বরগুনায় ভাড়া বাসায় গৃহবধূ ছুরিকাঘাতে খুন, পরে থানায় স্বামীর আত্মসমর্পণ
Published: 17th, February 2025 GMT
পারিবারিক কলহের জেরে বরগুনার পৌর শহরে এক গৃহবধূকে ছুরি মেরে তাঁর স্বামী হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল রোববার পৌরসভার বাগানবাড়ি এলাকায় ভাড়া বাসায় ওই গৃহবধূ খুন হন। ঘটনার পর তাঁর স্বামী থানায় আত্মসমর্পণ করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নিহত আসমা বেগম (৩০) আবুল কালামের স্ত্রী। এ দম্পতি দুই ছেলে–মেয়েকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। আসমা বেগম শহরের একটি বেসরকারি ব্যাংকে পরিছন্নতাকর্মীর কাজ করতেন। তিনি বরগুনার চান্দখালী এলাকার বকুলতলী নামক এলাকার ইউনুস মিয়ার মেয়ে। আবুল কালাম (৩৫) চায়ের দোকানি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আসমা বেগমের চাকরি পেতে কিছু টাকা খরচ হয়েছিল। সেই টাকা দিয়েছিলেন আবুল কালাম। এ জন্য স্ত্রীর বেতনের টাকা দাবি করতেন আবুল কালাম। তবে আসমা বেগম টাকা দিতে চাইতেন না। বিষয়টি নিয়ে তাঁদের মধ্যে ঝগড় লেগে থাকত। গতকাল রাত আটটার দিকে স্ত্রীকে ছুরি মেরে বাসা থেকে চলে যান আবুল কালাম। পরে প্রতিবেশীরা পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ আসমা আক্তারকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বরগুনা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানকার কর্মরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
বাসার মালিক মোহাম্মদ রাসেল বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যা সাতটার পর আমার বাসার লোকজন ফোন দিয়ে জানান, ভাড়াটিয়াদের মধ্যে একটু ঝামেলা হয়েছে, দ্রুত চলে আসার কথা বলেন। এসে দেখি, আসমা আক্তারকে মেরে ওর স্বামী বাসা ছেড়ে চলে গেছেন। তাঁদের বাচ্চারা কান্নাকাটি করছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে ৯৯৯ নম্বরে (জাতীয় জরুরি নম্বর) ফোন দিই। তারপর পুলিশ আসে।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবদুল হালিম মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ওই ঘটনার পর আবুল কালাম বরগুনা সদর থানায় এসে আত্মসমর্পণ করেছেন। এখনই আবুল কালামকে জিজ্ঞাসাবাদ করা যাচ্ছে না। কারণ, তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জানতে পেরেছে, স্ত্রীর চাকরি নেওয়ার ব্যাপারে আবুল কালাম সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছেন। পরে স্ত্রী চাকরির বেতনের টাকা দিচ্ছিলেন না। এ কারণেই হয়তো এ হত্যাকাণ্ড।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দখলদারদের কাছে প্রশাসনের আত্মসমর্পণ
বরিশালের আগৈলঝাড়া ও গৌরনদী উপজেলার কয়েক হাজার কৃষকের জীবন-জীবিকার উৎস ঐতিহ্যবাহী টরকী–বাশাইল খালটি করুণ মৃত্যুর প্রহর গুনছে। নাব্যতাসংকট, নির্বিচার দখল, দূষণ ও কর্তৃপক্ষের লাগাতার অবহেলার শিকার হয়ে প্রায় সাড়ে ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই খালের এমন পরিণতি খুবই দুঃখজনক। এটি পরিবেশের ওপর কাঠামোগত আগ্রাসনের ধারাবাহিকতারই চিত্র।
খালটি যখন প্রবহমান ছিল, তখন তা ছিল দুই উপজেলার কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ। কিন্তু প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কৃষকদের এখন সেচের
জন্য ‘ডাবল লিফটিং’ (দুবার পানি উত্তোলন) করতে হচ্ছে। প্রথমে পাম্প দিয়ে কোনোমতে খালে পানি আনতে হয়। এরপর সেই পানি আবার পাম্প দিয়ে জমিতে দিতে হয়। এই প্রক্রিয়ায় কৃষকের সেচ খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০ শতক জমিতে যেখানে খরচ হতো ৭০০ টাকা, সেখানে এখন গুনতে হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকা। লাভের মুখ দেখতে না পেয়ে অনেক কৃষক বোরো আবাদ ছেড়ে মাছের ঘের বা পানের বরজ তৈরি করতে বাধ্য হচ্ছেন, নয়তো আবাদি জমির পরিমাণ কমিয়ে দিচ্ছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে স্থানীয় খাদ্যনিরাপত্তা ও কৃষি অর্থনীতিতে মারাত্মক ধস নামতে বাধ্য।
এ বিপর্যয়ের মূল কারণটি অত্যন্ত স্পষ্ট—অবৈধ দখলদারত্ব ও প্রশাসনিক দুর্বলতা। খালের উৎসমুখ, অর্থাৎ টরকী বন্দরসংলগ্ন পালরদী নদীর মোহনা দখলদারেরা পুরোপুরি রুদ্ধ করে দিয়েছেন। প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে খাল ভরাট করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য পাকা ও আধা পাকা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। গৌরনদী ভূমি কার্যালয়ের পক্ষ থেকে ‘খালের জমি কাউকে ইজারা দেওয়া হয়নি’—এমনটা বলা হলেও দখলদারেরা কীভাবে খালের জায়গাকে ‘রেকর্ডীয় সম্পত্তি’ বা ‘ইজারা নেওয়া জমি’ দাবি করেন? এর মধ্য দিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রকাশ্যেই সরকারি সম্পত্তি দখল করে অবৈধভাবে ইমারত নির্মাণ করছেন।
এই দখলদারদের দাপট এতটাই বেশি যে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) গত বছর খাল খননের আবেদন পেয়েও কাজ শুরু করতে পারেনি। বিএডিসির উপসহকারী প্রকৌশলী সাহেদ আহমেদ চৌধুরী জানিয়েছেন, অবৈধ স্থাপনার কারণে খননযন্ত্র চালানো বা খনন করা মাটি রাখার মতো সামান্য জায়গাও সেখানে নেই। অর্থাৎ মুষ্টিমেয় অবৈধ দখলদার একটি সরকারি উন্নয়ন সংস্থাকে তার আইনি দায়িত্ব পালনে পঙ্গু করে রেখেছেন এবং স্থানীয় প্রশাসন এই দখলদারত্বের সামনে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ কেন এই অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না? কার ইশারায় এই দখলদারত্ব এত বছর ধরে চলতে দেওয়া হলো? টরকী–বাশাইল খালকে পুনরুদ্ধার করতে এখন কি কোনো আন্তরিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে, নাকি আমরা এ জলধারার উৎসের পুরোপুরি মৃত্যু নিশ্চিত হতে দেখব?