সংবাদে জেন্ডার সংবেদনশীল ভাষা প্রয়োগ জরুরি
Published: 17th, February 2025 GMT
পুরুষশাসিত ও পুরুষকেন্দ্রিক সংবাদমাধ্যমে নারী-সংক্রান্ত বিষয়গুলো গুরুত্ব কম পাচ্ছে। বেশি বেশি পাঠক ‘ধরার’ জন্য এমন সব ভাষা প্রয়োগ করে সংবাদ পরিবেশন করা হচ্ছে, যা জেন্ডার সংবেদনশীল নয়। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় নারী ও কিশোরী নিয়ে খবর পরিবেশনে অনেক সংবাদমাধ্যমই সংবেদনশীল ভাষা ব্যবহার করেনি।
‘গণমাধ্যমে জেন্ডার-সংবেদনশীল ভাষা’ শিরোনামে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ আয়োজিত এক মুক্ত আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
সোমবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘সমতায় তারুণ্য: ইয়ুথ ফর ইকুয়ালিটি’ প্রকল্পের আওতায় আয়োজিত এ আলোচনায় গণমাধ্যমকর্মী, শিক্ষাবিদ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আধেয় নির্মাতা ও সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা অংশ নেন। তাঁরা বলেন, পরিবার থেকে সামাজিকতা ও নৈতিকতার শিক্ষা দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমকে জেন্ডার সংবেদনশীল ভাষা প্রয়োগের মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে ভূমিকা পালন করতে হবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক সানজিদা আখতার বলেন, ‘নারী নির্যাতনের খবর চটকদার করে উপস্থাপন করা হয়। সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে দেখা উচিত সবার কণ্ঠস্বর উঠে আসছে কি না, যে ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে তা পাঠকের কাছে পৌঁছাচ্ছে কি না, তা পাঠককে জেন্ডার সংবেদনশীল হিসেবে পরিবর্তন করতে পারছে কি না।’ তিনি বার্তাকক্ষে নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর ওপর জোর দেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, ‘জেন্ডার সংবেদনশীল প্রতিবেদন তৈরিতে প্রশিক্ষণের ঘাটতি রয়েছে। কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম জেন্ডারভিত্তিক প্রতিবেদন করলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। সংবাদ থেকে সর্বোচ্চ লাভ করার মূল লক্ষ্য থাকে প্রতিষ্ঠানগুলোর। সামাজিক ও রাজনৈতিক চাপের কারণেও সংবাদমাধ্যম স্বাধীনভাবে চলতে পারে না।’ সাংবাদিকতা বিভাগের এই শিক্ষক বলেন, ‘জেন্ডার সংবেদনশীল ভাষা প্রয়োগের মাধ্যমে জেন্ডার বিষয়ে গতানুগতিক চিন্তাভাবনার পরিবর্তন আনা সম্ভব।’
ঢাকায় নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের জেন্ডার ও নাগরিক সমাজ বিভাগের নীতিবিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা মাশফিকা জামান সাটিয়ার বলেন, ‘নারীরা যতটুকু এগিয়েছে, তার জন্য সমাজ ও রাষ্ট্র বড় কোনো সহায়ক ভূমিকা রাখেনি। নারী নিজ শক্তিতে এগিয়েছে। পরিবর্তনের জন্য সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, সমাজকে বড় ঝাঁকি দিতে হবে।’
জেন্ডার সংবেদনশীল প্রতিবেদন তৈরির ওপর জোর দেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের প্রভাব, প্রচারাভিযান ও যোগাযোগ বিভাগের পরিচালক নিশাত সুলতানা। তিনি বলেন, ‘যোগাযোগের সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম হচ্ছে ভাষা। তারুণ্যের শক্তির মাধ্যমে সমাজে সমতা প্রতিষ্ঠায় এবং জেন্ডার বিষয়ে গতানুগতিক ভাবনা পরিবর্তনে কাজ করছে আমাদের এই প্রকল্প।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যে নারীরা অগ্রভাগে ছিলেন, সেই নারীদের অনেকেই সরে গেছেন উল্লেখ করে নিশাত সুলতানা বলেন, ‘তাঁদের বক্তব্যকে গুরুত্ব না দিয়ে তাঁদের নিয়ে চটুল কনটেন্ট বানিয়ে সাইবার জগতে হয়রানি করা হয়েছে। নারীর এগিয়ে চলার পথে বাধাগুলো শনাক্ত করে তা দূর করতে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
দ্য ডেইলি স্টার–এর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জায়মা ইসলাম বলেন, ‘সংবাদমাধ্যমগুলো পুরুষকেন্দ্রিক। পুরুষকেন্দ্রিক বার্তাকক্ষ যত দিন থাকবে, তত দিন সংবাদমাধ্যম নারীবান্ধব হবে না।’ ঢাকার চেয়ে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত নারী সাংবাদিকদের অবস্থা আরও খারাপ বলে তিনি মন্তব্য করেন।
প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) সহযোগী অধ্যাপক মনিরা শরমিন বলেন, ‘সমাজে গতানুগতিক চিন্তাভাবনার প্রভাব এত বেশি যে এর মধ্যে থেকে নতুন কিছু করা কঠিন। ২০ বছর আগে আমরা যা নিয়ে আন্দোলন করেছি, এই প্রজন্মের মেয়েদেরও তা নিয়েই আন্দোলন করতে হচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ‘সমতায় তারুণ্য: ইয়ুথ ফর ইক্যুয়ালিটি প্রকল্প’ বিষয়ে তথ্য তুলে ধরেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের উপপরিচালক (কর্মসূচি) নীলিমা ইয়াসমিন।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, নেদারল্যান্ডস সরকারের অর্থায়নে চার বছরমেয়াদি সমতায় তারুণ্য প্রকল্পটি বাংলাদেশের আটটি বিভাগে যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ও জাগো ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট। বাংলাদেশের আটটি বিভাগে প্রকল্পের চিহ্নিত জনগোষ্ঠী ১৩ হাজার ৫১৫ জন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় ২৫২টি যুব-নেতৃত্বাধীন সংগঠনের যুব সদস্য, জাতীয় যুব কাউন্সিলের সদস্য, গণমাধ্যমকর্মী এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কনটেন্ট নির্মাতারা।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সালমা হাসনায়েন, জাগো ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের সহকারী পরিচালক এশা ফারুক।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ন ড র স ব দনশ ল ভ ষ প রকল প
এছাড়াও পড়ুন:
না’গঞ্জে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হতাহতদের আড়াই কোটি টাকার অনুদান ও সঞ্চয়পত্র প্রদান
জুলাই গণঅভ্যত্থানে আহত ‘সি’ ক্যাটাগরির ২১২ জন জুলাই যোদ্ধাদের মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় প্রদত্ত আর্থিক অনুদানের চেক ও তিন শহীদ পরিবারের সঞ্চয়পত্র প্রদান করা হয়।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এ আর্থিক অনুদানের চেক ও সঞ্চয়পত্র প্রদান করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জাহিদুল ইসলাম মিঞার সভাপতিত্বে করেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মানিত কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, সিভিল সার্জন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, আহত জুলাই যোদ্ধা ও তাঁদের পরিবার, শহিদ পরিবারের সদস্যগণ, ছাত্র প্রতিনিধি এবং গণমাধ্যমকর্মীরা।
এ সময় ৪ জন শহিদ পরিবারের সদস্যের প্রত্যেককে ১০ লক্ষ টাকা মূল্যমানের সঞ্চয়পত্র প্রদান করা হয়। পাশাপাশি, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ‘সি’ ক্যাটাগরির ২১২ জন যোদ্ধাকে এককালীন ১ লাখ টাকা করে অনুদানের চেক প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বীর সন্তানরা আমাদের জাতীয় ইতিহাসের এক গৌরবময় অধ্যায়। তাঁদের সাহসিকতা, আত্মত্যাগ ও অদম্য চেতনা আমাদের জাতি পুনর্গঠনের অনুপ্রেরণা। আমরা বিশ্বাস করি, এই যোদ্ধাদের সাহসিকতা দিয়েই গড়ে উঠবে একটি নতুন, উদ্ভাসিত বাংলাদেশ।
তিনি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জের উন্নয়ন-অগ্রগতির যাত্রায় আমরা তরুণ সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, গণমাধ্যমকর্মী ও সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ কামনা করি। সম্মিলিত প্রচেষ্টাই গড়ে তুলবে একটি সমৃদ্ধ, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল নারায়ণগঞ্জ।
এদিকে এ অনুষ্ঠানটি শুধু অনুদান বিতরণ নয়, বরং জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সম্মান জানানোর এক অনবদ্য প্রয়াস হয়ে উঠেছিল।