এক জোড়া সাদা জুতার সূত্র ধরে পটুয়াখালীর অটোরিকশাচালক মহিউদ্দিন ঈসা হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। খুনি ও পরিকল্পনাকারীকে শনাক্ত করার পর গত শনি ও রোববার পৃথক অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অটোরিকশা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যেই ঈসাকে খুন করা হয়েছে বলে গ্রেপ্তার আসামিরা পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পটুয়াখালী পুলিশ সুপার মো.

আনোয়ার জাহিদ। তিনি জানান, এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে পুলিশ তদন্তে নামে। ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা যায়, হত্যার পর ইজিবাইক নিয়ে পালানোর সময় এক ব্যক্তির পায়ে ছিল সাদা রঙের জুতা। এই সাদা জুতা ধরে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। এতে নাহিদ নামে এক কিশোরকে শনাক্ত করা হয়। গত শনিবার সদর উপজেলার শারিকখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। নাহিদের বাড়ি বরগুনার আমতলী উপজেলার মহিষকাটা এলাকায় হলেও সে পটুয়াখালীর শারিকখালী গ্রামে নানাবাড়িতে অবস্থান করছিল। 

ওইদিন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয় নাহিদ। জবানবন্দিতে সে জানায় ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যেই মহিউদ্দিন ঈসাকে হত্যা করা হয়। এ পুরো হত্যার পরিকল্পনা করেছিল মো. তুহিন নামে এক তরুণ। পরে গত সোমবার গভীর রাতে ঢাকার কাফরুল থানাধীন ভাষানটেক এলাকা থেকে তুহিনকে (২২) গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যার দায় স্বীকার করেছে।

আনোয়ার জাহিদ বলেন, পুলিশ তদন্ত শুরুর অল্প সময়ের মধ্যে খুনিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। অপরাধীরা যতই চতুর হোক, তারা আইনের হাত থেকে রেহাই পাবে না।

৪ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টার দিকে পটুয়াখালী সদর উপজেলার ইটবাড়িয়া এলাকার নিজ বাড়ি থেকে অটোরিকশা নিয়ে বের হন ঈসা। পরদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দশমিনা উপজেলার চাঁদপুরা গ্রামের একটি তরমুজ ক্ষেতের টং ঘর থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। একই দিন ওই গ্রামের একটি পারিবারিক কবরস্থানের পাশের রাস্তা থেকে ঈসার অটোরিকশা উদ্ধার করা হয়। 

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সাজেদুল ইসলাম।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর উপজ ল র

এছাড়াও পড়ুন:

‘হাউসে কাউসার’ উম্মতের জন্য আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত

হাউসে কাউসার হলো একটি পবিত্র পানির কূপ, যার পানি অত্যন্ত বিশুদ্ধ, সুমিষ্ট ও পবিত্র। কিয়ামতের দিন এই হাউস মুমিনদের তৃষ্ণা নিবারণের উৎস হবে। যে ব্যক্তি এটি থেকে একবার পান করবে, সে আর কখনো পিপাসার্ত হবে না।

এটি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর উম্মতের জন্য কিয়ামতের দিনে বিশেষ উপহার হিসেবে উপস্থাপিত হবে। সুরা কাউসারে আল্লাহ বলেন: ‘নিশ্চয় আমি আপনাকে কাউসার দান করেছি।’ (সুরা কাউসার, আয়াত: ১)

তাফসির অনুসারে, ‘কাউসার’ শব্দটি বহু অর্থ বহন করে, যার মধ্যে হাউসে কাউসার, জান্নাতের একটি নদী এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর উম্মতের জন্য অফুরন্ত নেয়ামত অন্তর্ভুক্ত।

যার পানি অত্যন্ত বিশুদ্ধ, সুমিষ্ট ও পবিত্র। কিয়ামতের দিন এই হাউস মুমিনদের তৃষ্ণা নিবারণের উৎস হবে।হাদিসে হাউসে কাউসার

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমার হাউসের দৈর্ঘ্য এক মাসের পথের সমান। এর পানি দুধের চেয়ে সাদা, সুগন্ধ মিশকের চেয়ে উত্তম এবং পাত্রগুলো আকাশের তারকার মতো। যে এটি থেকে পান করবে, সে আর কখনো পিপাসার্ত হবে না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৫৮১; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৩০০)

তিনি আরও বলেন, ‘কিছু লোক আমার হাউসের কাছে আসবে, আমি তাদের চিনব এবং তারাও আমাকে চিনবে। কিন্তু তাদের দূরে সরিয়ে দেওয়া হবে। আমি বলব, ‘তারা আমার উম্মত।’ ফেরেশতারা বলবে, ‘আপনি জানেন না, তারা আপনার পরে দ্বীনে নতুন বিষয় আবিষ্কার করেছে।’ তখন আমি বলব, ‘যারা আমার পরে দ্বীন বিকৃত করেছে, তারা দূর হোক।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৪৭; সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭,০৫১)

সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আল্লাহর রাসুল, আপনি কি আমাদের চিনতে পারবেন?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত-পা অজুর কারণে দীপ্তিমান হবে, এমন চিহ্ন অন্য কোনো উম্মতের হবে না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৫৭৯; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৪৯)

হাউসের দৈর্ঘ্য এক মাসের পথের সমান। এর পানি দুধের চেয়ে সাদা, সুগন্ধ মিশকের চেয়ে উত্তম এবং পাত্রগুলো আকাশের তারকার মতো। যে এটি থেকে পান করবে, সে আর কখনো পিপাসার্ত হবে না।সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৫৮১; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৩০০আরও পড়ুনসুরা কাওসারে তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মেরাজের রাতে আমি একটি নহরের তীরে পৌঁছালাম, যার পাড় মণিমুক্তা দ্বারা নির্মিত। এর পানি দুধের চেয়ে সাদা এবং সুগন্ধ মিশকের চেয়ে উত্তম। আমি জিবরাইল (আ.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘এটি কী?’ তিনি বললেন, ‘এটি হাউসে কাউসার, যা আল্লাহ আপনাকে দান করেছেন।’ (মুস্তাদরাকে হাকেম, ১/১১৬; তিরমিজি, হাদিস: ২,৫৪৪)

হাউসে কাউসারের বৈশিষ্ট্য

অবস্থান: হাউসে কাউসার কিয়ামতের দিন মিজানের আগে বা পরে মুমিনদের জন্য উপস্থাপিত হবে। কিছু হাদিসে এটি জান্নাতের প্রবেশপথে অবস্থিত বলে উল্লেখ রয়েছে।

প্রশস্ততা: এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ অত্যন্ত বিশাল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এর দৈর্ঘ্য আদন (ইয়েমেনের এডেন বন্দর) থেকে আইলা (আরবের উত্তরাঞ্চলীয় শহর) পর্যন্ত দূরত্বের চেয়েও বেশি এবং প্রশস্ততা এক মাসের পথের সমান (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৫৮১)।

পানির গুণাগুণ: পানি দুধের চেয়ে সাদা, বরফের চেয়ে শুভ্র এবং মধু ও দুধের চেয়ে মিষ্টি। এর সুগন্ধ মিশকের (কস্তুরির) চেয়ে অধিক মনোমুগ্ধকর। যে এটি থেকে পান করবে, সে আর কখনো তৃষ্ণার্ত হবে না। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৪৭)

পাত্র: হাউসের পানি পানের জন্য পাত্রগুলো আকাশের তারকার মতো অসংখ্য ও উজ্জ্বল। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৫৭৯)।

পাড়ের সৌন্দর্য: এর পাড় মণিমুক্তা দ্বারা নির্মিত, যা এর শোভা বৃদ্ধি করে (মুস্তাদরাকে হাকেম, ১/১১৬)।

হাউসে কাউসার থেকে পান করার সৌভাগ্য শুধু সেই মুমিনরা পাবেন, যারা: রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ অনুসরণ করেছেন এবং বেদআত (ধর্মে নতুন আবিষ্কার) থেকে মুক্ত ছিলেন।আরও পড়ুনসাবধানী মানুষের নয়টি গুণ০৭ মে ২০২৫কারা পান করতে পারবেন

হাউসে কাউসার থেকে পান করার সৌভাগ্য শুধু সেই মুমিনরা পাবেন, যারা: রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ অনুসরণ করেছেন এবং বেদআত (ধর্মে নতুন আবিষ্কার) থেকে মুক্ত ছিলেন।

রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর উম্মতকে অজুর কারণে চিনতে পারবেন, কারণ তাদের মুখমণ্ডল, হাত ও পা দীপ্তিমান হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৫৭৯)

তবে কিছু লোক হাউসের কাছে এলেও ফেরেশতারা তাদের তাড়িয়ে দেবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের জন্য সুপারিশ করলেও ফেরেশতারা বলবেন, ‘আপনি জানেন না, তারা আপনার পরে দ্বীনে নতুন বিষয় আবিষ্কার করেছে।’ তখন রাসুল (সা.) বলবেন, ‘যারা আমার পরে দ্বীনকে বিকৃত করেছে, তারা দূর হোক।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৪৭)

আরও পড়ুনমহানবী (সা.)–র অসিয়ত নিয়ে সংশয়০২ জুলাই ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ