স্বামী হারিয়ে দুই সন্তান নিয়ে শঙ্কিত ইয়াসমিন
Published: 22nd, February 2025 GMT
ঢাকার ধামরাইয়ে সাবেক ইউপি সদস্য বাবুল হোসেন হত্যায় ২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। শুক্রবার রাতে তাঁর স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তার বাদী হয়ে এ মামলা করেন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় আসামিদের মধ্যে দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার বিকেলে বাবুলের মরদেহ কুল্লা ইউনিয়নের বড় কুশিয়ারা গ্রামে আনা হয়। সাড়ে ৫টার দিকে বড় কুশিয়ারা মাঠে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। লাশ
আনার পর পরিবারের সদস্যদের কান্নায় চারপাশ ভারী হয়ে ওঠে।
ইয়াসমিনের ভাতিজা আসিফ হোসেন বলেন, তাঁর ফুপু স্বামী হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই কাঁদছেন। স্বামীর হত্যাকারীদের দ্রুত ফাঁসি দাবি করছেন তিনি। ইয়াসমিনের অভিযোগ, বাবুলকে হত্যার পর তিনি ও তাঁর দুই শিশুসন্তানকেও হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তিনি সবার নিরাপত্তা চাইছেন।
বাবুল হোসেন (৫০) কুল্লা ইউনিয়নের বড় কুশিয়ারা গ্রামের মৃত ইদ্রিস আলীর ছেলে। তিনি ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে টানা দুবার সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে স্ত্রী ইয়াসমিনকে নিয়ে বাড়ির আধা কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কুশিয়ারা আকসিরনগর হাউজিং প্রকল্পে নিজ জমির সরিষা মাড়াই করছিলেন বাবুল। এ সময় একই এলাকার শওকত, মনির, আরশাদ, শরিফ, আফসান, রাজিব, সাইদুর রহমান, মুনছুর, আয়নাল, আরমান, অনিক, শয়ন, আনোয়ার, আরিফসহ আরও ১০-১২ জন অতর্কিতে হামলা চালায়। তারা বাবুলকে ঘিরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এক পর্যায়ে হামলাকারীরা তাঁর একটি চোখ উপড়ে ফেলে ও পায়ের রগ কেটে দেয়। এ সময় স্ত্রীর চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। মুমূর্ষু অবস্থায় বাবুলকে উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
স্থানীয়রা জানান, আকসিরনগর হাউজিংয়ের জমি নিয়ে এলাকায় কয়েকটি পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছে। বাবুল এর পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান পাল্টিয়েছেন। এর জের ধরেই প্রতিপক্ষের লোকজন তাঁকে হত্যা করেছে। মাস চারেক আগে কাছাকাছি এলাকার বিলে পাওয়া যায় বাবুলের বাবা ইদ্রিস আলীর লাশ।
বাবুল হোসেন বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন বলে শোনা গেছে। তবে বিষয়টি নাকচ করে দেন কুল্লা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শাহজাহান মিয়া। তবে সম্প্রতি বাবুলকে ঢাকা জেলা যুবদলের সভাপতি ইয়াছিন ফেরদৌস মুরাদের কয়েকটি জনসভায় দেখা গেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে মুরাদ বলেন, ‘বাবুল হোসেন যুবদলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। আমাদের জনসভায় প্রায়ই নেতাকর্মী নিয়ে অংশ নিয়েছেন। তবে কোনো পদে নেই।’
বাবুলের স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তার শুক্রবার বলেছিলেন, তাঁর স্বামী কয়েক বছর ধরে আকসিরনগর হাউজিংয়ের পক্ষে-বিপক্ষে যাননি। স্থানীয় পুকুর ইজারা নিয়ে মাছ চাষ ও কৃষিকাজ করতেন। বিএনপি-যুবদলের রাজনীতি করতেন। এ কারণে জেলও খেটেছেন। তার পরও ২৫-২৬ জন মিলে পূর্বশত্রুতার জের ধরে তাঁর সামনেই কুপিয়ে হত্যা করেছে।
ইয়াসমিন বলেন, ‘ওদের পা ধরে আমার স্বামীর প্রাণভিক্ষা চেয়েছিলাম, তাও শোনেনি। ওরা আমার শ্বশুরকেও হত্যা করেছে। এখন আমাকে এবং ৮ ও ১০ বছরের দুই ছেলেকেও ওরা মেরে ফেলতে পারে। আমি আমার স্বামী ও শ্বশুর হত্যার বিচার চাই।’
ধামরাই থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, আকসিরনগর হাউজিংয়ের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার কারণেই সাবেক ইউপি সদস্য বাবুল হোসেন হত্যার শিকার হতে পারেন। এ ঘটনায় তাঁর স্ত্রী ১৪ জনের নাম উল্লেখসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। শনিবার সন্ধ্যার পর অনিক ও শয়ন নামে দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শিগগিরই অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের আশা করছেন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
যশোরে ৪ আইনজীবীকে বহিষ্কার
যশোরে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চার আইনজীবীকে জেলা আইনজীবী সমিতি থেকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম.এ. গফুর।
অভিযুক্ত আইনজীবীরা হলেন- আব্দুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবীর হোসেন জনি, রফিকুল ইসলাম এবং তরফদার আব্দুল মুকিত।
জেলা আইনজীবী সমিতি সূত্র জানায়, ওই চার আইনজীবীর মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক এক এনজিওর ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাৎ করেন। ওই টাকা ফেরত দিতে তিনি অঙ্গীকার করে ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। কিন্তু পরবর্তীতে ওই চেক ডিজ অনার হয় এবং একই সাথে তিনি টাকা দিতে অস্বীকার করেন। এ ঘটনায় মক্কেল আইনজীবী সমিতিতে লিখিত অভিযোগ দেন।
অন্যদিকে, সৈয়দ কবীর হোসেন জনি একটি জমি ক্রয় করেন। কিন্তু ওই জমির মালিককে পূর্ণাঙ্গ টাকা না দিয়ে তালবাহানা করেন। শেষমেষ আট লাখ টাকা না দেওয়ায় জমির মালিক আইনজীবী সমিতিতে লিখিত অভিযোগ দেন।
এছাড়া, রফিকুল ইসলাম নিজে আইনজীবী হয়েও আরেক আইনজীবী নুরুল ইসলামকে নির্বাহী আদালতে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও লাঞ্ছিত করেন। এ ঘটনায় নুরুল ইসলাম অভিযোগ দেন। অন্যদিকে, তরফদার আব্দুল মুকিত এক মক্কেলের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কাজ করেননি। এছাড়া তিনি ওই মক্কেলের কাগজপত্র আটকে রেখে জিম্মি করে রাখেন। বাধ্য হয়ে তিনি মুকিতের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন সমিতিতে।
এসব অভিযোগ জেলা আইনজীবী সমিতি পৃথকভাবে তদন্ত করে। একই সাথে চার আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম.এ. গফুর।
তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবার লিখিতভাবে তাদেরকে নোটিশ দিয়ে অবগত করা হবে।”
ঢাকা/রিটন/এস