ছাত্র-জনতার মিলিত অভ্যুত্থান দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের পতন ঘটিয়ে মানুষের সামনে এনে দিয়েছে নতুন করে দেশ গড়ার অপূর্ব সুযোগ। ফলে গত বছরের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত এই গণঅভ্যুত্থান প্রভাব ফেলে শিল্প সংস্কৃতি সাহিত্য– সব ক্ষেত্রে। এবারের অমর একুশে বইমেলাতেও তাই জুলাই আন্দোলন নিয়ে প্রকাশ হয়েছে বিভিন্ন ধরনের বই। লক্ষণীয় বিষয় হলো, এসব বইয়ের মূল ক্রেতা তরুণরা। তবে মধ্যবয়স্করাও নিচ্ছেন অজানা বিষয়গুলো আরও ভালোভাবে জানতে।
এবারের বইমেলার মূল প্রতিপাদ্য ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান: নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’।
তাই মেলার উভয় প্রাঙ্গণজুড়ে কালো ও লালের ছড়াছড়ি। গতকাল মেলার ২৪তম দিনে স্বাভাবিক ভিড় দেখা যায়। তবে এ দিনও আশানুরূপ বিক্রি না হওয়ায় খানিকটা হতাশ প্রকাশকরা। গতকাল অনেক তরুণ-তরুণীকে জুলাই অভ্যুত্থানের বই সংগ্রহ করতে দেখা যায়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জারিন তাবাসসুম বলেন, মেলার শেষের দিনগুলোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। জুলাই অভ্যুত্থানের ওপর কী কী বই আসবে, সেগুলো দেখে কিনব।
জানা গেছে, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্টলে গতকাল পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত জুলাই অভ্যুত্থানের ১৩০টি বই সংগৃহীত রয়েছে। পাশাপাশি ওই স্টলে আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত সুভেনিয়রও বিক্রি হচ্ছে।
জ্ঞানকোষ থেকে এবার এসেছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ওপর তিনটি বই। এসব বই থ্রিলার ও উপন্যাসের পাশাপাশি বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে বলে জানান স্টলের বিক্রয়কর্মী জাহিদ। বই তিনটি হলো মাসকাওয়াথ আহসানের ‘স্যাটারিক ভার্সেস ফ্যাসিবাদবিরোধী রম্য’, আশীফ এন্তাজ রবির ‘ট্রেন টু ঢাকা’ ও সিরাজুল ইসলাম এফসিএর ‘নতুন দিগন্তে জেগেছে ভোর’। অন্যদিকে প্রথমা প্রকাশনের স্টলে দেখা গেল জুলাই অভ্যুত্থানের ওপর ছয়টি বই প্রকাশিত হয়েছে। আইন ও বিচারবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের ‘শেখ হাসিনার পতনকাল’ বইটি কিনতে দেখা গেছে পাঠকদের। অনন্যা থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘দ্রোহের গ্রাফিতি’। জি এম রাজীব হোসেনের বইটির প্রতি আগ্রহ দেখা গেছে পাঠকদের মধ্যে। জুলাইয়ের দিনগুলো নিয়ে আফসার ব্রাদার্স থেকে এসেছে সাহাদত হোসেন খানের ‘চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান’, ড.
আদর্শের প্যাভিলিয়নে ২৫টি শীর্ষ দৈনিকের প্রথম পৃষ্ঠা নিয়ে আহম্মদ ফয়েজের বই ‘সংবাদপত্রে জুলাই অভ্যুত্থান’ পাওয়া যাচ্ছে। ঐতিহ্য প্রকাশ করেছে ড. আহমদ আরমান সিদ্দিকীর লেখা ২০২৪ সালের ২০ জুলাই থেকে ৯ আগস্টের দিনপঞ্জি ‘৩৬ জুলাই ২০২৪’, মুসা আল হাফিজের কলাম সংকলন ‘অভ্যুত্থানের চিন্তাশিখা’, মঈন শেখের গল্পের বই ‘জুলাইয়ের অশেষ পাখিরা’সহ আরও কিছু বই। এ ছাড়া বাতিঘর এনেছে মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন সম্পাদিত ‘জুলাইর গল্প’।
এদিকে গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ৯৮টি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো হাওলাদার প্রকাশনী থেকে আরিফ মঈনুদ্দীনের ‘নির্বাচিত গল্প’, মাছরাঙা প্রকাশন থেকে সাইয়্যেদ শাহ্ নূরে আরিফের ‘এক নীল সমুদ্রের ভালোবাসা’, নবরাগ প্রকাশনী থেকে মোস্তাক আহমাদের মনসুর হাল্লাজের ‘আত্মবিলীন রহস্য’, অনিন্দ্য প্রকাশ থেকে ড. মুকিদ চৌধুরীর ‘চম্পাবতী’, একুশে বাংলা প্রকাশন থেকে মোস্তাফিজুর রহমান ‘আজব একটা’।
এ দিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘জন-আকাক্ষার নাট্যকলা-যাত্রা : ঐতিহ্যের পরম্পরায় জাতীয়তাবাদী শিল্পরীতি এবং অমলেন্দু বিশ্বাস’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। মিলনকান্তি দের সভাপতিত্বে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাইদুর রহমান লিপন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন শাহমান মৈশান। লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন শাহীন রেজা, এজাজ ইউসুফী ও শোভা চৌধুরী। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন কবি ফাতিমা তামান্না, টোকন ঠাকুর ও রশিদ কামাল। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী আহমেদ শাকিল হাসমী, ইকবাল হোসেন, শাহ আল চৌধুরী মিন্টুসহ অনেকেই। আজ বিকেল ৪টায় মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘জুলাই অভ্যুত্থান : গ্রাফিতি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বইম ল গণঅভ য ত থ ন অন ষ ঠ গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীদের সংবর্ধনা দিল জাবি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শহীদ পরিবারদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। এ সময় জুলাই হত্যার বিচার ও শহীদ পরিবারের পুনর্বাসনের আকুতি জানানো হয়।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় জহির রায়হান মিলনায়তনে এ সংবর্ধনার আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ও ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহফুজুর রহমান।
আরো পড়ুন:
জুলাই শহীদদের স্মরণে জাবি ছাত্রদলের বৃক্ষরোপণ
জাবি ছাত্রদলের ১৫ নেতাকে অব্যাহতি
এতে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও ১০ শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
এসব শহীদরা হলেন, আলিফ আহম্মদ সিয়াম, শ্রাবণ গাজী, শাইখ আস-হা-বুল ইয়ামিন, নাফিসা হোসেন মারওয়া, সাফওয়ান আখতার সদ্য, মো. কুরমান শেখ, ছায়াদ মাহমুদ খান, নিশান খান, আস-সাবুর ও সুজন মিয়া।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এরপর শহীদদের স্বরণে একটি ডকুমেন্টারি ভিডিও দেখানো হয়। পরে শহীদদের স্বীকৃতি স্বরূপ সংবর্ধনা, সনদ ও স্মারক প্রদান করা হয়।
শহীদ আলিফ আহমেদ সিয়ামের বাবা মো. বুলবুল কবির বলেন, “আমরা আমাদের সন্তানদের হারিয়েছি ১ বছর হতে চললো। কিন্তু হত্যাকারীদের বিচার এখনো নিশ্চিত হয়নি। আপনারা শহীদদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে এ চেয়ারে বসেছেন। ফ্যাসিস্টদের বিচার নিশ্চিত করুন।”
শহীদ শ্রাবণ গাজীর পিতা মো. মান্নান গাজী বলেন, “আমাদের সন্তানরা তো আর ফিরে আসবে না। কিন্তু হাসাপাতালে যারা আহত আছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করুন। তাদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করুন।”
শহীদ নাফিসা হোসেনের মামা মো. হজরত আলী নাফিসার শহীদ হওয়ার বর্ণনা করতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। এ সময় তিনি জুলাই শহীদদের পরিবারের পুর্নগঠন এবং শহীদদের নামে হল, সড়ক বিভিন্ন স্থাপনার নামকরণের প্রস্তাব করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহফুজুর রহমান বলেন, “জুলাই আন্দোলনের স্বরণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে মাসব্যাপী আয়োজনের অংশ হিসেবে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। শহীদ পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে যেসব দাবি করা হয়েছে, আমি প্রশাসনের একজন হয়ে তা আগামী সিন্ডিকেট সভায় তুলব।”
তিনি বলেন, “আমি চাই আমাদের এখানে যেহেতু কিন্ডারগার্টেন, স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এখানে শহীদদের পরিবারের সদস্যদের পড়াশোনার সুযোগ প্রদান করা হোক। এ বিষয়ে আমরা সিন্ডিকেটে আলোচনা করব। একইসঙ্গে জুলাই শহীদদের পরিবারের সদস্যদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
এর আগে, সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার থেকে অদম্য-২৪ স্মৃতিস্তম্ভ পর্যন্ত মুখে লাল কাপড় বেঁধে মৌন মিছিল করেন শিক্ষকরা।
গত ১৪ জুলাই থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে স্বরণ ও ধারণ করতে মাসব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
ঢাকা/আহসান/মেহেদী