Samakal:
2025-06-16@02:59:09 GMT

বর্জ্যের বিষে নীল পায়রা নদী

Published: 16th, February 2025 GMT

বর্জ্যের বিষে নীল পায়রা নদী

বরগুনার আমতলী পৌর শহরের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বসতবাড়ি ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য, ময়লা ও আবর্জনা ফেলা হচ্ছে পায়রা নদী ও বাসুগী খালে। পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য ফেলার কারণে নদী ভরাট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। সারাক্ষণ দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশও।
বরগুনা ও আমতলীর মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত পায়রা নদী। প্রমত্তা পায়রার সঙ্গে যুক্ত বাসুগী খাল। প্রবহমান পায়রা নদী ও খাল ঘিরে রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বেসরকারি হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। আশপাশে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি বাজার। 
জনগুরুত্বপূর্ণ এ পৌর শহরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নেই। এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য সংগ্রহ করে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডসংলগ্ন ব্লকে পায়রা নদীতীর ঘেঁষে এবং ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মাছ বাজারের পশ্চিম পাশে বাসুগী খালের পাড়ে ফেলছেন। এসব বর্জ্য নদী খালের পানিতে মিশে দূষণ বাড়াচ্ছে। ফলে পায়রা নদীর কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এসব ময়লা নদীর স্রোতে ভেসে যায়। 

এ বিষয়ে কথা হলে পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ বলেন, বর্তমানে পৌরসভায় কোনো ডাম্পিং ইয়ার্ড নেই। এ কারণে বিভিন্ন স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। ডাম্পিং ইয়ার্ড স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রকল্প প্রস্তাবনা জমা দেওয়া হয়েছিল। বরাদ্দ না পাওয়ায় সে প্রকল্প বাতিল হয়ে যায়।
সরেজমিন দেখা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডসংলগ্ন ব্লকে পায়রা নদীতীর ঘেঁষে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ময়লা ফেলছেন। সেখানে রয়েছে হাসপাতাল, বাজার ও ছোটখাটো কারখানার বর্জ্য। তীরসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারাও যে যার মতো গৃহস্থালির আবর্জনা ফেলছে। কাক, মুরগি, কুকুর সেগুলো ঘাটাঘাটি করছে। দুর্গন্ধে এলাকায় টেকা দায়। বর্জ্য নদীর স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। এতে পায়রা নদীর কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পানি এখন বিষে পরিণত হয়েছে। সেই পানি গোসল, রান্নাসহ নিত্যদিনের কাজে ব্যবহার করছেন অনেকে।
একইভাবে ময়লা ফেলা হচ্ছে বাসুগী খালেও। পলিথিন, চিপস, বিস্কুটের খোসা ভাসছে খালের পানিতে। হাসপাতালে ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, কাচের বোতলসহ নানা ধরনের ক্লিনিক্যাল বর্জ্য দেখা গেছে সেখানে। শুধু পায়রা বা বাসুগী খাল নয়; ডাম্পিং স্টেশন না থাকায় ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কৃষি রোডের পূর্ব পাশের ডোবা, সাত ধারা, খোন্তাকাটা, সবুজবাগ, একে স্কুলসহ বিভিন্ন স্থানে সড়ক ঘেঁষে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। 
পায়রা নদী তীরবর্তী গাছ বাজারের বাসিন্দা রাবেয়া ও হনুফা বেগম বলেন, গাঙ্গের পানি দিয়া মোরা নাওয়া রান্দাসহ সব কাজ হরি। পানি নষ্ট অইয়া যাওয়ায় নাওনের পর গা খালি চুলকায়। 
লঞ্চঘাট এলাকার জেলে রাজু খাঁ বলেন, পায়রা নদীতে একসময় ইলিশ, পাঙাশ, পোয়া, তপসী, গলদা চিংড়িসহ নানা প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। বর্জ্যের কারণে নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে গেছে। এখন আর আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। অনেক জেলে মাছ না পেয়ে হতাশ হয়ে পেশা পরিবর্তন করছেন। 
আক্ষেপ করে জেলে নিজাম খাঁ বলেন, পানি নষ্ট হয়ে গেছে। আগের মতো মাছ পাই না। ইলিশ, পাঙাশ ও তপসী মাছ  নাই বললেই চলে। সারাদিন বড়শি নিয়ে বসে থাকলেও মাছ পাওয়া যায় না।
পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অধ্যাপক (অব.

) আনোয়ার হোসেন আকন বলেন, জনস্বার্থে দ্রুত বর্জ্য ডাম্পিং ইয়ার্ড নির্মাণ করা প্রয়োজন। তা না হলে পৌরসভা বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে। রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়বে।
পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, জরুরি  ভিত্তিতে বর্জ্য ব্যস্থাপনা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা জমা দেওয়া আছে। টাকা পেলেই কাজ শুরু করা হবে। 
পরিবেশ অধিদপ্তর বরগুনার সহকারী পরিচালক হায়াত মাহমুদ রকিব বলেন, নদীর পানি ও পরিবেশদূষণ ময়লা ব্যবস্থাপনা জরুরি। 
পৌরসভাকে চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দেওয়া হবে।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বর জ য প রসভ

এছাড়াও পড়ুন:

আলীকদমে নিখোঁজ আরেক পর্যটকের লাশ উদ্ধার

বান্দরবানের আলীকদমে নিখোঁজ হওয়া তিন পর্যটকের মধ্যে আরেকজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা লাশটি স্মৃতি আক্তারের (২৪) বলে তাঁর সঙ্গী পর্যটকেরা শনাক্ত করেছেন।

আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আলীকদম উপজেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে তৈনখালের আমতলি ঘাট এলাকায় ভাসমান অবস্থায় লাশটি পাওয়া যায়। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে এ নিয়ে দুজনের লাশ উদ্ধার করা হলো।

আলীকদম ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা আবদুর রহিম জানিয়েছেন, সকালে স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে লাশের সংবাদ পাওয়া যায়। আমতলি ঘাট থেকে লাশ উদ্ধার করে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। বেঁচে ফিরে আসা ১৯ পর্যটককে আলীকদম থানায় রাখা হয়েছে।

পর্যটকদের মধ্যে রাহাত হোসেন নামের একজন জানান, আজকে উদ্ধার হওয়া লাশটি স্মৃতি আক্তারের। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায়। স্মৃতি আক্তার ও মো. হাসান পর্যটন ব্যবস্থাপনা সংস্থা ট্যুর এক্সপার্টের সহপরিচালক। তাঁদের ব্যবস্থাপনায় এই ভ্রমণ আয়োজিত হয়।

৮ জুন দুটি দলে ৩৩ জন পর্যটক আলীকদম ও থানচি উপজেলার মধ্যবর্তী দুর্গম ক্রিস্টং পাহাড়ে গিয়েছিলেন। পাঁচ দিনের ভ্রমণে এক দলে ১১ জন ও তিন দিনের ভ্রমণের আরেক দলে ২২ জন পর্যটক ছিলেন। গত বুধবার তিন দিনের ভ্রমণ শেষে ২২ জনের দলটি ফিরে আসার পথে প্রবল বৃষ্টিতে হঠাৎ শামুকঝিরি ঝরনায় পাহাড়ি ঢল নামে। তাঁদের মধ্যে ১৯ জন ফিরে এলেও জুবাইরুল, হাসান ও স্মৃতি পেছনের দিকে থাকায় নিখোঁজ হন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, নিখোঁজ তিন পর্যটকের মধ্যে আজ স্মৃতি আক্তার ও গতকাল জুবাইরুল ইসলামের লাশ পাওয়া গেছে। লাশ দুটি বান্দরবান সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। মো. হাসানের লাশ এখনো পাওয়া যায়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নিখোঁজ তিনজনকে শনাক্তের জন্য মানবিক কারণে ১৯ জন পর্যটককে থানায় রাখা হয়েছে। তাঁরা না হলে নিখোঁজ তিনজনকে শনাক্ত করার কেউ থাকবে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আলীকদমে নিখোঁজ আরেক পর্যটকের লাশ উদ্ধার