Samakal:
2025-06-16@16:29:33 GMT

একুশ ও একটি স্বপ্ন

Published: 20th, February 2025 GMT

একুশ ও একটি স্বপ্ন

প্রতিদিন এখন আগের দিনের চেয়েও বেশি খারাপ বোধ করি। এখন আর কেউ কোনো লেখা চাইলে দিতে পারি না। আশি বছর বয়স পর্যন্ত লেখালেখি করেছি। এর পর আর সম্ভব হয়ে ওঠে না। বর্তমানে আমার ঊননব্বই চলছে। 

অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমরা সবসময় সোচ্চার। প্রতিবাদের ভাষা আমাদের বরাবরই ছিল। বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে যতটা মনে করতে পারি, গ্রামের স্কুলে পড়তাম তখন। স্কুল থেকে মাইল খানেক দূরে একটা বাজার ছিল, বসুর বাজার। বায়ান্নার গুলি চলার ঘটনা জানতে পেরে আমি টিনের চোঙা নিয়ে সেই বাজারে প্রতিবাদে উপস্থিত হয়েছিলাম। হরতাল ডেকেছিলাম। সাধারণ মানুষেরা আমার, আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে হরতাল করেছিল। তারা বলছিল, আমাদের ছেলেদের আমরা শহরে লেখাপড়া করার জন্য পাঠাই, আর ওরা তাদের গুলি করে মারে। ওরা নাকি আবার ভোট চাইতে আসবে। এদের ভোট দেওয়া দূরের কথা, ভোটের বদলে ঝাঁটা দেওয়া হবে। সাধারণ হাটুরে ভাইয়েরা বলেছিল, আমরা কেউ আজকে হাট করব না, আজ হরতাল। সেদিন হাট উঠে গিয়েছিল।  

এই তো গ্রামের সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের ভাষা। আমি নিজে তখন ছাত্র। ঢাকার ঘটনা যখন বলছিলাম, সবাই আমাকে বিশ্বাস করেছিল। ক্ষিপ্ত ছিল সবাই। সাধারণ মানুষকে রক্ষার জন্য তাদেরই টাকায় কেনা বন্দুক চালিয়ে তাদেরই হত্যা করা হয়েছে, একটি ন্যায্য দাবির পক্ষে দাঁড়ানোর কারণে– এটা কেউ মেনে নিতে পারছিল না। অনেক ক্ষিপ্ত মন্তব্য করেছিল। সেসব এখন আর মনে নেই। 
ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে আমি ছেলেবেলা থেকেই যুক্ত। ১৯৪৮ সালে যখন জিন্নাহ সাহেব বললেন– স্টেট ল্যাংগুয়েজ অব পাকিস্তান ইজ গোয়িং টু বি উর্দু অ্যান্ড নো আদার ল্যাংগুয়েজ, ছাত্ররা নো নো বলে প্রতিবাদ করল, তখন আমার পরিবেশ, পারিপার্শ্বিকতা আমাকে ক্রমশ তৈরি করছে। ছাত্রদের ওপর যখন পুলিশের হামলা হলো, আমার নেত্রকোনার  স্কুলের নাইন-টেনের ছেলেরা আমাদের ক্লাসে এসে বলল, জিন্নাহ বলেছেন আমাদের রাষ্ট্রভাষা উর্দু হবে। রাষ্ট্রভাষা উর্দু হলে আমাদের অস্তিত্ব থাকবে না। সব পশ্চিম পাকিস্তানের হাতে চলে যাবে। আমাদের এর প্রতিবাদ করতে হবে। শুনে স্কুলের ছাত্ররা বের হয়ে এলাম। উত্তরপাড়ার মাঠে সবাই সমবেত হলো। বলা হলো, জিন্নাহকে আমরা জাতির পিতা, কায়েদে আজম বলি, কিন্তু তিনি যে অবস্থা সৃষ্টি করেছেন, এর পর আর তাঁকে কোনোভাবেই জাতির পিতা বলা যায় না।

এসব খেটে খাওয়া ও হাটুরে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া। ছাত্র, ছাত্রনেতা, শিক্ষকদের প্রতিক্রিয়া এর চেয়ে খুব বেশি আলাদা কিছু ছিল না। তবে ঢাকায় যেমন প্রতিবাদের এই ভাষা আরও নানা মাত্রা ও রূপ পেয়েছিল, দেয়াল লিখনে, পোস্টারে, ওই দূর পাড়াগাঁয়ে তা হয়নি। ঢাকার খবর আমরা বঞ্চিত ছিলাম না। একটু দেরি হলেও খবর পৌঁছাত। তখনও কিছু কিছু কাগজ আসত। একই সঙ্গে অনেক কাগজপত্রই আসত না এবং এখনও তাই। এখন শুধু দুটি পত্রিকা আসে। যা হোক, কোনো পোস্টার-দেয়াল লিখন ছাড়াই বসুর বাজারসহ আরও চার-পাঁচটা বাজারে চোঙা হাতে আমাদের যাওয়া সার্থক হয়েছিল। বসুর বাজারে মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে হরতাল পালন করেছিল। 

গ্রামে সেই সময় আলাপ-আলোচনা কিংবা উত্তেজনার খুব বেশি অনুষঙ্গ ছিল না। সবার দুশ্চিন্তার কেন্দ্রে ছিল ‘চা’। চাকে কেউ ভালো চোখে দেখে না তখন। নিকৃষ্ট কোনো নেশাদ্রব্যই মনে করে। মানুষ বলে, মদ খেয়ে মাতালের বদলে চা খেয়ে মানুষ চাতাল হয়ে যাচ্ছে। এই চাতাল যাতে না হওয়া লাগে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। এমন সময় বায়ান্নর সেই হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটল। 
ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে আমার শহীদ মিনার নির্মাণের স্মৃতি। যতটা মনে পড়ে গ্রামের স্কুলে আমরা শহীদ মিনার তৈরি করেছিলাম। পরবর্তী সময়ে ছাত্র অবস্থাতেই যখন আমি আঠার মাস জেলে ছিলাম, একুশে ফেব্রুয়ারি এলে বাকশোর ওপর বাকশো সাজিয়ে শহীদ মিনার বানিয়েছে আরও কয়েকজন মিলে, সেখানে যথাসাধ্য ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছি। আরও কত স্মৃতি। 
ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে সারাদেশে একটা সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সূচনা ঘটেছিল। যে আন্দোলন পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রের রবীন্দ্র বিরোধিতার বিরুদ্ধে আমাদের দাঁড়াতে প্রস্তুত করেছে, নজরুলকে খণ্ডিত করার অপচেষ্টা রুখে দিয়েছে। আমাদের ভাষাকে উচ্চারণে, বর্ণমালায় বিকৃত করার যে অপপ্রয়াস চালিয়েছিল পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকরা। তাদের সেই চেষ্টাও রুখে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এই প্রতিরোধ ও তার ফলাফলের সবই তৈরি হয়েছে ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায়। 

প্রকৃত প্রস্তাবে ভাষা আন্দোলন একটা সাংস্কৃতিক আন্দোলন। সেই সাংস্কৃতিক আন্দোলনই ক্রমে রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছিল। ফলে আমরা একটা স্বাধীন রাষ্ট্র অর্জন করেছিলাম। আমি এখনও প্রগতিশীল নতুন সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে ওঠার স্বপ্ন দেখি।  

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ২১ ফ ব র য় র আম দ র কর ছ ল হরত ল

এছাড়াও পড়ুন:

গুচ্ছে প্রাথমিক ভর্তি কার্যক্রম শুরু ২২ জুন

‎‎২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে দেশের ১৯টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের আগামী ২২ জুন প্রাথমিক ভর্তি কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। এ কার্যক্রম আগামী ২৮ জুন পর্যন্ত চলবে।

গত ১২ জুন ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের পছন্দক্রমসহ আবেদনের সময়সীমা শেষ হয়েছে।

‎সোমবার (১৬ জুন) সকালে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের সঙ্গে আয়োজিত ভার্চুয়াল মিটিং শেষে বিষয়টি নিশ্চিত করেন গুচ্ছ ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক এবং মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ।

আরো পড়ুন:

রাবির ‘এ’ ইউনিটের বিষয়ভিত্তিক মেধাতালিকা প্রকাশ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশংসা কুড়িয়েছে রাজশাহী কলেজ

‎গুচ্ছের আহ্বায়ক বলেন, “গুচ্ছের প্রাথমিক ভর্তি (অ-ব্যবহারিক বিষয়) শুরু হবে ২২ জুন এবং চলবে ২৮ জুন পর্যন্ত। অপরদিকে বিশেষায়িত বিষয়গুলোর (চারুকলা, সংগীত, নাট্যকলা ও পরিবেশনা‌ বিদ্যা, চলচ্চিত্র ও মিডিয়া এবং শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়াবিজ্ঞান) ব্যবহারিক পরীক্ষা ও কোটার ভেরিফিকেশন শুরু ২১ জুন থেকে ২৮ জুনের মধ্যে।”

৩০ জুনের মধ্যে ‎ফলাফল প্রকাশিত হতে পারে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, “চূড়ান্ত ভর্তি সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে ২৮ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই এর মধ্যে। এছাড়া ক্লাস শুরু করার সম্ভাব্য দিন নির্ধারিত হয়েছে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে।”

তিনি জানান, এবার শিক্ষার্থীরা নিকটস্থ যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাথমিক ভর্তি নিশ্চয়ন করতে পারবেন। পরবর্তীতে কাগজ উঠিয়ে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হবেন যেখানে জমা দিতে হবে। এতে ভোগান্তি কমবে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের।

‎গুচ্ছ পদ্ধতির এই ভর্তি কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী ১৯ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়,জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়,রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, নেত্রকোণা বিশ্ববিদ্যালয়, জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

‎ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল, ভর্তি সংক্রান্ত নোটিশ এবং অন্যান্য নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজ নিজ ওয়েবসাইটে ও গুচ্ছের অফিশিয়াল পোর্টালে প্রকাশ করা হবে।

‎বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, ভর্তি কার্যক্রমের প্রতিটি ধাপ যাতে স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও জটিলতা-মুক্তভাবে সম্পন্ন হয়, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই গ্রহণ করা হয়েছে।

ঢাকা/আবিদ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ