ধৈর্যের পরীক্ষা নেবেন না, চোখ রাঙাবেন না: জামায়াতের আমির
Published: 18th, February 2025 GMT
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবি জানিয়ে দলটির আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, জামায়াত সাড়ে ১৫ বছর কোনো অপশক্তির কাছে মাথা নত করেনি। জীবন দিয়েছে, কিন্তু আপস করেনি। তাই জামায়াতের আর ধৈর্যের পরীক্ষা না নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মেহেরবানি করে চোখ রাঙাবেন না।’
আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে আয়োজিত সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচিতে এ কথা বলেন শফিকুর রহমান। এ টি এম আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে এই কর্মসূচি পালন করে জামায়াত।
পূর্বনির্ধারিত এই সমাবেশ বিকেল চারটার শুরু হওয়ার কথা ছিল। এর আগে বেলা সাড়ে তিনটার দিতে তিনটি পিকআপ ভ্যান একত্র করে সেখানে মঞ্চ তৈরি করা হয়। সোয়া তিনটা থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী এই সমাবেশে যোগ দেন।
এ টি এম আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে রাজপথে নামতে হবে, এমনটা কল্পনাও করেননি উল্লেখ করেন জামায়াতের আমির। তিনি বলেন, আজহারুল ইসলামের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত সমাবেশ বিক্ষোভ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। এ নিয়ে সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
কোন জিনিস এখনো আজহারুল ইসলামকে আটকে রাখতে বাধ্য করেছে, সে প্রশ্ন তুলে শফিকুর রহমান বলেন, ৫ আগস্টের পর একে একে সবাইকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ মজলুমকেও (আজহারুল ইসলাম) মুক্তি দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
জামায়াতের শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আমরা ভদ্র, বোকা নই। ভদ্রতাকে কেউ যেন দুর্বলতা মনে না করেন।’ তিনি বলেন, জামায়াত সাড়ে ১৫ বছর কোনো অপশক্তির কাছে মাথা নত করেনি। জীবন দিয়েছে, কিন্তু আপস করেনি। জামায়াত নেতাদের ফাঁসির কাষ্ঠে নেওয়ার আগেও নানা প্রস্তাব এসেছিল। ওই সব প্রস্তাব পায়ের নিচে ফেলে দিয়েছেন। তাই জামায়াতের আর ধৈর্যের পরীক্ষা না নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
জামায়াতের নিবন্ধন কেন আটকে রাখা হয়েছে—এ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, জামায়াতের নিবন্ধন জালিমরা আটকে দিয়েছিল। সব বৈষম্যের কবর রচনা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। কারও নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, ‘মেহেরবানি করে চোখ রাঙাবেন না। ফ্যাসিবাদের ভাষায় কথা বলবেন না।’
বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশে জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, বিপ্লবের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা তাঁর মামলাগুলো থেকে মুক্তি নিয়েছেন। আইন উপদেষ্টা তাঁর মামলা থেকে মুক্তি নিয়েছেন। অথচ দীর্ঘ ১৪ বছর যাবৎ অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় ফাঁসির দড়ি গলায় নিয়ে যিনি মানবেতর জীবন যাপন করছেন, সেই এ টি এম আজহারুল ইসলামকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে না। তিনি জানতে চান, এর পেছনে কোন ষড়যন্ত্র রয়েছে।
নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘ধৈর্য ধরেছি ৬ মাস ১০ দিন। আশা করেছিলাম অন্তর্বর্তী সরকার নতুন বাংলাদেশে বৈষম্যের শিকার এ টি এম আজহারুল ইসলামকে মুক্তি দিয়ে দায়িত্ব পালন করবেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, এখন পর্যন্ত মুক্তি দেননি। এই সমাবেশ থেকে আজহারুল ইসলামের মুক্তি চাই। জামায়াতের নিবন্ধন ফিরে পেতে চাই। জামায়াতের প্রতীক দাঁড়িপাল্লা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাই।’
আজহারুল ইসলামের মুক্তি ছিল ন্যায্য অধিকার—এমনটা উল্লেখ করে জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, ১৯০ দিন পর তাঁরা রাজপথে নেমেছেন। রাস্তায় এসে দাবি আদায় করতে হবে তারা এমনটা ভাবেননি।
জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি মুহাম্মদ রেজাউল করিম সমাবেশ সঞ্চালনা করেন। সমাবেশ থেকে বিক্ষোভ মিছিল পুরানা পল্টন থেকে শুরু হয়ে প্রেসক্লাব, মৎস্য ভবন মোড় হয়ে শাহবাগ মোড়ে এসে শেষ হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আজহ র ল ইসল ম র ম ক ত র আম র
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।