বেড়েছে আলু ও ব্রয়লার মুরগির দাম
Published: 14th, February 2025 GMT
এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকার মতো বেড়েছে। খুচরা পর্যায়ে আলুর দামও কিছুটা বাড়তি। অন্যদিকে বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ এখনো স্বাভাবিক হয়নি।
বিক্রেতারা জানান, শবে বরাত ঘিরে মুরগির চাহিদা কিছুটা বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে দামে। ব্রয়লার মুরগির পাশাপাশি বাজারে গরুর মাংসের চাহিদাও কিছুটা বেড়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও হাতিরপুল বাজার ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাজার ঘুরে জানা যায়, গতকাল এক কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২০০–২১০ টাকায়। গত সপ্তাহে ব্রয়লার বিক্রি হয়েছিল ১৯০–২০০ টাকায়। অর্থাৎ কেজিতে ১০ টাকা দাম বেড়েছে। তবে সোনালি মুরগির দামে পরিবর্তন দেখা যায়নি। গতকাল এক কেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হয়েছে ২৮০–৩১০ টাকায়। ফার্মের মুরগির ডিমের দামও অপরিবর্তিত রয়েছে। গতকাল এক ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১২৫–১৩৫ টাকায়। এদিকে শবে বরাত কেন্দ্র করে গরুর মাংসের চাহিদাও বেড়েছে। বাজারভেদে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০–৮০০ টাকায়।
বিক্রেতারা জানান, শবে বরাত ঘিরে মুরগির চাহিদা কিছুটা বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে দামে। ব্রয়লার মুরগির পাশাপাশি বাজারে গরুর মাংসের চাহিদাও কিছুটা বেড়েছে।সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে আলুর দাম কেজিতে পাঁচ টাকার মতো বেড়েছে। গতকাল ঢাকার তিনটি খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ২৫ টাকায়। গত সপ্তাহে আলু বিক্রি হয়েছিল ১৮ থেকে ২০ টাকায়। অবশ্য কারওয়ান বাজারে গতকালও ২০ টাকায় আলু বিক্রি হয়েছে। বিক্রেতারা জানান, পাইকারিতে আলুর দাম দুই টাকার মতো বেড়েছে।
অন্যদিকে মসলাপণ্যের মধ্যে আদার দাম কিছুটা বেড়েছে। এখন প্রতি কেজি দেশি আদা ১৪০–১৫০ টাকা ও আমদানি করা আদা ২৪০–২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই দাম গত সপ্তাহে কেজিপ্রতি ২০ টাকার মতো কম ছিল। অবশ্য দেশি নতুন পেঁয়াজের দামে কোনো পরিবর্তন নেই। বাজারে এখন পেঁয়াজের সরবরাহ বেশি। এ কারণে দাম স্থিতিশীল রয়েছে। গতকাল খুচরা পর্যায়ে এক কেজি পেঁয়াজ ৪৫–৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
সয়াবিন তেল কেনার জন্য বাধ্য হয়ে এসব শর্ত মেনে নিয়েছিমুদিদোকানি সাইফুল ইসলামশীতের মৌসুমের শেষ দিকে এসে বাজারে দু–একটি সবজির দামে বাড়তি প্রবণতা দেখা গেছে। যেমন গতকাল প্রতিটি ফুলকপি ৩০ টাকা ও ব্রকলি ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে এ দাম ৫–১০ টাকা কম ছিল। বেগুনের দামও কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। মানভেদে এক কেজি বেগুন এখন ৪০–৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে আলুর দাম কেজিতে পাঁচ টাকার মতো বেড়েছে। গতকাল ঢাকার তিনটি খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ২৫ টাকায়। গত সপ্তাহে আলু বিক্রি হয়েছিল ১৮ থেকে ২০ টাকায়।সয়াবিনের সংকট কাটেনিফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকে বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট বেড়ে যায়। এরপর মাসের প্রায় অর্ধেক সময় চলে গেলেও এই সংকট কাটেনি। খুচরা বিক্রেতারা জানান, বিভিন্ন ভোজ্যতেল কোম্পানির ডিলার বা সরবরাহকারীরা তাদের নিয়মিত তেল সরবরাহ করছে না। গত নভেম্বর মাসেও বোতলজাত সয়াবিনের তীব্র সংকট হয়েছিল। পরে দাম লিটারে আট টাকা বাড়ানোর পর তেলের সংকট কিছুটা কেটেছিল, যা ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে আবার বেড়েছে।
রাজধানীর হাতিরপুল বাজারের মুদিদোকানি সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, টানা তিন দিন চাওয়ার পর গতকাল দুপুরে তাঁর দোকানে পাঁচ লিটারের দুই কার্টন সয়াবিন তেল দিতে রাজি হয় একটি কোম্পানির ডিলার। তবে প্রতিটি বোতলে তারা পাঁচ টাকা কমিশন কমিয়েছে। পাশাপাশি ওই ব্র্যান্ডেরই ছয় বোতল শর্ষের তেল কেনার শর্ত দিয়েছে। সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সয়াবিন তেল কেনার জন্য বাধ্য হয়ে এসব শর্ত মেনে নিয়েছি।’
সয়াবিনের সংকট নিয়ে ক্ষুব্ধ ক্রেতারাও। রাজধানীর ধানমন্ডির বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন গতকাল দুই লিটার সয়াবিন তেল কেনার জন্য স্থানীয় বাজারে অন্তত পাঁচটি দোকানে ঘুরেছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘টিভিতে দেখলাম উপদেষ্টা বলছেন, বাজারে সয়াবিনের সাপ্লাই (সরবরাহ) ঠিক আছে; কিন্তু বাজারে এসে দেখি, সয়াবিন নেই।’
গতকাল প্রতিটি ফুলকপি ৩০ টাকা ও ব্রকলি ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে এ দাম ৫–১০ টাকা কম ছিল। বেগুনের দামও কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। মানভেদে এক কেজি বেগুন এখন ৪০–৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ট ক র মত আল র দ ম সরবর হ হয় ছ ল ২০ ট ক এক ক জ ১০ ট ক গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা
কারিগরি ক্ষতির (সিস্টেম লস) নামে গ্যাস অপচয় বাড়ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্যাস বিতরণ লাইনে অপচয় হয়েছে গড়ে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ গ্যাস। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) মার্চ পর্যন্ত অপচয় হয়েছে ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এতে আর্থিক ক্ষতি ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এর বাইরে সঞ্চালন লাইনে অপচয় হয়েছে ২ শতাংশ।
‘দেশের জ্বালানিনিরাপত্তা: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়; গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এতে বলা হয়, ২ শতাংশ অপচয় গ্রহণযোগ্য, তাই ওইটুকু সমন্বয় করেই আর্থিক ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে। গ্যাসের অপচয় রোধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে ছয়টি গ্যাস বিতরণ সংস্থা।
পেট্রোবাংলা বলছে, গ্যাস অপচয়ের জন্য দায়ী হচ্ছে পুরোনো, জরাজীর্ণ পাইপলাইন; গ্যাস সরবরাহ লাইনের গ্যাসস্টেশন রাইজারে লিকেজ (ছিদ্র); তৃতীয় পক্ষের উন্নয়নকাজে পাইপলাইন ছিদ্র হওয়া এবং আবাসিক খাতে প্রচুর অবৈধ সংযোগ। তবে এসব অপচয় রোধে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় পেট্রোবাংলা। এর মধ্যে রয়েছে গ্যাস সরবরাহব্যবস্থায় মিটারিং/ মনিটরিং ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা; লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কারিগরি ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখা; অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও উচ্ছেদ কার্যক্রম জোরদার করা এবং আবাসিক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা।
দেশের গ্যাস খাতের চিত্র তুলে ধরে সেমিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন। তিনি বলেন, দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে কমতে ১৫ বছর আগের জায়গায় চলে গেছে। গ্যাস অনুসন্ধান জোরদারের কোনো বিকল্প নেই। গ্যাস চুরি ও অপচয় কমাতে হবে। সঞ্চালন ও বিতরণ মিলে কারিগরি ক্ষতি প্রায় ১০ শতাংশ, যা অনেক বেশি। সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতি কোনোভাবেই ২ শতাংশ হওয়ার কথা নয়। এটা ভালো করে দেখা উচিত।
শিল্পে নতুন সংযোগে গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান বলেন, সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতির বিষয়টি গভীরভাবে দেখা হচ্ছে। অবৈধ সংযোগ বন্ধে পেট্রোবাংলা তৎপর আছে, খোঁজ পেলেই বিচ্ছিন্ন করা হবে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিল্পে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যেহেতু তারা বেশি দাম দেবে। তাই অগ্রাধিকার বিবেচনা করে তিনটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রথম ধাপের তালিকায় থাকছে, যেসব কারখানায় এখনই সংযোগ দেওয়া যাবে। এগুলো পরিদর্শন প্রায় শেষের দিকে, আগামী সপ্তাহে শেষ হয়ে যাবে।
সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহ করতে নতুন টার্মিনাল নির্মাণে অগ্রাধিকার পাচ্ছে স্থলভাগের টার্মিনাল। মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলাকায় এটি করা হবে। এটি হলে কম দামের সময় বাড়তি এলএনজি কিনে মজুত করা যাবে। তবে এগুলো রাতারাতি করা যায় না, পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে।
জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে
তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি) নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) মো. শোয়েব। তিনি বলেন, স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য তৈরি পিএসসির খসড়া জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ৫০টি কূপ সংস্কার, উন্নয়ন ও খননের প্রকল্পে ইতিমধ্যে ১৮টির কাজ শেষ হয়েছে। জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে। ৪টি কূপের কাজ চলমান। এ ছাড়া পেট্রোবাংলার বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রম তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. আবদুল মান্নান পাটওয়ারী।
সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে
পেট্রোবাংলার আর্থিক দিক তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে পেট্রোবাংলার রাজস্ব আয় ৫৪ হাজার ১১৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে অর্ধেক বকেয়া। গত মে পর্যন্ত গ্যাস বিল বকেয়া ২৭ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। এটি ধীরে ধীরে কমে আসছে। ১৩–১৫ হাজার কোটিতে বকেয়া নেমে এলে সন্তোষজনক। সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে ১৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এরপর সার কারখানায় বকেয়া আছে ৯৬৪ কোটি টাকা। তবে বিদেশি কোনো কোম্পানির কাছে বিল বকেয়া নেই পেট্রোবাংলার। সব বিল শোধ করা হয়ে গেছে।
গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা
পেট্রোবাংলা বলছে, এলএনজি আমদানি শুরুর পর থেকে লোকসান শুরু হয় সংস্থাটির। প্রতিবছর সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নিচ্ছে পেট্রোবাংলা। ২০১৮-১৯ সালে এলএনজি আমদানি শুরু হয়, ওই বছর ভর্তুকি ছিল ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এরপর এলএনজি আমদানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভর্তুকিও বাড়তে থাকে। গত অর্থবছরে তারা ভর্তুকি নিয়েছে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত পেট্রোবাংলা মোট ভর্তুকি নিয়েছে ৩৬ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। পেট্রোবাংলার হিসাবে গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিট গ্যাস সরবরাহে পেট্রোবাংলার খরচ হয়েছে ২৭ টাকা ৫৩ পয়সা। তারা বিক্রি করেছে ২২ টাকা ৯৩ পয়সায়। এর মানে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা ৬০ পয়সা।