নিলামে সাবেক এমপিদের গাড়ি: দর উঠল এক লাখ থেকে তিন কোটি টাকা
Published: 17th, February 2025 GMT
সাবেক সংসদ সদস্যদের আমদানি করা ২৪টি গাড়ি প্রথমবারের মতো নিলামে উঠানো হয়েছে। ইতিমধ্যে আগ্রহীদের কাছ থেকে দরপত্র জমা নেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার এসব দরপত্র খোলা হয়। তাতে দেখা যায়, নিলামে তোলা ২৪টি গাড়ির মধ্যে দর পড়েছে ১৪টিতে। গাড়িভেদে সর্বোচ্চ ১ লাখ থেকে ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত দর দিয়েছেন আগ্রহী ক্রেতারা। ১০টি গাড়িতে কোনো দর-ই জমা পড়েনি। নিলামে যে দর উঠেছে, তাতে এ দফায় কেউ গাড়ি পাচ্ছেন না।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর এই গাড়িগুলো শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করেছিলেন তৎকালীন সংসদ সদস্যরা। সরকারের পটপরিবর্তনের পর গত ৬ আগস্ট সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। শুল্কমুক্ত সুবিধাও বাতিল করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তাতে এই গাড়িগুলো ফেলে যান সাবেক সংসদ সদস্যরা। সাবেক সংসদ সদস্যদের ২৪টিসহ এ দফার প্রথম নিলামে মোট ৪৪টি গাড়ি নিলামে বিক্রির জন্য তোলা হয়। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস এই নিলাম করে।
সংসদ সদস্যদের গাড়িগুলো টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার মডেলের। সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ৩৩৪৬। প্রতিটির সংরক্ষিত মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। নিয়মানুযায়ী প্রথম নিলামে এই দরের ৬০ শতাংশ বা তার বেশি যিনি সর্বোচ্চ দর দেবেন, তার কাছে বিক্রি করার সুযোগ রয়েছে। এ হিসেবে ন্যূনতম ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা দর পড়লে বিক্রির করার সুযোগ রয়েছে। সাবেক সংসদ সদস্যদের কোনো গাড়িতেই এত দর পড়েনি। ফলে নিয়ম অনুযায়ী, কোনো দরদাতাই সাবেক সংসদ সদস্যদের গাড়ি পাচ্ছেন না।
একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, গাজীপুর-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আখতারউজ্জামানের ফেলে যাওয়া গাড়িতে একটি দরপত্র জমা পড়েছে। মাত্র এক লাখ দর দিয়ে এই গাড়ি কেনার অভিলাষ জানিয়েছেন মহসীন মোহাম্মদ কবির নামে একজন দরদাতা। এর মানে হলো, ৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকার গাড়ির নিলামে দর উঠল মাত্র এক লাখ টাকা।
তবে সংসদ সদস্যদের গাড়ি কেনার জন্য হুড়োহুড়ি না থাকলেও নিলামে তোলা অন্য গাড়িগুলো কেনায় প্রতিযোগিতা ছিল বেশি। কোনো কোনো গাড়ি কেনার জন্য ২০টি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি দর দিয়েছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমসের সহকারী কমিশনার মো.
কোন গাড়িতে কত দর
নিলামে খুলনা-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এস এম কামাল হোসেন এবং নীলফামারী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. সাদ্দাম হোসেনের (পাভেল) ফেলে যাওয়া গাড়িতে সবচেয়ে বেশি দর পড়েছে। দুই গাড়িতে ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা করে দর দিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছেন এস এম আরিফ নামের একজন দরদাতা।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দর পড়েছে রংপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. আসাদুজ্জামানের ফেলে যাওয়া গাড়িতে। এই গাড়িতে তিন দরদাতার মধ্যে সর্বোচ্চ দর ছিল ২ কোটি ৪৫ লাখ। এই দর দিয়েছে ইজি সার্ভিসেস লিমিটেড।
সাবেক সংসদ সদস্য মজিবুর রহমানের ফেলে যাওয়া গাড়ির সর্বোচ্চ দর উঠেছে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এই দর দিয়েছে ল্যাবএইড লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠান।
নিলামে তোলা সবচেয়ে দামি গাড়িটি আমদানি করেছিলেন সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাদিক। এই গাড়িতে সর্বোচ্চ দর পাওয়া গেছে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা। এই দর দিয়েছেন ফারাজ আবদুর রহিম নামের এক ব্যক্তি।
গাজীপুর-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আখতারউজ্জামানের ফেলে যাওয়া গাড়িতে একটি দরপত্র জমা পড়েছে। মাত্র এক লাখ টাকা দর দিয়ে এই গাড়ি কেনার অভিলাষ জানিয়েছেন মহসীন মোহাম্মদ কবির নামে একজন দরদাতা।
সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের গাড়ি ৩০ লাখ টাকা ও তারানা হালিমের গাড়ি ৫ লাখ টাকা, নেত্রকোনা-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাজ্জাদুল হাসানের গাড়ি ৩০ লাখ টাকা সর্বোচ্চ দর পড়েছে।
নিলামে ওঠা সবচেয়ে কম দামি গাড়ি এনেছিলেন ময়মনসিংহ-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম আনিসুজ্জামান। এক বছরের পুরোনো এই টয়োটা গাড়ির নিলামে তাঁর গাড়ির দর উঠেছে ৫ লাখ টাকা।
যশোর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. তৌহিদুজ্জামানের গাড়ি ২০ লাখ টাকা, গাইবান্ধা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহ সারোয়ার কবীরের গাড়ি দেড় কোটি টাকা, জান্নাত আরা হেনরীর টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার পাঁচ লাখ টাকা দর পড়েছে।
আগ্রহ নেই সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রীর গাড়িতে
সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতের গাড়িও নিলামে তোলা হয়েছিল। তবে কেউ সাড়া দেয়নি। আরাফাতের মতো জামালপুর-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ, চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল মোতালেবসহ ১০ জন সংসদ সদস্যের আমদানি করা গাড়িতে কোনো দর পড়েনি।
কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, সংসদ সদস্যদের গাড়িগুলো আবারও নিলামে তোলা হবে। যেসব গাড়িতে দর পড়েছে, সেগুলো দ্বিতীয়বার নিলামে তোলা হলে বিক্রির সুযোগ আছে। সে ক্ষেত্রে প্রথমবারের চেয়ে বেশি দর দিতে হবে এবং সর্বোচ্চ দরদাতা হতে হবে। এ হিসেবে আগামীবার নিলামে তোলা হলেই বিক্রি হতে পারে সাবেক সংসদ সদস্যদের আমদানি করা গাড়ি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দর দ য় ছ ন দরদ ত দরপত র এক ল খ এই গ ড় আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
কুমিল্লায় করোনায় আক্রান্ত ৪
কুমিল্লায় চারজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনিবার (১৪ জুন) সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর মো. বশির আহমেদ। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, এখনই সতর্ক না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর মো. বশির আহমেদ বলেন, “গত দুইদিনে তিনজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আজ শনিবার আরো একজনের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে।”
তিনি বলেন, “আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ কুমিল্লা নগরের, কেউ জেলার বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। সবার নমুনা কুমিল্লা নগরের একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করা হয়েছিল।”
আরো পড়ুন:
চট্টগ্রামে আরো ১ জনের করোনা শনাক্ত
কিট সংকটে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা বন্ধ
ডা. বশির আহমেদ বলেন, “আক্রান্তদের মধ্যে একজন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। দুইজন ঢাকায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। একজনের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।”
করোনার প্রথম ধাক্কা কেটে যাওয়ার পর বেশ কিছুদিন কুমিল্লায় নতুন করে সংক্রমণ শনাক্ত হয়নি। ফলে অনেকটাই স্বস্তিতে ছিলেন নগরবাসী। হঠাৎ একসঙ্গে একাধিক ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হওয়ায় জনমনে আবারো আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, আক্রান্তের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকেই মাস্ক পরছেন এবং সাবধানতা অবলম্বনের চেষ্টা করছেন। তবে, গণপরিবহন, বাজার কিংবা ওষুধের দোকানগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানার তেমন প্রবণতা দেখা যায়নি।
কুমিল্লা শহরের বাসিন্দা আমেনা আক্তার বলেন, “আবার যেন সেই দিনগুলো ফিরে আসছে। দোকান-বাজারে মাস্ক ছাড়া মানুষ চলাফেরা করছে। আমরা তো আরেক দফা লকডাউনের ভয়ে আছি।”
সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, নমুনা পরীক্ষার হার বাড়ানোর পাশাপাশি জনসচেতনতা তৈরির জন্য জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়ে প্রচার অভিযান চালানো হবে।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ডাক্তার সানজিদুর রহমান বলেন , “করোনা পুরোপুরি নির্মূল হয়নি। হঠাৎ সংক্রমণ বৃদ্ধির ঘটনা অবহেলার সুযোগ নেই। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে অবস্থা জটিল হতে পারে।”
কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পঙ্কুশ বড়ুয়া বলেন, “করোনার বর্তমান পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে প্রয়োজনে আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হবে। সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।”
ঢাকা/রুবেল/মাসুদ