স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহস–শক্তি পররাষ্ট্রনীতির উপাদান হতে পারে
Published: 18th, February 2025 GMT
চব্বিশে তরুণ প্রজন্ম ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। এ আত্মত্যাগকে কাঠামোর মধ্যে আনাটা বড় চ্যালেঞ্জ। গত জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে যে অভূতপূর্ব ঘটনাটা ঘটেছে, জাতিসংঘের প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে তার একটা এক্সিলেন্ট ডকুমেন্টেশন (চমৎকারভাবে নথিবদ্ধ) হয়েছে। অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বা স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশের যে সাহস ও শক্তি, সেটাও এ দেশের পররাষ্ট্রনীতির একটা বড় উপাদান হতে পারে।
রাজধানীর ইস্কাটনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে আজ মঙ্গলবার জাতীয় নাগরিক কমিটি আয়োজিত এক সংলাপে এ কথা উঠে আসে। দিনব্যাপী ‘গণ-অভ্যুত্থান উত্তর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি: নতুন দিগন্তের সন্ধানে’ শীর্ষক সংলাপের চতুর্থ পর্বের আলোচনার বিষয় ছিল ‘গণতন্ত্র ও মানবাধিকার: আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততা’।
এ পর্বে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতন নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম ও দেশটির প্রতিষ্ঠিত পণ্ডিতদের অনেকে ভ্রান্ত ধারণার কথা তুলে ধরছেন। তিনি বলেন, চব্বিশে তরুণ প্রজন্ম ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। এ আত্মত্যাগকে কাঠামোর মধ্যে আনাটা বড় চ্যালেঞ্জ। গণতন্ত্র একটা মূল্যবোধ। অন্যকে গ্রহণ করা বা সম্মান দিতে না পারলে গণতন্ত্র টেকে না। গণতন্ত্রে স্বচ্ছতা ও জবাববিহি থাকতে হবে। সবাইকে সমানভাবে দেখতে হবে।
সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে যে অভূতপূর্ব ঘটনাটা ঘটেছে, জাতিসংঘের প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে তার একটা এক্সিলেন্ট ডকুমেন্টেশন হয়েছে। বাংলাদেশের যে অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বা স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সাহস ও শক্তি, সেটা যে অন্য দেশের জন্য একটা টেমপ্লেট হতে পারে, সেটাও এ দেশের পররাষ্ট্রনীতির একটা বড় উপাদান হতে পারে।
বিশিষ্ট আলোকচিত্রী ও দৃক গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল আলম বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে দেয়াললিখনে যে বৈষম্যবিরোধী কথাগুলো বলা আছে, আমাদের রাজনীতিবিদেরা কখনো এ কথা বলার সাহস পায়নি, এটা থেকে অনেক দূরে থেকেছে। তাঁরা নিজেদের স্বার্থ দেখেছেন। সাধারণ মানুষের চাহিদা নিয়ে তাঁরা খুব একটা চিন্তা করেননি।’
মানবাধিকার প্রসঙ্গে শহিদুল আলম বলেন, পাশ্চাত্যে মানবাধিকারের অনেক বুলি আওড়ানো হয়, কিন্তু তাদের কাছে একটি ফিলিস্তিনি শিশু আর একটি ইসরায়েলি শিশু কিন্তু সমান নয়।.
শহিদুল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গুগলে সার্চ করলে বিরাট একটা অংশ আসবে ভারতীয় প্রোপাগান্ডা। আমাদের গল্পটা বলার কেউ নেই। আমাদেরই সেটা বলতে হবে। সেই জায়গায় যাওয়ার জন্য আমাদের সেই দক্ষতা অর্জন করতে হবে, শক্তভাবে নিজেদের উপস্থাপন করতে হবে। সেটা না হলে ভারতীয় প্রোপাগান্ডা দিয়েই লোকে আমাদের চিনবে।’
আলোচনায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কামরুল আহসান বলেন, ‘শেখ হাসিনার দুঃশাসন টিকিয়ে রাখার পেছনে দুই ধরনের অ্যাক্টর ছিল। অভ্যন্তরীণ ও বহিঃস্থ। অভ্যন্তরীণ অ্যাক্টরের মধ্যে ছিল নিরাপত্তা বাহিনী, বিজনেস এলিট ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান। শেখ হাসিনা পালালেও এরা এখনো দেশে আছে। এদের চিহ্নিত করতে হবে।’ যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে বিভিন্ন নীতি প্রণয়ন এবং সঠিক লোককে সঠিক জায়গায় নিয়োগ দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
আলোচনার এই পর্বে জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক তাসনিম জারা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য তিনটি বিষয় তুলে ধরেন। এগুলো হলো গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে যেসব আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করেছে, শুধু কাগজে-কলমে না রেখে মানুষের বাস্তব জীবনে সেগুলোর প্রতিফলন; মিথ্যার ভিত্তিতে নয়, বরং সত্যের ভিত্তিতে পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ এবং দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি এ অঞ্চলে গণতন্ত্রের বাতিঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করা।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সুলতান মোহাম্মদ জাকারিয়া পর্বটি সঞ্চালনা করেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণতন ত র ত র একট আম দ র র জন য আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যু সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব: সালাহউদ্দ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যুর সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব।’’
তিনি মনে করেন, আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান এলে যেকোনো অসাংবিধানিক প্রক্রিয়া ঠেকানো যাবে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘‘আগামী নির্বাচনকে যদি অনিশ্চিত করা হয় বা বিলম্বিত করা হয়, তাহলে তার সুযোগ নেবে ফ্যাসিবাদী বা অসাংবিধানিক শক্তি। এর পরিণতি জাতি অতীতে বহুবার ভোগ করেছে। আমরা আবার সে পরিস্থিতি চাই না।’’
অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে পৃথক এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতেই সাংবিধানিকভাবে এই সরকার গঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সে দেওয়া সেই মতামত এখনো বহাল আছে। এর বিপরীতে সুপ্রিম কোর্ট কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। তাই এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা আসলে রাজনৈতিক বক্তব্য, এর কোনো আইনি ভিত্তি নেই।’’
সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘যেকোনো সাংবিধানিক আদেশ জারি হলে তা আগামীকাল বা পরশু চ্যালেঞ্জ হতে পারে। আমরা এমন খারাপ নজির জাতির সামনে আনতে চাই না। তাই সমাধানের বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করেছি। সবাইকে বিবেচনায় নিতে আহ্বান জানাচ্ছি।’’
পিআর পদ্ধতি প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের অধিকার আছে। তবে পিআর পদ্ধতি চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়, শেষ পর্যন্ত জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে।’’
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘‘পিআর পদ্ধতিতে ঝুলন্ত পার্লামেন্টের ঝুঁকি থেকে যায়। তাতে রাষ্ট্র ও জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ সম্ভব হয় না। আমরা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যেতে পারি না।’’
সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘জনগণই হলো সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। এই দেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে এবং বারবার গণতন্ত্রকে সংকট থেকে উদ্ধার করেছে।’’
আগামী সংসদে কিছু মৌলিক বিষয়ে সংশোধনের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন তিনি বলেন, ‘‘আমরা কিছু বিষয়ে ইতোমধ্যে একমত হয়েছি। তবে, ঐকমত্য কমিশনের সনদের ভেতরে যেসব পরিবর্তন হবে, সেগুলোতে অবশ্যই গণভোট নিতে হবে।’’
ঢাকা/আসাদ/রাজীব