বিএনপির নেতাকে বিদ্যালয়ের সভাপতি করার দাবিতে চেয়ারম্যানকে অবরুদ্ধ
Published: 18th, February 2025 GMT
বরিশাল নগরের একটি বেসরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি পদে বিএনপির নেতাকে মনোনীত করার দাবিতে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ইউনুস আলী সিদ্দিকীকে অবরুদ্ধ করেন সংগঠনটির একদল নেতা-কর্মী। গতকাল সোমবার রাতে নগরের নথুল্লাবাদ এলাকায় বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে এ ঘটনা ঘটে।
এ সময় দলের নেতা-কর্মীরা ইউনুস আলী সিদ্দিকীকে অবরুদ্ধ করে কমিটি ঘোষণার জন্য চাপ দেন। এতে তিনি অস্বীকৃতি জানান। তখন তাঁরা তাঁর টেবিল চাপড়ে ফ্যাসিস্টের দোসর বলে আখ্যা দেন। পরে খবর পেয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা সেখানে গেলে ওই নেতা-কর্মীরা সেখান থেকে চলে যান।
বরিশাল নগরের রূপাতলী এলাকায় এ ওয়াহেদ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি পদ নিয়ে ওই ঘটনা ঘটে। এ সম্পর্কে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ইউনুস আলী সিদ্দিকী বলেন, ‘এ ওয়াহেদ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আহ্বায়ক কমিটির প্যানেলে ২ নম্বরে রাখা হয়েছে বিএনপির নেতা জিয়াকে। ১ নম্বরে রাখা হয়েছে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবদুস সালামের স্ত্রীকে। একদল কর্মী (বিএনপি) জানতে চেয়েছেন, কেন জিয়া ভাইয়ের নাম ২ নম্বরে গেল? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কে আহ্বায়ক বা সভাপতি হবেন, তা বিভাগীয় কমিশনার নির্ধারণ করে তালিকা পাঠান। এখানে আমাদের হাতে কিছুই নেই।’
এ ব্যাপারে আজ মঙ্গলবার সকালে নগর বিএনপির সদস্যসচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই বিদ্যালয়ে যাঁকে সভাপতি পদে প্রস্তাব করা হয়েছে, তিনি ফ্যাসিস্ট। আমার সমর্থক দলের নেতা-কর্মীরা এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। শুনেছি, তাঁরা বোর্ড চেয়ারম্যাকে এটা জানাতে গিয়েছিলেন। চেয়ারম্যানকে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি শুনিনি। আমি ঢাকায় আছি। সেখানে যাঁরা গিয়েছিলেন, তাঁদের আমি চিনি না। আর আমাকে বলেও কেউ যাননি।’
বরিশাল বোর্ড সূত্র জানায়, সম্প্রতি বরিশাল নগরের রূপাতলী এলাকায় এ ওয়াহেদ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি পদের জন্য তিনজনের নাম প্রস্তাব করে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে পাঠান বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক। বিভাগীয় কমিশনার ওই তালিকা পরে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে পাঠান। এতে ১ নম্বরে বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতার স্ত্রী রোকেয়া সালাম এবং ২ নম্বরে নগর বিএনপির সদস্যসচিব জিয়া উদ্দিন সিকদারের নাম প্রস্তাব করা হয়। ছয় মাসের জন্য অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠিত হয় চার সদস্যের। এর মধ্যে অভিভাবক সদস্য ও শিক্ষক প্রতিনিধি সদস্য দুজন এবং প্রধান শিক্ষক থাকেন ওই কমিটির সদস্যসচিব। আর সভাপতি হিসেবে স্থানীয় গণ্যমান্য তিনজনের নাম প্রস্তাব করার পর শিক্ষা বোর্ড একজনকে সভাপতি হিসেবে মনোনীত করে। প্রশাসন থেকে যাচাই-বাছাইয়ের পর যেহেতু এই তালিকা শিক্ষা বোর্ডে আসে, তাই ১ নম্বরে যাঁর নাম প্রস্তাব করা হয়, তিনিই সভাপতি হিসেবে মনোনীত হন।
প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, গতকাল সন্ধ্যার পর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের একদল নেতা-কর্মী বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ইউনুস আলী সিদ্দিকীর কক্ষের সামনে জড়ো হন এবং হইচই শুরু করেন। এ সময় কয়েকজন বোর্ড চেয়ারম্যানের কক্ষের ভেতরে ঢুকে তাঁর কাছে জানতে চান, কেন জিয়া উদ্দিন সিকদারকে এ ওয়াহেদ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আহ্বায়ক কমিটির তালিকায় ১ নম্বরে রাখা হয়নি? এ সময় কেউ কেউ আবার টেবিল চাপড়ে চেয়ারম্যানকে হুমকিও দেন। তাঁরা চেয়ারম্যানকে ফ্যাসিস্টদের দোসর আখ্যায়িত করে বিভিন্নভাবে হুমকি দেন। এভাবে এক ঘণ্টা ধরে চেয়ারম্যানকে অবরুদ্ধ করে রাখেন তাঁরা।
পরে খবর পেয়ে বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চেয়ারম্যানের কক্ষে ছুটে যান। এ সময় সেখানে গণমাধ্যমকর্মী এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা গেলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা চলে যান।
ঘটনাস্থলে যাওয়া বরিশাল নগরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি শাহরিয়ার তুষার দাবি করেন, তিনি বোর্ড চেয়ারম্যানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন। সেখানে কুশল বিনিময় করেছেন। চেয়ারম্যানকে ঘেরাও করা হয়েছে, হুমকি বা অশোভন আচরণ করা হয়েছে, এমনটা তিনি দেখেননি।
সেখানে যাওয়া আরেক ছাত্রদল নেতা ইলিয়াস তালুকদার বলেন, ‘চেয়ারম্যানের কাছে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলাম। জিয়া ভাইয়ের কমিটি নিয়ে কোনো কিছু না। তবে জিয়া ভাইয়ের একটি কমিটি আছে। আমরা বলছি যে সম্ভব হলে জিয়া ভাইয়ের স্কুলের কমিটির বিষয়টা দেখবেন।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র ন ত অবর দ ধ র সদস য কর ম র কম ট র এ সময়
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।