চবিতে অভ্যুত্থানের মেয়েরা যেভাবে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ ও বহিষ্কৃত
Published: 18th, February 2025 GMT
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে সামনের সারিতে ছিলেন যেসব মেয়ে, একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাঁদের দেওয়া হলো ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ তকমা। পাশাপাশি কঠোর শাস্তির মাধ্যমে তাঁদের ভবিষ্যৎ জীবনকে যেভাবে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে, তা আসলে আসলে কতটা ন্যায্য, সেই প্রশ্নও উঠেছে।
পুরো ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে নাগরিকদের মধ্যে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অভ্যুত্থানের পর দায়িত্ব পাওয়া প্রশাসনকে দুষছেন সবাই।
অভিযোগ উঠেছে, নিজেদের ক্ষমতাচর্চার সুবিধার্থে প্রশাসনে দায়িত্ব পাওয়া কতিপয় শিক্ষক একদল শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাসভিত্তিক কিছু সাংবাদিককেও নিজেদের দলে ভিড়িয়েছেন। শিক্ষার্থীদের অনেকে মনে করছেন, ক্যাম্পাসে একটি অবরুদ্ধ পরিবেশ তৈরির সংঘবদ্ধ প্রয়াস চলছে। যার ফলস্বরূপ ছাত্রীদের নিয়ে এমন ঘটনা ঘটল।
জানা যাচ্ছে, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা হল’ এর সামনে বিগত প্রশাসনের আমলে নৌকার আদলে একটি বসার স্থান তৈরি করা হয়। তিনটা হলের ছাত্রীদের সময় কাটানোর কমন স্পেস ছিল এটি।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ছাত্রদের একটি দল ওই স্থাপনা ভাঙতে যায়। তাদের দাবি, পতিত আওয়ামী লীগের কোনো চিহ্ন ক্যাম্পাসে রাখা যাবে না। কিন্তু হলের ছাত্রীদের দাবি ছিল, এসব ভাঙলে প্রশাসনই ভাঙুক এবং ওই স্থানে বিকল্প বসার জায়গা বানিয়ে দিক।
পরদিন ৫ আগস্ট প্রায় মধ্যরাতে একদল ছাত্র স্থাপনাটি আবার ভাঙতে যান। তখন ছাত্রীদের সঙ্গে তাঁদের বাগ্বিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। এ সময় ছাত্রীদের বিশ্রী ভাষায় গালিগালাজ করেন ও নানা তকমা দেন ভাঙচুরকারীরা।
ছাত্রীরা সে সময় প্রক্টরিয়াল টিমকে বারবার ফোন করেও ঘটনাস্থলে পাননি। একপর্যায়ে মেয়েরা হল থেকে বের হয়ে ভিসির বাসভবনের দিকে যান প্রতিবাদ জানাতে। প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা সেখানে হাজির হলে ছাত্রীদের সঙ্গে তাঁদের তর্কাতর্কি হয়।
ছাত্রীদের অভিযোগ প্রক্টরিয়াল টিমের একজন শিক্ষক বিক্ষুব্ধ ছাত্রীদের গালিগালাজ করেন। ছাত্রীদের ‘ফ্যাসিবাদের দালাল’, ‘হাসিনার লোক’ এসব ট্যাগ বা তকমাও দেন। এমন উত্তেজনাকর ও হাতাহাতির পরিস্থিতিতে ওই শিক্ষকের গায়ে হাত তোলেন এক ছাত্রী। এতে ছাত্রীদের ওপর নেমে আসে কঠোর শাস্তির খড়্গ। সনদ বাতিলের সুপারিশসহ ১ জনকে আজীবন ও ৯ জনকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। যদিও অভিযুক্তদের মধ্যে কেউ কেউ তখন ঘটনাস্থলে উপস্থিতও ছিলেন না।
অভিযুক্ত ছাত্রীদের দাবি, বাদানুবাদ, গালিগালাজ ও হাতাহাতির মধ্যে প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্য ছিলেন, ছাত্রীরা বুঝতেও পারেননি। এমন পরিস্থিতিতে একজন শিক্ষকের গায়ে হাত ওঠার অনাকাঙ্ক্ষিত ভুলটি তাঁদের একজনের দ্বারা ঘটে গেছে। তিনি যে শিক্ষক, তা পরবর্তী সময়ে জানতে পেরে ওই ছাত্রী চরম ভীত হয়ে পড়েন এবং অনুশোচনায় পড়েন। হল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ওই শিক্ষকের কাছে ক্ষমা চাওয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করেন। কিন্তু হল কর্তৃপক্ষের কয়েকজন শিক্ষক এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেননি।
অভিযুক্ত কয়েকজন ছাত্রী, প্রতিবাদী ছাত্রসমাজ, সংবাদমাধ্যম ও সেই রাতের বিভিন্ন ভিডিওর সূত্রে বিষয়গুলো এভাবে জানা যাচ্ছে।
শাস্তি পাওয়াদের একজন, বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলাই অভ্যুত্থানের একজন সমন্বয়ক সুমাইয়া শিকদারের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, নৌকার আদলের স্থাপনাটি সরাতে ও হলের নাম পরিবর্তন করতে হল কর্তৃপক্ষকে কয়েকবার মৌখিকভাবে ও দুইবার লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। আমরা চেয়েছিলাম, ফ্যাসিবাদের এই প্রতীক প্রশাসনই ভাঙুক। কিন্তু সেটি তারা করেনি। উল্টো ‘মবকে’ প্রশ্রয় দিয়েছে।
এ ঘটনায় কিছু প্রশ্ন উঠেছে, যেমন যেখানে রাত ৯টায় ছাত্রী হল বন্ধ হয়ে যায়, একদল ছাত্র কীভাবে প্রায় মধ্যরাতে সেখানে ঢুকতে পারলেন? স্থাপনাটি ভাঙতে বাধা দিয়ে ছাত্রীরা যদি ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ হয়ে যান, তা হলে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরশাসকের নামে এত দিন হলটি রেখে দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কী তকমা দেওয়া যায়?
যেখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠান থেকে পতিত সরকারপ্রধানের পরিবারের নামে সব স্থাপনার নামকরণ বদলে ফেলা হয়েছে, সেখানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকগুলো স্থাপনা তাদের নামে এখনো কী করে থাকে? মেয়েদের বারবার মৌখিক ও লিখিত আবেদন সত্ত্বেও নৌকার আদলে সেই স্থাপনা কেন সরানো হলো না?
ছাত্রীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা ক্যাম্পাসের সাংবাদিকদেরও অপদস্থ করেছেন সেই রাতে। সাংবাদিকদের ভিডিও করতে বাধা দেওয়া হয়। ছাত্রীরা বলছেন, তাঁরা যে সাংবাদিক ছিলেন, সেটি বোঝার উপায় ছিল না। কারণ, তাঁদের গলায় কোনো আইডি কার্ড ছিল না। তা ছাড়া সাংবাদিকদেরও কেউ কেউ মেয়েদের অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করছিলেন। আর ওই রাতে রুম থেকে দ্রুত নেমে আসায় মেয়েদের অনেকে রাতের পোশাকে বা অপ্রস্তুত পোশাকে ছিলেন, সে জন্য মানা করার পরও মোবাইলে ভিডিও করছিলেন কেউ কেউ।
এ ঘটনায় ছাত্রীদের কোনো কারণ দর্শানোর নোটিশও দেওয়া হয়নি, এমনকি প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেলেও শাস্তির বিষয়টি চিঠি দিয়ে জানানো হয়নি। ছাত্রীদের অন্যায্য শাস্তি দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্ররা। তাঁদের উদ্দেশে একজন সহকারী প্রক্টর ফেসবুকে লেখেন, ‘বিপ্লবীরা কি হানি ট্র্যাপে।’ তার মানে দাঁড়ায় ছাত্রীরা হানি ট্র্যাপে ফেলে তাঁদের পক্ষে প্রতিবাদী ছাত্রদের কথা বলতে বাধ্য করেছেন!
এর আগেও নারীদের নিয়ে একাধিকবার অশালীন বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। এভাবে যৌন হয়রানিমূলক বক্তব্য দেওয়া কোনো ব্যক্তি কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হন? প্রক্টরিয়াল টিমে এমন সদস্য থাকাই তো নারীদের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। ক্যাম্পাসভিত্তিক কিছু সাংবাদিককেও দেখা যায়, বাজে ভাষায় মেয়েদের চরিত্রহানি করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টি কি কখনো নারীবান্ধব হতে পারবে না?
ঘটনাকেন্দ্রিক নানা প্রশ্নই বলছে, ছাত্রীদের দেওয়া এ শাস্তি সুবিবেচনাপ্রসূত হয়নি। গণহারে ৯ জনকে দুই বছর বহিষ্কারাদেশ ছাড়াও মাস্টার্সের চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়ে দেওয়া এক শিক্ষার্থীর অনার্সের অর্জিত সনদ কেড়ে নেওয়া কোনোভাবেই যৌক্তিক হতে পারে না।
বিশৃঙ্খলা ও নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের শাস্তি দিয়ে থাকে। সেটির মূল্য উদ্দেশ্যই হচ্ছে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে সংশোধন করা। ঘটনা বিবেচনায় গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে প্রচলিত আইনের আশ্রয়ও নিতে পারে চাইলে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেটি না করে ছাত্রীদের শিক্ষাজীবন ধ্বংসের যে সিদ্ধান্ত নিল তারা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠাটাই স্বাভাবিক।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে প্রতিষ্ঠানটিরই অনেক শিক্ষকও কঠোর সমালোচনা করেছেন। তাদের মধ্যে একজন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাইদুল ইসলাম।
পতিত সরকারের আমলে নির্যাতিত এ শিক্ষক এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘যাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে তাঁদের অনেকেই জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধা। প্রশাসনকে বলি আপনারা যে চেয়ারে বসে শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করার ক্ষমতা দেখাচ্ছেন তা এই শিক্ষার্থীদের তাজা রক্ত মারিয়ে পেয়েছেন, বেশিদিন হয় নাই, রাস্তায় শহীদদের রক্তের দাগও এখনো মুছে যায় নি। শিক্ষকদের কার কী ভূমিকা ছিল তা নাইবা বললাম। কিন্তু জানি তো। খুনি হাসিনাও ক্ষমতার দম্ভে অন্ধ হয়ে গিয়েছিল মনে রাখবেন। টিকতে পারেনি কিন্তু।’
ছাত্রীদের বহিষ্কারের এ ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ১৫৪ জন নাগরিকও। যাদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, অর্থনীতিবিদ, আইনজীবী, লেখক, গবেষক, কবি, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকর্মী, আন্দোলনকর্মীসহ অনেকে।
এসব বিশিষ্ট নাগরিক বলেছেন, মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলের সামনে একদল ছাত্রের ভাঙচুরের ঘটনায় প্রশাসন নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। এরপর অস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে, যথাযথ তদন্ত না করে এবং কোনো রকম আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই একযোগে এসব শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারাদেশ দেওয়া হয়েছে।
তাঁরা এ বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার, ঘটনার পুনঃতদন্ত এবং অপেশাদার আচরণের জন্য প্রক্টরিয়াল টিমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। দুজন প্রক্টরের অশালীন বক্তব্য ও ফেসবুকে নারী শিক্ষার্থীদের জঘন্য ভাষায় আক্রমণের তীব্র নিন্দাও জানিয়েছেন তাঁরা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ঘটনায় ক্যাম্পাসটিতে একাধিক বিক্ষোভ ও মানববন্ধন হয়েছে, ঢাকায়ও প্রতিবাদ–মিছিল হয়েছে। এসব প্রতিবাদ, মানবন্ধন, বিক্ষোভ, বিবৃতির পর এখন দেখার অপেক্ষা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের অন্যায্য সিন্ধান্ত নিয়ে কী পদক্ষেপ নেয়।
রাফসান গালিব প্রথম আলোর সম্পাদকীয় সহকারী। ই–মেইল: [email protected]
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এ ঘটন য় র একজন র জন য কর ছ ন দ র অন র অন ক
এছাড়াও পড়ুন:
বগুড়ায় সারজিসের উপস্থিতিতে মারামারির ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ৪ নেতা হাসপাতালে
বগুড়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশে দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের মারামারির ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সংগঠকসহ চার নেতা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁদের বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
হাসপাতালের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ আজ বৃহস্পতিবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চার নেতা গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে জুনায়েদ নামের একজন ছুরিকাহত হয়েছেন। বাকি তিনজনের সামান্য জখম হয়েছে। আহত চারজনের অবস্থা তেমন গুরুতর নয় বলে তিনি জানান।
গতকাল বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে বগুড়ার শহীদ টিটু মিলনায়তন চত্বরে (পৌর পার্ক) এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ওই মারামারির ঘটনা ঘটে। সমাবেশে বৈষম্যবিরোধীদের একটি পক্ষ এনসিপি নেতা সারজিস আলম ও সাকিব মাহদীর বিরুদ্ধে ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান দিলে সারজিসের পক্ষ নিয়ে অন্যরা তাঁদের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়ান। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল মারামারি বেধে যায়। এতে একজন ছুরিকাহত ছাড়াও অন্তত ১৩ জন আহত হয়েছেন বলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা দাবি করেছেন। তাঁরা জেলা কমিটির আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসানের অনুসারী বলে জানা গেছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চার নেতা হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটির সংগঠক জুনায়েদ হোসেন (২১), যুগ্ম আহ্বায়ক রিয়াদ হাসান (২৩), সংগঠক তাহমিদ হোসেন (২৪) ও সদস্য তাওহীদ হোসেন (২০)। আহত অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
আরও পড়ুনবগুড়ায় সারজিসের উপস্থিতিতে এনসিপির সমাবেশে দফায় দফায় মারামারি১৯ ঘণ্টা আগেবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলার আহ্বায়ক ও সরকারি আজিজুল হক কলেজের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, বগুড়ায় জুলাই বিপ্লবে সক্রিয় ভূমিকা রাখা ছাত্র-জনতাকে কোণঠাসা করে এনসিপিকে জামায়াত-শিবির ও ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগকরণের অপচেষ্টা চলছে। জামায়াত-শিবিরের অনেক সক্রিয় নেতা-কর্মীকে এনসিপির কমিটিতে পদ দেওয়ার অপচেষ্টা চালানোয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ক্ষুব্ধ। সারজিস আলমের কাছে এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানাতে মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে গিয়ে স্লোগান দিলে সন্ত্রাসী কায়দায় তাঁদের ওপর দফায় দফায় হামলা চালানো হয়। সারজিস আলমের সামনেই সাকিব মাহদীর অনুসারীরা এ ঘটনা ঘটলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। আহত ব্যক্তিদের দেখতে হাসপাতালেও যাননি। হামলার প্রতিকারের বিষয়ে আরেক মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর কাছে তাঁরা নালিশ জানাবেন।
তবে এনসিপির বগুড়া জেলার অন্যতম সংগঠক আহমেদ সাব্বির প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বগুড়ায় এনসিপির বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি ছিল। এনসিপি থেকে সাময়িক বহিষ্কৃত কেন্দ্রীয় এক নেতার কিছু উচ্ছৃঙ্খল সমর্থক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি অংশের কিছু নেতা-কর্মী সমাবেশস্থলে এসে সারজিস আলমের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়াসহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেন। এ সময় হাতাহাতি হয়েছে। পরে তাঁদের প্রতিহত করে সমাবেশস্থল থেকে বের করে দেওয়া হয়।