বরিশাল নগরের একটি বেসরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি পদে বিএনপির নেতাকে মনোনীত করার দাবিতে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ইউনুস আলী সিদ্দিকীকে অবরুদ্ধ করেন সংগঠনটির একদল নেতা-কর্মী। গতকাল সোমবার রাতে নগরের নথুল্লাবাদ এলাকায় বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে এ ঘটনা ঘটে।

এ সময় দলের নেতা-কর্মীরা ইউনুস আলী সিদ্দিকীকে অবরুদ্ধ করে কমিটি ঘোষণার জন্য চাপ দেন। এতে তিনি অস্বীকৃতি জানান। তখন তাঁরা তাঁর টেবিল চাপড়ে ফ্যাসিস্টের দোসর বলে আখ্যা দেন। পরে খবর পেয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা সেখানে গেলে ওই নেতা-কর্মীরা সেখান থেকে চলে যান।

বরিশাল নগরের রূপাতলী এলাকায় এ ওয়াহেদ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি পদ নিয়ে ওই ঘটনা ঘটে। এ সম্পর্কে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ইউনুস আলী সিদ্দিকী বলেন, ‘এ ওয়াহেদ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আহ্বায়ক কমিটির প্যানেলে ২ নম্বরে রাখা হয়েছে বিএনপির নেতা জিয়াকে। ১ নম্বরে রাখা হয়েছে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবদুস সালামের স্ত্রীকে। একদল কর্মী (বিএনপি) জানতে চেয়েছেন, কেন জিয়া ভাইয়ের নাম ২ নম্বরে গেল? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কে আহ্বায়ক বা সভাপতি হবেন, তা বিভাগীয় কমিশনার নির্ধারণ করে তালিকা পাঠান। এখানে আমাদের হাতে কিছুই নেই।’

এ ব্যাপারে আজ মঙ্গলবার সকালে নগর বিএনপির সদস্যসচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই বিদ্যালয়ে যাঁকে সভাপতি পদে প্রস্তাব করা হয়েছে, তিনি ফ্যাসিস্ট। আমার সমর্থক দলের নেতা-কর্মীরা এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। শুনেছি, তাঁরা বোর্ড চেয়ারম্যাকে এটা জানাতে গিয়েছিলেন। চেয়ারম্যানকে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি শুনিনি। আমি ঢাকায় আছি। সেখানে যাঁরা গিয়েছিলেন, তাঁদের আমি চিনি না। আর আমাকে বলেও কেউ যাননি।’

বরিশাল বোর্ড সূত্র জানায়, সম্প্রতি বরিশাল নগরের রূপাতলী এলাকায় এ ওয়াহেদ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি পদের জন্য তিনজনের নাম প্রস্তাব করে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে পাঠান বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক। বিভাগীয় কমিশনার ওই তালিকা পরে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে পাঠান। এতে ১ নম্বরে বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতার স্ত্রী রোকেয়া সালাম এবং ২ নম্বরে নগর বিএনপির সদস্যসচিব জিয়া উদ্দিন সিকদারের নাম প্রস্তাব করা হয়। ছয় মাসের জন্য অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠিত হয় চার সদস্যের। এর মধ্যে অভিভাবক সদস্য ও শিক্ষক প্রতিনিধি সদস্য দুজন এবং প্রধান শিক্ষক থাকেন ওই কমিটির সদস্যসচিব। আর সভাপতি হিসেবে স্থানীয় গণ্যমান্য তিনজনের নাম প্রস্তাব করার পর শিক্ষা বোর্ড একজনকে সভাপতি হিসেবে মনোনীত করে। প্রশাসন থেকে যাচাই-বাছাইয়ের পর যেহেতু এই তালিকা শিক্ষা বোর্ডে আসে, তাই ১ নম্বরে যাঁর নাম প্রস্তাব করা হয়, তিনিই সভাপতি হিসেবে মনোনীত হন।

প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, গতকাল সন্ধ্যার পর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের একদল নেতা-কর্মী বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ইউনুস আলী সিদ্দিকীর কক্ষের সামনে জড়ো হন এবং হইচই শুরু করেন। এ সময় কয়েকজন বোর্ড চেয়ারম্যানের কক্ষের ভেতরে ঢুকে তাঁর কাছে জানতে চান, কেন জিয়া উদ্দিন সিকদারকে এ ওয়াহেদ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আহ্বায়ক কমিটির তালিকায় ১ নম্বরে রাখা হয়নি? এ সময় কেউ কেউ আবার টেবিল চাপড়ে চেয়ারম্যানকে হুমকিও দেন। তাঁরা চেয়ারম্যানকে ফ্যাসিস্টদের দোসর আখ্যায়িত করে বিভিন্নভাবে হুমকি দেন। এভাবে এক ঘণ্টা ধরে চেয়ারম্যানকে অবরুদ্ধ করে রাখেন তাঁরা।

পরে খবর পেয়ে বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চেয়ারম্যানের কক্ষে ছুটে যান। এ সময় সেখানে গণমাধ্যমকর্মী এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা গেলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা চলে যান।

ঘটনাস্থলে যাওয়া বরিশাল নগরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি শাহরিয়ার তুষার দাবি করেন, তিনি বোর্ড চেয়ারম্যানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন। সেখানে কুশল বিনিময় করেছেন। চেয়ারম্যানকে ঘেরাও করা হয়েছে, হুমকি বা অশোভন আচরণ করা হয়েছে, এমনটা তিনি দেখেননি।

সেখানে যাওয়া আরেক ছাত্রদল নেতা ইলিয়াস তালুকদার বলেন, ‘চেয়ারম্যানের কাছে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলাম। জিয়া ভাইয়ের কমিটি নিয়ে কোনো কিছু না। তবে জিয়া ভাইয়ের একটি কমিটি আছে। আমরা বলছি যে সম্ভব হলে জিয়া ভাইয়ের স্কুলের কমিটির বিষয়টা দেখবেন।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র ন ত অবর দ ধ র সদস য কর ম র কম ট র এ সময়

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনায় আওয়ামী লীগ নেতাকে বেধড়ক পেটানোর পর পুলিশে সোপর্দ

খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বেগ লিয়াকত আলীকে (৭২) পেটানোর পর পুলিশে দিয়েছেন একদল লোক। আজ শনিবার বেলা একটার দিকে নগরের ফুলবাড়ি গেট বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেগ লিয়াকত আলীর বাড়ি খান জাহান আলী থানার বাদামতলা এলাকার পুলিশ প্রশিক্ষণকেন্দ্রের সামনে। তিনি খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এবং ফুলবাড়িগেট বাজার বণিক সমিতির সভাপতি। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বেগ লিয়াকত আলী সমিতির কার্যালয়ে বসে বিএনপি ও অন্য রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের নাম সংগ্রহ করে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করতেন। ব্যবসায়ীদের কাছে তিনি নিয়মিত চাঁদাও আদায় করতেন বলে অভিযোগ। একটি মামলায় ঈদের কয়েক দিন আগে তিনি কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হন। আজ শনিবার নিজের বাড়ি থেকে ফুলবাড়ি গেট বাজারে মুঠোফোন মেরামতের জন্য এলে সেখানে একদল লোক তাঁকে ঘিরে ফেলেন ও বেধড়ক মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে আত্মগোপনে ছিলেন বেগ লিয়াকত আলী। তাঁর বিরুদ্ধে দৌলতপুর, দিঘলিয়া, খান জাহান আলী এবং সাভার থানার কয়েকটি মামলা আছে। তাঁর বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করা একটি অভিযোগও আছে। কিছুদিন আগে তিনি একটি মামলায় জামিনে মুক্ত হন।

খানজাহান আলী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সনজিৎ কুমার ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, বেগ লিয়াকত আলীকে স্থানীয় জনগণ পুলিশে সোপর্দ করেছিলেন। তিনি বেশ আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি পুলিশি হেফাজতে আছেন। চিকিৎসার জন্য তাঁকে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খুলনায় আওয়ামী লীগ নেতাকে বেধড়ক পেটানোর পর পুলিশে সোপর্দ