চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে আজ রাতে আরব আমিরাতের উদ্দেশে দেশ ছাড়বে বাংলাদেশ। বুধবার অফিসিয়াল সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত আট জাতির এই টুর্নামেন্টের প্রস্তুতি, লক্ষ্য, সম্ভাবনা ও প্রত্যাশা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন। তিনি জানান, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে যাচ্ছেন চ্যাম্পিয়ন হওয়াল লক্ষ্যে।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রেরণা
শান্ত: শেষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভালো একটা স্মৃতি আছে; সেমিফাইনাল খেলেছি। এটা বাড়তি একটা অনুপ্রেরণা দেবে। পাশাপাশি দেশের মানুষের প্রত্যাশা ও খেলোয়াড়দের পরিবারের প্রত্যাশা আছে। আমরা যেভাবে প্রস্তুতি নিতে পেরেছি, আশা করছি ভালো কিছু করা সম্ভব হবে।
নিজের প্রস্তুতি নিয়ে
শান্ত: আমার ম্যাচ খেলতে না পারার ভেতরেও ইতিবাচক দিক ছিল। অতিরিক্ত অনুশীলন করার সুযোগ পেয়েছি। কোচরা সাহায্য করেছেন। ফিটনেস নিয়েও কাজ করতে পেরেছি। বিপিএলের সময়ে খুব ভালো প্রস্তুতি নিতে পেরেছি। আশা করছি, সব ঠিক থাকলে টুর্নামেন্টটা ভালো যাবে।
ম্যাচ প্র্যাকটিসের ঘাটতি
শান্ত: শেষ ওয়ানডে ম্যাচে ভালো একটা ইনিংস খেলেছিলাম আফগানিস্তানের বিপক্ষে। টি২০ বিষয়টি নিয়ে যেটা বললেন, ভালো অবস্থায় নেই। গত বছর রান মোটামুটি করেছি, স্ট্রাইক রেট ওই রকম আপ টু দ্য মার্ক ছিল না। তবে রান মোটামুটি ভালো করেছি। আমি বিশ্বাস করি, আমি এর চেয়েও ভালো ব্যাটার। আসলে ওই সংস্করণ নিয়ে চিন্তা করছি না। ওয়ানডে ফরম্যাট ভালো যাচ্ছে। অনেক দিন পর ম্যাচ খেলব। ম্যাচ প্রস্তুতিটা এখানে হচ্ছে। গতকাল ম্যাচ সিনারিও প্র্যাকটিস হয়েছে। আজকে হবে। সামনে একটি প্র্যাকটিস ম্যাচ আছে। আর এই সংস্করণে আমরা ছোটবেলা থেকে অনেক খেলি। সুতরাং মানিয়ে নিতে সমস্যা হবে না।
প্রস্তুতি নিয়ে কোচের অতৃপ্তি
শান্ত: আমার মনে হয় না, কোচ এ রকম কোনো কিছু মিন করেছেন। ফরম্যাট অনুযায়ী দেখলে একটু তো ভিন্নতা আছেই। উইকেট ভালো ছিল, ব্যাটাররা ভালো প্রস্তুতি নিয়েছে। এখন ৫০-৬০ রানকে কীভাবে ১০০-১৩০ করতে পারে, এটা গুরুত্বপূর্ণ। তারই ম্যাচ সিনারি হচ্ছে। একটি প্রস্তুতি ম্যাচ আছে। ভালো উইকেটেও বেশ কিছু বোলার ভালো বল করেছে। আমার মনে হয় প্রস্তুতির দিক দিয়ে আমরা ভালো অবস্থানে আছি। আমাদের হাতে সাত দিন সময় তো আছেই। এই সাত দিনে আরও একটু গুছিয়ে নিতে পারব।
রিয়াদ-মুশফিকের রোল
শান্ত: তারা দু’জন খুবই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। এত বছর ধরে খেলছেন, শেষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও ছিলেন। তাদের এই অভিজ্ঞতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তবে অধিনায়ক হিসেবে কোনো একক খেলোয়াড়ের ওপর ভরসা করি না। পুরো দল নিয়ে চিন্তা। আমরা হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে খেলতে পারলে ভালো করা সম্ভব। রিয়াদ ভাই, মুশফিক ভাইয়ের কাছে চাওয়া, তারা যেন নিজেদের অভিজ্ঞতা সবাইকে দেন, তাদের ভাবনা যেন মাঠের ভেতর শেয়ার করেন।
দুবাইয়ে রান চেজ করা বা বড় টার্গেট সেট করা
শান্ত: আমি পাকিস্তানে ৩০০ প্লাস রান আশা করছি। আগে ব্যাট করলে অবশ্যই এ ধরনের স্কোর করতে হবে। ডিফেন্ড করার ক্ষেত্রেও এ রকম রান ডিফেন্ড করতে হবে। দুবাইয়ে একেক সময় একেক রকম হয়। আমার মনে হয়, ২৬০ থেকে ২৮০-এর ভেতরেই থাকবে। এভাবে সংখ্যা অনুমান করা কঠিন। তবে অতীতের স্ট্যাট.
টুর্নামেন্টে দলীয় লক্ষ্য
শান্ত: আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যে যাচ্ছি।
বিপিএলে রিশাদের খেলা নিশ্চিত করা
শান্ত: রিশাদ খুব গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। আমাদের দেশে রিস্ট স্পিনার বলতে রিশাদই সেরা। আমাদের হাতে ওই রকম বিকল্প নেই। সম্প্রতি ও টি২০ সংস্করণে যেভাবে খেলছে, বিপিএলেও ২-৩ ম্যাচ একাই জিতিয়েছে। খুবই ভালো বোলিং, পাশাপাশি ব্যাটিং; আর ফিল্ডিং তো আছেই। সে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন খেলোয়াড়। আমি খুবই খুশি যেভাবে বোলিং ও ব্যাটিং করেছে। আমি আরও বেশি কিছু আশা করেছিলাম। সে যতটুকু করেছে, আমি খুশি।
বুমরাহর না থাকা চাপ কমাবে
শান্ত: প্রতিটি দলের প্রত্যেক ক্রিকেটার সামর্থ্যবান। একেক দলে এক্স ফ্যাক্টর থাকে। সে অনেক বড় বোলার। আসলে এভাবে ব্যক্তিকেন্দ্রিক পরিকল্পনা করতে চাই না। পুরো দলের প্ল্যান থাকে, কোন বোলারকে কীভাবে হ্যান্ডেল করব বা ব্যাটারকে যেভাবে আটকাব। ওভারঅল একটি টিম প্ল্যান তো থাকেই।
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য দলের ওপর চাপ
শান্ত: আমার কাছে বাড়তি চাপ মনে হয় না। ৮ দলই ডিজার্ভ করে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার, কোয়ালিটি টিম। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের দলের ওই সামর্থ্য আছে। আমার মনে হয় না কেউ বাড়তি চাপ অনুভব করবে। কারণ সবাই মনেপ্রাণে এটাই চাচ্ছে। সবাই বিশ্বাস করে ওই সামর্থ্য আছে। আমাদের রিজিকে আল্লাহ কী লিখে রেখেছেন, জানি না। আমরা ওইভাবে মেহনত করছি, সততার সঙ্গে কাজ করছি। প্রত্যেক খেলোয়াড় বিশ্বাস করি, আমরা ওই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।
সাকিব মিস করবে
শান্ত: সাকিবকে অবশ্যই মিস করব। এই প্রশ্ন কেন করলেন আমি জানি না। আমরা সবাই জানি, এই উত্তর অনেক খেলোয়াড় দিয়েছে। অবশ্যই সাকিব ভাইকে মিস করব, থাকলে ভালো হতো– এই উত্তর অনেকবার পেয়েছেন। আমার মনে হয় না এ রকম একটি টুর্নামেন্টে যাওয়ার আগে এ প্রসঙ্গে বলা যৌক্তিক হবে। তবে ওই ম্যাচে দারুণ ব্যাটিং করেছেন। দলকে জেতাতে অনেক সহায়তা করেছে।
স্কোয়াড নিয়ে খুশি
শান্ত: যে ১৫ জন স্কোয়াডে আছে, সবাইকে নিয়ে খুবই খুশি ও আত্মবিশ্বাসী। যেই খেলবে, একা হাতে ম্যাচ জেতাতে পারে, এই সামর্থ্য সবার আছে।
মিডল অর্ডারে উইকেট না নিতে পারা
শান্ত: মিডল ওভারে উইকেট যদি নিতে পারে স্পিনাররা, দলের জন্য খুব ভালো। তাদের মধ্যে এই সামর্থ্য আছে। গত সিরিজে হয়তো হয়নি। মিডল ওভারে উইকেট নিতে পারিনি। তার মানে এই না সামনে পারব না। অতীতে অনেক ম্যাচে মিরাজ মিডল ওভারে উইকেট নিয়ে জিতিয়েছে, নাসুম, রিশাদ নিয়েছে। সামর্থ্য সবারই আছে। ওই দিনে দায়িত্বটা যে পাবে, দলের জন্য কতটুকু দিচ্ছে এটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি বিশ্বাস করি, তারা ভালো কিছু করবে।
বুমরাহ না থাকায় ভারত সহজ কিনা
শান্ত: একক কাউকে নিয়ে চিন্তা করছি না, তাদের পুরো দলই ভালো। শুধু ভারত নয়, পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড– তিনটি দলই ভারসাম্যপূর্ণ। তিনটি দলের সঙ্গেই কষ্ট করে খেলতে হবে।
ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে ভাবনা
শান্ত: শেষ সিরিজটি ইনজুরির কারণে আমরা দু-তিনজন খেলোয়াড় খেলতে পারিনি। এই সুযোগে জাকের আলী অনিকের অসাধারণ একটা সিরিজ গেছে। রিয়াদ ভাই ভালো করছেন। মিরাজ চারে ভালো করছে। আমরা আসলে বুঝতে পেরেছি কোন জায়গায় কাকে ফিট করা যাবে এবং কে কতটুকু ভালো অবস্থানে আছে। এই ইনজুরিটা আমাদের জন্য ভালো হয়েছে। সবাইকে দেখার সুযোগ হয়েছে। তবে আমরা জানি কে কোথায় ব্যাটিং করবে, কার কী রোল। এটা নিয়ে খুব বেশি একটা সমস্যা হবে না।
বিপিএলে ভালো উইকেটে খেলা
শান্ত: এত অল্পতে খুশি হয়েন না, মাত্র শুরু হলো। বিপিএলে খুব ভালো উইকেট ছিল। ব্যাটাররা খুব ভালোভাবে ব্যাটিং করেছে, বোলারদের কষ্ট হয়েছে। এটা শুরু। আমার মনে হয়, আরও ভালো উইকেট হওয়া সম্ভব। কীভাবে লম্বা সময় ধরে ভালো উইকেটে প্র্যাকটিস করছি, ডিপিএল, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে। লম্বা সময় ধরে এমন উইকেট পেলে হেল্প হবে। এবার ভালো উইকেট হওয়ায় ব্যাটাররা কনফিডেন্ট আছে। বোলারদেরও কোথায় বল করতে হবে– এসব ধারণা আগের চেয়ে ভালো।
ব্যাটিং না বোলিংয়ে এগিয়ে
শান্ত: আলাদাভাবে চিন্তা করছি না। একসময় পেস বোলার ছিল না। এখন ভালো পেস বোলিং ইউনিট। রিস্ট স্পিনার ছিল না, এখন আছে। সব মিলিয়ে ব্যালান্স দল। সবাই সবার দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে যে কোনো দলকে যে কোনো সময় হারানো সম্ভব।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ২০২৫
| প্রতিপক্ষ | তারিখ | ভেন্যু |
| বাংলাদেশ : ভারত | ২০ ফেব্রুয়ারি | দুবাই |
| বাংলাদেশ : নিউজিল্যান্ড | ২৪ ফেব্রুয়ারি | রাওয়ালপিন্ডি |
| বাংলাদেশ : পাকিস্তান | ২৭ ফেব্রুয়ারি | রাওয়ালপিন্ডি |
| সময় | বিকেল ৩টা | বাংলাদেশ সময় |
বাংলাদেশ স্কোয়াড: নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, সৌম্য সরকার, তাওহিদ হৃদয়, তাসকিন আহমেদ, নাহিদ রানা, জাকের আলী, তানজিদ হাসান তামিম, তানজিম হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান, রিশাদ হোসেন, নাসুম আহমেদ ও পারভেজ হোসেন ইমন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব শ ব স কর আম র ম ব প এল আম দ র উইক ট স করব
এছাড়াও পড়ুন:
খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিএনপির নির্বাচনী যাত্রা শুরু
সব জল্পনার অবসান হলো—বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচন করছেন। তিনি ফেনী-১, বগুড়া-৭ ও দিনাজপুর-৩ আসনে প্রার্থী হবেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সোমবার বিএনপি ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। তাতে দলের দুই শীর্ষ নেতার নির্বাচন করা এবং তাঁদের নির্বাচনী আসনগুলো নিশ্চিত করা হয়। এ ছাড়া দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁও-১ আসনে নির্বাচন করবেন।
তারেক রহমান বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন, অনেক আগে থেকেই এমন আলোচনা আছে। তবে অসুস্থতার কারণে এবার খালেদা জিয়ার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংশয় ছিল। আবার তাঁর নিজেরও নির্বাচন করার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ ছিল না।
দলীয় সূত্র বলছে, নির্বাচন ঘিরে নানামুখী শঙ্কা, বিশেষ করে ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে নেতৃত্ব দিতে রাজি করানো হয়। শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রার্থী হওয়ার ঘোষণায় নেতা-কর্মীরা আনন্দিত।
স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, নানা কারণে আসন্ন নির্বাচন বিএনপির জন্য খুব স্বস্তিদায়ক না-ও হতে পারে। খালেদা জিয়াকে নির্বাচন করতে রাজি করানোর মধ্য দিয়ে সার্বিকভাবে নির্বাচনের গুরুত্বটা আরও বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে নতুন কোনো জটিলতার উদ্ভব হলে, সেটা মোকাবিলায়ও তাঁর ভোটে অংশগ্রহণ পরিস্থিতির ওপর একটা প্রভাব ফেলবে।
জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে সোমবার ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। বাকি ৬৩টি আসনে প্রার্থিতা পরে ঘোষণা করা হবে।
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, স্থগিত রাখা কিছু আসনে প্রার্থিতা নিয়ে অভ্যন্তরীণ সমস্যা আছে। আর কিছু আসন জোট ও সমমনা দলগুলোর প্রার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে, যাদের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা হতে পারে।
ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী, বিএনপির চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির ১২ জন সদস্য নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। অন্যরা হলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন (কুমিল্লা-১), মির্জা আব্বাস উদ্দিন আহমেদ (ঢাকা-৮), গয়েশ্বর চন্দ্র রায় (ঢাকা-৩), আবদুল মঈন খান (নরসিংদী-২), আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১০), ইকবাল হাসান মাহমুদ (সিরাজগঞ্জ-২), সালাহউদ্দিন আহমদ (কক্সবাজার-১), হাফিজ উদ্দিন আহমদ (ভোলা-৩) এবং এ জেড এম জাহিদ হোসেন (দিনাজপুর-১)।
স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৭ আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। তবে তিনি বলেছেন, এটি প্রাথমিক তালিকা। প্রয়োজন বোধ করলে স্থায়ী কমিটি প্রার্থিতা পরিবর্তন করতে পারবে।
সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে প্রার্থী ঘোষণার আগে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির জরুরি সভা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী সভা হয়। সেখানে জুলাই সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন নিয়ে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়েও আলোচনা হয়। পরে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। এ সময় বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকেরাও উপস্থিত ছিলেন।
এবারের প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। তাঁকে ফেনী-৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রথম আলোকে বলেন, ‘জীবনে প্রথম সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছি। দল আমার ওপর আস্থা রেখেছে, সে আস্থা রাখার জন্য ধন্যবাদ। আমি আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সঙ্গে দেখা করব, সালাম জানাব।’
যে কারণে ঢাকার সাতটি আসন ফাঁকাঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে ১৩টিতে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি সাতটি আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে। নেতা-কর্মীরা বলছেন, ঢাকায় প্রার্থিতা নিয়ে মারাত্মক পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নেই। তাঁদের ধারণা, নির্বাচনী সমঝোতার জন্য আসনগুলোতে প্রার্থিতা স্থগিত রাখা হয়েছে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সাতটি আসনের মধ্যে জাতীয় নাগরিক পাটির (এনসিপি) সঙ্গে সমঝোতা হলে তাদের জন্য অন্তত তিনটি আসন ছাড় দেওয়া হতে পারে। এ তালিকায় গণতন্ত্র মঞ্চ, বিজেপি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নামও আছে।
তবে এনসিপির নেতারা যেসব আসনে নির্বাচন করতে চান বলে আলোচনা আছে, সে আসনগুলোর একটি (ঢাকা-৯) ছাড়া বাকিগুলোতে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (ঢাকা-১১), সদস্যসচিব আখতার হোসেন (রংপুর-৪), জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা (ঢাকা-৯), দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ (কুমিল্লা-৪), উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম (পঞ্চগড়-১) ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের (নোয়াখালী-৬) স্ব স্ব আসনে তাঁদের কমবেশি তৎপরতা আছে।
ঢাকা-৯ আসন স্থগিত রাখা হলেও সেটা কার জন্য, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সেখানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবীব উন নবী খানকে (সোহেল) প্রার্থী করা হতে পারে বলে দলে আলোচনা আছে।
ঢাকা-১৪: মায়ের ডাক-এর সানজিদাঢাকা-১৪ আসনে এবার প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়লেন এস এ খালেকের ছেলে এস এ সিদ্দিক (সাজু)। সেখানে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের ব্যক্তিদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সংগঠক সানজিদা ইসলামকে (তুলি) প্রার্থী মনোনীত করেছে বিএনপি। এই আসনে ইতিমধ্যে জামায়াত প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের শিকার মীর আহমদ বিন কাসেমকে (আরমান)। তিনি আট বছর গুম ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর গোপন বন্দিশালা ‘আয়নাঘর’ থেকে মুক্তি পান।
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এ লক্ষ্যে দলটি অভ্যন্তরীণ জরিপসহ সাংগঠনিক উপায়ে প্রার্থী বাছাই সম্পন্ন করেছে। সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের নাম প্রকাশ করে নির্বাচনের পথে যাত্রা শুরু করল বিএনপি।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বিগত ১৫-২০ বছর ভোট দিতে পারেনি। এখন জাতি উৎসাহিত হচ্ছে ভোটের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। তিনি বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা, সেটি পূরণ করার লক্ষ্যে বিএনপি প্রার্থী মনোনয়ন ঘোষণা করে একটা বড় পদক্ষেপ নিল। ইতিমধ্যে অনেকে মাঠে চলে গেছেন, এ ঘোষণার পর বাকিরাও মাঠে যাবেন। এর মাধ্যমে ভোটের একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হবে।
১০ নারী প্রার্থীঘোষিত ২৩৭ আসনের প্রার্থী তালিকায় নারী রয়েছেন দশজন। এর মধ্যে অন্যতম বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বাকিরা হলেন সিলেট-২ আসনে তাহসিনা রুশদীর, ফরিদপুর-২ আসনে শামা ওবায়েদ ইসলাম, ফরিদপুর-৩ আসনে নায়াব ইউসুফ আহমেদ, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে আফরোজা খান রিতা, শেরপুর-১ আসনে সানসিলা জেবরিন, ঝালকাঠি-২ আসনে ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো, যশোর–২ আসনে সাবিরা সুলতানা, ঢাকা-১৪ আসনে সানজিদা ইসলাম ও নাটোর-১ আসনে ফারজানা শারমিন।
মনোনয়ন না পেয়ে দুই মহাসড়ক অবরোধমাদারীপুর-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করে কামাল জামান মোল্লাকে। এর প্রতিবাদে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকীর অনুসারীরা রাত আটটার দিকে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তাঁর অনুসারীরা সন্ধ্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।