ট্রাম্পের গাজা ‘খালি করার প্রস্তাব’ নিয়ে ইসরায়েল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: নেতানিয়াহু
Published: 18th, February 2025 GMT
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা ‘খালি করে’ নিয়ন্ত্রণ নিতে এবং ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনা নিয়ে ইসরায়েল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনার জন্য শীর্ষ মার্কিন কূটনীতিক সৌদি আরবে গেছেন; যদিও আরব দেশগুলো ট্রাম্পের পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছে।
নেতানিয়াহু গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে বলেন, একটি ভিন্ন গাজা গড়ার বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পরিকল্পনা নিয়ে তিনি প্রতিশ্রতিবদ্ধ।
ইসরায়েলি এই নেতা আরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ১৫ মাসের যুদ্ধ শেষে গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ হামাস বা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ—কারও হাতেই থাকবে না। এই যুদ্ধে এরই মধ্যে ৪৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সেখানে চরম মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে।
জেরুজালেমে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে এক বৈঠকে গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে ‘ট্রাম্পের সাহসী দৃষ্টিভঙ্গির’ প্রশংসা করার এক দিন পর নেতানিয়াহু এমন মন্তব্য করলেন।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো ট্রাম্প প্রশাসনের গাজার নিয়ন্ত্রণ নেওয়া এবং ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার পরিকল্পনাকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে সমালোচনা করছে। এই প্রচেষ্টাকে ‘জাতিগত নির্মূল’ হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
আরও পড়ুনফিলিস্তিনিদের গাজায় ফেরার অধিকার দেওয়া হবে না: ট্রাম্প১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনগাজায় ‘নরকের দরজাগুলো’ খুলে দেওয়ার হুমকি নেতানিয়াহুর১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ট্রাম্পের পরিকল্পনার সমর্থনে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ গতকাল একটি ‘বিশেষ দপ্তর’ খোলার ঘোষণা দিয়েছেন। গাজা থেকে যেসব ফিলিস্তিনি ‘স্বেচ্ছায় অন্যত্র যেতে চান’, তাঁদের জন্য কাজ করবে এই দপ্তর।
আরব দেশগুলো ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা খারিজ করে দিয়েছে। তবে এ সপ্তাহে মার্কো রুবিওর সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরের আলোচ্যসূচিতে পরিকল্পনাটি রাখা হয়েছে।
গতকালই সৌদি আরবে গেছেন মার্কো রুবিও। রিয়াদে মার্কো রুবিওকে স্বাগত জানিয়েছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। নতুন প্রশাসনে দায়িত্ব নেওয়ার পর এবারই প্রথম মধ্যপ্রাচ্যে সফরে গেলেন তিনি।
আরও পড়ুন সমালোচনার মুখেও গাজার নিয়ন্ত্রণ নিতে ‘অনড়’ ট্রাম্প১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনগাজা নিয়ে বিকল্প প্রস্তাব আনছে আরব দেশগুলো১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।