বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে নাফ নদ জেলেদের মাছ শিকারের জন্য ফের উন্মুক্ত করা হয়েছে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ এবং মাদক চোরাচালান রোধে দীর্ঘ ৮ বছর আগে নাফ নদের বাংলাদেশ অংশে জেলেদের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল প্রশাসন। হাইকোর্টের নির্দেশে বৃহস্পতিবার এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। 

চিঠিতে বলা হয়, নাফ নদে জেলেদের বৈধভাবে মাছ ধরা কার্যক্রম চালুতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ পরিপ্রেক্ষিতে নিম্নোক্ত শর্তসাপেক্ষে নাফ নদে মাছ ধরার অনুমতি দেওয়া হলো।

টেকনাফের ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, আপাতত তিন মাসের জন্য সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নাফ নদে জেলেদের মাছ শিকারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বিজিবি-কোস্টগার্ডসহ সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেওয়া হয়েছে।

পাঁচ নির্দেশনা 

নিষেধাজ্ঞা তুললেও পাঁচটি নির্দেশনা দিয়েছে প্রশাসন। সেগুলো হলো– সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বাংলাদেশ সীমানার অভ্যন্তরে নাফ নদে (শাহপরীর দ্বীপ থেকে টেকনাফ জেটিঘাট পর্যন্ত) মাছ ধরতে পারবেন জেলেরা; মাছ ধরতে যাওয়ার সময় বিজিবির ৫টি নির্ধারিত পোস্টে টোকেন/পরিচয়পত্র দেখাতে হবে এবং ফেরার পর বিজিবির পোস্টে তল্লাশির সময় বাহিনীকে সর্বাত্মক সহায়তা করতে হবে। কোনো জেলে চেকপোস্ট এড়িয়ে মাছ ধরতে পারবে না; কোনোক্রমে বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করা যাবে না; নিবন্ধিত জেলে ছাড়া কেউ যাতে নাফ নদে মাছ ধরতে না পারে সেজন্য মৎস্য অধিদপ্তরের হালনাগাদ করা জেলেদের তালিকা বিজিবি, কোস্টগার্ড ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দেওয়া যেতে পারে এবং এই অনুমোদন সাময়িক। তিন মাস পর সীমান্ত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এ অনুমতি নবায়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এদিকে দীর্ঘ ৮ বছর পর নাফ নদ উন্মুক্ত করায় খুশির জোয়ার বইছে টেকনাফের জেলেদের মধ্যে। এ বিষয়ে জেলে সৈয়দ আলম বলেন, ২০ বছর ধরে নাফ নদে মাছ শিকার করে আসছিলাম। কিন্তু ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গার ঢল নামে। ওই সময় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধের পাশাপাশি মাদক পাচার ঠেকাতে নাফ নদে মাছ শিকার বন্ধ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ফলে আমাদের জেলেদের খুব কষ্টের জীবন পার করতে হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ঈদ সামনে রেখে নাফ নদ খুলে দেওয়ায় আমাদের জেলে পরিবারের মধ্যে ঈদের আমেজ চলে এসেছে। আমরা সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ। মাদক চোরাচালান এবং অবৈধ কর্মকাণ্ডে যেন জেলেরা জড়াতে না পারে, সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকব। 

নাফ নদ জেলে সমাজ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আমান উল্লাহ বলেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। নির্দেশনা অনুযায়ী সব নিয়ম অনুসরণ করে জেলেরা মাছ শিকারে যাবে। কেউ যাতে আড়ালে অবৈধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত না হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হবে।

জেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, জেলেদের মধ্যে স্বস্তি নেমেছে। স্থানীয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই।

২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটির রাখাইন রাজ্যের মংডু, বুচিডং ও রাসেডং জেলায় রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে হত্যা ও নির্যাতন শুরু করে। ওই সময় দলে দলে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। রোহিঙ্গাদের ঢল থামাতে এবং এই সুযোগের মাদক কারবারিদের ঠেকাতে নাফ নদে জেলেদের মাছ শিকার বন্ধ করে সরকার। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম ছ ধরত

এছাড়াও পড়ুন:

রাইজিংবিডিতে সংবাদ প্রকাশ, লুট হওয়া বই ফেরত পেল পাঠাগার কর্তৃপক্ষ

রাইজিংবিডিতে সংবাদ প্রকাশের পর লুট হওয়া বই ফেরত পেয়েছে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর ‘অভয়ারণ্য’ পাঠাগার কর্তৃপক্ষ। রবিবার (২৭ এপ্রিল) রাতে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দুপক্ষের সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে পাঠাগারে কোনো নিষিদ্ধ ঘোষিত বই বা নাস্তিক্যবাদ প্রচারের বই রয়েছে, এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পরে লুট হওয়া প্রায় চার শতাধিক বই পাঠাগার কর্তৃপক্ষকে ফেরত দেওয়া হয়।

এর আগে, পাঠাগারে ‘নাস্তিকদের’ বই, ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে লুট শিরোনামে সংবাদ প্রচার হয় দেশের শীর্ষ স্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডিতে। এরপরই প্রশাসন বই ফেরতের উদ্যোগ নেয়।

ধনবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিন মাহমুদের সভাপতিত্বে উপজেলা পরিষদের হলরুমে এই সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সা‌য়েম ইমরান, ধনবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম শহিদুল্লাহ, উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি খায়রুল মুন্সী, উপজেলা জামায়াতের আমির মিজানুর রহমান, অভয়ারণ্য পাঠাগারের সভাপতি সুপ্তি মিত্র, সম্পাদক সঞ্জয় চন্দ্র ঘোষ, ইসলামী খেলাফত মজলিশের নেতা গোলাম রব্বানী এবং স্থানীয় সংবাদকর্মীরা।

উভয়পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সভার শুরুতে ইউএনও মো. শাহীন মাহমুদ উভয়পক্ষকে ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানান। পরে পাঠাগারের পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক দুর্জয় চন্দ্র ঘোষ কীভাবে বইগুলো পাঠাগার থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল, তার বর্ণনা তুলে ধরেন। পরে যেসব যুবক বই নিয়ে আসার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাদের পক্ষ থেকে ধনবাড়ী উপজেলা খেলাফত যুব মজলিসের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রব্বানী রিশাদ বক্তব্য দেন। বৈঠকে পাঠাগারে কোনো নিষিদ্ধ ঘোষিত বই বা নাস্তিক্যবাদ প্রচারের বই রয়েছে, এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পরে বইগুলো অভয়ারণ্য পাঠাগারে ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

গোলাম রব্বানী রিশাদ বলেন, ‘‘পাঠাগার কর্তৃপক্ষকে আহ্বান করেছি, তারা যেন কোনো ধর্মবিরোধী বা নিষিদ্ধ বই পাঠাগারে না রাখেন।’’

পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক দুর্জয় চন্দ্র বলেন, ‘‘পাঠাগারে কোনো ধর্মবিরোধী বই ছিল না। সেদিন যে বইগুলো নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সঞ্জীব ভট্টাচার্য, জাফর ইকবাল প্রমুখের বই ছিল।’’

ইউএনও শাহীন মাহমুদ বলেন, ‘‘উভয়পক্ষকে নিয়ে আলোচনা করে শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়েছে। দুই পক্ষই বৈঠকে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এসেছিলেন। পরে তাদের সঙ্গে নিয়ে বইগুলো পাঠাগারে দিয়ে আসা হয়েছে।’’

এর আগে, গত বৃহস্পতিবার রাতে ধনবাড়ী উপজেলা খেলাফত যুব মজলিসের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম রব্বানীর নেতৃত্বে একদল যুবক গিয়ে প্রায় চার শতাধিক বই লুট করেন। পরে বইগুলো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমা দেন তারা। সেদিন দাবি করা হয়েছিল, বইগুলো ধর্মবিরোধী।

ঢাকা/কাওছার/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সামাজিক মাধ্যমে ভুল তথ্যের ৪৫% রাজনৈতিক
  • নির্বাচনে র‌্যাব-পুলিশের সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনী যুক্ত করাসহ ১২ প্রস্তাব
  • ‘কৃষির উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে’
  • টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবীরাও উচ্চতর গ্রেড পাবেন
  • গাজীপুরে ১০ মাটি খেকোকে কারাদণ্ড
  • পাঠাগার থেকে লুট হওয়া বই ফেরত পেলো কর্তৃপক্ষ
  • ডিবির অভিযানে আ.লীগের সাবেক এমপিসহ গ্রেপ্তার ৭
  • পুলিশ সপ্তাহ শুরু মঙ্গলবার, নির্বাচনী নির্দেশনা পাবে আইনশৃঙ্খলা ব
  • সাবেক আইজিপিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় আবার বাড়ল
  • রাইজিংবিডিতে সংবাদ প্রকাশ, লুট হওয়া বই ফেরত পেল পাঠাগার কর্তৃপক্ষ