জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম স্মরণে আয়োজিত দুই দিনের ‘নজরুল উৎসব ২০২৫’ শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে উৎসবের সমাপনী আয়োজনে ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনে গান, আবৃত্তি ও নাটকে নজরুলকে স্মরণ করেছেন শিল্পীরা। উৎসব আয়োজন করেছে বাংলাদেশ নজরুলসংগীত সংস্থা।
সমাপনী আয়োজনে বক্তব্য দেন নজরুলসংগীত সংস্থার সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আনাম শাকিল ও ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি সারওয়ার আলী। কাজী নজরুল ইসলামের লেটো নাটক স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া পরিবেশন করে বহর নাট্যনৃত্য দল। নাটকটি প্রযোজনা করেছে বাঁশরী। এরপর বিজন মিস্ত্রি, প্রিয়াঙ্কা ভট্টাচার্য্য, মৃদুলা সমাদ্দারসহ আরও অনেকে নজরুলের একক গান পরিবেশন করেন। নজরুলের কবিতা আবৃত্তি করেছেন ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। ঋষভ সাহার কণ্ঠে ‘বরষা ওই এলো বরষা’ দিয়ে শেষ হয় অনুষ্ঠান।
উৎসবটি শুরু হয়েছিল গত সোমবার। উদ্বোধন করেন নজরুলসংগীত সংস্থার সভাপতি শিল্পী ইয়াকুব আলী খান। অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন নজরুলসংগীত সংস্থার সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আনাম শাকিল ও প্রাবন্ধিক মফিদুল হক। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন নির্মাতা কৌশিক শংকর দাশ।
উদ্বোধনী আয়োজনে গান গেয়ে শোনান অভিজিত কুণ্ডু, প্রিয়াঙ্কা গোপ, মনিষ সরকার, মৌমিতা হক, মোহিত খান। নৃত্যালেখ্য জাগে জ্যোতির্ময় পরিবেশন করে ধৃতি নর্তনালয়। নৃত্য পরিচালনা করেছেন ওয়ার্দা রিহাব।
আরও পড়ুনগান-নৃত্যে নজরুল উৎসব শুরু২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গোলের উৎসবের ম্যাচে বার্সা-ইন্টারের রুদ্ধশ্বাস ড্র
চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনাল মানেই তো উত্তেজনার চূড়ান্ত রূপ। আর মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) দিবাগত রাতে কাতালোনিয়ার মন্টজুইকে যা দেখা গেল— তা যেন শুধুই একটি ফুটবল ম্যাচ নয়, বরং ছয় গোলের অনির্দেশ্য গল্প। যেখানে বার্সেলোনা ও ইন্টার মিলান মিলে একসঙ্গে রচনা করল রোমাঞ্চ আর বীরত্বের এক অপূর্ব মহাকাব্য। দুইবার পিছিয়ে পড়েও অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনে ৩-৩ গোলে সমতা টানল কাতালান জায়ান্টরা।
ম্যাচ শুরুই হলো যেন বজ্রপাত দিয়ে। সময়ের কাঁটায় মিনিটও পেরোয়নি। এর মধ্যেই ইন্টারের মার্কুস তুরাম এক চতুর ব্যাকহিল ফিনিশে বল ঠেলে দেন জালে। সেই মুহূর্তে স্তব্ধ হয়ে পড়ে পুরো কাতালান রক্ষণভাগ। এরপর ২১ মিনিটে কর্নার থেকে ডেনজেল ডামফ্রিসের অ্যাক্রোবেটিক ভলিতে যেন বার্সার হৃদয়েই ঘা লাগে, ইন্টারের লিড তখন ২-০ গোলে।
তবে ইতিহাস বলে— বার্সেলোনার যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়, তখনই তারা সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সেই ধারাতেই, ডানদিক থেকে দুরন্ত ছন্দে এগিয়ে এসে বক্সে ঢুকে বল জালে পাঠালেন কিশোর বিস্ময় লামিনে ইয়ামাল। ইন্টারের দ্বিতীয় গোলের মাত্র তিন মিনিট পর আসে এই গোল, যা এই ম্যাচে বার্সার ফেরার না বলা প্রতিশ্রুতি হয়ে উঠেছিল।
সেই ইয়ামাল পরে আরও একবার প্রায় গোল করে ফেলছিলেন। কিন্তু ভাগ্য মুখ ফিরিয়ে নেয়। বল লাগে পোস্টে। তবে কাতালান আশা তখনও নষ্ট হয়নি। ৩৮ মিনিটে ফেরান তোরেস ডানদিক থেকে আসা পাসে ওয়ান-টাইম ফিনিশে বল জড়ান জালে, ফিরিয়ে আনেন সমতা। ম্যাচ তখন যেন টানটান থ্রিলারে রূপ নেয় এবং শেষ হয় প্রথমার্ধ।
দ্বিতীয়ার্ধে বলের দখলে ও খেলার ছন্দে এগিয়ে থাকলেও ৬৪ মিনিটে আবারও হোঁচট খায় বার্সা। কর্নার থেকে হেডে ডামফ্রিস করেন তার দ্বিতীয় গোল। ইন্টার আবারও এগিয়ে যায়। কিন্তু বার্সা মানেই তো ক্ষণিকের বিশ্রামে আবার অগ্নি হয়ে ওঠা। দ্রুতই আসে জবাব। রাফিনহার দূরপাল্লার গর্জে ওঠা শট প্রথমে লাগে পোস্টে, এরপর ফিরে এসে লেগে যায় গোলরক্ষক ইয়ান সমারের পিঠে, এরপর বল ঢুকে পড়ে জালে। ম্যাচ আবারও ৩-৩। যদিও এটি আত্মঘাতী গোল হিসেবে গণ্য হয়, কাতালানদের জন্য তা যেন নবজন্মের এক চুম্বন।
শেষ বাঁশি পর্যন্ত দুই দলই তীব্রভাবে চেষ্টা করেছে জয় ছিনিয়ে নিতে। কিন্তু ভাগ্য সেদিন ছিল ভারসাম্যপন্থী।
এখন সব অপেক্ষা দ্বিতীয় লেগের। আগামী ৬ মে মিলানের ঐতিহাসিক সান সিরো স্টেডিয়ামে লেখা হবে এই নাটকের অন্তিম অঙ্ক। এক ম্যাচ, এক ফলাফল, এক জয়ী— আর সেই জয়ীর জন্য অপেক্ষা করছে মিউনিখের আলো-আড়ম্বরের রাত। ইউরোপীয় ফুটবলের মঞ্চে চূড়ান্ত পরীক্ষার দিন।
সান সিরোর আকাশে হয়তো আবার জ্বলে উঠবে এক নতুন রূপকথার তারা।
ঢাকা/আমিনুল