Samakal:
2025-05-01@05:00:09 GMT

বর্জ্যের বিষে নীল পায়রা নদী

Published: 16th, February 2025 GMT

বর্জ্যের বিষে নীল পায়রা নদী

বরগুনার আমতলী পৌর শহরের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বসতবাড়ি ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য, ময়লা ও আবর্জনা ফেলা হচ্ছে পায়রা নদী ও বাসুগী খালে। পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য ফেলার কারণে নদী ভরাট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। সারাক্ষণ দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশও।
বরগুনা ও আমতলীর মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত পায়রা নদী। প্রমত্তা পায়রার সঙ্গে যুক্ত বাসুগী খাল। প্রবহমান পায়রা নদী ও খাল ঘিরে রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বেসরকারি হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। আশপাশে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি বাজার। 
জনগুরুত্বপূর্ণ এ পৌর শহরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নেই। এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য সংগ্রহ করে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডসংলগ্ন ব্লকে পায়রা নদীতীর ঘেঁষে এবং ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মাছ বাজারের পশ্চিম পাশে বাসুগী খালের পাড়ে ফেলছেন। এসব বর্জ্য নদী খালের পানিতে মিশে দূষণ বাড়াচ্ছে। ফলে পায়রা নদীর কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এসব ময়লা নদীর স্রোতে ভেসে যায়। 

এ বিষয়ে কথা হলে পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ বলেন, বর্তমানে পৌরসভায় কোনো ডাম্পিং ইয়ার্ড নেই। এ কারণে বিভিন্ন স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। ডাম্পিং ইয়ার্ড স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রকল্প প্রস্তাবনা জমা দেওয়া হয়েছিল। বরাদ্দ না পাওয়ায় সে প্রকল্প বাতিল হয়ে যায়।
সরেজমিন দেখা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডসংলগ্ন ব্লকে পায়রা নদীতীর ঘেঁষে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ময়লা ফেলছেন। সেখানে রয়েছে হাসপাতাল, বাজার ও ছোটখাটো কারখানার বর্জ্য। তীরসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারাও যে যার মতো গৃহস্থালির আবর্জনা ফেলছে। কাক, মুরগি, কুকুর সেগুলো ঘাটাঘাটি করছে। দুর্গন্ধে এলাকায় টেকা দায়। বর্জ্য নদীর স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। এতে পায়রা নদীর কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পানি এখন বিষে পরিণত হয়েছে। সেই পানি গোসল, রান্নাসহ নিত্যদিনের কাজে ব্যবহার করছেন অনেকে।
একইভাবে ময়লা ফেলা হচ্ছে বাসুগী খালেও। পলিথিন, চিপস, বিস্কুটের খোসা ভাসছে খালের পানিতে। হাসপাতালে ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, কাচের বোতলসহ নানা ধরনের ক্লিনিক্যাল বর্জ্য দেখা গেছে সেখানে। শুধু পায়রা বা বাসুগী খাল নয়; ডাম্পিং স্টেশন না থাকায় ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কৃষি রোডের পূর্ব পাশের ডোবা, সাত ধারা, খোন্তাকাটা, সবুজবাগ, একে স্কুলসহ বিভিন্ন স্থানে সড়ক ঘেঁষে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। 
পায়রা নদী তীরবর্তী গাছ বাজারের বাসিন্দা রাবেয়া ও হনুফা বেগম বলেন, গাঙ্গের পানি দিয়া মোরা নাওয়া রান্দাসহ সব কাজ হরি। পানি নষ্ট অইয়া যাওয়ায় নাওনের পর গা খালি চুলকায়। 
লঞ্চঘাট এলাকার জেলে রাজু খাঁ বলেন, পায়রা নদীতে একসময় ইলিশ, পাঙাশ, পোয়া, তপসী, গলদা চিংড়িসহ নানা প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। বর্জ্যের কারণে নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে গেছে। এখন আর আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। অনেক জেলে মাছ না পেয়ে হতাশ হয়ে পেশা পরিবর্তন করছেন। 
আক্ষেপ করে জেলে নিজাম খাঁ বলেন, পানি নষ্ট হয়ে গেছে। আগের মতো মাছ পাই না। ইলিশ, পাঙাশ ও তপসী মাছ  নাই বললেই চলে। সারাদিন বড়শি নিয়ে বসে থাকলেও মাছ পাওয়া যায় না।
পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অধ্যাপক (অব.

) আনোয়ার হোসেন আকন বলেন, জনস্বার্থে দ্রুত বর্জ্য ডাম্পিং ইয়ার্ড নির্মাণ করা প্রয়োজন। তা না হলে পৌরসভা বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে। রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়বে।
পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, জরুরি  ভিত্তিতে বর্জ্য ব্যস্থাপনা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা জমা দেওয়া আছে। টাকা পেলেই কাজ শুরু করা হবে। 
পরিবেশ অধিদপ্তর বরগুনার সহকারী পরিচালক হায়াত মাহমুদ রকিব বলেন, নদীর পানি ও পরিবেশদূষণ ময়লা ব্যবস্থাপনা জরুরি। 
পৌরসভাকে চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দেওয়া হবে।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বর জ য প রসভ

এছাড়াও পড়ুন:

অস্ত্র দিয়ে ডাকাত তকমা, উদ্ধার করল নৌবাহিনী 

নোয়াখালীর হাতিয়ায় ডাকাত তকমা দিয়ে দু’জনকে পিটিয়ে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় দেশীয় অস্ত্র। ছবি তুলে ও ভিডিও করে ছেড়ে দেওয়া হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। উত্তেজিত জনতা তাদের ঘিরে রাখে। যদিও অনেকেই জানতেন না, ঘটনাটি সাজানো। খবর পেয়ে নৌবাহিনীর একটি দল আহত দু’জনকে উদ্ধার করে। সোমবার রাতে উপজেলার জাহাজমারা ইউনিয়নের আমতলী বাজারে এ ঘটনা ঘটে। রাতেই তাদের হাতিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়। 

উদ্ধার দু’জন হলেন জাহাজমারা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড চরহেয়ার এলাকার মজিবুল হকের ছেলে আরিফ হোসেন এবং একই ইউনিয়নের মোল্লাবাজার এলাকার মো. আশরাফের ছেলে মো. আসিফ। এদের মধ্যে আরিফ পেশায় রিকশাচালক। 

স্থানীয়রা জানান, জাহাজমারা আমতলী বাজারের পশ্চিম পাশে রাস্তার চর দখল নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছে। এক পক্ষের নেতৃত্ব দেন জহির চেরাং, অন্য পক্ষের নেতৃত্ব দেন কাউসার। কাউসারপক্ষ অনেক দিন থেকে চরটির দখল নিয়ে আছে। ঘটনার দিন সোমবার বিকেলে জহির চেরাংয়ের লোকজন চরটির দখল নেওয়ার জন্য সংঘবদ্ধ হয়। পরে প্রতিপক্ষের ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে গেলেও দু’জনকে ধরে তারা বাজারে নিয়ে আসে। পরে ওই দু’জনকে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে পরিকল্পিতভাবে ডাকাত নাটক সাজানো হয়। 

ছবি তুলে ও ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ায় সেখানে উৎসুক জনতা ভিড় করে। খবর পেয়ে নৌবাহিনীর একটি দল অবরুদ্ধ দু’জনকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। পরে নৌবাহিনী ও পুলিশের দুটি গোয়েন্দা দলের তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসে। 

আসিফের বাবা আশরাফ জানান, তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি পর্যন্ত নেই। অথচ তাঁকে ডাকাত বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তাঁর ছেলে নিরপরাধ দাবি করেন তিনি। 

আমতলী বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মো. লিটন জানান, চরের আধিপত্য নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় দু’জনকে আটক করা হয়। পরে নৌবাহিনী এসে তাদের নিয়ে যায়। তারা ডাকাতির সঙ্গে জড়িত কিনা, তাঁর জানা নেই। 

হাতিয়া থানার ওসি একেএম আজমল হুদা বলেন, উদ্ধার দু’জনের বিরুদ্ধে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত থাকার যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অস্ত্র দিয়ে ডাকাত তকমা, উদ্ধার করল নৌবাহিনী