অর্ণব আমার সহপাঠী। একদিন হঠাৎ তার একটা বায়নায় আমি অবাক। একটা প্রেম নিবেদনের চিঠি লিখে দিতে হবে। সেটা দেখে নিজ হাতে লিখে বর্ণাকে দেবে। বর্ণাও আমাদের বন্ধু। অর্ণবের বিশ্বাস তাতেই ওদের ভালোবাসা হয়ে যাবে।

আমরা তখন নবম শ্রেণিতে পড়ি। ১৯৮৮ সালের সেই সময় হাতের লেখা চিঠিই ছিল মনের কথা বলার অন্যতম মাধ্যম।

অর্ণবের অনুরোধে সেদিন বাড়ি ফিরে একটা চিঠি লিখে ফেললাম। সম্বোধনে নির্দিষ্ট কারও নাম লিখলাম না, বদলে লিখলাম ‘প্রিয়তমা’। চিঠিখানা ভাঁজ করে বাংলা বইয়ের মধ্যে রাখলাম।

পরদিন বাংলা ক্লাসে সবাইকে বই খুলে পড়তে বললেন স্যার। আমি পড়ায় মন দিতে পারছি না। এমন সময় স্যার বইসহ আমাকে টেবিলে ডাকলেন। ভয়ে ঠান্ডা হয়ে গেলাম। কোনোরকমে বইটা নিয়ে স্যারের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। স্যার বইটা নিতেই ভেতর থেকে ভাঁজ করা চিঠিটা টুপ করে নিচে পড়ল। ভাঁজ খুলে কয়েক লাইন পড়লেন স্যার, তারপরই চিৎকার, ‘প্রেমপত্র! চিঠি লেখো? এত সাহস! আজ তোর একদিন কি আমার একদিন।’

বলতে বলতে চিঠিখানা কুটি কুটি করে ছিঁড়ে পকেটে ঢোকালেন। তারপর দু–চার ঘা বেতের বাড়ি দিয়ে ক্লাসে কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখলেন। কিছুই বলার সুযোগ পেলাম না। ক্লাস শেষে যখন সবার কৌতূহলী চোখ আর প্রশ্নে আমি জর্জরিত, তখন অর্ণব এসে আমার কাঁধে হাত রাখল। দুই চোখ জলে ভেজা। প্রকৃত ঘটনার সাক্ষী হয়ে আমরা দুজন সেদিন আর কাউকে কিছু বুঝতে দিইনি।

স্কুলজীবন শেষ করে একেকজন একেক কলেজে ভর্তি হলাম। বছরখানেক পর একদিন বর্ণার কলেজের সন্ধান পেলাম। তাকে একটা চিঠি লিখলাম, ‘বর্ণা, অনেক কষ্টে তোমার ঠিকানা জোগাড় করেছি। আশা করি, ভালো আছ। তোমার নিশ্চয়ই মনে আছে, নবম শ্রেণির ক্লাসে প্রেমপত্র লেখার অপরাধে স্যার আমাকে শাস্তি দিয়েছিলেন। সবাই জানত, চিঠিখানা আমি লিখেছি। কিন্তু লেখাটা কার উদ্দেশে ছিল, আজও কেউ তা জানে না। চিঠিটা সেদিন তোমার হাতেই পৌঁছানোর কথা ছিল। আর সেই চিঠির লেখক আমি হলেও নিবেদক আমি ছিলাম না। অর্ণবের অনুরোধে আমি চিঠিখানা লিখেছিলাম। ওর ইচ্ছা ছিল, আমার লেখা চিঠিখানা নিজে আবার লিখে তোমাকে দেবে।’

ডাকবাক্সে চিঠিখানা পোস্ট করে যেন দায়মুক্ত হলাম। বর্ণাকে লেখা চিঠির উত্তর কখনো পাইনি। আশাও করিনি। এইচএসসির পর আমি ঢাকায় চলে এলাম। সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ হলো। একদিন এক বন্ধুর মাধ্যমে জানলাম, অর্ণব আর বর্ণা দুজনই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। আমি যখন পঞ্চম বর্ষে, তখন একবার মেডিকেলের এক বন্ধুসহ রাজশাহী গেলাম বেড়াতে। উদ্দেশ্য, অর্ণবকে খুঁজে বের করা। আমরা উঠলাম রাজশাহী মেডিকেলের আরেক বন্ধুর হোস্টেলে। তিনজন মিলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে খুঁজে বের করলাম ওদের দুজনকেই। ওরা তখন বিবাহিত। অনার্স শেষ করে মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছে। দুজনই খণ্ডকালীন চাকরি করে। ওদের জীবনের চড়াই–উতরাই, প্রেম, ভালোবাসা আর বিয়ের গল্প সেদিন মন্ত্রমুগ্ধের মতো শোনলাম। জানতে পারলাম, কলেজে পড়ার সময়ে বর্ণাকে যে চিঠি আমি লিখেছিলাম, সেটা সে পেয়েছিল। তারপর ওরা দুজনই যখন একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলো, বর্ণাই এগিয়ে এসেছিল।

ঢাকায় ফেরার দিন রেলস্টেশনে আমাদের এগিয়ে দিতে এসেছিল ওরা। আমি অর্ণবকে বললাম, ‘স্কুলের সেই শাস্তি ভোগের কথা আজ পুরোপুরি ভুলে গেলাম, বন্ধু। ভালো থাকিস তোরা।’

আরও পড়ুনওই আমার প্রথম ও শেষ প্রত্যাখ্যান, তারপর আর কাউকে কোনো দিন চোখ তুলে দেখিনি১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: একদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

শাবিপ্রবির ভর্তি পরীক্ষা ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের প্রথম সেমিস্টারের ভর্তি পরীক্ষা আগামী ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।

সোমবার (৩ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সৈয়দ ছলিম মোহাম্মদ আব্দুল কাদির স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আরো পড়ুন:

শাবিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর সেমিনার

শাকসুর নির্বাচন কমিশন ঘোষণা

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ভর্তি কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য সাজেদুল করিম বলেন, “গুচ্ছ প্রক্রিয়া না থেকে স্বতন্ত্র ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য আমাদের শিক্ষকরা আজ উপাচার্যের কাছে একটা স্মারকলিপি জমা দিয়েছে। শিক্ষকরা গুচ্ছ পদ্ধতিতে থাকতে চায় না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এককভাবে ভর্তি পরীক্ষার নেওয়ার জন্য সামনের দিকে কাজ এগোচ্ছি। অতিদ্রুত ভর্তি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ সময়সূচি নির্ধারণ করে প্রকাশ করা হবে।”

২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে শাবিপ্রবি গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্রভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া শুরু করে। এবারো একইভাবে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

এর আগে, গুচ্ছ পদ্ধতিতে অংশ নিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে চিঠি পেলেও শেষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়।

ঢাকা/ইকবাল/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ