Samakal:
2025-06-16@19:57:17 GMT

তোমার জন্য একটি চিঠি

Published: 21st, February 2025 GMT

তোমার জন্য একটি চিঠি

প্রিয় নোমি 
আশা করি তুমি ভালো আছ। আমি জানি, হয়তো এই চিঠি পাঠানোটা অপ্রত্যাশিত, কিন্তু কিছু কথা ছিল যেগুলো তোমার সঙ্গে শেয়ার করতে চাচ্ছি।
তুমি যখন আমার কাছে ছিলে, তখন তোমার হাসি ছিল যেন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ। তোমার কথা ছিল, যেন আমার হৃদয়ের প্রতিটি অনুভূতিকে ছুঁয়ে যাওয়া এক মিষ্টি সুর। আমি জানতাম, তুমি যে আমার পাশে থাকবে, আমার কষ্ট, আমার সুখ– সব কিছুই তুমি বুঝবে। তবে এখন, তোমার শূন্যতা অনুভব করতে করতে প্রতিটি দিন যেন একেকটি অমাবস্যা হয়ে গেছে।
তুমি চলে যাওয়ার পর আমি বারবার নিজেকে প্রশ্ন করি– কী ছিল আমার মধ্যে, যা তোমাকে আটকাতে পারল না? আমি কি যথেষ্ট ভালো ছিলাম না? না কি আমি শুধু তোমার কাছে সেই মুহূর্তগুলো চেয়েছিলাম, যেগুলো তোমার জন্য ছিল না? তোমার প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি হাসি, প্রতিটি অঙ্গভঙ্গি যেন এখন মনে হয় অন্ধকারে হারিয়ে গেছে। তবুও আমি জানি, এ শূন্যতাকে আমি কেবল তোমার উপস্থিতিতে পূর্ণ করতে পারব।
আমার জীবনে তুমি ছিলে। এখন তোমার অনুপস্থিতি অনুভব করে কাটে প্রতিটি দিন। তবুও আমি তোমার প্রতি অনুভূতি হারাইনি; বরং আমি বিশ্বাস করি, ভালোবাসার কোনো সময়সীমা বা জায়গা নেই। জানি তোমার জীবনে অনেক কিছু ঘটছে এবং তুমি নিজের জন্য সিদ্ধান্ত নিচ্ছ। আমি চাই না তুমি এই সময়ে একা থাক। যদি কখনও তোমার পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ আসে, আমি সেখানে থাকব। তুমি আমার জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ নোমি। আমি জানি, তুমি হয়তো ফিরে আসবে না; তবে তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা কখনও কমবে না। আমি শুধু চাই তুমি যেখানে আছ, সুখে থাক, শান্তিতে থাক। তুমি ছাড়া কিছুই আর একে অপরের মতো হবে না। তোমার শূন্যতাকে আমি নিজের হৃদয়ে ধারণ করেছি; সেই শূন্যতা কখনোই আমার ভালোবাসাকে কমাতে পারে না।
এটা বলতে চাই, আমি তোমাকে ভুলতে পারিনি। সম্ভবত কোনোদিন পারব না। তুমি ছাড়া কিছুই যেন পূর্ণতা পায় না। তুমি যদি কখনও ফিরে আস, আমি তোমাকে স্বাগত জানাব। আমি জানি যে তোমার পথ তোমার নিজের। যদি কখনও তুমি আমাকে মনে কর, আমি সবসময় তোমার পাশে থাকব।
তুমি থাক না থাক, আমার ভালোবাসা তোমার জন্য চিরকালই থাকবে নোমি।

ইতি তোমারই
বিনি
ফাতেমাতুজ জোহুরা তানিয়া
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য শ ন যত

এছাড়াও পড়ুন:

‘ভালোবাসার আসল রূপটাই যেন ছিলেন আব্বা’

এবারের বাবা দিবস আমার কাছে একটু অন্যরকম। চারপাশ যেন কিছুটা বেশি নিস্তব্ধ, হৃদয়ের ভেতর যেন একটু বেশি শূন্যতা। কারণ এবার প্রথমবারের মতো আমার আব্বাকে ছাড়াই কাটছে দিনটি। আব্বা চলে গেছেন গত জানুয়ারিতে। ফলে বাবা দিবস এখন আর কেবল উদযাপনের দিন নয়– এটি হয়ে উঠেছে স্মরণ, অনুধাবন ও আমার জীবনের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উপলক্ষ। আব্বা না থেকেও আছেন, তবে এক ভিন্ন অনুভবে– আমার নীরব নিঃশব্দ অভিভাবক হয়ে।    

আমাদের সমাজে কিংবা বলা যায় পারিবারিক সংস্কৃতির বাবারা সবসময় প্রকাশের ভাষায় ভালোবাসা বোঝান না। তাদের স্নেহ, দায়িত্ববোধ ও নিবেদন অনেক সময়েই নীরব থাকে, তবে গভীরভাবে অনুভব করা যায়। আমার আব্বাও ছিলেন তেমনই একজন। আব্বা ছিলেন আমার দিকনির্দেশক, আমার রক্ষাকবচ, আমার জীবনপথের চুপচাপ ভরসা। 

আব্বার অ্যাজমা ছিল, তা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত স্বাস্থ্যসচেতন। নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নিতেন, আমাদের প্রতিও ছিল তাঁর সজাগ দৃষ্টি। আমি কিংবা আমার মেয়ে সামান্য অসুস্থ হলেই তিনি অস্থির হয়ে যেতেন। তাঁর যখন ৭৯ বছর বয়স, তখনও আমি ডাক্তারের কাছে একা যেতে গেলে বলতেন, ‘তুমি একা যাবে কেন? আমি যাচ্ছি।’ এই কথা বলার মানুষটাকে প্রতি পদে পদে আমার মনে পড়ে, যেন দূর থেকে দেখছেন সবই। আর আমিও তাঁর কনুই-আঙুল ধরে হেঁটে যাচ্ছি জীবনের পথে।    

আব্বা ছিলেন একজন পুরোদস্তুর ধার্মিক মানুষ। শৈশব থেকে নামাজের গুরুত্ব তিনি আমার মধ্যে গভীরভাবে বপন করার চেষ্টা করে গেছেন। কখনও নরম সুরে, আবার কখনও খুব জোর গলায়। তখন মনে হতো তিনি চাপ দিচ্ছেন; কিন্তু এখন তাঁর অনুপস্থিতির নিস্তব্ধতায় আমি সেই কণ্ঠস্বরের জন্য আকুল হই।

অফিস থেকে ফিরতে দেরি করলে কিংবা আত্মীয়ের বা বন্ধুর বাসায় গেলে বাবার ফোন আসত, ‘কোথায়? কখন ফিরবি?’ সেসব ফোন একসময় মনে হতো আব্বার বাড়াবাড়ি। এখন মনে হয়, একটাবার হলেও যদি ফোনে তাঁর নামটা দেখতাম! ছোট ছোট এসব প্রশ্ন– এই উদ্বেগই তো ছিল নিঃশব্দ ভালোবাসা। এগুলোই ছিল বাবার নিজের মতো করে যত্ন নেওয়ার ভাষা। সেই ভাষাটাই আজ আর শোনা যায় না। আব্বা নেই, এখন জীবনযাপনে এক অদ্ভুত শূন্যতা ঘিরে থাকে।

আব্বা ছিলেন একজন ব্যাংকার। হয়তো চেয়েছিলেন আমি তাঁর পেশার ধারাবাহিকতা বজায় রাখি। কিন্তু কোনোদিন চাপ দেননি। বরং নিজের ইচ্ছেমতো পথ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন; ছায়ার মতো পাশে ছিলেন। আব্বাই আমাকে নিজের ওপর আস্থা রাখতে শিখিয়েছেন। বিয়ে করেছি, বাবা হয়েছি, নিজস্ব ক্যারিয়ার গড়েছি– তবুও বাবার সেই গাইডেন্স কখনও ফুরায়নি। আব্বা কখনও অর্থ বা অন্য কোনো সহায়তার কথা বলেননি; বরং সবসময় নিজে থেকেই পাশে থেকেছেন। মনে পড়ে, একবার মেয়ের অসুস্থতার সময় আমি অর্থকষ্টে ছিলাম, কিছু বলিনি তাঁকে। কিন্তু তিনি ঠিকই বুঝে গিয়েছিলেন, পাশে থেকেছেন।

এখন অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় মনে হয়, ‘বাবা হলে কী করতেন?’ তাঁর শিক্ষা, অভ্যাস, স্নেহ– সবকিছু এখন আমার আচরণে, আমার সিদ্ধান্তে, আমার ভালোবাসায় প্রতিফলিত হয়। তাঁকে ছুঁতে না পারলেও আমি প্রতিদিন তাঁর উপস্থিতি অনুভব করি– স্মৃতিতে, নৈঃশব্দ্যে, নানা রকম ছোট ছোট মুহূর্তে।

এই বাবা দিবসে আব্বার কোনো ফোন আসবে না, থাকবে না কোনো উপহার বা আলিঙ্গনের মুহূর্ত; যা আছে সেটি হলো আব্বার প্রতি একরাশ কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা আর অপার ভালোবাসা। যিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে সন্তানদের শুধু দিয়েছেন, বিনিময়ে কিছু চাননি কখনোই। তাঁর জীবনদর্শন আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি– এগুলোই নিজের জীবনে ধারণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি, হয়তো পুরোপুরি পারছি না; কিন্তু আমার মনে হয় এ চেষ্টাটাই আমার জীবনে শৃঙ্খলা এনেছে।

বাবাকে হারানোর শোক যেমন গভীর, তেমনি গভীর তাঁর রেখে যাওয়া ভালোবাসা। নিজের অনুভবকে চাপা না দিয়ে, বরং বাবাকে নিজের ভেতরে জায়গা দিন। বাবার কথা বলুন, তাঁর শেখানো পথে হাঁটুন। কারণ প্রিয় মানুষরা চলে যান বটে, কিন্তু তাঁদের ভালোবাসা থেকে যায় সবসময়।

লেখক: কমিউনিকেশনস প্রফেশনাল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘ভালোবাসার আসল রূপটাই যেন ছিলেন আব্বা’
  • বর্ষার শুরুতেই সপ্তাহব্যাপী বৃষ্টির বার্তা
  • টানা সাত দিন সারাদেশে বৃষ্টি ঝরবে