নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৬ উইকেটের পরাজয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে ছিটকে গেছে বাংলাদেশ। একইসঙ্গে এই ফলাফলে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়েছে পাকিস্তানেরও। আগামী বৃহস্পতিবার রাওয়ালপিন্ডিতে নিয়মরক্ষার ম্যাচে মুখোমুখি হবে এই দুই দল।

প্রথম দুই ম্যাচেই হেরে সেমিফাইনালের আশা শেষ হয়ে গেছে নাজমুল হোসেন শান্তর দলের। তবে শেষ ম্যাচে জয় দিয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করাই এখন বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য। দলের অধিনায়ক শান্ত জানিয়েছেন, দেশের সমর্থকদের জন্য অন্তত একটি জয় উপহার দিতে চান তারা।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে শান্ত বলেন, ‘আমরা ম্যাচটি জিততে চাই। আমাদের লক্ষ্য থাকবে শতভাগ দিয়ে জয় পাওয়া। দেশের হয়ে খেলা সব সময়ই গর্বের, তাই আশা করি, ছেলেরা নিজেদের সেরাটা দিয়ে জয় ছিনিয়ে আনবে।’

আইসিসির টুর্নামেন্টে বরাবরই ব্যর্থতার গল্প লেখা হয়েছে বাংলাদেশের নামে। এখন পর্যন্ত ২২টি বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে অংশ নিলেও একবারও শিরোপা ছুঁতে পারেনি টাইগাররা। ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে পৌঁছানোই বাংলাদেশের সেরা সাফল্য। বরং বিশ্বমঞ্চে সব ম্যাচ হেরে বিদায় নেওয়ার নজিরও রয়েছে টাইগারদের। এবারও ব্যর্থতার একই চিত্র।

বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে দীর্ঘদিন ধরেই প্রধান সমস্যা ব্যাটিং। কখনো কখনো বোলারদের নৈপুণ্যে কিংবা কোনো ব্যাটারের অসাধারণ ইনিংসে জয় এলেও, টুর্নামেন্ট জয়ের মতো ধারাবাহিক পারফরম্যান্স কখনোই আসেনি। এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও ব্যাটিং ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। ভারতের বিপক্ষে ৩৫ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর তাওহিদ হৃদয় ও জাকের আলীর ব্যাটে ২২৮ রান তুললেও, তা জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাটিংবান্ধব উইকেটেও ২৩৬ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ, যা কিউইদের সহজেই টপকে যেতে কোনো সমস্যা হয়নি।

শান্ত মনে করেন, দলের উন্নতির জন্য ব্যাটিং ও ফিল্ডিংয়ে আরও মনোযোগ দেওয়া দরকার। তিনি বলেন, ‘আমাদের বোলিং ইউনিট বেশ শক্তিশালী, কিছু ভালো পেসার আছে, এমনকি একজন রিস্ট স্পিনারও পেয়েছি। তবে ব্যাটিং ও ফিল্ডিংয়ে আমাদের অনেক উন্নতি করতে হবে।’

ব্যাটিং নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করলেও একই ভুলের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। শান্ত বলেন, ‘টুর্নামেন্ট শেষে ব্যাটিং ইউনিটে কিছু পরিবর্তন আনা হবে। ব্যাটিং নিয়ে নতুনভাবে চিন্তা করতে হবে এবং উন্নতির চেষ্টা করতে হবে।’

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

স্বপ্নের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে জুয়েল, অর্থাভাবে অনিশ্চিত ভুটান যাত্রা

ভুটান প্রিমিয়ার লিগের পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ক্লাব পারো এফসিতে খেলার সুযোগ পেয়েছেন নীলফামারীর ডোমার উপজেলার বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের নওদাবস গ্রামের তরুণ ফুটবলার মো. জুয়েল রানা। কিন্তু অর্থাভাবে অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে তার স্বপ্নপূরণের যাত্রা।

শৈশব থেকেই ফুটবলের প্রতি ছিল জুয়েলের গভীর ভালোবাসা। স্থানীয় পর্যায়ের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের মাধ্যমে নিজেকে চিনিয়েছেন জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়েও। খেলেছেন ঢাকা সিটি কাপ, মেয়র কাপ, এমনকি বসুন্ধরা অনূর্ধ্ব-১৮ দলের হয়ে। সেই ধারাবাহিকতায় ডাক পান ভুটানের পেশাদার ফুটবল লিগের ট্রায়াল ক্যাম্পে, যেখানে ৫০ জনের মধ্যে বাংলাদেশের মাত্র তিনজন নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের একজন জুয়েল। বর্তমানে জুয়েল ইন্টারন্যাশনাল গ্র্যামার স্কুল, রংপুর-এর নবম শ্রেণির বাংলা ভার্সনের শিক্ষার্থী।

আরো পড়ুন:

১০ গোলের রোমাঞ্চকর ম্যাচে সিউলকে বিধ্বস্ত করল বার্সেলোনা

রোনালদোর অদম্য ক্ষুধা, দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে জেতালেন আল-নাসরকে

নভেম্বর মাসের শেষের দিকে হতে যাওয়া লিগে অংশ নিতে হলে এর আগেই পাসপোর্ট, বিমানের টিকিট ও খেলার কিটসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে। কিন্তু এখানেই সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থ।

জুয়েলের বাবা একজন দিনমজুর ও ভ্যানচালক। এমন আর্থিক অবস্থায় এত ব্যয়ভার বহন করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

জুয়েল রানা বলেন, “আমি ডোমার হাইস্কুল মাঠে খেলা শুরু করি, ডোমার ফুটবল একাডেমির কোচ সুজন ভাইয়ের কাছেই প্রথম হাতে খড়ি। এরপর উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় পর্যায়ে এবং বসুন্ধরা অনূর্ধ্ব-১৮ দলের হয়ে খেলি। ভুটান থেকে পারো এফসির প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসে। তাদের নেয়া ট্রায়ালে ৫০ জনের মধ্যে ৫ জন নির্বাচিত হই, পরে মেডিকেল টেস্টের পর আমিসহ ৩ জন সুযোগ পাই। লিগ শুরু হওয়ার এক মাস আগেই যেতে হবে। কিন্তু এখন অর্থের কারণে যাওয়া হবে কি না, সেটা অনিশ্চিত। পাসপোর্ট, বিমানের টিকিট, কিটস সবকিছুতেই টাকা দরকার। আমি শুধু চাই কেউ পাশে দাঁড়াক। আমি দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে চাই।”

জুয়েলের মা রশিদা বেগম বলেন, “ছেলেটা অনেক কষ্ট করে আজ এই পর্যন্ত এসেছে। এখন যদি শুধু টাকার অভাবে তার স্বপ্ন থেমে যায়, সেটা আমাদের সহ্য হবে না।”

জুয়েলের বাবা জয়নুল ইসলাম বলেন, “আমি দিনমজুর মানুষ, ছেলের স্বপ্নপূরণে কিছুই করতে পারছি না। এই কষ্ট ভাষায় বোঝানো যায় না। সরকার কিংবা কেউ যদি সাহায্য করত, আমার ছেলে বিদেশে গিয়ে খেলতে পারত।”

এলাকাবাসীরাও জুয়েলের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেন, “জুয়েল অনেক ভালো খেলে, সে আমাদের গর্ব। কিন্তু তার পরিবার অত্যন্ত অসচ্ছল। সরকার বা সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে সে একদিন দেশের নাম উজ্জ্বল করবে।”

ডোমার ফুটবল একাডেমির কোচ মো. সাদিকুর রহমান সুজন বলেন, “জুয়েল আমাদের একাডেমির অন্যতম প্রতিভাবান খেলোয়াড়। সে তার পরিশ্রমে অনেক দূর এগিয়েছে। সে ভুটানে খেলার সুযোগ পেয়েছে, কিন্তু এখন শুধু অর্থের অভাবে তার যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে গেছে। তার বাবা একজন ভ্যানচালক—এই খরচ বহন তার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি অনুরোধ করব সরকার বা সমাজের বিত্তবানরা যেন জুয়েলের পাশে দাঁড়ায়।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শায়লা সাঈদ তন্বী বলেন, “আমরা জুয়েলকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার চেষ্টা করব। আপনারাও সকলে জুয়েলের পাশে দাঁড়ান, সে যেন দেশের গর্ব হয়ে ওঠে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।”

একজন উদীয়মান প্রতিভাবান ফুটবলারের স্বপ্ন যেন শুধু আর্থিক সংকটে থেমে না যায়। এই লক্ষ্যেই জুয়েলের পরিবার সমাজের দানশীল, খেলাপ্রেমী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি সহযোগিতার আবেদন জানিয়েছেন।

ঢাকা/সিথুন/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিনিয়রদের দ্বন্দ্বে বরিশালে অস্বস্তি
  • সায়েমের অলরাউন্ড পারফরম‌্যান্সে পাকিস্তানের জয়ে শুরু
  • স্বপ্নের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে জুয়েল, অর্থাভাবে অনিশ্চিত ভুটান যাত্রা
  • রোনালদোর অদম্য ক্ষুধা, দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে জেতালেন আল-নাসরকে