‘বিআরটিএ অসহায় যাত্রীদের সিএনজি চালকদের হাতে তুলে দিয়েছে’
Published: 16th, February 2025 GMT
মিটারে না চালানোর এক দফা দাবিতে আন্দোলনকারী সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালকদের কাছে নতিস্বীকার করে, মিটারের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কারী অটোরিকশার বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশনা বাতিল করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) অসহায় যাত্রীদের সিএনজি চালকদের হাতে তুলে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, গত সরকারের আমলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে ১৩ হাজার করে ২৬ হাজার ৯৯৬টি সিএনজিচালিত অটোরিকশার রিপ্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ায় তৎকালীন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং তার পরিবারের আশীর্বাদপুষ্ট বিআরটিএর কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, সিএনজি অটোরিকশা মালিক সমিতি, ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগ, অটোরিকশা উত্তরা মোটরের কিছু ডিলার মিলে ভয়াবহ সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। তারা সিএনজি অটোরিকশার রিপ্লেসমেন্ট খাত থেকে প্রায় ১২০০ কোটি টাকার দুর্নীতি করেছে। এই কারণে ৩ লাখ টাকার এক একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা এখন ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা।
প্রেস বার্তায় আরো জানানো হয়, ওবায়দুল কাদেরের পরিবার এই খাতে সরাসরি জড়িত থাকায় সেসময়ে কেউ টু শব্দ করার সাহস পায়নি। ওবায়দুল কাদের আত্মগোপনে চলে গেলেও সিএনজি অটোরিকশা খাতের এই আওয়ামী দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট এখনো সক্রিয় রয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে সিএনজিচালিত অটোরিকশা রিপ্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত বিআরটিএর শীর্ষ কর্মকর্তারা গত এক দশক ধরে এখনো ঘুরেফিরে ঢাকা-চট্টগ্রামে স্বপদে বহাল রয়েছে। তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে উল্লেখিত দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট নানা আন্দোলন উস্কে দিচ্ছে। তারা একেকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে সোনার ডিম পাড়া হাসের মতো মনে করেন। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী এই সিন্ডিকেটটি বর্তমান সরকারের সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শিথিলতা, সরকারের দুর্বলতাকে পুঁজি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টায় লিপ্ত।
এতে আরো বলা হয়, এই সিন্ডিকেটের নির্দেশে সিএনজি অটোরিকশা খাতকে আলোচনায় রেখে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের লক্ষ্যে বিআরটিএকে দিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা মিটারে না চালালে ৫০ হাজার টাকা জরিমানার পুরোনো আইনটি আবারো নতুন করে প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করার ব্যবস্থা করে। আইন জারির পর পর কতিপয় সিন্ডিকেটধারী সিএনজি অটোরিকশা মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা চালকদের উস্কে দিয়ে আজ সকাল থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা বন্ধ রেখে নগরজুড়ে তাণ্ডব চালায়। এমন পরিস্থিতিতে বিআরটিএ এই সিন্ডিকেটের কাছে নতিস্বীকার করে অসহায় যাত্রীদের তাণ্ডব চালানো সিএনজি অটোরিকশার চালকদের হাতে তুলে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
এসব বিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির উদ্যোগে আগামীকাল সকাল ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন হবে বলেও জানানো হয়েছে।
ঢাকা/আসাদ/এনএইচ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চ লকদ র ব আরট
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।