সীতাকুণ্ডে শিবচতুর্দশী মেলা শুরু মঙ্গলবার
Published: 21st, February 2025 GMT
শিবচতুর্দশী তিথি উপলক্ষে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ ধাম, ফটিকছড়ির কাঞ্চননাথ ধাম ও কক্সবাজারের মহেশখালীর আদিনাথে তিন দিনের তীর্থযাত্রা আগামী মঙ্গলবার শুরু হবে। একই সঙ্গে তীর্থযাত্রা উপলক্ষে শুরু হবে ১৫ দিনের মেলা। দোলপূর্ণিমার মধ্য দিয়ে এ মেলা শেষ হবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তীর্থ পরিচালনাকারী সীতাকুণ্ড স্রাইন (তীর্থ) কমিটির সাধারণ সম্পাদক চন্দন দাশ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ২৬ ফেব্রুয়ারি এ তীর্থের মূল তিথি শিবচতুর্দশী। এ দিনেই তীর্থযাত্রীরা শিবরাত্রির ব্রত রেখে মূল তীর্থ করবেন। পরদিন অমাবস্যা তিথিতে মৃত পূর্বপুরুষের জন্য শ্রাদ্ধ করবেন। এবার অন্তত ১০ লাখ ভক্তের সমাগমের আশা করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার শিবচতুর্দশী মেলা উপলক্ষে দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) মো.
সভায় সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মজিবুর রহমান বলেন, শিবচতুর্দশী মেলা উপলক্ষে এবার মোট ৬০০ পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। মেলায় জনসমাগম গতবারের তুলনায় বেশি হবে ধরে নিয়েই এই প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
যেভাবে তীর্থ শুরু হয়
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ ফুট ওপরে পাহাড়ের চূড়ায় চন্দ্রনাথমন্দির। শিবচতুর্দশী তিথিতে তীর্থ করতে আসা যাত্রীদের লক্ষ্য থাকে চন্দ্রনাথমন্দিরে পৌঁছে শিবদর্শন করা। সীতাকুণ্ড পৌর সদরে পৌঁছার পর মন্দির সড়ক হয়ে অর্ধশতাধিক মঠ-মন্দির প্রদক্ষিণ করে সর্বশেষ চন্দ্রনাথমন্দিরে পৌঁছান তীর্থযাত্রীরা। সীতাকুণ্ডে রয়েছে সতীর একান্ন পীঠের একটি ভবানীমন্দির। এ ছাড়া রয়েছে স্বয়ম্ভূনাথমন্দির, ভৈরবমন্দির, সীতামন্দির, জগন্নাথমন্দির ও বিরূপাক্ষমন্দির।
স্রাইন কমিটির সহসম্পাদক সুব্রত চক্রবর্তী বলেন, পবিত্র ব্যাসকুণ্ডে স্নান করার পর মূল তীর্থ শুরু হয়। অনেকে শুরুতেই ভৈরবমন্দির দর্শন করে চন্দ্রনাথের উদ্দেশে রওনা হন। আবার অনেকে ব্যাসকুণ্ডে মৃত পূর্বপুরুষের আত্মার তৃপ্তির জন্য তর্পণ করেন। এরপর চন্দ্রনাথমন্দিরের উদ্দেশে রওনা দেন। পাহাড়ের দিকে ২০০ ফুট উঠে হাতের ডানে নিচের দিকে তাকালেই সীতামন্দির। সেটি দর্শন করে স্বস্তিক গেট পার হয়ে ডান পাশের সিঁড়ি বেয়ে কিছু দূর উঠলেই ভবানীমন্দির। তার কিছুটা ওপরে স্বয়ম্ভুনাথমন্দির। এ চার মন্দির দর্শন শেষে আরও ওপরে একে একে জগন্নাথমন্দির, বিরূপাক্ষমন্দির ও চন্দ্রনাথমন্দির পাওয়া যাবে।
তীর্থ উন্নয়ন উপকমিটির আহ্বায়ক উত্তম কুমার শর্মা প্রথম আলোকে বলেন, এবার চন্দ্রনাথমন্দিরের প্রবেশপথ ও আঙিনা পাকা করা হয়েছে। চন্দ্রনাথমন্দির থেকে নামার পথে নতুন সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তার জন্য ১০২টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, চন্দ্রনাথ পাহাড়ে ওঠার পথে অস্থায়ী শৌচাগার নির্মাণ, পথ প্রশস্ত করে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে রেলিং লাগানোসহ নানা সংস্কারকাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
প্রতিবছর স্রাইন কমিটির প্রধান কার্যালয় মোহন্ত আস্তান বাড়িতে বৈদিক সম্মেলন ও ঋষি সমাবেশ করা হতো। সম্মেলনে ধর্মীয় বিষয়ে আলোচনা করতেন আগত সন্ন্যাসীরা। আয়োজন করা হতো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও। কিন্তু এবার এ অনুষ্ঠানের কিছুটা পরিবর্তন করেছে স্রাইন কমিটি। এবার বৈদিক সম্মেলন হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কমিটির দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা। তবে সম্মেলনস্থলে দূরদূরান্ত থেকে আসা যাত্রীদের থাকা ও প্রসাদের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্রাইন কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক সুব্রত চক্রবর্তী বলেন, এবার দূরদূরান্ত থেকে আসা তীর্থযাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্যে থাকার জন্য যেখানে বৈদিক সম্মেলন হতো, সে স্থানে ছাউনি করা হবে। তীর্থযাত্রীদের থাকার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বৈদিক সম্মেলনটি বাদ দেওয়া হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন থমন দ র ন কম ট র উপলক ষ মন দ র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে হিন্দু নেতাদের সাক্ষাৎ
আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিভিন্ন পূজা উদ্যাপন পরিষদের নেতারা সাক্ষাৎ করেছেন। তাঁরা এ সময় প্রধান উপদেষ্টাকে পূজামণ্ডপ পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানান।
আজ সোমবার বিকেলে হিন্দু নেতারা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় যান। এ সময় তাঁদের কাছে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি ও সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি তাঁদের বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে সব সময় দেখা করার ইচ্ছা থাকলেও সুযোগ হয় না। পূজা উপলক্ষে বছরে একবার সামনাসামনি দেখা হয়, কথা বলার সুযোগ হয়।’
হিন্দুধর্মীয় নেতারা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর এক হাজারের বেশি পূজামণ্ডপ বেড়েছে। সারা দেশে পূজামণ্ডপ তৈরির কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে।
নেতারা বলেন, ধর্ম উপদেষ্টা নিয়মিতভাবে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, মন্দির পরিদর্শন করেন। দুর্গাপূজা উৎসবমুখর করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হচ্ছে। গতবারের মতো এবারও নির্বিঘ্নে পূজা উদ্যাপন হবে বলে তাঁরা আশা করছি।
এ সময় স্থায়ী দুর্গামন্দিরের জন্য রেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জায়গা বরাদ্দ দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান মহানগর পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব। তিনি বলেন, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এ জন্য আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নিয়মিত আমাদের খোঁজখবর রেখেছেন। গত বছরের মতো এ বছরও পূজায় আমরা দুই দিন ছুটি পেয়েছি। এ জন্যও আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। গত বছর ৮ আগস্ট দেশে ফেরার পরপরই আপনি ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করে বলেছিলেন, আমরা সবাই এক পরিবার। আপনার বক্তব্য আমাদের মনে গভীরভাবে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।’
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, ‘গত বছর দুর্গাপূজায় ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনে গিয়ে আপনি বলেছিলেন, নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে কড়া পাহারা বসিয়ে পূজা হবে এমন দেশ আমরা চাই না। আমরা প্রথমবারের মতো কোনো সরকারপ্রধানের কাছে এমন বক্তব্য শুনেছি। আমরাও আপনার বক্তব্যের সঙ্গে একমত, আমরাও চাই এ আয়োজনে সবাই সহযোগিতা করুক, দেশের সবার মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকুক।’
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব এস এন তরুণ দে বলেন, ‘আপনি দায়িত্বে থাকাকালীন দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির স্থাপন করেছেন। আমরা লক্ষ করেছি, এক বছর ধরে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচুর মিথ্যা কথা, ফেক নিউজ ছড়ানো হচ্ছে। আপনার নেতৃত্বে ধর্ম–বর্ণ–জাতিনির্বিশেষে বাংলাদেশের সব মানুষের কল্যাণ হবে, আমরা সেটাই কামনা করি।’
বৈঠকে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘ধর্ম মন্ত্রণালয় সব ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করে। কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে আমরা কল্যাণকর কর্মসূচিগুলো নিশ্চিত করি।’ এ সময় তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন।
প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও পূজার অগ্রিম শুভেচ্ছা জানান এবং দুর্গাপূজা ঘিরে যাতে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের সুযোগ তৈরি না হয়, সে জন্য সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার ও সচিব দেবেন্দ্র নাথ উঁরাও, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী পূর্ণানন্দ (একক), বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজসংস্কার সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, শ্রীশ্রী গীতা হরি সংঘ দেব মন্দিরের সভাপতি বিমান বিহারী তালুকদার, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন ফ্রন্টের আহ্বায়ক অপর্ণা রায় দাস, শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরের সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র দত্ত ও সিদ্ধেশ্বরী সর্বজনীন পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রণীতা সরকার উপস্থিত ছিলেন।