সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে শেষ হয়েছে পাঁচ দিনের গালফুড মেলা। মেলায় বাংলাদেশের ৪১টি প্রতিষ্ঠান এবার ৩৪ দশমিক ৫৯ মিলিয়ন বা তিন কোটি ৪৫ লাখ ডলার নিশ্চিত ক্রয়াদেশ পেয়েছে। গতকাল শুক্রবার মেলার শেষ দিনে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কমার্শিয়াল উইং এ তথ্য জানায়।
এবারের নিশ্চিত ক্রয়াদেশ গত বছরের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। গত বছর মেলায় ক্রয়াদেশ ছিল প্রায় ১০৭ মিলিয়ন বা ১০ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এবার অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সম্ভাব্য ক্রয়াদেশ পেয়েছে প্রায় ২৯ দশমিক ১৬৩ মিলিয়ন বা ২ কোটি ৯১ লাখ ডলার। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মেলার সুফল হলো, পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি ও অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে বাংলাদেশিদের ভিসা জটিলতার কারণে দেশীয় বায়ার না পাওয়ায় ক্রয়াদেশ কমেছে। মেলায় স্থান সংকুলান নিয়েও ছিল অভিযোগ। আগামী বছর আরও বড় পরিসরের ভেন্যু ঘোষণা দিয়ে এ আসরের ইতি টানেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ এগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সহসভাপতি সৈয়দ মো.
বোম্বে সুইটস অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক খুরশীদ আহমাদ ফরহাদ বলেন, প্রতিবছর বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করছে। এ মেলায় বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী ও বাজারজাত প্রতিষ্ঠানগুলো অংশ নিচ্ছে। তারা কীভাবে পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধিতে কাজ করছে, সেসব বিষয়ে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা আইডিয়া নিতে পারছেন। বৈশ্বিক বাজারের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে পণ্যের প্যাকেজিংয়ের ওপর আরও জোর দিতে হবে।
বাংলাদেশ এগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সভাপতি আবুল হাসেম সমকালকে বলেন, এ বছর আমরা ২৫ মিলিয়ন বা আড়াই কোটি ডলার নিশ্চিত ক্রয়াদেশের টার্গেট নিয়ে মেলা শুরু করি। কত ক্রয়াদেশ এসেছে, তার চেয়েও বড় বিষয়– এ মেলার কারণে আমরা নিয়মিত বায়ার পাচ্ছি। মেলায় হয়তো তারা ছোট অর্ডার করছেন। কিন্তু পর্যায়ক্রমে তাদের চাহিদা আরও বাড়বে।
গত দুই আসরে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা স্থান সংকুলানের অভিযোগ তুলে আসছেন। এ বিষয়ে এবার মেলা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। সে অনুযায়ী আগামী আসরে জায়গা বাড়ানোর আশ্বাস পেয়েছে বাংলাদেশ।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন সমকালকে বলেন, এবারও আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো আশাব্যঞ্জক সাড়া পেয়েছে। কিছু জায়গায় আমরা দেখেছি, বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান একই রকম পণ্য নিয়ে মেলায় এসেছে। পণ্যের বৈচিত্র্য না থাকলে প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল পাওয়া যায় না। আগামীতে মেলায় অংশগ্রহণে ইচ্ছুক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে।
এদিকে গালফুডের পরবর্তী আসরে দুবাই ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের সঙ্গে ভেন্যু হিসেবে যোগ করা হবে দুবাই এক্সপো সিটি। এক মাস এগিয়ে আগামী বছর জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে দুটি আলাদা ভেন্যু নিয়ে বৃহৎ পরিসরে মেলার ঘোষণা দিয়েছে আয়োজক প্রতিষ্ঠান।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
চলতি বছর বিশ্বে মন্দার ঝুঁকি বেড়েছে, জরিপে অর্থনীতিবিদদের শঙ্কা
চলতি বছরে মন্দার ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে গেছে বলে জরিপে দেখা গেছে। ৫০টি দেশের অর্থনীতিবিদ এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতির কারণে ব্যবসায়িক পরিবেশের অবনতি হয়েছে।
চলতি বছরে বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে ১৬৭ জন বিশ্লেষকের মধ্যে ১০১ জন ‘উচ্চ’ বা ‘খুব উচ্চ’ ঝুঁকির কথা বলেছেন। ৬৬ জন বলেছেন ঝুঁকি ‘কম’, যার মধ্যে চারজন বলেছেন ‘অত্যন্ত কম’।
জরিপে অংশ নেওয়া অধিকাংশ অর্থনীতি বিশ্লেষক বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের কারণে (যদিও ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে) ব্যবসায়িক আস্থা নষ্ট হয়েছে; সৃষ্টি করেছে অস্থিরতা। ফলে চলতি বছর মন্দার ঝুঁকি অনেকটা বেড়েছে। মাত্র তিন মাস আগেও এই অর্থনীতিবিদদের অধিকাংশ শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। শুধু তা–ই নয়, তাঁরা বলেছিলেন, প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা থাকবে।
কিন্তু ট্রাম্পের বিশ্ববাণিজ্য ‘নতুনভাবে গঠনের’ উদ্যোগ, বিশেষ করে সব আমদানির ওপর শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত, অর্থনীতিতে তীব্র অভিঘাত সৃষ্টি করেছে। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শেয়ারবাজারে বাজার মূলধন কমেছে ট্রিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ। ডলারসহ যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদগুলোয় বিনিয়োগকারীদের আস্থা নড়বড়ে হয়েছে।
জরিপে অংশগ্রহণকারী ৩০০ জনের বেশি অর্থনীতিবিদের মধ্যে কেউই বলেননি, ট্রাম্পের শুল্কনীতির ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ৯২ শতাংশ অর্থনীতিবিদ বলেছেন, ব্যবসায়ীদের মনোবলে এই শুল্কনীতির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। মাত্র ৮ শতাংশ নিরপেক্ষ মত দিয়েছেন, যাঁদের বেশির ভাগই ভারত ও অন্যান্য উদীয়মান অর্থনীতির প্রতিনিধি।
জরিপে ২০২৫ সালের জন্য বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে আনা হয়েছে। জানুয়ারি মাসের জরিপে এই অর্থনীতিবিদেরাই বলেছিলেন, প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ শতাংশ। এবার তা ২ দশমিক ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাস অবশ্য একটু বেশি—তারা ২ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা বলেছে। জরিপে অংশ নেওয়া ৪৮টি অর্থনীতির মধ্যে ২৮টি অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে আনা হয়েছে।
২০২৬ সালের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসও আশাব্যঞ্জক নয়। অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন, ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে যে অর্থনৈতিক মন্দার আবহ তৈরি হয়েছে, তা সহজে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। জরিপে অংশগ্রহণকারী ১৬৭ অর্থনীতিবিদের মধ্যে ১০১ জন (৬০ শতাংশ) অবশ্য বলেছেন, চলতি বছর বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার ঝুঁকি বেশি বা খুব বেশি। মাত্র ৬৬ জন এটিকে কম ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন।
চীন ও রাশিয়ার অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে ভালো করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীরা মনে করছেন, চীনের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ; রাশিয়ার হতে পারে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। অন্যদিকে মেক্সিকো ও কানাডার প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে দশমিক ২ ও ১ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসতে পারে, গত কয়েক মাসের মধ্যে যা সবচেয়ে বড় অবনতি।
গবেষণাপ্রতিষ্ঠান স্টেট স্ট্রিটের ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার প্রধান কৌশলবিদ টিমোথি গ্রাফ বলেন, এই পরিবেশে প্রবৃদ্ধি নিয়ে আশাবাদী হওয়া কঠিন। আজকের মধ্যে সব শুল্ক তুলে নেওয়া হলেও ট্রাম্পের নীতির কারণে দ্বিপক্ষীয়, বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা চুক্তিতে বিশ্বাসযোগ্যতার যে ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠা কঠিন।
এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্বজুড়ে যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি হয়েছিল, নীতি সুদহার বৃদ্ধির মাধ্যমে তা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু এখন উচ্চ শুল্কের কারণে নতুন করে মূল্যস্ফীতির চাপ তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া ও বেকারত্ব বাড়লে স্ট্যাগফ্লেশন (উচ্চ মূল্যস্ফীতি+বেকারত্ব নিম্ন প্রবৃদ্ধি) সৃষ্টি হতে পারে। সেই আশঙ্কা দিন দিন বাড়ছে বলেই মনে করেন গ্রাফ।
জরিপে আরও দেখা গেছে, ২৯টি প্রধান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে ১৯টি ব্যাংক চলতি বছর মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আগামী বছরের জন্য এ সংখ্যা কিছুটা কমে ১৫-তে নামবে বলে পূর্বাভাস।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই বাণিজ্যনীতির অভিঘাত কেবল যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে নয়, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায়ও দীর্ঘমেয়াদি অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। ফলে ভবিষ্যতেও চাপ অব্যাহত থাকবে। এখন দেখার বিষয়, বিশ্বনেতারা কীভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেন, অর্থাৎ কীভাবে স্থিতিশীল বাণিজ্যনীতি প্রণয়ন করতে পারেন।