খাদ্যগুদাম আছে কার্যক্রম নেই, বঞ্চিত প্রান্তিক কৃষক
Published: 20th, February 2025 GMT
প্রান্তিক কৃষকের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যে ধান ক্রয় ও খাদ্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে ৫০০ টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি গুদাম তৈরি হয় ১৯৮১ সালের ২৪ ডিসেম্বর। কয়েক বছর ঠিকঠাক মতোই চলে ধান ক্রয় ও সংরক্ষণ।
১৯৯৯ সালের দিকে কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায় এ গুদামের কার্যক্রম। কাজ হারা হয় অন্তত ৫০-৬০ শ্রমিক। বর্তমানে ২২ কিলোমিটার ঘুরে উপজেলা সদরে এসে কৃষকের ধান বিক্রি করতে হয়। এ ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে দ্রুত খাদ্যগুদামটি চালু করার দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।
অন্তত ২৬ বছর ধরে বন্ধ থাকা এ সরকারি খাদ্যগুদামটি হালুয়াঘাট উপজেলার শাকুয়াই ইউনিয়নের শাকুয়াই বাজারে। গুদামটির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে কংস নদী। গুদামটি উদ্বোধনের পর কয়েক বছর আমতৈল, নড়াইল ইউনিয়নের আংশিক, বিলডোরা ও আমতৈল ইউনিয়নের আংশিক এলাকার প্রান্তিক চাষিরা সহজে তাদের উৎপাদিত ধান নিয়ে আসতে পারত। ধান বিক্রির জন্য আসা জনসমাগম দেখে শাকুয়াই মোড়ে গড়ে ওঠে বিভিন্ন দোকানপাট।
তবে কোনো কারণ ছাড়াই প্রায় ২৬ বছর আগে হঠাৎ করে গুদামের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়তে হয় কৃষকদের। এখন রাস্তাঘাট উন্নত হলেও শাকুয়াই, বিলডোরা, নড়াইল, স্বদেশী ইউনিয়নের হাজারো কৃষককে অন্তত ২২ কিলোমিটার সড়ক ঘুরে উপজেলা সদরের গুদামে ধান বিক্রি করতে হয়। এদিকে ন্যায্য মূল্য না থাকায় এবং ২২ কিলোমিটার ঘুরে ধান বিক্রি করতে গেলে গুনতে হয় বাড়তি খরচ। তাই উপজেলা খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করতে অনাগ্রহ কৃষকের। স্থানীয় হাট-বাজারে ধান বিক্রি করতে গিয়ে ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হন কৃষক।
খাদ্যগুদামের ভবনটি এখনও মজবুত রয়েছে। চারদিকে নিরাপত্তা বেষ্টনী থাকলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জুয়াড়ি, মাদকসেবী ও যৌনকর্মীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে এলাবাসীর। এ ছাড়া দখল হয়ে গেছে অনেক জায়গা। গুদামের তালা ভেঙে অনেক বছর আগে ওজন মাপার যন্ত্র ও বেশ কিছু সরঞ্জাম চুরি করে নিয়ে গেছে চোরচক্র। স্টাফ কোয়ার্টার ও নিয়ন্ত্রক কার্যালয়টি অবৈধভাবে দখল করে বসবাস করছেন অনেকেই।
স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমার বাবা এই গুদামের ঝাড়ুদার ছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর আমি সেই দায়িত্ব পাই। তবে বন্ধ হওয়ার পর বেতন বা সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছি। কার্যক্রম না থাকায় পরিবার নিয়ে গুদামের স্টাফ রুমে থাকছি। পাশাপাশি গুদামের সামনে একটি চায়ের দোকান দিয়ে তা দিয়েই কোনো রকম চলছি। গুদামটি যদি চালু হতো, তাহলে অনেকেরই কর্মসংস্থান হতো।’
ভাট্টা গ্রামের প্রান্তিক চাষি আজমত আলীর ভাষ্য, আগে নদী পথে নৌকায় করে ধান নিয়ে যেতেন তারা। এখন তো গুদামে ধান ক্রয় করা হয় না। এ কারণে হালুয়াঘাট বাজারে ধান নিয়ে যেতে হয়। এ গুদাম যদি চালু হতো তাহলে কৃষকের বিশাল উপকার হতো।
প্রবীণ কৃষক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজগর আলী খান রুপক জানান, এ গুদামটি ফের চালু হলে কৃষক যেমন লাভবান হবেন, তেমনি খাদ্য ঘাটতি পূরণে সহায়ক হবে। সেই সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইউনুস আলী খানের ভাষ্য, উপজেলা সদর থেকে এই ইউনিয়ন ২২ কিলোমিটার দূরে। কৃষকের কথা চিন্তা করে তৎকালীন বিএনপি সরকার এই এলাকায় একটি খাদ্যগুদাম নির্মাণ করে। এতে শুধু শাকুয়াই নয়, বিলডোরা, স্বদেশী ও নড়াইল ইউনিয়নের কৃষকরাও এই গুদামে ধান বিক্রি করতে পারতেন। কিন্তু আকস্মিক বন্ধ হয়ে গেছে গুদামটি।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা হাসান আলী মিয়া বলেন, ‘আমি এই উপজেলায় দু’বছর ধরে কর্মরত রয়েছি। এর মধ্যে আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথাও বলেছি। সামনে বোরো মৌসুমের মধ্যে আমরা গুদামটি চালু করতে পারি কিনা সে বিষয়ে চেষ্টা করছি। এ গুদামটি চালু হলে আমাদেরও সুবিধা হবে। বিশেষ করে সংগ্রহ মৌসুমে ওই এলাকা থেকে ধান ক্রয় করা আমাদের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। গুদামটি চালু হলে ওই অঞ্চলের কৃষকরাও ন্যায্য মূল্যে ধান দিতে পারবেন।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ২২ ক ল ম ট র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
নিউইয়র্ক ছাড়িয়ে জাতীয় মুখ মামদানি
ডেমোক্র্যাট ভোটার লিয়া অ্যাশ বহু বছর ধরে কোনো রাজনীতিককে নিয়ে আশাবাদী অনুভব করেননি। তবে সম্প্রতি সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এ বছর আমার জন্য তিনিই একমাত্র আলোর দিশা। তিনি সত্যিই মানুষের কথা শুনতে চান—যাঁদের তিনি মেয়র হতে যাচ্ছেন।’
২৬ বছর বয়সী অ্যাশ যে ব্যক্তির কথা বলছেন, তিনি হলেন জোহরান মামদানি, যিনি নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী।
মামদানি তাঁর নির্বাচনী প্রচারে জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর বিষয়টি প্রাধান্য দিচ্ছেন। এ কারণেই অ্যাশ নিঃসংকোচে মামদানিকে ভোট দিতে চান। তবে তিনি মামদানিকে ভোট দিতে পারছেন না। কারণ, তিনি থাকেন নিউইয়র্ক থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ মাইল দূরে, মিসিসিপির গালফপোর্ট শহরে।
অ্যাশ বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে চাই, কোনো একদিন গালফপোর্ট, মিসিসিপিতেও এক জোহরান মামদানি আসবেন।’
জাতীয় পর্যায়ে আলোচিত মুখমাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই ৩৪ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট মামদানি এক প্রান্তিক প্রার্থী থেকে জাতীয় পর্যায়ের আলোচিত মুখে পরিণত হয়েছেন। গত জুন মাসের দলীয় নির্বাচনে তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে বিজয়ী হন। ওই নির্বাচনে ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের ভোটার উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি।
আগামীকাল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে মেয়র নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর আগের সব জরিপেই দেখা গেছে, নিউইয়র্ক শহরের সাবেক মেয়র অ্যান্ড্রু কুমোর চেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মামদানি এগিয়ে রয়েছেন। মামদানি আশা করছেন, আগেরবারের মতো এবারও তরুণ ভোটাররা তাঁর পাশে থাকবেন। তবে শুধু নিউইয়র্কের মধ্যেই নয়, জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় মোকাবিলার তাঁর অঙ্গীকার পুরো দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও সাড়া ফেলেছে। অনেক জেন–জি ও মিলেনিয়ালস প্রজন্মের মানুষ বলছেন, তাঁদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গায় হাত রেখেছেন মামদানি। তরুণ প্রজন্ম যখন রাজনীতিকদের প্রতি আশা হারিয়ে ফেলেছেন এবং প্রচলিত নিয়ম ভেঙে নতুন কণ্ঠস্বরের অপেক্ষায় আছেন, তখনই মামদানির উত্থান।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সার্কেলে তরুণ ভোটারদের নিয়ে গবেষণা করেন রুবি বেল বুথ। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো প্রার্থী জনগণের উদ্বেগ নিয়ে কথা বলেন এবং সেই উদ্বেগকে স্বীকৃতি দেন, তখন সেটি বিশাল প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের ক্ষেত্রে।’
রুবি বেল বুথ আরও বলেন, ‘তরুণেরা যখন সত্যিই অনুভব করেন যে তাঁদের কথা শোনা হচ্ছে, তাঁদের প্রতি সম্মান দেখানো হচ্ছে, তখন যেকোনো প্রার্থী সফল হতে পারেন। তবে এখন সেটি করছেন মামদানি। আর এর আগে হয়তো সেটা করেছিলেন ট্রাম্প।’
রক্ষণশীলদের মধ্যেও জনপ্রিয়রক্ষণশীল রাজ্য মিসিসিপিতে বসবাস করলেও লিয়া অ্যাশ সব সময়ই ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের ভোট দিয়ে আসছেন। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি রাজনৈতিক নেতাদের ওপর হতাশ ও উপেক্ষিত বোধ করছেন। এই অনুভূতি আরও তীব্র হয়েছে তাঁর অর্থনৈতিক বাস্তবতা থেকে। অন্যদিকে অ্যান্ড্রু টেইট ভার্জিনিয়ার এক গ্রামীণ এলাকায় একটি ছোট খামারে তাঁর সঙ্গী ও সন্তানদের নিয়ে থাকেন এবং স্থানীয় একটি কারখানায় কাজ করেন। তিনিও মূল্যস্ফীতি ও পরিবারের আর্থিক ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।
অ্যাশ বলেন, ‘দেশের অন্যতম দরিদ্র রাজ্য হয়েও মিসিসিপিতে বাড়ির দাম বেড়েই চলেছে। এটা সত্যিই মন খারাপ করে দেয়।’ তবু অ্যাশ আশা করছেন, যদি মামদানি নির্বাচনে জয়ী হন, তাহলে সেটি দেশের অন্যান্য শহরের ডেমোক্র্যাট নেতাদের জন্য একটি বার্তা হয়ে যাবে।
জোহরান মামদানি তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় একাধিক অঙ্গীকার করেছেন, বিশেষ করে বাসস্থান নিয়ে। তাঁর লক্ষ্য শহরের খরচ কমানো। তবে সমালোচকেরা বলছেন, এসব পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত নয়। আর রক্ষণশীলদের, বিশেষ করে ট্রাম্পের সমর্থকদের কাছে মামদানির দৃষ্টিভঙ্গি বিপজ্জনক। তবু এসব সতর্কতা তরুণ মার্কিন ভোটারদের খুব একটা বিচলিত করছে না। তাঁরা রাজনৈতিক দলের লেবেলের পরিবর্তে মামদানির বাস্তব জীবনের সমস্যা ও সমাধানমুখী বার্তাতেই বেশি আকৃষ্ট হচ্ছেন।
গবেষক বেলি বুথ বলেন, ‘মামদানিই এমন একজন প্রার্থী, যিনি প্রচলিত ব্যবস্থাকে নানা দিক থেকে চ্যালেঞ্জ করছেন।’
২৬ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাট এমিলি উইলসনের মতে, জীবনযাত্রার ব্যয়ের সংকট দলীয় বিভাজনের ঊর্ধ্বে থাকা উচিত। ফ্লোরিডার সেন্ট পিটার্সবার্গে বসবাসরত এমিলি দূর থেকেই মামদানিকে সমর্থন করছেন। মিশিগানের অ্যান আরবারের কাছে এক ছোট শহরে বসবাসরত ২৫ বছর বয়সী ডেইজি লুপাও একইভাবে ভাবেন। তাঁর মতে, মামদানির প্রচারাভিযানটা নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গি এনে দিয়েছে। তাঁর অনেক প্রস্তাব গ্রামীণ আমেরিকাসহ নিজ সম্প্রদায়ের জন্যও কার্যকর হতে পারে। লুপা বলেন, ‘নিউইয়র্কে তিনি যেসব পরিবর্তন আনতে চাচ্ছেন, সেগুলোর অনেকটাই আমরা গ্রামীণ এলাকায় আরও বেশি করে চাই। কারণ, এখানে তো সেগুলোর অস্তিত্বই নেই।’
সতর্ক আশাবাদ
তবে যাঁরা নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন, তাঁদের কাছে মূল প্রশ্ন—মামদানি কি সত্যিই জীবনযাত্রার ব্যয়ের এই সংকট কাটাতে পারবেন? ৩২ বছর বয়সী ডিলন রবার্টসনের জন্য অর্থনৈতিক উদ্বেগ যেন জীবনের স্থায়ী সঙ্গী। স্নাতক শেষে তাঁর শিক্ষাঋণ দাঁড়াবে প্রায় আড়াই লাখ ডলার। মামদানিকে সমর্থন করছেন রবার্টসন।
কারণ, তাঁর প্রস্তাবিত ব্যয় সাশ্রয়ী পরিকল্পনাগুলো জীবনকে কিছুটা সহজ করতে পারে। তবে একই সঙ্গে তিনি সংশয়ও প্রকাশ করেন। ডিলন বলেন, ‘মামদানি যা বলছেন, সবই শুনতে ভালো লাগে। কিন্তু আমি ভাবি, তিনি কি সত্যিই পারবেন? বাস্তবে কি তা সম্ভব? নাকি এটা যেন ফুটো জাহাজে শুধু ব্যান্ডেজ লাগানোর মতো?’
তবু ডিলন স্বীকার করেন. যদি বিকল্প হয়, আগের মতোই টেনে নেওয়া অথবা কিছু নতুন চেষ্টা করা, তাহলে তিনি নতুনটাকেই সুযোগ দিতে প্রস্তুত।