পর্যটনকেন্দ্রে অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করুন
Published: 26th, February 2025 GMT
রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের মতো অন্যতম প্রধান পর্যটনকেন্দ্রে সংঘটিত বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড শুধু ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যানের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি অব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তাহীনতার শৈথিল্যের লজ্জাকর বহিঃপ্রকাশ। অগ্নিদুর্যোগে ৯৪টি রিসোর্ট, কটেজ ও বসতঘরের প্রায় সম্পূর্ণরূপে ভস্মীভূত হওয়ার ঘটনা নিঃসন্দেহে আরও বড় সংকটের ইঙ্গিতবাহী।
সোমবার মধ্যাহ্নের পূর্বক্ষণে অগ্নিকাণ্ড শুরু হলেও অগ্নিনির্বাপণকর্মীদের ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে তিন ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে; ফলে ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপকতা বহুগুণে বেড়েছে। অর্থাৎ এখানে অগ্নিনির্বাপণ কেন্দ্রের অনুপস্থিতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতাকেই নির্দেশ করছে। প্রাকৃতিক পরিবেশের স্বাভাবিক ধারায় বিঘ্ন ঘটিয়ে অযাচিত রিসোর্টের অপ্রতিরোধ্য বাড়বাড়ন্ত দৃশ্যমান হলেও সেগুলোর নিরাপত্তাব্যবস্থা সুসংহতকরণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক মহলের চরম ঔদাসীন্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। পরিণামস্বরূপ এই বিপর্যয়।
সাজেকের রিসোর্ট ও কটেজগুলো প্রধানত কাঠনির্মিত, যা অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। এসব স্থাপনায় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাবিধি অনুসৃত হয় না, অগ্নিনির্বাপণের জন্য আবশ্যকীয় যন্ত্রাদি বা ব্যবস্থাও সেখানে সম্পূর্ণরূপে অনুপস্থিত। সাজেক ক্রমশ এমন এক বাণিজ্যিককেন্দ্রে পরিণত হয়েছে, যেখানে নিরাপত্তা ও সুপরিকল্পনার স্থলে মুনাফা লাভই মুখ্য বলে বিবেচিত।
এ–জাতীয় দুর্যোগ ভবিষ্যতে প্রতিরোধ করতে অবিলম্বে সাজেকসহ সমগ্র দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে আধুনিক অগ্নিনির্বাপণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। পাহাড়ি অঞ্চলে পানির দুষ্প্রাপ্যতার কথা মাথায় রেখে প্রতিটি রিসোর্ট ও কটেজে অগ্নিনিরোধক গ্যাসের সিলিন্ডার ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের সংযোজন বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময় অন্তর অগ্নিনিরাপত্তা পরিদর্শন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কাঠনির্মিত স্থাপনার পরিবর্তে অগ্নিপ্রতিরোধক উপাদানের ব্যবহার উৎসাহিত করা জরুরি। উপরন্তু স্থানীয় প্রশাসন ও পর্যটন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পর্যটন–অবকাঠামোর অনুমোদনপ্রক্রিয়াকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত করতে হবে; যাতে অপরিকল্পিত সম্প্রসারণজনিত বিপর্যয়ের পুনরাবৃত্তি পরিহার করা যায়।
রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় অধিবাসীদের অনুধাবন করতে হবে, লভ্যাংশলিপ্সার কারণে অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণ ও নিরাপত্তাহীনতার সম্প্রসারণ ভবিষ্যতে আরও বিপুলতর বিপর্যয় ডেকে আনবে। উন্নয়ন ও সুরক্ষা পরস্পরের পরিপূরক—কোনো একটির অনুপস্থিতি অপরটির অস্তিত্বকে সংকটাপন্ন করে তুলতে সক্ষম। অতএব, পর্যটন খাতের সুশৃঙ্খল বিকাশের নিমিত্ত সুস্পষ্ট নীতিমালার অধীনে তা নিয়ন্ত্রিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। বর্তমান দুর্যোগ থেকে পাঠ নিয়ে অবিলম্বে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও কার্যকর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভবিষ্যতে এই বিপর্যয়ের পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধ করা একান্ত অনিবার্য।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
লাখ লাখ মানুষের সমাগমে চাঙা সিলেটের পর্যটন ব্যবসা
সিলেটে বেড়ানোর উপযুক্ত সময় বর্ষা মৌসুম। কিন্তু এবার পঞ্জিকার হিসাবে বর্ষা ঋতু শুরু হওয়ার আগেই দফায় দফায় বৃষ্টি নামায় বর্ষার আমেজ এসে গেছে। নদ-নদী, হাওর-খাল–বিল সব জায়গা নতুন পানিতে ভরেছে। টইটম্বুর পানিতে পর্যটনকেন্দ্রগুলো মোহনীয় রূপ পেয়েছে। এ রকম অবস্থায় ঈদের লম্বা ছুটি মিলেছে। তাই বেড়ানোর মওকা পেয়ে অনেকেই দেশের শীর্ষস্থানীয় পর্যটন গন্তব্য সিলেটে ছুটে এসেছেন।
স্থানীয় প্রশাসন ও পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্ষার আমেজে সিলেটের পর্যটন ব্যবসা এবার চাঙা হয়ে উঠেছে। গত দেড় সপ্তাহে অন্তত সাড়ে ৮ লাখ পর্যটক এসেছেন এই জনপদে। হোটেল-রিসোর্ট, রেস্তোরাঁ ও পরিবহন খাতের পাশাপাশি চা-পাতা, মণিপুরি কাপড়, সাতকরা ও আচার কেনাবেচাসহ পর্যটনসংশ্লিষ্ট সব ব্যবসা বেশ জমে উঠেছে। এতে অন্তত আড়াই হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে তাঁরা ধারণা করছেন।
জানতে চাইলে সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ফয়েজ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, গত কয়েক বছরের মধ্যে ঈদের ছুটি কিংবা পর্যটন মৌসুমের শুরুতে এবারই সবচেয়ে বিপুলসংখ্যক পর্যটকের সমাগম ঘটেছে। সিলেটের সব কটি পর্যটনকেন্দ্রেই উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসা-বাণিজ্যও জমেছে। মৌসুমের শুরুতেই এমন রমরমা অবস্থায় খুশিতে আছেন এখানকার পর্যটন খাত–সংশ্লিষ্ট সবাই।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিলেট বিভাগের চার জেলায় শতাধিক পর্যটনকেন্দ্র আছে। আর ভ্রমণ পর্যটনকে ঘিরে গড়ে উঠেছে শতাধিক দৃষ্টিনন্দন রিসোর্ট। পর্যটনকেন্দ্র ছাড়াও সিলেট নগরে অবস্থিত হজরত শাহজালাল (রহ.) ও হজরত শাহপরান (রহ.)-এর মাজার এবং সিলেটের গোলাপগঞ্জের শ্রীশ্রী চৈতন্য দেবের পৈতৃক ভিটায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অনেক ধর্মপ্রাণ মানুষ সিলেটে আসেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দাবি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকেন্দ্রিক ট্যুরিজমের পাশাপাশি ধর্মীয় ট্যুরিজম বিবেচনায় পারিবারিক ও ব্যক্তিগত ট্যুরের জন্য অনেকেরই এখন পছন্দের জায়গা সিলেট। সাধারণত সিলেটের চার জেলায় বছরে ২০ থেকে ২৫ লাখ পর্যটক আসেন। এর মধ্যে সিলেটে আসেন ১২ থেকে ১৩ লাখ। বাকি জেলাগুলোর মধ্যে মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জে প্রায় ৫ লাখ করে ১০ লাখ এবং হবিগঞ্জে প্রায় ২ লাখ পর্যটক আসেন। তবে এবার মৌসুমের শুরুতেই চার জেলায় পর্যটকের ঢল নেমেছে।
গত কয়েক বছরের মধ্যে ঈদের ছুটি কিংবা পর্যটন মৌসুমের শুরুতে এবারই সিলেটে সবচেয়ে বিপুলসংখ্যক পর্যটকের সমাগম ঘটেছে। সব কটি পর্যটনকেন্দ্রেই উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসা-বাণিজ্যও জমেছেফয়েজ হাসান, সভাপতি, সিলেট চেম্বারসিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিলেটে এবারের ঈদের ছুটিতে কমপক্ষে ৫ লাখ পর্যটক এসেছেন। এতে পর্যটন খাতে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যবসা হয়েছে। যেহেতু পর্যটন মৌসুম কেবল শুরু হয়েছে, সেহেতু চলতি বছর বিপুল পর্যটকের সমাগম ঘটবে বলে আশা করছি।’
সিলেট ছাড়া অন্য তিন জেলায় ঈদের ছুটিতে কী পরিমাণ পর্যটক এসেছেন কিংবা কেমন ব্যবসা-বাণিজ্য হয়েছে, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান স্থানীয় প্রশাসনের কাছে পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক বছরের মধ্যে এবারই মৌসুমের শুরুতে সবচেয়ে বেশি পর্যটক এসেছেন। এর মধ্যে সিলেটে ৫ লাখ, মৌলভীবাজারে ২ লাখ এবং সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলায় দেড় লাখ পর্যটক এসেছেন। চার জেলায় পর্যটন খাতে কমপক্ষে আড়াই হাজার কোটি টাকার ব্যবসা-বাণিজ্য হয়েছে বলে দাবি করেন ব্যবসায়ীরা।
ষড়্ঋতুর দেশ বাংলাদেশে আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসকে বর্ষাকাল বলা হয়। পঞ্জিকা অনুযায়ী আজ শনিবার পয়লা আষাঢ়। অর্থাৎ কাগজে–কলমে আজ থেকে শুরু হচ্ছে এ বছরের বর্ষাকাল।
এবারের ঈদের ছুটিতে সিলেটের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে উপচে পড়া ভিড় হয়েছে। এসব জায়গায় জল-পাথর আর পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করেন দেশের নানা এলাকা থেকে আসা পর্যটকেরা। সম্প্রতি সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রে