শীর্ষস্থানীয় মার্কিন ও রুশ কর্মকর্তাদের নিয়ে উচ্চপর্যায়ের একটি সৌহার্দ্যমূলক বৈঠকের আয়োজন করেছে সৌদি আরব। আজ মঙ্গলবার এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংঘাত সফলভাবে মধ্যস্থতা করতে সক্ষম একটি বৈশ্বিক শক্তি হয়ে উঠতে চায় সৌদি আরব। যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া বৈঠকের আয়োজনের মধ্য দিয়ে দেশটির সেই আকাঙ্ক্ষা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বৈঠকটি আয়োজনের আরও একটি সম্ভাব্য উদ্দেশ্য হলো, যুদ্ধ-পরবর্তী গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে আলাপ-আলোচনার জন্য অতিরিক্ত ক্ষমতা ও প্রভাব অর্জন করা।

একজন সৌদি কর্মকর্তা সিএনএনকে জানিয়েছেন, আজ যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকটি শুধু সাদামাটা কোনো আয়োজন নয়, বরং দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতায়ও সৌদি আরব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। বৈঠকে সৌদি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা।

সৌদি আরবে এই বৈঠকের আয়োজনকে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বিজয় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তিনি সৌদি আরবকে জ্বালানি তেলসমৃদ্ধ দেশ এবং রক্ষণশীল ইসলামি ভাবধারা থেকে বের করে বিশ্ব রাজনীতিতে পরোক্ষ প্রভাব বিস্তারকারী দেশে পরিণত করার চেষ্টা করছেন।

সৌদি আরবের জন্য বৈঠকটি মর্যাদাপূর্ণ এবং এটি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক অঙ্গনে দেশটির পরোক্ষ প্রভাব বৃদ্ধি করবে উল্লেখ করে সৌদি ধারাভাষ্যকার আলী শিহাবী বলেন, ‘আমার মনে হয় না (সৌদি আরব ছাড়া) আর কোনো জায়গা আছে, যেখানকার নেতার সঙ্গে ট্রাম্প ও পুতিন—দুজনেরই ভালো সম্পর্ক আছে।’

এটি সৌদি আরবের বড় পরিবর্তনেরই একটি অংশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশটি বিভিন্ন বৈশ্বিক সংঘাতে নিরপেক্ষতার নীতি গ্রহণ করেছে। মূলত শত শত কোটি ডলারের বিনিয়োগ আকর্ষণের আশায় দেশটি তাদের নীতিতে পরিবর্তন এনেছে। প্রত্যাশিত এসব বিনিয়োগ সৌদি যুবরাজের ‘ভিশন ২০৩০’ বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।

ভিশন ২০৩০-এর মধ্য দিয়ে সৌদি আরবের জ্বালানিনির্ভর অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনার পরিকল্পনা করছেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। প্রতিবেশী ইয়েমেনে হুতিদের সঙ্গে বছরের পর বছর ধরে চলা যুদ্ধ থেকে সরে এসেছেন তিনি। আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক করার চেষ্টাও করছেন। এ ছাড়া চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলছেন। পশ্চিমাদের সঙ্গেও সৌদি আরবের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন।

২০২৭ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরব সফরে গেলে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য বর জ করছ ন আরব র

এছাড়াও পড়ুন:

সংস্কার ও নির্বাচন উভয়টি প্রয়োজন: তারেক রহমান

‘সংস্কার ও নির্বাচন উভয়টি প্রয়োজন’-এমন দলীয় ভাবনার কথা তুলে ধরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান-আপনারা একটু সতর্ক থাকবেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি অংশ সংস্কার এবং নির্বাচনকে দাঁড় করিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরিকল্পিতভাবে বিরোধ উসকে দিতে চায়। গণতন্ত্রকামী জনগণের মনে এই ধরনের বিশ্বাস জন্ম দিতে শুরু করেছে।”

বৃহস্পতিবার (১ মে) বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব বলেন। লন্ডন থেকে সমাবেশে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন তিনি।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার প্রস্তাবনা প্রণয়নের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “কোনো রাজনৈতিক দলের আপত্তি নেই। তবে পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার বিভাগ এবং নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তুত করুন। সুনির্দিষ্টভাবে আগামী জাতীয় নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা করুন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মপরিকল্পনায় পথনকশা, গণতন্ত্রকামী জনগণের সামনে সুস্পষ্ট থাকলে জনগণের সন্দেহ, সংশয় কেটে যাবে।”

আরো পড়ুন:

বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র আর গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র একই: গয়েশ্বর

লড়াইয়ের মাধ্যমে অধিকার আদায় করে নিতে হবে: নজরুল ইসলাম

তারেক রহমান বলেন, “ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে জনগণের পক্ষে, জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্যই বিএনপিসহ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিঃশর্ত সমর্থন দিচ্ছে। তবে গণতন্ত্রকামী জনগণ মনে করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি অনির্দিষ্টকালের জন্য সমর্থন অব্যাহত রাখা যৌক্তিক নয়।”

পলাতক স্বৈরাচার যাতে আর মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার সুযোগ না পায়, এজন্য জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, “ফ্যাসিস্ট কিংবা স্বৈরাচার হওয়ার মন্ত্র দেশের সংবিধান কিংবা দেশের আইনে লেখা থাকে না। বরং সংবিধান ও আইন না মানার কারণে ফ্যাসিবাদের জন্ম হয়। একজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যখন থেকে নিজেকে কিংবা নিজেদের একমাত্র অনিবার্য অপরিহার্য মনে করে… জনগণের ওপর একক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে শুরু করে; তখন থেকেই ফ্যাসিবাদের যাত্রা শুরু হয়।”

“এই কারণে বলতে চাই, কোনো ব্যক্তি অথবা গোষ্ঠীর মনে বিনা ভোটে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত সুপ্ত ভাবনা মনের আকাঙ্ক্ষা যেন রাষ্ট্র ও সরকারকে ফ্যাসিবাদের প্রতি প্রলুব্ধ করতে না পারে, সেজন্যই জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, নির্বাচিত জাতীয় সংসদ এবং জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করা দরকার।”

“গণবিপ্লব ও গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদ অথবা স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর বিশেষ পরিস্থিতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা অন্তর্বর্তীকালীন যে সরকার গঠিত হয়, তা অবৈধ না হলেও জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সরকারের বিকল্প নয় এবং বিকল্প হতে পারে না”, বলেও সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে এবং শ্রমিক দলের প্রচার-প্রকাশনা সম্পাদক মঞ্জরুল ইসলাম মঞ্জুর সঞ্চালনায় এই সমাবেশে শ্রমিক দলের প্রধান সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির শ্রম বিষয়ক সহ-সম্পাদক হুমায়ুন কবীর খান, ফিরোজ-উজ-জামান মোল্লা মামুন, শ্রমিক দলের সালাহউদ্দিন সরকার, আবুল কালাম আজাদ, মেহেদি আলী খান, আবুল খায়ের খাজা, মোস্তাফিজুল করীম, সুমন ভুঁইয়া, প্রয়াত শ্রমিক নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমান বক্তব্য রাখেন।

বিএনপির নেতাদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইয়েদুল আলম বাবুল, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানি, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন বক্তব্য রাখেন।

ঢাকা/আসাদ/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ