অমর একুশে বইমেলা ২০২৫-এ প্রকাশ হয়েছে কবি ও গল্পকার অঞ্জন আচার্যের ইতিহাসধর্মী গল্পগ্রন্থ ’সাদা রাত’ [১৯৭২—৭৫ সাল : বাংলাদেশের আবছায়া অধ্যায়]। বইটি প্রকাশ করেছে বিদ্যাপ্রকাশ। এর প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এষ। বইটির মূল্য ২২০ টাকা।

বইটি পাওয়া যাচ্ছে বইমেলার সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণের বিদ্যাপ্রকাশের স্টলে [স্টল নং : ১২৯—১৩২]।

খন্দকার মোশতাক, সিরাজ সিকদার, সর্বহারা পার্টি, রক্ষীবাহিনী, চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ, বাকশাল, তাজউদ্দীন আহমদ, খালেদ মোশাররফ, কর্নেল তাহের, জেলহত্যা— বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন বহুল আলোচিত ১০ ব্যক্তি বা ঘটনা অবলম্বনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ১০টি গল্প। 

আরো পড়ুন:

শনিবার বইমেলার সময় পরিবর্তন

বইমেলায় সাদিয়া সুলতানার সপ্তম উপন্যাস ‘উঠল্লু’

বইটি সম্পর্কে লেখক অঞ্জন আচার্য বলেন, “এই সময়কে ধরে এর আগে কোনো সিরিজ গল্প লেখা হয়েছে বলে জানা নেই। কারো প্রতি পক্ষপাতি হয়ে সত্য-মিথ্যা মিলিয়ে-মিশিয়ে লেখা নয়, কিংবা সত্যকে আড়াল করে কেবল চাটুকারিতা নয়। অন্যদিকে প্রতিপক্ষের ভূমিকায় নেমে একপেষে নিন্দামন্দ নয়, বরং সত্যকে সৎসাহসের সঙ্গে বলার লক্ষ্যে দেশের ইতিহাস ও সাধারণ মানুষের প্রতি দায় থেকেই এই বই লেখা। এটি নিছক কোনো গল্পের বই নয়। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের এমন এক আবছায়া-অন্ধকারময় সময়ে আলো ফেলা হয়েছে, সেই আলোয় অনেকের চোখেই অনেক কিছু ধরা পড়বে, পড়বেই।”

বইটির ভূমিকায় লেখক ‘আত্মপক্ষ সমর্থনে’ লিখেছেন, “১৯৭২ সাল। সদ্য স্বাধীন দেশ। নবজাতকের গায়ে তখনো লেগে আছে মাতৃগর্ভের রক্ত। এরপরের ইতিহাস কালের গর্ভে প্রায় বিলীন। মুক্তিযুদ্ধের পর লেখা হয় ৭৫-এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যার ঘটনা। মাঝখানের সাড়ে তিন বছর যেন কোথাও, কখনোই ছিল না। মাঝেমধ্যে ‘রক্ষীবাহিনী’ বা ‘বাকশাল’ শব্দ দুটি উচ্চারিত হতে শোনা গেছে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার উদ্দেশ্যে। কিন্তু কেন, কী উদ্দেশ্যে এর ব্যবহার হয়েছে, তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা মেলেনি কোথাও। ‘চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ’ ছিল দূরে শোনা কোনো গল্প। মা বলতেন, লবণের দাম এত ছিল যে সাদা ভাতে লবণ মেখে খাওয়াই কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে। ফেলে দেওয়া ফেন ভিক্ষা চাইতে দূরদূরান্ত থেকে পঙ্গপালের মতো ছুটে আসে একদল কঙ্কালসার মানুষ। ইতিহাস সাক্ষী, ইতিহাসের ভেতরেও চাপা পড়ে থাকে অজানা অনেক ইতিহাস। কী ঘটেছিল সেই সব দিনে? আমার কৌতূহলী মন তার অনুসন্ধান করে নিরন্তর। চলে প্রস্তুতিপর্ব। কিন্তু ইতিহাস ঘাঁটতে গিয়ে অধিকাংশই বইয়ে মেলে চাটুকারিতা, নয়তো নিন্দামন্দে ভরা গালগল্প। সেখান থেকে ছেঁকে সত্যটা বের করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে। তবে পিছপা হই না। ইতিহাসের দায় থেকে, লেখকের দায় থেকে এই বই লেখার দৃঢ়তা থেকে আমি সরে যাইনি। চূড়ান্ত অর্থে প্রতিটি লেখকেরই সমাজের প্রতি, সর্বোপরি দেশের আপামর মানুষের প্রতি দায় থাকে। সেই দায় শোধবার জন্যই এই বই লেখা। কাউকে নায়ক, মহানায়ক বা ভিলেন হিসেবে দেখানোর কোনো অভিপ্রায়ই আমার নেই। সত্যের নিক্তিতে যার যতটুকু প্রাপ্য, স্বল্প পরিসরে তাকে ততটুকুই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। 
আমি বরাবরই ইতিহাসের নিবিষ্ট পাঠক। নিরবচ্ছিন্ন নয়, বরং বিচ্ছিন্ন কিছু লেখা পড়ার পর একদিন হঠাৎ মাথায় আসে এ গল্পগুচ্ছ লেখার পরিকল্পনা। দীর্ঘদিন ধরে চলে এর প্রস্তুতিপর্ব। এক এক করে সংগ্রহ করি বইপত্র। পাশাপাশি চলে পুরোনো পত্রিকা ঘাঁটা, ইন্টারনেটে খোঁজ। যখন যেখানে যা পাই, টুকে রাখি। চরিত্রগুলো এক এক করে সাজাই। ইতিহাসের একেকটি চরিত্র বা ঘটনাকে অবলম্বন করেই একেকটি গল্প লিখতে শুরু করি। চলমান পাঠক্রমের ভেতর দিয়ে নিজের অমীমাংসিত প্রশ্নের উত্তর খুঁজি। যেমন : আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী ও দলের জ্যেষ্ঠ নেতা খন্দকার মোশতাক কেন, কীভাবে ক্ষমতা দখল করলেন? সে সময় চরমপন্থী নেতা সিরাজ সিকদার ও তাঁর দল সর্বহারা পার্টির ভূমিকা কী ছিল? রক্ষীবাহিনী কেন গঠন করা হলো, তাদের নিয়ে কেন এত বিতর্ক? চুয়াত্তর সালে কেন দুর্ভিক্ষ হলো? কেন একদলীয় শাসনব্যবস্থা ‘বাকশাল’ গঠন করলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান? তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নিবিড় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে ফাটল কেন ধরল? কী কারণে তাঁদের দুজনের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হলো, কেন একসময় বাধ্য হয়ে তাজউদ্দীনকে মন্ত্রিপরিষদ থেকে পদত্যাগ করতে হলো? জেলখানার মতো নিরাপদ জায়গায় আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে কেন ও কীভাবে হত্যা করা হলো? ৪ নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ কীভাবে ক্যু করলেন, এরপর মাত্র তিন দিনের মাথায় ৭ নভেম্বর তাঁর দুই সহযোগী কর্নেল নাজমুল হুদা, লেফটেন্যান্ট কর্নেল হায়দারকে হত্যার পর পাল্টা ক্যু হলো, সে সময় কর্নেল তাহের ও তাঁর দল জাসদ গণবাহিনীর কী ভূমিকা ছিল? ইতিহাসের এই অধ্যায়কে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টা করেছি। তবে যেহেতু এটা ফিকশন বই, তাই ঐতিহাসিক চরিত্র ও প্রতিষ্ঠানের নামে কিছুটা পরিবর্তন বা নাম-সংক্ষেপ করেছি। যদিও পড়ামাত্রই পাঠক সেই সব চরিত্রের সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করতে পারবেন। বইটিকে বলা যেতে পারে বাস্তব ইতিহাসের বর্ধিতাংশ। আমার কল্পনার ভেতর সেই বধিতাংশ তৈরি হয়েছে। একজন গল্পকার শুধু বাস্তব নিয়ে কাজ করেন না। বাস্তবতার ওপর দাঁড়িয়ে ভিন্ন ভাবনার জগৎ তৈরি করেন। এখানেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।”

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ত জউদ দ ন কর ন ল বইম ল

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যু সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব: সালাহউদ্দ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যুর সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব।’’

তিনি মনে করেন, আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান এলে যেকোনো অসাংবিধানিক প্রক্রিয়া ঠেকানো যাবে।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘‘আগামী নির্বাচনকে যদি অনিশ্চিত করা হয় বা বিলম্বিত করা হয়, তাহলে তার সুযোগ নেবে ফ্যাসিবাদী বা অসাংবিধানিক শক্তি। এর পরিণতি জাতি অতীতে বহুবার ভোগ করেছে। আমরা আবার সে পরিস্থিতি চাই না।’’

অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে পৃথক এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতেই সাংবিধানিকভাবে এই সরকার গঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সে দেওয়া সেই মতামত এখনো বহাল আছে। এর বিপরীতে সুপ্রিম কোর্ট কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। তাই এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা আসলে রাজনৈতিক বক্তব্য, এর কোনো আইনি ভিত্তি নেই।’’

সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘যেকোনো সাংবিধানিক আদেশ জারি হলে তা আগামীকাল বা পরশু চ্যালেঞ্জ হতে পারে। আমরা এমন খারাপ নজির জাতির সামনে আনতে চাই না। তাই সমাধানের বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করেছি। সবাইকে বিবেচনায় নিতে আহ্বান জানাচ্ছি।’’

পিআর পদ্ধতি প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের অধিকার আছে। তবে পিআর পদ্ধতি চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়, শেষ পর্যন্ত জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে।’’

তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘‘পিআর পদ্ধতিতে ঝুলন্ত পার্লামেন্টের ঝুঁকি থেকে যায়। তাতে রাষ্ট্র ও জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ সম্ভব হয় না। আমরা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যেতে পারি না।’’

সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘জনগণই হলো সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। এই দেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে এবং বারবার গণতন্ত্রকে সংকট থেকে উদ্ধার করেছে।’’

আগামী সংসদে কিছু মৌলিক বিষয়ে সংশোধনের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন তিনি বলেন, ‘‘আমরা কিছু বিষয়ে ইতোমধ্যে একমত হয়েছি। তবে, ঐকমত্য কমিশনের সনদের ভেতরে যেসব পরিবর্তন হবে, সেগুলোতে অবশ্যই গণভোট নিতে হবে।’’

ঢাকা/আসাদ/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খাজা শরফুদ্দীন চিশতির মাজারে হাত দিলে পরিণাম হবে ভয়াবহ: আহলে সুন্
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যু সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব: সালাহউদ্দ
  • যারা জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলকে নিষিদ্ধ চায়, তারা আদালতে অভিযোগ দিতে পারে: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • প্রাথমিকে গানের শিক্ষক বাদ দিয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে
  • মাঠের জবাব মাঠে দেওয়া হবে: সালাহউদ্দিন 
  • পনেরো বছরে থেমে গেল শিশুশিল্পীর জীবন
  • পাকিস্তানে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে ৫ সেনা নিহত
  • আলোচনা অব্যাহত থাকা অবস্থায় কর্মসূচি দেওয়া স্ববিরোধিতা মনে করছে বিএনপি