পলো দিয়ে মাছ ধরা উৎসব হচ্ছে গ্রামবাংলার একটি ঐতিহ্য। সেই ঐতিহ্য উৎসব পালনে প্রতিবছর এই সময় এলেই কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী কটকবাজার এলাকায় নানা স্থান থেকে গোমতির পাড়ে জড়ো হন শত শত মানুষ।
কালের বিবর্তনে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ উৎসব আগের মতো জাঁকজমক না হলেও গান ও হৈ-হুল্লোড়ে কোনো কমতি ছিল না গোমতিতে। উৎসব দেখতে ভিড়ে করেন উৎসুক জনতা। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যায় মৎস্য শিকারিদের ভিড়।
রবিবার (১৬ ফ্রেরুয়ারি) দুপুর, গোমতি নদীর কটকবাজার এলাকায় চারদিকে ফাগুনের ঝিরিঝিরি হাওয়া বইছে। ধুলো উড়ছে। গোমতীর পাড়ে জড়ো হয়েছেন বেশ কয়েকজন। কারও হাতে পলো, কারও হাতে কনুই জাল। কেউবা এসেছেন বেড় জাল নিয়ে।
বছরের ফাল্গুন মাসে গোমতী নদীর পানি কমে তলানিতে জমা হয়। তখন এর বুকে চলে মৎস্য শিকার উৎসব। এমনই এক উৎসবে যোগ দিতে আজ রবিবার জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে মৎস্য শিকারিরা ভিড় জমান।
কেউ কনুই জাল ছুড়লেন। কেউ হাতের পলো চেপে ধরলেন পানিতে। কিছুক্ষণ পরই শোনা গেল উল্লাস। কারও জালে ধরা পড়ছে কার্প, কারও জালে বাগাড়। কেউ পলোতে চেপে ধরছেন বড় রুই মাছ।
চৌদ্দগ্রাম থেকে আসা আমিন মিয়া গোমতীর টিক্কারচর ব্রিজের নিচে অন্তত ৭ কেজি ওজনের একটি কার্প মাছ পেয়েছেন। তিনি বললেন, ‘‘আমি যহন পলোডা লইয়া বাড়িত থাইক্কা আই হেসুমকালা আমার মাইয়াডা কয়, আব্বা দোয়া পইড়া দিলাম। তুমি একটা বড় মাছ পাইবা। আমার মাইয়ার কথাডা ফলছে। মাইয়ার জামাইডা বাইত আইছে। এত্ত বড় মাছটা দেখলে অক্করে বেজায় খুশি হইবো।’’
বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যায় মৎস্য শিকারিদের ভিড়।
কালের পরিক্রমায় নদীতে মাছের সংখ্যা কমে এলেও মৎস্য শিকারিদের উৎসবে ভাটা পড়েনি এতটুকু। হুল্লোড় এবং মজায়ও ছিল না কোনো ভাটা।
নাঙ্গলকোট উপজেলার রায়কোট থেকে আসা শৌখিন শিকারি কালা মিয়া বলেন, ‘‘দুই ঘণ্টা পলোডা চাপছি। আৎকা একটা লাড়া দিল। আরও চাপ দিয়া ধরছি। আমার ভাই শামীম আর আমি চার কেজি ওজনের মাছটা পাড়ো তুলছি।’’
দেবিদ্বার থেকে আসা কৃষক রহমত মিয়া বলেন, ‘‘চার কেজি ওজনের একটা বাগাড় মাছ পাইছি। মানুষে বাগাড়টা কিনতে চায়। আমি বেচি নাই। মাছতো বেচতাম পাইরাম কিন্তু কিন্না খাইতাম পারতাম না। টেকার লোভ করি নাই।’’
এই বিষয় ইতিহাসবিদ ও গবেষক আহসানুল কবীর বলেন, ‘‘গোমতীতে মাছ ধরার উৎসবটি আমাদের শত বছরের ঐতিহ্য। একসময় এই নদীতে বড় বোয়াল, বাগাড়, চিতল, কালিবাউশ, রুই-কাতলা পাওয়া যেত। সেগুলো নগরীর রাজগঞ্জ বাজারে বিক্রি হতো।”
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক সুমি আক্তার বলেন, “সময়ের পরিক্রমায় কমেছে গোমতীর পানি ও মাছের আনাগোনা। এখন যৎসামান্য কিছু মাছ পাওয়া যায়। যদি গোমতীকে শাসন না করে পরিকল্পনা অনুযায়ী খনন করা যেত, তাহলে গোমতী তার আগের রূপ ফিরে পেত এবং জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ হতো।’’
ঢাকা/রুবেল/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর মৎস য শ ক র
এছাড়াও পড়ুন:
কানাডায় নির্বাচন: মার্ক কার্নির লিবারেল সদর দপ্তরে উৎসব শুরু
কানাডায় ভোট গ্রহণ শেষে চলছে গণনা। ভোটের চূড়ান্ত ফলাফল আসতে আরও খানিকটা সময় লাগবে। তবে এরই মধ্যে দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির দল লিবারেল পার্টির সদর দপ্তরে উৎসব শুরু হয়ে গেছে। কারণ, দেশটির রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম সিবিসি বলেছে, এবার লিবারেল সরকার হতে চলেছে।
কানাডার ৩৪৩ আসনের হাউস অব কমন্সে লিবারেল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে, নাকি তাদের সংখ্যালঘু সরকার গঠন করতে হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে মার্ক কার্নিই যে প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, তা অনেকটা নিশ্চিত হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
বিবিসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, লিবারেল ১৫৬টি আসনে এগিয়ে আগে। একক সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার গঠন করতে চাই ১৭২টি আসন। খুব একটা পিছিয়ে নেই প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টি। দলটি ১৪৭ আসনে এগিয়ে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, আমাদের নির্বাচন থেকে দূরে থাকুন। কানাডা সব সময় গর্বিত, সার্বভৌম ও স্বাধীন দেশ থাকবে এবং আমরা কখনো ৫১তম অঙ্গরাজ্য হব না।—পিয়েরে পলিয়েভর, বিরোধী কনজারভেটিভ পার্টির নেতাপুরোপুরি বদলে যাওয়া এক নির্বাচনী পরিবেশে গতকাল সোমবার ভোট দিয়েছেন কানাডার জনগণ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপ এবং কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত করার ইচ্ছা দেশটিতে নির্বাচনের আগে প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছিল।
ট্রাম্পের এ ধরনের হুমকি কানাডায় দেশপ্রেমের জোয়ার সৃষ্টি করেছে। এমন পরিস্থিতিতে লিবারেল পার্টির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী মার্ক কার্নির প্রতি জনসমর্থন বেড়ে যায়।
লিবারেল ১৫৬টি আসনে এগিয়ে আগে। একক সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার গঠন করতে চাই ১৭২টি আসন। খুব একটা পিছিয়ে নেই প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টি। দলটি ১৪৭ আসনে এগিয়ে।অথচ যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ ও ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক কথাবার্তা শুরু হওয়ার আগে জরিপে প্রতিদ্বন্দ্বী পিয়েরে পলিয়েভরের কনজারভেটিভ পার্টি থেকে সামান্য পিছিয়ে ছিল কার্নির লিবারেল দল। ট্রাম্প কানাডাকে নিয়ে আক্রমণাত্মক কথা বলা শুরু করলে কানাডীয়দের মধ্যে দেশপ্রেমের জোয়ার ওঠে এবং জরিপের পূর্বাভাসে হঠাৎ বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
ভোটের দিন সকালেও ট্রাম্প কানাডাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন। ট্রাম্প লিখেছেন, কানাডা যদি যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম কাঙ্ক্ষিত অঙ্গরাজ্য হয়, তবে শূন্য শুল্কের সম্মুখীন হবে।
লিবারেল পার্টির সদর দপ্তরে সমর্থকদের উল্লাস