ঢাকার ধামরাইয়ে সাবেক ইউপি সদস্য বাবুল হোসেন হত্যায় ২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। শুক্রবার রাতে তাঁর স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তার বাদী হয়ে এ মামলা করেন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় আসামিদের মধ্যে দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 
এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার বিকেলে বাবুলের মরদেহ কুল্লা ইউনিয়নের বড় কুশিয়ারা গ্রামে আনা হয়। সাড়ে ৫টার দিকে বড় কুশিয়ারা মাঠে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। লাশ 
আনার পর পরিবারের সদস্যদের কান্নায় চারপাশ ভারী হয়ে ওঠে। 
ইয়াসমিনের ভাতিজা আসিফ হোসেন বলেন, তাঁর ফুপু স্বামী হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই কাঁদছেন। স্বামীর হত্যাকারীদের দ্রুত ফাঁসি দাবি করছেন তিনি। ইয়াসমিনের অভিযোগ, বাবুলকে হত্যার পর তিনি ও তাঁর দুই শিশুসন্তানকেও হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তিনি সবার নিরাপত্তা চাইছেন। 
বাবুল হোসেন (৫০) কুল্লা ইউনিয়নের বড় কুশিয়ারা গ্রামের মৃত ইদ্রিস আলীর ছেলে। তিনি ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে টানা দুবার সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে স্ত্রী ইয়াসমিনকে নিয়ে বাড়ির আধা কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কুশিয়ারা আকসিরনগর হাউজিং প্রকল্পে নিজ জমির সরিষা মাড়াই করছিলেন বাবুল। এ সময় একই এলাকার শওকত, মনির, আরশাদ, শরিফ, আফসান, রাজিব, সাইদুর রহমান, মুনছুর, আয়নাল, আরমান, অনিক, শয়ন, আনোয়ার, আরিফসহ আরও ১০-১২ জন অতর্কিতে হামলা চালায়। তারা বাবুলকে ঘিরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এক পর্যায়ে হামলাকারীরা তাঁর একটি চোখ উপড়ে ফেলে ও পায়ের রগ কেটে দেয়। এ সময় স্ত্রীর চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। মুমূর্ষু অবস্থায় বাবুলকে উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। 
স্থানীয়রা জানান, আকসিরনগর হাউজিংয়ের জমি নিয়ে এলাকায় কয়েকটি পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছে। বাবুল এর পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান পাল্টিয়েছেন। এর জের ধরেই প্রতিপক্ষের লোকজন তাঁকে হত্যা করেছে। মাস চারেক আগে কাছাকাছি এলাকার বিলে পাওয়া যায় বাবুলের বাবা ইদ্রিস আলীর লাশ। 
বাবুল হোসেন বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন বলে শোনা গেছে। তবে বিষয়টি নাকচ করে দেন কুল্লা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শাহজাহান মিয়া। তবে সম্প্রতি বাবুলকে ঢাকা জেলা যুবদলের সভাপতি ইয়াছিন ফেরদৌস মুরাদের কয়েকটি জনসভায় দেখা গেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে মুরাদ বলেন, ‘বাবুল হোসেন যুবদলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। আমাদের জনসভায় প্রায়ই নেতাকর্মী নিয়ে অংশ নিয়েছেন। তবে কোনো পদে নেই।’
বাবুলের স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তার শুক্রবার বলেছিলেন, তাঁর স্বামী কয়েক বছর ধরে আকসিরনগর হাউজিংয়ের পক্ষে-বিপক্ষে যাননি। স্থানীয় পুকুর ইজারা নিয়ে মাছ চাষ ও কৃষিকাজ করতেন। বিএনপি-যুবদলের রাজনীতি করতেন। এ কারণে জেলও খেটেছেন। তার পরও ২৫-২৬ জন মিলে পূর্বশত্রুতার জের ধরে তাঁর সামনেই কুপিয়ে হত্যা করেছে। 
ইয়াসমিন বলেন, ‘ওদের পা ধরে আমার স্বামীর প্রাণভিক্ষা চেয়েছিলাম, তাও শোনেনি। ওরা আমার শ্বশুরকেও হত্যা করেছে। এখন আমাকে এবং ৮ ও ১০ বছরের দুই ছেলেকেও ওরা মেরে ফেলতে পারে। আমি আমার স্বামী ও শ্বশুর হত্যার বিচার চাই।’
ধামরাই থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, আকসিরনগর হাউজিংয়ের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার কারণেই সাবেক ইউপি সদস্য বাবুল হোসেন হত্যার শিকার হতে পারেন। এ ঘটনায় তাঁর স্ত্রী ১৪ জনের নাম উল্লেখসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। শনিবার সন্ধ্যার পর অনিক ও শয়ন নামে দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শিগগিরই অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের আশা করছেন। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অবস থ সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

ছাত্রদলের দেওয়া বিবৃতি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য হুমকি: ডুজা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ছাত্রদলের কর্মসূচি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে সংগঠনটির দেওয়া বিবৃতির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (ডুজা)।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) এক যৌথ বিবৃতিতে ডুজার সভাপতি মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহি ও সাধারণ সম্পাদক মাহাদী হাসান ছাত্রদলের এমন বিবৃতির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

বিভিন্ন মহল থেকে চাপ প্রয়োগ করে বিভিন্ন সময়ে সংবাদ সরিয়ে নেওয়া, বিবৃতিতে সংবাদকর্মীদের নিয়ে আপত্তিকর শব্দচয়নের মতো আচরণকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য হুমকিস্বরূপ বলে দাবি করেছে ডুজা।

আরো পড়ুন:

ঢাবিতে পাণ্ডুলিপিবিষয়ক কর্মশালা শুরু

ঢাবি উপাচার্যের সঙ্গে আইডিইএ পরিচালকের সাক্ষাৎ

সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ছাত্রদলের কর্মসূচি নিয়ে ‌‘আওয়ামী এমপিকে পুনর্বাসন/ভাগ বাটোয়ারা দ্বন্দ্বে জাবিতে ভ্যাকসিন কর্মসূচি স্থগিত’ শিরোনামে জাগোনিউজ২৪.কম-এ সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ সংবাদকে ঘিরে একটি বিবৃতি দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। যেখানে স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকিস্বরূপ কিছু শব্দচয়ন করে সংগঠনটি।

বিবৃতিতে ডুজা নেতৃবৃন্দ বলেন, সম্প্রতি সাংবাদিকতার নীতি-নৈতিকতা মেনে নিউজ করার পরেও দু’একটি গণমাধ্যমের উপর ছাত্রদলের প্রভাব খাটিয়ে সংবাদ সরিয়ে ফেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। যা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকি। গত ৫ আগস্টের পর নতুন বাংলাদেশে গণমাধ্যমের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়।

বিবৃতিতে আরও বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আমাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসা অভিযোগের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্টরা নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করবেন। কেউ নিজেকে ক্ষতিগ্রস্ত মনে করলে নিয়ম অনুযায়ী প্রতিকার চাইবেন। কিন্তু ছাত্রদলের এ ধরনের আচরণ আমাদের সে আকাঙ্ক্ষাকে আশাহত করেছে।

ডুজা নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রতিবেদন প্রকাশের পর জাগোনিউজ২৪.কম-এর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সৈকত ইসলামকে ‘সময়ের আলো’র স্টাফ রিপোর্টার সাব্বির আহমেদ নামে একজন ফোন দিয়ে চাপ প্রয়োগেরও নিন্দা জানাই।

নেতৃবৃন্দ সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যম কর্তৃক সাব্বির আহমেদের অপেশাদার ও অনৈতিক আচরণের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জাহাঙ্গীরনগরে পিটুনিতে নিহত সেই ছাত্রলীগ নেতাকেও ‘সাময়িক বহিষ্কার’ করেছে প্রশাসন
  • সিলেটে টিলা কাটার অভিযোগে বিএনপি নেতা, ইউপি সদস্যসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা
  • জুলাই হামলাকারীদের শাস্তি চেয়ে জাবি ছাত্রদলের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’
  • ছাত্রদলের দেওয়া বিবৃতি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য হুমকি: ডুজা
  • কয়েকটি পরিত্যক্ত বিমানবন্দর আবার চালুর উদ্যোগ
  • আবার চালু হচ্ছে পরিত্যক্ত ৭ বিমানবন্দর