যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফ জানিয়েছেন, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা চলতি সপ্তাহেও চলবে। সেই আলোচনায় অংশ নিতে ইসরায়েলি প্রতিনিধি দল কায়রোর উদ্দেশে রওনা হয়েছে। তবে মধ্যপ্রাচ্য সফররত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর হামাসকে নিয়ে করা মন্তব্যে নতুন করে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ নিয়ে।
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ লক্ষ্যকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন রুবিও। তিনি বলেছেন, ‘হামাসকে সম্পূর্ণ নির্মূল করতে হবে’, যা ইতোমধ্যেই নাজুক যুদ্ধবিরতি চুক্তির ভবিষ্যৎকে আরও অনিশ্চিত করে তুলেছে। মধ্যপ্রাচ্য সফরের সূচনায় রোববার জেরুজালেমে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে রুবিও সাংবাদিকদের বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, অতীতের ক্লান্তিকর নীতিগুলোর পুনরাবৃত্তি না করে কিছু নতুন প্রস্তাব এনেছেন। নেতানিয়াহু ট্রাম্পের এ পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়ে একে ‘সাহসী’ উল্লেখ করে বলেন, তিনি ও ট্রাম্প ‘গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে অভিন্ন কৌশল’ অনুসরণ করছেন।
এরই মধ্যে তেলআবিব থেকে সৌদি আরবে পৌঁছেছেন মধ্যপ্রাচ্য সফরে থাকা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। যেখানে তিনি রিয়াদে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিজের প্রথম সফরে আরব নেতাদের কঠোর সমালোচনার মুখে পড়তে পারেন রুবিও। বিশেষ করে ট্রাম্পের বিতর্কিত গাজা পরিকল্পনায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যের নেতারা। গাজার ফিলিস্তিনি জনগণকে উচ্ছেদ করে অঞ্চলটি যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানায় পুনর্গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন ট্রাম্প। মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই পরিকল্পনাকে ‘জাতিগত নিধন’ বলে অভিহিত করেছে।
গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার জন্য ট্রাম্পের পরিকল্পনার নিন্দা করেছেন হিজবুল্লাহ মহাসচিব শেখ নাইম কাসেম। ট্রাম্পের এমন কঠোর নীতি রুখে দিতে আরব ও মুসলিম দেশগুলোকে এর বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। রোববার টেলিভিশনে দেওয়া এক বক্তৃতায় কাসেম বলেন, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু গাজায় ১৫ মাসব্যাপী নৃশংস যুদ্ধ চালিয়েছেন। এখন নতুন করে ট্রাম্পের অবস্থান একটি ‘রাজনৈতিক গণহত্যা’ উপস্থাপন করে।
অন্যদিকে, দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী সোমবার অধিকৃত পশ্চিম তীরের নাবলুস শহরে নতুন করে সামরিক অভিযান চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। ইসরায়েলি বাহিনী নাবলুসের পুরাতন শহর এলাকায় ঢুকে বেশ কয়েকটি বাড়ি তল্লাশি চালিয়েছে। সোমবার তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইসরায়েলি বাহিনী ওই এলাকায় একটি ফিলিস্তিনি গাড়ি জব্দ করার পর সেখান থেকে চলে যায়। এর আগেও রোববার নাবলুসের পুরাতন শহরে সামরিক অভিযান চালায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
গাজায় ধ্বংসস্তূপে প্রতিদিনই মিলছে লাশ, বাড়ছে নিহতের সংখ্যা। ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে রোববার আরও ছয়জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্যকর্মী ও উদ্ধারকর্মীরা এ কথা জানিয়েছেন। এ নিয়ে গণহত্যামূলক যুদ্ধে নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ৪৮ হাজার ২৭১ জনে পৌঁছেছে বলে রোববার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজায় ৮০ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনিকে মানবঢাল হিসেবে কাজ করতে বাধ্য করেছিল। তাঁর গলায় বিস্ফোরক বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কথামতো কাজ না করলে তাঁর মাথা উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। ইসরায়েলি গণমাধ্যম ‘দ্য হটেস্ট প্লেস ইন হেল’-এর অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর আলজাজিরা, বিবিসি ও রয়টার্সের।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ইসর য় ল ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।