বিশ্ব ভালোবাসা দিবস নিয়ে নানা মত আছে। আছে মিথ ও কিংবদন্তি। মূলের গল্প যাই থাক আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এই দিসবটি ভালোবাসার মানুষকে আরও ভালোবাসার প্রেরণা দিয়ে যায়। কেউ কেউ প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ার জন্য বেছে নেন দিনটি। আবার কেউ ভালোবাসাকে রাঙিয়ে নিতে প্রিয়জনকে অনেক কিছু উপহার দেন। কীভাবে এসেছে দিনটি আজ যানা যাক সেই কথা।
ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডো বুল্ডারের অধ্যাপক নোয়েল লেনস্কির মতে, আজ থেকে প্রায় দুই হাজার বছর আগে তৎকালীন রোমান সাম্রাজ্যে ভালোবাসা দিবস উদ্যাপন শুরু হয়। সে সময় ভালোবাসা আর প্রাচুর্য লাভের আশায় ৩ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি পালিত হতো লুপারক্যালিয়া নামের এক উৎসব। যদিও উদ্যাপনের সংস্কৃতিতে ভালোবাসার লেশমাত্র ছিল না, ছিল আদিম বর্বরতা। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের নামকরণ ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ হওয়ার ক্ষেত্রে রোমানদের ভূমিকা রয়েছে।
রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্লদিয়াস ২৭০ সালের কোনো এক সময়ে সাম্রাজ্যের তরুণদের বিয়ে না করার নির্দেশ দেন। কিন্তু সম্রাটের আদেশ অমান্য করে ভালোবাসার বাণী প্রচার শুরু করেন ভ্যালেন্টাইন নামে এক সাধু। সম্রাটের নির্দেশ অমান্য করায় সাধু ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। পঞ্চম শতাব্দীর মাঝামাঝি, পোপ গেলাসিয়াস রোমানদের বর্বর উৎসবের ইতি টানা এবং সাধু ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগকে স্মরণীয় করার উদ্দেশ্যেই ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখকে ভালোবাসা দিবস ঘোষণা করেন।
ভালোবাসা দিবসটি বিশ্বব্যাপী খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের মধ্যে দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়ে যায়। অবশ্য বর্তমান যুগে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের সব ধর্মের মানুষ নিজেদের সংস্কৃতির সঙ্গে মিলিয়ে ভালোবাসা দিবস উদযাপন করে থাকেন। সময়ে-সময়ে বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠান ভালোবাসা দিবস উদযাপনে নতুনত্ব যোগ করেছেন। দিবসকে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার কৃতিত্বটা শুভেচ্ছা কার্ড তৈরিকারী প্রতিষ্ঠান হলমার্কের। ১৯১৩ সাল থেকে হলমার্ক যখন ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে হাজার হাজার কার্ড তৈরি শুরু করে, মূলত তখন থেকেই দিবসটির কথা ব্যাপকভাবে প্রচার পায় এবং ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের প্রতিটি দেশে।
সূত্র: ন্যাশনাল পাবলিক রেডিও এবং হিস্ট্রি ডটকম অবলম্বনে
ঢাকা/স্বরলিপি
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ভালো ফলনের আশায় গাছকে খাওয়ান তাঁরা
চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাহাড়ি প্রদেশ গুইঝৌতে প্রাচীনকাল থেকে ‘গেলাও’ জনগোষ্ঠীর বসবাস। ভিয়েতনামেও এই জনগোষ্ঠীর মানুষ বাস করেন। চীনে তাঁদের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৭৭ হাজার।
কৃষিনির্ভর গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা আজও প্রাচীনকালের পুরোনো এক ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন। বছরের নির্দিষ্ট দিনে তাঁরা গাছকে খাওয়ান, যা চীনা ভাষায় ‘ওয়েই শু’ রীতি নামে পরিচিত।
এই প্রাচীন রীতি মূলত একধরনের প্রার্থনা। স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস, এতে প্রকৃতি তুষ্ট হয়, ফসল ভালো হয়, পরিবারে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। প্রতিবছর দুটি উৎসবের সময় এই অনুষ্ঠান পালন করা হয়—চীনা নববর্ষে, যা বসন্ত উৎসব নামে পরিচিত। আর গেলাও নববর্ষে, যা চান্দ্র পঞ্জিকার তৃতীয় মাসের তৃতীয় দিনে পালিত হয়।
অনুষ্ঠানের দিন সকালে আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসী পাহাড়ের ঢালে জড়ো হন। তাঁরা সঙ্গে করে চাল থেকে তৈরি মদ, শূকরের মাংস, মাছ ও লাল আঠালো চাল নিয়ে আসেন। পাহাড়ে পৌঁছে প্রথমে আতশবাজি পোড়ানো হয়। এতে করে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
এর মধ্যেই একটি পুরোনো ও শক্তিশালী গাছ বাছাই করা হয়। এরপর সবাই ধূপ জ্বালিয়ে নতজানু হয়ে প্রার্থনা করেন। সবশেষে মূল পর্ব ‘গাছকে খাওয়ানো’ শুরু হয়।
একজন কুঠার বা ছুরি দিয়ে গাছে তিনটি জায়গায় ছোট করে কেটে দেন। সেই ক্ষতস্থানে চাল, মাংস ও মদ ঢেলে দেওয়া হয়, যাতে গাছ তাঁদের দেওয়া ভোগ গ্রহণ করতে পারে। পরে ওই জায়গা লাল কাগজে মুড়ে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া গাছের গোড়া ঘিরে আগাছা পরিষ্কার করা হয়, মাটি আলগা করে দেওয়া হয়। এতে নতুন জীবনের বার্তা মেলে বলে মনে করেন গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা।
যে গাছকে খাওয়ানো হয়, সেটি যদি ফলদ হয়, তাহলে ভোগ দানকারীরা একটি আশাব্যঞ্জক শ্লোক উচ্চারণ করেন। বলেন, ‘তোমায় চাল খাওয়াই, ফল দিয়ো গুচ্ছ গুচ্ছ; তোমায় মাংস খাওয়াই, ফল দিয়ো দলা দলা।’