রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের মতো অন্যতম প্রধান পর্যটনকেন্দ্রে সংঘটিত বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড শুধু ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যানের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি অব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তাহীনতার শৈথিল্যের লজ্জাকর বহিঃপ্রকাশ। অগ্নিদুর্যোগে ৯৪টি রিসোর্ট, কটেজ ও বসতঘরের প্রায় সম্পূর্ণরূপে ভস্মীভূত হওয়ার ঘটনা নিঃসন্দেহে আরও বড় সংকটের ইঙ্গিতবাহী।

সোমবার মধ্যাহ্নের পূর্বক্ষণে অগ্নিকাণ্ড শুরু হলেও অগ্নিনির্বাপণকর্মীদের ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে তিন ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে; ফলে ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপকতা বহুগুণে বেড়েছে। অর্থাৎ এখানে অগ্নিনির্বাপণ কেন্দ্রের অনুপস্থিতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতাকেই নির্দেশ করছে। প্রাকৃতিক পরিবেশের স্বাভাবিক ধারায় বিঘ্ন ঘটিয়ে অযাচিত রিসোর্টের অপ্রতিরোধ্য বাড়বাড়ন্ত দৃশ্যমান হলেও সেগুলোর নিরাপত্তাব্যবস্থা সুসংহতকরণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক মহলের চরম ঔদাসীন্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। পরিণামস্বরূপ এই বিপর্যয়।

সাজেকের রিসোর্ট ও কটেজগুলো প্রধানত কাঠনির্মিত, যা অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। এসব স্থাপনায় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাবিধি অনুসৃত হয় না, অগ্নিনির্বাপণের জন্য আবশ্যকীয় যন্ত্রাদি বা ব্যবস্থাও সেখানে সম্পূর্ণরূপে অনুপস্থিত। সাজেক ক্রমশ এমন এক বাণিজ্যিককেন্দ্রে পরিণত হয়েছে, যেখানে নিরাপত্তা ও সুপরিকল্পনার স্থলে মুনাফা লাভই মুখ্য বলে বিবেচিত।

এ–জাতীয় দুর্যোগ ভবিষ্যতে প্রতিরোধ করতে অবিলম্বে সাজেকসহ সমগ্র দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে আধুনিক অগ্নিনির্বাপণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। পাহাড়ি অঞ্চলে পানির দুষ্প্রাপ্যতার কথা মাথায় রেখে প্রতিটি রিসোর্ট ও কটেজে অগ্নিনিরোধক গ্যাসের সিলিন্ডার ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের সংযোজন বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময় অন্তর অগ্নিনিরাপত্তা পরিদর্শন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কাঠনির্মিত স্থাপনার পরিবর্তে অগ্নিপ্রতিরোধক উপাদানের ব্যবহার উৎসাহিত করা জরুরি। উপরন্তু স্থানীয় প্রশাসন ও পর্যটন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পর্যটন–অবকাঠামোর অনুমোদনপ্রক্রিয়াকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত করতে হবে; যাতে অপরিকল্পিত সম্প্রসারণজনিত বিপর্যয়ের পুনরাবৃত্তি পরিহার করা যায়।

রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় অধিবাসীদের অনুধাবন করতে হবে, লভ্যাংশলিপ্সার কারণে অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণ ও নিরাপত্তাহীনতার সম্প্রসারণ ভবিষ্যতে আরও বিপুলতর বিপর্যয় ডেকে আনবে। উন্নয়ন ও সুরক্ষা পরস্পরের পরিপূরক—কোনো একটির অনুপস্থিতি অপরটির অস্তিত্বকে সংকটাপন্ন করে তুলতে সক্ষম। অতএব, পর্যটন খাতের সুশৃঙ্খল বিকাশের নিমিত্ত সুস্পষ্ট নীতিমালার অধীনে তা নিয়ন্ত্রিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। বর্তমান দুর্যোগ থেকে পাঠ নিয়ে অবিলম্বে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও কার্যকর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভবিষ্যতে এই বিপর্যয়ের পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধ করা একান্ত অনিবার্য।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

পুরীর আদলে পশ্চিমবঙ্গের দীঘায় জগন্নাথ মন্দির, উদ্বোধন আজ

ভারতের ওডিশা রাজ্যের পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলে পশ্চিমবঙ্গের দীঘার সমুদ্রতীরে তৈরি করা হয়েছে জগন্নাথ মন্দির। আজ বুধবার এ মন্দিরের দেবতার প্রাণ প্রতিষ্ঠা হবে। সেই সঙ্গে হবে মন্দিরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। উদ্বোধন করবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিমধ্যে দীঘায় এসে পৌঁছেছেন সাধুসন্তরা।

দীঘার এই মন্দির নির্মাণ করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। খরচ হয়েছে ২৫০ কোটি রুপি। মন্দিরের উদ্বোধনকে ঘিরে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে মহাযজ্ঞ, চলে বিকেল পর্যন্ত। এতে অংশ নেন পুরীর মন্দিরের পুরোহিতসহ সাধুসন্তরা, ছিলেন ইসকনের সাধুসন্তরাও।

এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে পুরীর মন্দিরের ধাঁচে দীঘার সমুদ্রতীরে। দীঘা রেলস্টেশনের একেবারে কাছে নিউ দীঘা ও ওল্ড দীঘার মাঝপথে। রাজস্থানের গোলাপি বেলেপাথর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে এই মন্দির। রাজস্থানের ৮০০ দক্ষ কারিগর মন্দির নির্মাণে অংশ নেন। অযোধ্যার রামমন্দির নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত কিছু কারিগরও এ মন্দির নির্মাণে ছিলেন।

দীঘার মন্দিরের তিন বিগ্রহ তৈরি করা হয়েছে পাথর দিয়ে। পুরীর মন্দিরের মতো ভোগ মণ্ডপ, নাটমন্দির, জগমোহন ও গর্ভগৃহ রয়েছে। আছে ব্যাঘ্রদ্বার, হস্তিদ্বার ও অশ্বদ্বার। দেবতার স্থাপত্যও স্থান পেয়েছে। আরও থাকছে লক্ষ্মীমন্দির, গুন্ডিচার মাসিবাড়ি। মাসিবাড়ি করা হয়েছে দীঘার আদি জগন্নাথ দেবের মন্দিরকে।

পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পর্যটনকেন্দ্র দীঘাকে পুরীর পর্যটনকেন্দ্রের মতো গড়ে তোলার অংশ হিসেবে এই জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে। মূল মন্দিরটি ২১৩ ফুট উঁচু। মন্দিরের মেঝের মারবেল পাথর আনা হয়েছে ভিয়েতনাম থেকে। ২২ একর জমিতে গড়ে উঠেছে দীঘার জগন্নাথ ধাম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পুরীর আদলে পশ্চিমবঙ্গের দীঘায় জগন্নাথ মন্দির, উদ্বোধন আজ