বিসিএসের গেজেট থেকে প্রার্থী বাদ না দেওয়ার আইন করছে পিএসসি
Published: 13th, February 2025 GMT
গেজেট থেকে যাতে বাদ দেওয়া না হয়, সে জন্য আইন সংশোধন করতে যাচ্ছে পিএসসি। শিগগিরই এ বিষয়ে পদক্ষেপে নিতে যাচ্ছে পিএসসি। পিএসসির একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
আরও পড়ুনবিসিএস লিখিত পরীক্ষায় গণিত বাদ দেওয়ার সুপারিশ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীদের অতীত যাছাইয়ের জন্য একটি নতুন নিয়মের খসড়া প্রণয়ন করেছে। বর্তমানে এটি খসড়া পর্যায়ে রয়েছে এবং শিগগিরই সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো (শেয়ার) হবে। নতুন নিয়ম অনুমোদিত হলে প্রার্থীদের অতীত মূল্যায়নে স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে। এ ছাড়া যদি কোনো প্রার্থীর নাম মনগড়াভাবে বা যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া সুপারিশের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়, তবে তার জন্য প্রয়োজনীয় রক্ষাকবচ খসড়া আইনে রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুননাসা ইন্টার্নশিপ, হাইস্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের সুযোগ২ ঘণ্টা আগেএ আইনের সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে পিএসসি চেয়ারম্যান মোবাশ্বের মোনেম বলেন, ‘এটি একটি ব্যতিক্রমী দলিল, যা তথ্য যাচাইয়ের নামে যেকোনো অন্যায্য কার্যক্রমের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করবে। আমরা এটি জুলাই-আগস্ট ২০২৪ বিপ্লবের চেতনা সামনে রেখে প্রণয়ন করেছি। আমাদের লক্ষ্য পিএসসিকে একটি শিক্ষার্থী ও প্রার্থীবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই আইন গৃহীত হলে সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীদের হয়রানি লাঘব হবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প এসস
এছাড়াও পড়ুন:
শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই
বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।
একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।
আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।
ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।
ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।
পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল