প্রায় দুই বছর পর ময়মনসিংহের সাত ইউনিটে বিএনপির নতুন কমিটি
Published: 14th, February 2025 GMT
ময়মনসিংহের চারটি উপজেলা ও তিনটি পৌরসভায় বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলার হালুয়াঘাট উপজেলা ও পৌর বিএনপি, ধোবাউড়া উপজেলা বিএনপি, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা ও পৌর বিএনপি, নান্দাইল উপজেলা ও পৌর বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হয়।
প্রায় দুই বছর পর গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কমিটিগুলো প্রকাশ করেন উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার। কমিটি ঘোষণার পর তাৎক্ষণিকভাবে আনন্দমিছিল ও নেতাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
হালুয়াঘাটে আসলাম মিয়াকে আহ্বায়ক ও আবুল হাসনাত বদরুল কবিরকে সদস্যসচিব করে উপজেলা বিএনপির ১১৯ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৯২ সদস্যবিশিষ্ট হালুয়াঘাট পৌর বিএনপির আহ্বায়ক করা হয়েছে হানিফ মোহাম্মদ শাকের উল্লাহকে এবং সদস্যসচিব করা হয়েছে আবদুল আজিজ খানকে। ধোবাউড়া উপজেলা বিএনপিতে জি এম আজহারুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও আনিসুর রহমানকে সদস্যসচিব করে ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ঈশ্বরগঞ্জে লুৎফুল্লাহেল মাজেদকে আহ্বায়ক ও আমিরুল ইসলাম ভূঁইয়াকে সদস্যসচিব করে উপজেলা বিএনপির ১০২ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভা বিএনপির ৮৪ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে সায়েদুল হককে আহ্বায়ক ও নূরে আলমকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। নান্দাইল উপজেলায় ইয়াসের খান চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও মো.
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৩ অক্টোবর ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা ও পৌরসভায়, ৪ নভেম্বর ধোবাউড়ায়, ৫ নভেম্বর হালুয়াঘাট উপজেলা ও পৌরসভায় কর্মী সভা করে আগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে বিএনপি। দফায় দফায় নান্দাইল উপজেলা ও পৌরসভায় কর্মিসভার তারিখ দিলেও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তা হয়নি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ২০১৪ সালে করা কমিটি ২০২৩ সালের ৪ জানুয়ারি বিলুপ্ত করে উত্তর জেলা বিএনপি। ওই ঘটনার প্রায় দুই বছর পর কমিটি ঘোষণা করায় উচ্ছ্বসিত নেতা-কর্মীরা। তবে দীর্ঘদিন কমিটি না থাকায় একাধিক পক্ষ তৈরি হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত পদবঞ্চিত নেতাদের মধ্যে কিছুটা অসন্তোষ রয়েছে।
উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার বলেন, আড়াই বছর আগে কমিটি গঠন উপলক্ষে উত্তর জেলার উপজেলাগুলোয় কর্মিসভা করলেও আন্দোলনের কারণে কমিটি দেওয়া সম্ভব হয়নি। দলের ঐক্য, নির্বাচনমুখী রাজনীতি ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে কমিটি গঠন জরুরি হয়ে পড়ে। এ জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে তাঁরা সাংগঠনিক প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। দ্রুত উত্তর জেলার অন্যান্য ইউনিটের কমিটি ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে সব পক্ষের লোকজন নিয়ে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প র ব এনপ প রসভ য় ব এনপ র র কম ট ই বছর গঠন ক উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দর কাঠ ও ফুলের গামারি
ময়মনসিংহ শহরের ব্রহ্মপুত্র তীরের কাছারিঘাট ও শিল্পাচার্য জয়নুল উদ্যান সকালে প্রাতভ্র৴মণকারীদের পদচারণে মুখর থাকে। কয়েক দিন আগে হেঁটে ফেরার পথে জেলা নির্বাচন অফিসের পেছনে গামারিগাছে ফুল ফুটতে দেখলাম। এই গাছের পাতা শীতে ঝরে গিয়েছিল। বসন্তে পত্রশূন্য গাছে ফুল ফুটেছে। ফুল ফোটার পর আবার পাতা গজাচ্ছে। কাঠের জন্য লাগানো হলেও এর হলুদ ফুলও কিন্তু সুন্দর। গামারি ফুল ভ্রমরের খুব প্রিয়; কারণ, এই ফুলে বেশ মধু আছে। তাই গামারির আরেক নাম ভ্রমরপ্রিয়া। টিয়া ও কাঠবিড়ালিরও প্রিয় এই ফুল। ফুলের নিচের দিকটা খয়েরি বাদামি।
গামারি সবুজ ও ঘন পাতাবিশিষ্ট, দ্রুত বর্ধনশীল পত্রঝরা বৃক্ষ। গামারি কাঠের জন্য লাগানো হলেও এর ফুলও কম সুন্দর নয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Gmelina arborea, এটি Lamiaceae পরিবারের বৃক্ষ। ইংরেজিতে এই গাছ কান্ধার ট্রি, কাশ্মীর ট্রি, গুমার ট্রি, মালয় বুশ-বিচ, হোয়াইট বিচ, হোয়াইট টিক ইত্যাদি নামে পরিচিত। এ ছাড়া বাংলা নাম গামার, গাম্বার, গাম্ভারি, তার কাঠ, গাম্ভারিকা ইত্যাদি নাম রয়েছে। এর সংস্কৃত নামগুলো হলো মধুমতি, গাম্ভারি, সিন্ধুপর্ণী, ভাদ্রাপর্ণী, গামহার ইত্যাদি।
আদিনিবাস ভারতবর্ষ ও মিয়ানমার। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় জন্মে। ভারতের আসাম, দক্ষিণ বিহার, ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চল–সংলগ্ন এলাকায় এ গাছ হয়। বাংলাদেশের মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলায় বেশি দেখা যায়।
এই গাছ লম্বায় ১৫ থেকে ৩৫ মিটার উঁচু হয়। গাছের প্রশাখা ও কুঁড়ি রোমশ। বাকল সাদা বা উজ্জ্বল ধূসর। পাতা পানপাতার আকৃতির, ২০ থেকে ২৪ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। পাতার ওপর দিক উজ্জ্বল সবুজ, নিচে পাণ্ডুর, বোঁটা ৬ থেকে ১০ সেন্টিমিটার লম্বা। শীতে পাতা ঝরে। এটি অত্যধিক খরা–সহনশীল। বসন্তকালে পাতাহীন ডালে ডালে দেখা যায় গাঢ় হলুদ ফুল। পাঁচটি পাপড়ি থাকলেও মাঝের পাপড়িটি অন্যগুলোর চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ লম্বা। বড় পাপড়িটির লম্বা পতাকার মতো অংশটি গাঢ় হলুদ। ফুলের গোড়ার দিকে হলুদ রঙের পাশাপাশি দেখা মেলে লালচে-বাদামি ও খয়েরি রঙের। ফুলের অনেক মিষ্টি গন্ধ, ফুল ৩ থেকে ৩ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার লম্বা, ২ ভাগে বিভক্ত। এর পুষ্পমধু ভোমরাদের খুবই প্রিয়। গামারির ফল দেখতে গোলাকার, ডিম্বাকৃতির, ফলে এক-দুটি বীজ হয়। ফল তিন সেন্টিমিটার চওড়া, শাঁসাল, পাকলে হালকা হলুদ হয়। শীতের পর ফুল এবং তাঁর দুই মাস পর ফল হয়।
কাঠ হলুদ, খানিকটা লাল অথবা সাদা। কাঠ টেকসই, সহজে কাজ করা যায়। সেগুনের পরেই গামারি কাঠের স্থান। এ জন্য ইংরেজিতে একে হোয়াইট টিক বলে। এই কাঠ আসবাব নির্মাণের জন্য বিশেষ উপযোগী। খোদাইয়ের কাজ, তক্তা, বাক্স, চিরুনি, খেলনা, গাড়ি ও নৌকা এই কাঠ দিয়ে বানানো যায়। এই কাঠের প্লাইউড বেশ ভালো।
গামারির অনেক ভেষজ গুণ রয়েছে। কটু–তিক্ত রস, গুরুপাক, উষ্ণবীর্য, কফ ও ত্রিদোষনাশক, বিষদোষ দাহ, জ্বর, তৃষ্ণা ও রক্তদোষনাশক। এর ছাল এবং কাঠে আছে অনেক তিক্ত পদার্থ ও স্টেরোল। পাতার রসে আছে জীবাণুনাশক শক্তি। কচি পাতার রস গনোরিয়া ও কাশিতে উপকারী। শিকড় কৃমিনাশক ও কুষ্ঠরোগে উপকারী। ক্ষতের পুঁজ বের করে দেয়। ফল চর্মরোগ ও চুল ওঠা বন্ধ করার মহৌষধ। শিকড় কৃমিনাশক ও কুষ্ঠরোগে উপকারী। গামারিগাছের পাতা এবং ফল গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এগুলো পুষ্টিকর এবং প্রাণীদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
চয়ন বিকাশ ভদ্র: অধ্যাপক, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি কলেজ, ময়মনসিংহ