ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ ও দোসর দলগুলোকে নিষিদ্ধের দাবি নিয়ে বুধবার বেলা ১১টায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কার্যালয়ে যাবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যে গণঅবস্থানকারী ছাত্র-জনতার প্রতিনিধি দল।

মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে বের হওয়া পদযাত্রা শাহবাগ মোড়ে আটকে দেয় পুলিশ। পরে তাদের দাবিগুলো তুলে ধরতে আগামীকাল বেলা ১১টায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে সময় দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের ডিসি মাসুদ আলম প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ সময়সূচি জানান। এরপর আন্দোলনকারীরা পদযাত্রা শেষ করে রাজু ভাস্কর্যের গণঅবস্থানে ফিরে যান।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে রাজু ভাস্কর্যে জুলাই গণহত্যা, পিলখানা ও শাপলা চত্বরে হত্যাযজ্ঞ চালানোর দায়ে ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগ ও মিত্রদের নিষিদ্ধের দাবিতে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি চলছে। কর্মসূচি থেকে এ পর্যন্ত বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রীপরিষদ, উপদেষ্টা ও নবম থেকে দ্বাদশ সংসদের সদস্যদের ফ্যাসিস্ট ঘোষণা করে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিদিন সর্বস্তরের নাগরিকদের গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা হচ্ছে।

কর্মসূচির ১৩তম দিন মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় রাজু ভাস্কর্য থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা বের করেন গণঅবস্থানকারীরা।

এতে নেতৃত্ব দেন জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের রাজনৈতিক প্রধান মো.

আনিছুর রহমান, সাংগঠনিক প্রধান মো. শফিউর রহমান, সদস্য সচিব হাসান মোহাম্মদ আরিফ, সহকারী সদস্য সচিব গালীব ইহসান, আব্দুস সালাম, ডা. মাসুম বিল্লাহ, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ, সদস্য সচিব ফজলুর রহমান, সিনিয়র সহকারী সদস্য সচিব ইশতিয়াক আহমেদ ইফাত, সহকারী সদস্য সচিব আশরাফুল ইসলাম, হামিম হোসাইন শুভ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম নূর শাফায়াতুল্লাহ, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক মো. আরিফুল ইসলাম সাকিব প্রমুখ।

পদযাত্রাটি শাহবাগ মোড়ে পুলিশ আটকে দিলে সেখানে সমাবেশে মিলিত হন আন্দোলনকারীরা। এ সময় জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের রাজনৈতিক প্রধান মো. আনিছুর রহমান বলেন, “সিরিয়াতে পরিবর্তনের পর বাথ পার্টিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জার্মানিতেও পতনের পর নাৎসিবাদ ও ইতালিতেও ফ্যাসিবাদ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নামক জঙ্গী সন্ত্রাসী সংগঠনকে এখন পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হয়নি।”

তিনি আরো বলেন, “আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানা হত্যাযজ্ঞ দিবস। এ দিনকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ‘গ’ শ্রেণির শহীদ সেনা দিবস করা হয়েছে। আমরা বলেছি, ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘ক’ শ্রেণীর জাতীয় শোক দিবস করতে হবে। কারণ ২০০৯ সালের এই দিনে ৫৭ জন দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তার ওপর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে ফ্যাসিস্ট খুনী হাসিনা সরকার, তাদের দোসর ও ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর এজেন্টরা। আমরা জুলাই বিপ্লব পরবর্তী সরকারের কাছে দাবি জানাই আপনারা অবিলম্বে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যাকারী দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করুন।”

জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সাংগঠনিক প্রধান শফিউর রহমান বলেন, “বাংলাদেশের ইতিহাসে আওয়ামী লীগ সবসময়ই ক্ষমতাকে ব্যবহার করে ফ্যসিবাদ প্রতিষ্ঠায় তৎপর ছিল। তারা গণতন্ত্রের নাম করে বারবার ফ্যাসিবাদের দিকেই অগ্রসর হয়। এ ফ্যাসিবাদ আবার ফিরে আসবে, আবার একটা গণহত্যা চালাবে। এটা আমরা কখনোই হতে দেব না।”

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন ষ দ ধ কর ভ স কর য পদয ত র র রহম ন আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।

জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।

মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ