পানির ন্যায্য হিস্যা ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। আগামী সোমবার তিস্তার লালমনিরহাট প্রান্তে ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’– স্লোগানে এ কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার রংপুর নগরীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর বিভাগ) আসাদুল হাবীব দুলু। তিনি জানান, ‘তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের’ ব্যানারে বৃহত্তর রংপুরে পাঁচ জেলায় নদীপারে ১১টি স্থানে অবস্থান কর্মসূচি হবে। মঙ্গলবার রাতে সমাপনী সমাবেশে লন্ডন থেকে সবগুলো পয়েন্টে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি বক্তৃতা করবেন বলে জানান আয়োজক সংগঠনের এই প্রধান সমন্বয়ক।

জানা যায়, তিস্তা তীরবর্তী রংপুরের কাউনিয়া সেতু, গঙ্গাচড়ার মহিপুর সেতু, তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টসহ লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারীর ১১ পয়েন্টে তাঁবু খাটিয়ে অবস্থান করবেন নেতাকর্মীরা। এ সময় নদীপারের মানুষের সংগ্রামী জীবন, আনন্দ-বেদনা নাটক ও সংগীতের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে। বিএনপি নেতাদের ভাষ্য, এসব কর্মসূচির মাধ্যমে দাবি আদায়ে স্থানীয়রা সংগঠিত হতে পারবে। তিস্তা ইস্যু আন্তর্জাতিক পরিসরেও ছড়িয়ে পড়বে।

তিস্তাপারে কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি চলছে। রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলায় মাইকিং, গণসংযোগ ও পদযাত্রা হচ্ছে। গ্রামেও সাজ সাজ রব। তিস্তাপারে রাত কাটানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নদী গবেষকদের নিয়ে সভা-সেমিনার ছাড়াও বড় পর্দায় সিনেমা দেখানো হবে। ভাওয়াল ও পালাগানে মুখর থাকবে ১১ পয়েন্ট। প্রতিটি পয়েন্টে দিনে ঘুড়ি উড়ানো ও রাতে মশাল প্রজ্বালন করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে তিস্তা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টার সমালোচনা করে আসাদুল হাবীব বলেন, ‘সম্প্রতি দুই উপদেষ্টা সরেজমিন পরিদর্শন শেষে তিস্তার ভাঙনরোধে দ্রুত কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন। আগে এ নিয়ে ব্যাপক কাজ হলেও তা কোনো কাজে লাগেনি। আবারও ভাঙনরোধের নামে জনগণের করের টাকার অপচয় আমরা চাই না। বিলম্ব হলেও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং পানির ন্যায্য হিস্যা সম্মিলিতভাবে আদায় করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘ভারতের কাছে তিস্তার পানি নয়, ক্ষমতা চেয়েছেন পতিত শেখ হাসিনা। তাদের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে তিস্তা নিয়ে রংপুর অঞ্চলের মানুষের আকাঙ্ক্ষার দাবি কখনও গুরুত্ব পায়নি। ভারতের আপত্তির কারণে আওয়ামী লীগ সরকার চীনের অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে আমরা বাকস্বাধীনতা পেয়েছি। রংপুরের মানুষ তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে জেগে উঠেছে। অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে তিস্তার পানি নিয়ে আমাদের সঙ্গে ভারতের বৈষম্যের বিষয় গোটা বিশ্ব জানবে।’

সংবাদ সম্মেলনে রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শামসুজ্জামান সামু, সদস্য সচিব মাহফুজ উন নবী ডন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকু, বিএনপি নেতা এমদাদুল হক ভরসা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ ব এনপ র

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ