বাধার মুখে উত্তরায় বসন্ত উৎসব হয়নি: মানজার চৌধুরী
Published: 14th, February 2025 GMT
ঢাকার উত্তরায় জাতীয় বসন্ত উৎসব উদ্যাপন পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত ‘বসন্ত উৎসব’ হয়নি। আজ শুক্রবার পয়লা ফাল্গুনে উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরে এই উৎসব হওয়ার কথা ছিল। আয়োজকেরা বলছেন, ওখানকার কিছু মানুষের বাধার মুখে তাঁরা এই উৎসব করতে পারেননি।
আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় অনুষ্ঠিত ‘বসন্ত উৎসব’-এর সমাপনী বক্তব্যে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী এ কথা জানান।
৩১ বছর ধরে বসন্ত উৎসবের আয়োজন করে আসছে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদ্যাপন পরিষদ। এবার চারুকলা অনুষদের বকুলতলা, পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক ও উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরে তাদের বসন্ত উৎসব উদ্যাপনের কথা ছিল। তবে বকুলতলা ও বাহাদুর শাহ পার্কে এই উৎসব হলেও উত্তরায় হয়নি।
বকুলতলায় উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে মানজার চৌধুরী বলেন, যথারীতি পুলিশের অনুমোদন নেওয়া, সিটি করপোরেশনে টাকা জমা দেওয়াসহ নিয়ম অনুযায়ী সবকিছু করেছেন। কিন্তু ‘ওখানকার (উত্তরার) কিছু মানুষের বাধার মুখে’ এই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করতে পারেননি।
‘কিছু মানুষ’ কারা তা মানজার চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বলেননি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
চারুকলায় বসন্ত উৎসবের সমাপনী বক্তব্যে মানজার চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে সব ফুল ফুটুক। শুধু একটি ফুল দিয়ে বাগান সাজালে সেটি বাগান হয় না। বাগানে শত ফুল ফুটতে দিতে হবে। এই ফোটার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সেটিই তবে সবার বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের মূল বিষয় ছিল সমতা, বাংলাদেশে সেটি এখনো প্রতিষ্ঠা হয়নি বলে আক্ষেপ জানান ।’
মানজার চৌধুরী আরও বলেন, ‘যখন দেখা যায় জয়পুরহাটে মেয়েদের খেলা বন্ধ হয়ে যায়, সাতক্ষীরায় উদীচীর স্টল পুড়িয়ে দেওয়া হয়, টাঙ্গাইলের মধুপুরে লালনের উৎসব বন্ধ হয়ে যায়, তখন মনটা ব্যথিত হয়। তখন সংস্কৃতি হুমকির মুখে দাঁড়ায়। এই সংস্কৃতি আজকের নয়, হাজার বছর লালন করে দেশবাসী এখানে নিয়ে এসেছে। এই সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে মুক্তিযুদ্ধের জন্য, বাংলাদেশের জন্য।’
অনুষদের বকুলতলায় ‘বসন্ত উৎসব’-এর সমাপনী বক্তব্য দেন জাতীয় বসন্ত উৎসব উদ্যাপন পরিষদের সহসভাপতি কাজল দেবনাথ। তিনি বলেন, ‘কোকিল সবার জন্য গান করে, ফুল সবার জন্য ফোটে। পাহাড়ি, বাঙালি, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, বিভিন্ন ভাষাভাষী—সবাই মিলে শান্তিতে বাংলাদেশে বাস করতে হবে। সাম্য যেন অধরা না থাকে। বাংলাদেশ দেশ হোক সবার জন্য।’
বকুলতলায় ‘বসন্ত উৎসব’-এর সভাপতিত্ব করেন জাতীয় বসন্ত উৎসব উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি স্থপতি সফিউদ্দিন আহমদ।
বকুলতলায় উৎসবসকাল সাড়ে ৭টায় বকুলতলায় রাগ বসন্তে ‘বসন্ত উৎসব ১৪৩১’ শুরু হয়। রাগ বসন্ত পরিবেশন করেন সুস্মিতা দেবনাথ। সরোদে ছিলেন ইসরা ফুলঝরি খান ও তবলায় আপন বিশ্বাস।
তারপর একে একে চলে দলীয় সংগীত, একক সংগীত, দলীয় নৃত্য, একক আবৃত্তি। সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী, নৃত্যম, স্বপ্নবিকাশ কলা কেন্দ্র, তপস্যা, বেনুকা ললিতকলা কেন্দ্র, বাংলাদেশ গৌড়ীয় নৃত্য একাডেমি, মম কালচারাল একাডেমিসহ অনেক সংগঠন ও ব্যক্তি এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর কয়েকটি দলও এসব অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন। টানা চলা এই অনুষ্ঠান শেষ হয় দুপুর ১২টায়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নায়লা তারাননুম চৌধুরী ও আহসান দিপু।
বকুলতলার এই বসন্ত উৎসব দেখতে ভোর থেকেই মানুষের সমাগম ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে মানুষের উপস্থিতিও। শিশু, কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষের আগমন ছিল এখানে। সবার সাজেও ছিল বসন্তের ছোঁয়া। হলদে শাড়িতে কেউ খোঁপায় গুঁজেছেন হলুদ গাঁদা, কেউবা কানে। আবার কেউ হাতে পরেছেন গাঁদা ফুলের মালা। অনেকের মাথায়ও ছিল বাহারি ফুলের রিং। পুরুষদের অনেকের পরনে ছিল পাঞ্জাবি। তাতে ছিল হলুদের ছোঁয়া। নাচের তালে তালে ছিল নানা রঙের খেলাও।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কানাডায় নির্বাচন: মার্ক কার্নির লিবারেল সদর দপ্তরে উৎসব শুরু
কানাডায় ভোট গ্রহণ শেষে চলছে গণনা। ভোটের চূড়ান্ত ফলাফল আসতে আরও খানিকটা সময় লাগবে। তবে এরই মধ্যে দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির দল লিবারেল পার্টির সদর দপ্তরে উৎসব শুরু হয়ে গেছে। কারণ, দেশটির রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম সিবিসি বলেছে, এবার লিবারেল সরকার হতে চলেছে।
কানাডার ৩৪৩ আসনের হাউস অব কমন্সে লিবারেল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে, নাকি তাদের সংখ্যালঘু সরকার গঠন করতে হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে মার্ক কার্নিই যে প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, তা অনেকটা নিশ্চিত হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
বিবিসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, লিবারেল ১৫৬টি আসনে এগিয়ে আগে। একক সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার গঠন করতে চাই ১৭২টি আসন। খুব একটা পিছিয়ে নেই প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টি। দলটি ১৪৭ আসনে এগিয়ে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, আমাদের নির্বাচন থেকে দূরে থাকুন। কানাডা সব সময় গর্বিত, সার্বভৌম ও স্বাধীন দেশ থাকবে এবং আমরা কখনো ৫১তম অঙ্গরাজ্য হব না।—পিয়েরে পলিয়েভর, বিরোধী কনজারভেটিভ পার্টির নেতাপুরোপুরি বদলে যাওয়া এক নির্বাচনী পরিবেশে গতকাল সোমবার ভোট দিয়েছেন কানাডার জনগণ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপ এবং কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত করার ইচ্ছা দেশটিতে নির্বাচনের আগে প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছিল।
ট্রাম্পের এ ধরনের হুমকি কানাডায় দেশপ্রেমের জোয়ার সৃষ্টি করেছে। এমন পরিস্থিতিতে লিবারেল পার্টির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী মার্ক কার্নির প্রতি জনসমর্থন বেড়ে যায়।
লিবারেল ১৫৬টি আসনে এগিয়ে আগে। একক সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার গঠন করতে চাই ১৭২টি আসন। খুব একটা পিছিয়ে নেই প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টি। দলটি ১৪৭ আসনে এগিয়ে।অথচ যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ ও ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক কথাবার্তা শুরু হওয়ার আগে জরিপে প্রতিদ্বন্দ্বী পিয়েরে পলিয়েভরের কনজারভেটিভ পার্টি থেকে সামান্য পিছিয়ে ছিল কার্নির লিবারেল দল। ট্রাম্প কানাডাকে নিয়ে আক্রমণাত্মক কথা বলা শুরু করলে কানাডীয়দের মধ্যে দেশপ্রেমের জোয়ার ওঠে এবং জরিপের পূর্বাভাসে হঠাৎ বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
ভোটের দিন সকালেও ট্রাম্প কানাডাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন। ট্রাম্প লিখেছেন, কানাডা যদি যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম কাঙ্ক্ষিত অঙ্গরাজ্য হয়, তবে শূন্য শুল্কের সম্মুখীন হবে।
লিবারেল পার্টির সদর দপ্তরে সমর্থকদের উল্লাস