অধ্যক্ষ দাবি করে প্রতিষ্ঠানে তালা, কার্যক্রম স্থবির
Published: 14th, February 2025 GMT
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শোলাগাড়ী ঈদগাহ আলিম মাদরাসার বহুল বিতর্কিত ভূয়া অধ্যক্ষ মিনহাজ উদ্দিনকে নানা অভিযোগে অবশেষে অপসারণ করেছে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। তবে অপসারণের পরও তিনি নিজেকে অধ্যক্ষ দাবি করে প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন, ফলে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে পড়েছে।
এ ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। অধ্যক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত মোজহারুল ইসলাম বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
জানা গেছে, মিনহাজ উদ্দিন ২০০৩ সালে তৃতীয় বিভাগে পাস করে সহকারী শিক্ষক (কৃষি) পদে যোগদান করেন, যদিও উক্ত পদে দ্বিতীয় বিভাগ বাধ্যতামূলক ছিল। তার বাবা ইদ্রিস আলী সরদার তখন ম্যানেজিং কমিটির সম্পাদক ছিলেন এবং প্রভাব খাটিয়ে ২০১২ সালে জাল সনদ ব্যবহার করে নিজেকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেন। তবে অধ্যক্ষ হওয়ার পরও তিনি সহকারী শিক্ষক হিসেবে বেতন-ভাতা উত্তোলন করতেন।
জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমে এসব অনিয়ম প্রকাশের পর মাদরাসা বোর্ড তদন্ত চালিয়ে তার জালিয়াতির প্রমাণ পায়। এতে তার এমপিও বন্ধসহ বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এছাড়া, এনটিআরসিএ-কে উপেক্ষা করে ২০১৯ সালে বিভিন্ন শূন্য পদে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে প্রায় কোটি টাকার বাণিজ্য করেন তিনি। লাইব্রেরিয়ান পদেও জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে, যেখানে শাহিদা বেগমের নামে অনুমোদন নিয়ে গোপনে শামিমা বেগম নামে অন্য একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর মিনহাজ উদ্দিনকে অপসারণ করে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে মোজহারুল ইসলামকে দায়িত্ব দেয়। তবে এ সিদ্ধান্ত মেনে না নিয়ে মিনহাজ উদ্দিন নিজেকে অধ্যক্ষ দাবি করে প্রতিষ্ঠানের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোজহারুল ইসলাম বলেন, মিনহাজ উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম করে আসছেন। তার কর্মকাণ্ডে প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। তিনি এখনো ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার চেষ্টা করছেন, যা খুবই দুঃখজনক।
অভিযুক্ত মিনহাজ উদ্দিন বলেন, আমাকে অন্যায়ভাবে অপসারণ করা হয়েছে। আমি উচ্চ আদালতে মামলা করেছি এবং রায়ের অপেক্ষায় রয়েছি। প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য তালা দিয়েছি, তবে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ বলেন, এভাবে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা জানান, আমরা অভিযোগ পেয়েছি এবং তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম দর স
এছাড়াও পড়ুন:
সত্য মিথ্যা যাচাই না করে শেয়ার করবেন না, মেসেজটা তৃণমূলে ছড়িয়ে দিন: সিইসি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, 'আমাদের একটা অভ্যাস হয়ে গেছে একটা নেতিবাচক সংবাদ দেখলেই যাচাই-বাছাই না করে শেয়ার করে দেওয়া হয়। অত্যন্ত ভিত্তিহীন সংবাদও আমরা শেয়ার করে দেই।'
সিইসি বলেন, 'দয়া করে সত্য মিথ্যা যাচাই না করে শেয়ার করবেন না। এই মেসেজটা তৃণমূলে ছড়িয়ে দিন। তথ্যটা যেন আগে যাচাই করে তারপরে শেয়ার করেন।'
আজ সোমবার রাজধানীর ভাটারায় আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নে (এজিবি) এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন সিইসি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ভুয়া সংবাদের প্রচার ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপপ্রয়োগ রোধে করণীয় সম্পর্কে তিনি এসব কথা বলেন।
থানা আনসার কোম্পানি/প্লাটুন সদস্যদের আনসার মৌলিক প্রশিক্ষণের (৪র্থ ধাপ) সমাপনী উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিইসি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো সংবাদ দেখা মাত্রই নাগরিকদের যাচাইবাছাই করতে আহ্বান জানান সিইসি। নিশ্চিত হওয়ার আগে শেয়ার না করতে বলেন তিনি।
জাতীয় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে আনসার ভিডিপির ভূমিকাকে মূল শক্তি বলে উল্লেখ করেন সিইসি। তিনি বলেন, 'এনারাই অধিক সংখ্যায় নিয়োজিত থাকেন। এবং আমাদের হিসেব করতে গেলে প্রথম এদেরকেই হিসেব করতে হয় যে, কতজন আনসার ভিডিপি সদস্য আমরা মোতায়েন করতে পারব। মূল কাজটা আঞ্জাম (সম্পাদন) দিতে হয় কিন্তু আনসার এবং ভিডিপির সদস্যদের।'
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ। নির্বাচনকালীন জনগণের নিরাপত্তা, ভোট কেন্দ্রের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা এবং সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণে আনসার বাহিনী সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছে বলে জানান তিনি। নির্বাচনে দেশজুড়ে প্রায় ৬ লাখ আনসার ও ভিডিপি সদস্য দায়িত্বপালন করবেন বলেন মহাপরিচালক।
অনুষ্ঠানে মহড়ায় ঢাকা মহানগর আনসারের চারটি জোনের অধীন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৩২০ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্য অংশ নেন। আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের সদস্যরা টহল, দায়িত্ব বণ্টন ও জরুরি প্রতিক্রিয়া অনুশীলনে অংশ নেন।
মহড়ায় ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জামাদি নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া, ভোটারদের শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে ভোট প্রদানে সহায়তা, জাল ভোট প্রতিরোধ, প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা এবং সেনা, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের সঙ্গে দ্রুত সমন্বয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন জোনের অধিনায়ক এবং প্রশিক্ষণ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।