ্যবিরোধ: ভারত কেন ট্রাম্পের নিশানায়
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের বাণিজ্যনীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। ভারতীয় পণ্যের ওপর হোয়াইট হাউসের শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তুতি নেওয়ার পর থেকেই এ আক্রমণের মাত্রা বেড়েছে।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর প্রশাসন আজ শুক্রবার (১ আগস্ট) থেকে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করছে এবং এর পাশাপাশি অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রাম্প যখন বিশ্বের বহু দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছিলেন, তখনই ভারতকে উদ্দেশ করে তাঁর এমন কঠোর অবস্থান সামনে উঠে আসে।
হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
‘ভারতের শুল্ক বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ’, গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন মন্তব্য করেন ট্রাম্প। জবাবে ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা ট্রাম্পের বক্তব্য ‘লক্ষ্য করেছে’ এবং এর ‘প্রভাব মূল্যায়ন’ করবে।
যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্যবিরোধ: পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়িয়ে
আজ থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর ট্রাম্পের ধার্য করা ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক গত ২ এপ্রিল হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে ঘোষিত সম্ভাব্য শুল্ক থেকে মাত্র ১ শতাংশ কম।
এ হার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ শুল্কের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশ শুল্কের চেয়ে কিছুটা কম।
হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।এ শুল্ক ভারতের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা আরও জটিল করে তুলতে পারে। একাধিক দফা আলোচনার মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষ একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ১২তম বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার ভারত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়া অনেক কোম্পানির নতুন গন্তব্য হয়েছে দেশটি। মে মাসে অ্যাপলের সিইও টিম কুক জানান, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য আইফোন এখন ভারতে উৎপাদিত হচ্ছে; যাতে উচ্চ শুল্ক এড়ানো যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (ওটিআর) তথ্যমতে, গত বছর ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ১২৯ বিলিয়ন (১২ হাজার ৯০০ কোটি) ডলার। ভারতের রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পোশাক, রাসায়নিক, যন্ত্রপাতি ও কৃষিপণ্য।
ট্রাম্প কেন ভারতকে নিশানা করছেন
সম্প্রতি ট্রাম্প একাধিকবার বিভিন্ন পণ্যের ওপর ভারতের ‘অতি উচ্চ’ শুল্ক আরোপের সমালোচনা করেছেন। এর মধ্যে কৃষিপণ্য ও দুগ্ধজাত পণ্যও রয়েছে।
বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লেখেন, ‘বছরের পর বছর আমরা ভারতের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে খুব কম ব্যবসা করেছি। কারণ, তাদের শুল্ক অত্যন্ত বেশি।’
এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্টদেশীয় শিল্পকে রক্ষা করতে ভারত কিছু পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপ করেছে।
ওটিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে পণ্যবাণিজ্যে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন (৪ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের ঘাটতি দেখেছে। এটি আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। তুলনামূলকভাবে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে প্রায় ২৯৫ বিলিয়ন (২৯ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের বাণিজ্যঘাটতিতে ছিল।
আরও পড়ুনভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা, ইরানের পণ্যের বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ ৩১ জুলাই ২০২৫ট্রাম্প আরও ক্ষুব্ধ যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে।
‘এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা’, বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন ট্রাম্প।
ভারতের প্রতিক্রিয়া
এ সপ্তাহে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ভারত সরকার ট্রাম্পের ওই বক্তব্যে তুলনামূলকভাবে মৃদু, তবে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
ভারতের ওপর ধার্য করা শুল্কহার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশের চেয়ে কিছুটা কম।বুধবার দেওয়া এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কয়েক মাস ধরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সেই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সরকার জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।’
আগস্টের শেষ দিকে দুই দেশের মধ্যে আরেক দফা বাণিজ্য আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’৩০ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনট্রাম্পের ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতের অর্থনীতি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কী বলছেন অর্থনীতিবিদেরা১৪ ঘণ্টা আগে