আট বছর পর জেলেদের জন্য উন্মুক্ত নাফ নদ
Published: 13th, February 2025 GMT
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে নাফ নদ জেলেদের মাছ শিকারের জন্য ফের উন্মুক্ত করা হয়েছে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ এবং মাদক চোরাচালান রোধে দীর্ঘ ৮ বছর আগে নাফ নদের বাংলাদেশ অংশে জেলেদের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল প্রশাসন। হাইকোর্টের নির্দেশে বৃহস্পতিবার এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, নাফ নদে জেলেদের বৈধভাবে মাছ ধরা কার্যক্রম চালুতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ পরিপ্রেক্ষিতে নিম্নোক্ত শর্তসাপেক্ষে নাফ নদে মাছ ধরার অনুমতি দেওয়া হলো।
টেকনাফের ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, আপাতত তিন মাসের জন্য সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নাফ নদে জেলেদের মাছ শিকারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বিজিবি-কোস্টগার্ডসহ সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেওয়া হয়েছে।
পাঁচ নির্দেশনা
নিষেধাজ্ঞা তুললেও পাঁচটি নির্দেশনা দিয়েছে প্রশাসন। সেগুলো হলো– সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বাংলাদেশ সীমানার অভ্যন্তরে নাফ নদে (শাহপরীর দ্বীপ থেকে টেকনাফ জেটিঘাট পর্যন্ত) মাছ ধরতে পারবেন জেলেরা; মাছ ধরতে যাওয়ার সময় বিজিবির ৫টি নির্ধারিত পোস্টে টোকেন/পরিচয়পত্র দেখাতে হবে এবং ফেরার পর বিজিবির পোস্টে তল্লাশির সময় বাহিনীকে সর্বাত্মক সহায়তা করতে হবে। কোনো জেলে চেকপোস্ট এড়িয়ে মাছ ধরতে পারবে না; কোনোক্রমে বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করা যাবে না; নিবন্ধিত জেলে ছাড়া কেউ যাতে নাফ নদে মাছ ধরতে না পারে সেজন্য মৎস্য অধিদপ্তরের হালনাগাদ করা জেলেদের তালিকা বিজিবি, কোস্টগার্ড ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দেওয়া যেতে পারে এবং এই অনুমোদন সাময়িক। তিন মাস পর সীমান্ত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এ অনুমতি নবায়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে দীর্ঘ ৮ বছর পর নাফ নদ উন্মুক্ত করায় খুশির জোয়ার বইছে টেকনাফের জেলেদের মধ্যে। এ বিষয়ে জেলে সৈয়দ আলম বলেন, ২০ বছর ধরে নাফ নদে মাছ শিকার করে আসছিলাম। কিন্তু ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গার ঢল নামে। ওই সময় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধের পাশাপাশি মাদক পাচার ঠেকাতে নাফ নদে মাছ শিকার বন্ধ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ফলে আমাদের জেলেদের খুব কষ্টের জীবন পার করতে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ঈদ সামনে রেখে নাফ নদ খুলে দেওয়ায় আমাদের জেলে পরিবারের মধ্যে ঈদের আমেজ চলে এসেছে। আমরা সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ। মাদক চোরাচালান এবং অবৈধ কর্মকাণ্ডে যেন জেলেরা জড়াতে না পারে, সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকব।
নাফ নদ জেলে সমাজ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আমান উল্লাহ বলেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। নির্দেশনা অনুযায়ী সব নিয়ম অনুসরণ করে জেলেরা মাছ শিকারে যাবে। কেউ যাতে আড়ালে অবৈধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত না হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হবে।
জেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, জেলেদের মধ্যে স্বস্তি নেমেছে। স্থানীয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই।
২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটির রাখাইন রাজ্যের মংডু, বুচিডং ও রাসেডং জেলায় রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে হত্যা ও নির্যাতন শুরু করে। ওই সময় দলে দলে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। রোহিঙ্গাদের ঢল থামাতে এবং এই সুযোগের মাদক কারবারিদের ঠেকাতে নাফ নদে জেলেদের মাছ শিকার বন্ধ করে সরকার।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম ছ ধরত
এছাড়াও পড়ুন:
২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট সময়কালে ফ্যাসিবাদী শক্তি নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে, এসবির প্রতিবেদন
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে কর্মসূচি পালনকালে ফ্যাসিবাদী শক্তি অনলাইন-অফলাইনে প্রচারণা চালিয়ে সারা দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)।
গতকাল সোমবার এসবির এক প্রতিবেদনে এমন আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনটি পুলিশের সব বিভাগকে পাঠিয়ে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছে এসবি। এসবির একটি সূত্র প্রথম আলোকে এই প্রতিবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঐতিহাসিক জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ফ্যাসিবাদবিরোধী সামাজিক সংগঠনগুলো ১ জুলাই থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। এই ধারাবাহিকতায় ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত কর্মসূচি পালনের সময়কাল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে কর্মসূচি পালনকে কেন্দ্র করে বিতাড়িত ফ্যাসিবাদী শক্তি অনলাইন-অফলাইনে প্রচারণা চালিয়ে দেশব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টি, ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির কর্মসূচিতে বাধা প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর অপচেষ্টা চালাতে পারে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাসহ সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি ও জানমাল রক্ষায় পুলিশের বিভিন্ন বিভাগকে কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছে এসবি।
নির্দেশনাগুলো হলো ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা। ৮ আগস্ট পর্যন্ত নিয়মিত সন্দেহজনক ব্যক্তিসহ মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস ও অন্যান্য যানবাহন তল্লাশি করা। বাস টার্মিনাল, লঞ্চঘাট, রেলস্টেশন ও বিমানবন্দরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল অভিযান পরিচালনা করা। মোবাইল প্যাট্রোল জোরদার করা। গুজব রোধে সাইবার পেট্রোলিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখাসহ গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা।
এ ছাড়া কোনো অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকলে তা তাৎক্ষণিকভাবে এসবিকে অবহিত করার কথাও বলা হয়েছে।