যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুয়ায়ী চার ইসরায়েলি জিম্মির মৃতদেহ হস্তান্তর করেছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। গতকাল বৃহস্পতিবার দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির তত্ত্বাবধানে হস্তান্তর করা মৃতদের মধ্যে এক মা ও দুই শিশু সন্তান রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছেন এক বৃদ্ধ। দুই শিশু হলো আরিয়েল ও কেফির। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হাতে আটক হওয়ার সময় আরিয়েলের বয়স ছিল মাত্র ৪ মাস ও কেফির ৯ মাস। তাদের মা ৩৩ বছর বয়সী শিরি বিবাস। আর ৮৪ বছর বয়সী ব্যক্তি হলেন ওদেদ লিফশিতজে। তাদের পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য লাশের ময়নাতদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল। 

হামাসের দাবি, ইসরায়েলের বর্বর হামলায় বন্দিদের মৃত্যু হয়েছে। তারা শনিবার আরও ছয় জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার কথাও জানিয়েছে। বিনিময়ে ইসরায়েলের জেলখানা থেকে মুক্তি পাবে ৮০০ ফিলিস্তিনি, যাদের অধিকাংশই নারী-শিশু।     

চলতি মাসের শুরুর দিকে শিরিন বিবাসের স্বামী ইয়ার্ডেন হামাসের হাত থেকে মুক্তি পান। শিশু দুটি ইসরায়েলের জিম্মি সংগ্রামের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। তাদের জন্মদিনে ইসরায়েলে শোকাবহ পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। লিফশিৎজে একজন সাবেক সাংবাদিক, যিনি ইসরায়েলি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রোড টু রিকভারির কর্মী হিসেবে যুক্ত ছিলেন। তাঁর স্ত্রীকেও মুক্তি দেয় হামাস।   
জিম্মিদের মৃত্যুর ঘটনায় ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হার্জগ বলেছেন, ‘আমাদের হৃদয় ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে।’ আর এ ঘটনাকে হৃদয়বিদারক হিসেবে বর্ণনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। 

এদিকে গাজায় হামাসের হাতে এখনও ৫৯ জিম্মি রয়ে গেছে, যাদের অর্ধেক সংখ্যকই মারা গেছে। যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের সময়সীমা আগামী ২ মার্চ শেষ হওয়ার কথা। দ্বিতীয় ধাপের ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। হামাস জানিয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর আলোচনায় বসতে ও সব জিম্মি এবং মৃতদেহ মুক্তি দিতে প্রস্তুত। দ্বিতীয় দফা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে মিসরের রাজধানী কায়রোতে যাবে দু’পক্ষের প্রতিনিধি দল। নেতানিয়াহু  প্রতিনিধি পাঠাতে অস্বীকৃতি জানানোর পর প্রক্রিয়ায় বিলম্ব হচ্ছে বলে জানিয়েছে আলজাজিরা।    

ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত ৪৮ হাজার ২৯৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও আহত হয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ৭৩৩ জন। গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে মৃত বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।

এএফপির তথ্যমতে, আজ শুক্রবার আরব নেতারা গাজা পুনর্গঠনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে সম্মেলনে বসছেন। সৌদি পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ উমর করিম বলেন, ফিলিস্তিনি ইস্যুতে এই সম্মেলনটি গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে। ট্রাম্পের পরিকল্পনা ছিল, গাজার ২৪ লাখ বাসিন্দাকে জর্দান ও সৌদি আরবে পুনর্বাসন করে তবেই গাজা পুনর্গঠন করা হবে। তাঁর এই পরিকল্পনা তাৎক্ষণিক প্রত্যাখ্যান করেন আরব নেতারা। এমনকি মার্কিন সিনেটরদের কেউ কেউ ট্রাম্পের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। 

রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানা গেছে, যুদ্ধবিরতির মধ্যেই গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। পশ্চিম তীরের শরণার্থী শিবিরে হামলা চালিয়ে তিন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে তারা। বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ফিলিস্তিনি বাড়িঘর। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ইসর য় ল র

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ