পহেলা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস ও শবেবরাতকে কেন্দ্র করে মা, ভাইবোনের পরিবারকে দাওয়াত দিয়েছিলেন সুমন মিয়া। বাসাজুড়ে গল্প-আড্ডা, বাচ্চাদের ছোটাছুটিসহ উৎসবের আমেজ। বিকেল থেকেই চলছিল বিভিন্ন রকমের রান্না। মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে ঘরের সব জানালা-দরজা বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। এর মধ্যে একটি চুলার গ্যাস বন্ধ করতে ভুলে গিয়েছিলেন কেউ। তখনও ঘরের বাসিন্দারা কেউ টেরই পাননি, কত বড় বিপদ অপেক্ষা করছে। রাতে সুমনের স্ত্রী শারমিন রান্নাঘরে পিঠা বানাতে যান। দেশলাই দিয়ে চুলা জ্বালাতে গেলে আগুন ধরে যায়। মুহূর্তেই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়ে পুরো বাসায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। 

অগ্নিকাণ্ডে নারী-শিশুসহ একই পরিবারের ১১ জন দগ্ধ হন। এদের মধ্যে আটজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এক শিশুকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গত শুক্রবার রাতে ঢাকার অদূরে সাভারের আশুলিয়ায় একটি আবাসিক ভবনে এ ঘটনা ঘটে।

প্রতিবেশীরা জানান, সাভারের আশুলিয়ার গুমাইল এলাকার আমজাদ ব্যাপারীর বাড়ির দ্বিতীয় তলায় স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে এক যুগ ধরে ভাড়া থাকেন সুমন মিয়া। শবেবরাত উপলক্ষে গত শুক্রবার গ্রামের বাড়ি থেকে সুমনের মা ও ভাই সোহেল রানার পরিবার বেড়াতে এসেছিল ওই বাসায়। মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে ঘরের সব জানালা-দরজা বন্ধ করে বিকেল থেকেই চলছিল রান্না। রাত ১০টার দিকে রুটি ও পিঠা বানানোর জন্য আবার চুলা জ্বালাতে গেল ওত পেতে থাকা বিভীষিকা নেমে আসে সুমনের পরিবারে।

স্থানীয়রা দগ্ধদের উদ্ধার করে প্রথমে আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে তাদের জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। বর্তমানে সবাইকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। দগ্ধরা হলেন সুমন মিয়া (৩০), তাঁর স্ত্রী শারমিন আক্তার (২৫), তিন মাসের মেয়ে সুরাইয়া, ছেলে সোয়াদ (৪), মা সূর্য বানু (৫৫), ফুফু জহুরা বেগম (৭০), ভাই সোহেল রানা (৩৮), বোন শিউলি আক্তার (২৫), বোনের জামাই মনির হোসেন (৪৩), বোনের ছেলে ছামিন মাহমুদ (১৫) ও মাহাদী (৭)। তাদের মধ্যে সুমনের শরীরের ৯৯ শতাংশ, শিউলির ৯৫, শারমিনের ৪২, সোয়াদের ২৭, মনির হোসেনের ২০, ছামিন মাহমুদের ১৪, মাহাদীর ১০, সোহেলের ১০, সুরাইয়ার ৯, সূর্য বানুর ৭ ও জহুরা বেগমের ৫ শতাংশ দগ্ধ রয়েছে।

গতকাল শনিবার জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে গেলে দেখা যায়, শারমিন ৪২ শতাংশ পোড়া শরীর নিয়ে ছয়তলার ৬২২ নম্বর শয্যায় যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। নিজের ক্ষত উপেক্ষা করে শিশুসন্তানের খোঁজ নিচ্ছেন। কেউ তাঁর পাশে গেলেই জানতে চাচ্ছেন, সুরাইয়া কেমন আছে? সন্তানকে কোলে নেওয়ার জন্য চিৎকার করছেন। একই হাসপাতালে থাকলেও শিশুটিকে কোলে নিতে পারছেন না। তাঁর চিকিৎসা চলছে পাঁচতলার ৫২০ নম্বর শয্যায়। ক্ষুধা পেলেই কাঁদছে শিশুটি। নিরুপায় স্বজন শিশুটির কান্না থামাতে সুমনের সহকর্মী রাশেদের স্ত্রী শারমিন সুলতানা বুকের দুধ দিচ্ছেন। শুধু সুরাইয়াকে দুধ খাওয়ার জন্য তার পাশের শয্যায় গতকাল থেকে আছেন তিনি।

দগ্ধ সুমনের ফুফাতো ভাই মোহাম্মদ শহীদ জানান, মশার যন্ত্রণা থেকে রক্ষা পেতে ঘরের সব জানালা বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। শবেবরাত উপলক্ষে বিকেল থেকে ঘরে নানা রকমের রান্না করা হয়। রাত ১০টার দিকে আবার চুলা জ্বালাতে গেলে বিস্ফোরণে ঘরে আগুন ধরে যায়।

দগ্ধ সোহেল রানা বলেন, শবেবরাত উপলক্ষে আমার ভাই সুমনের বাসায় পরিবার নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলাম। একটা চুলার গ্যাস বন্ধ করতে কেউ হয়তো ভুলে গিয়েছিল। রাতে পিঠা বানানোর জন্য চুলা জ্বালাতে গেলে হঠাৎ বিস্ফোরণ হয়। এতে ঘরে আগুন ধরে গেলে পরিবারের সবাই দগ্ধ হন।

চিকিৎসকরা জানান, রোগীর অবস্থা অনুযায়ী সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। দগ্ধদের শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। তাই এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। সবাই পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক শাওন বিন রহমান গতকাল বিকেলে সমকালকে বলেন, আশুলিয়া থেকে নারী-শিশুসহ ১১ জনকে দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়েছে। দগ্ধের পরিমাণ বেশি থাকায় আটজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এদিকে গতকাল শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন আশুলিয়া থানার ওসি নুরুল আলম সিদ্দিকী। পরিদর্শন শেষে তিনি জানান, বাসাটিতে তিতাস গ্যাসের কোনো সংযোগ নেই এবং গ্যাসের সিলিন্ডারটি অক্ষত রয়েছে। তাই প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, গ্যাস লিকেজ থেকেই আগুনের ঘটনা ঘটেছে। এর পরও তদন্ত করা হচ্ছে। পরে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স মন র পর ব র র জন য র র সব গতক ল অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

কপালে ১৩টি এবং থুতনিতে ৪টি সেলাই করা লাগে

প্রথম আলো:

‘উৎসব’ ছাড়া এবার অন্য কোনো কাজ দেখা যায়নি। এটা কি সচেতনভাবেই করা হয়েছে?

সৌম্য জ্যোতি : সচেতনভাবেই কাজ করিনি। আমার জীবনে প্রথম কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করা, এটার জন্য অন্য কোনো কাজ করিনি, চাইওনি। উৎসবের সাড়ার পরও আমি একটু বিরতি নেব। পরের কাজটাও একটু ভেবেচিন্তে করব।

প্রথম আলো :

অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ কি শৈশব থেকেই, নাকি পরে তৈরি হয়েছে?

সৌম্য জ্যোতি : ছোটবেলা থেকেই ছিল। কিন্তু নিজে অভিনয় করব, এ চিন্তা কখনো ছিল না। হঠাৎ করে ঘটনাক্রমে অভিনয় শুরু করা। এরপর মানুষের ভালো লাগা পেলাম, সিরিয়াসলি নেওয়া শুরু করলাম। দর্শক যেহেতু প্রশংসা করছেন, তাই কাজটা করছি, কাজটা প্রতিদিন শিখছিও।

জাহাঙ্গীর ও জেসমিনের দুই বয়সের চরিত্রে অভিনয় করছেন সৌম্য জ্যোতি, জাহিদ হাসান এবং সাদিয়া আয়মান ও আফসানা মিমি। সাদিয়া আয়মানের ফেসবুক থেকে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কপালে ১৩টি এবং থুতনিতে ৪টি সেলাই করা লাগে
  • নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি রয়েছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • ১০ দিন পর বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে বাণিজ্য শুরু 
  • ঈদের ছুটি শেষে ব্যাংক খুলেছে, ভিড় নেই তেমন
  • ছুটি শেষে ব্যাংক ও শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হচ্ছে কাল
  • টানা ১০ দিনের ছুটি শেষ, রবিবার খুলছে সরকারি অফিস
  • চেনা রূপে বরিশাল নদীবন্দর, ঈদফেরত যাত্রীদের ভিড়
  • রাজশাহীতে ঢাকাগামী টিকিটে বাড়তি ভাড়া আদায়, ৩ কাউন্টারকে জরিমানা
  • কাহালুর জামাই মেলায় মানুষের ঢল
  • ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে ঈদের সেরা চার নাটক