“দুদক এখনও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নয়। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হলে স্বাধীনভাবে কাজ করার মাত্রা আরো বাড়বে” বলে মন্তব্য করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর চেয়ারম্যান ড. আব্দুল মোমেন।

বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পাবনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে দুদকের গণশুনানি শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।

পাবনা জেলা প্রশাসক ও জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, পাবনার সহযোগিতায় এই গণশুনানির আয়োজন করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন দুদক চেয়ারম্যান।

দুদক চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বলেন, “সব ধরনের স্বাধীনতারই তো একটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমাদের যতটুকু স্বাধীনতা আছে, আমরা চেষ্টা করব এর মধ্যেই যতটা সম্ভব ভালোভাবে এবং নিরপেক্ষভাবে কাজ করে যাব।”

আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক মামলার পরিণতি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড.

আবদুল মোমেন বলেন, ‘‘নিপিড়নমূলক, নির্যাতনমূলক শোষণমূলক নিষ্পেষণমূলক মামলা যেগুলো হয়েছে তাদের পরিণতি কী? এগুলো নতুন করে ব্যাখ্যা করার কিছু নেই। আমরা যদি সেই ধারাটা অব্যাহতি রাখি তাহলে আমাদেরও তো সেই একই রকম পরিণতি হবে।”

ড. আব্দুল মোমেন বলেন, “দুদকের কাজ হচ্ছে বিচারের জন্য তৈরি করে দেওয়া। বিচার করে আদালত। পাবনা সবসময় একটি প্রতিবাদী জেলা। এই প্রতিবাদটা দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরো বেশি হওয়া উচিত। যেন দেশের অন্যান্য জেলার চেয়ে পাবনা জেলা আগে দুর্নীতিমুক্ত জেলা হয়।”

পাবনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মফিজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহ্সান ফরিদ। 

এছাড়াও বক্তব্য দেন, দুদক রাজশাহী রেঞ্জের পরিচালক কামরুল আহসান, দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির মহাপরিচালক আখতার হোসেন। উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার মোরতোজা আলী খান, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ডা. মনোয়ারুল আজিজ প্রমুখ।


গণশুনানিতে ১৫৭টি অভিযোগ জমা পড়লেও দুদক তফসিলভুক্ত ৫৭টি অভিযোগ আমলে নিয়ে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। গণশুনানিতে বিভিন্ন সরকারি অফিসে সেবা প্রাপ্তিতে হয়রানীর শিকার বা সেবা বঞ্চিত সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা অভিযোগ তুলেন ধরেন। তাৎক্ষণিকভাবে সেই অভিযোগ জবাব দেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানরা।

গণশুনানীতে সেবা প্রত্যাশীদের অভিযোগের বেশিরভাগই ছিল জমিজমাকেন্দ্রীক। জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস ও স্থানীয় ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হয়রানীর নানা অভিযোগ উঠে আসে। সেগুলোর তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয় কমিশন।

ইব্রাহিম হোসেন নামের এক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন, “ভূমি অফিসে চাকরি করে পাঁচ হাজার টাকা বেতন পেয়ে কর্মচারীরা কীভাবে পাাচ তলা বাড়ি করেন? আর আমি দীর্ঘবছর ইতালীতে থেকেও আজ পর্যন্ত পাঁচ তলা বাড়ি করতে পারিনি। আমার মায়ের জমি নিয়ে মাসের পর মাস সেটেলমেন্ট অফিসে ঘুরতে হচ্ছে।” পাবনার সেটেলমেন্ট অফিসের সকল কর্মকর্তাকে পরিবর্তন করে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

চর বোয়ালিয়া গ্রামের মজিবর রহমান নামের একজন অভিযোগ করেন, “ভূমি অফিসের লোকজন অর্থের বিনিময়ে জমি লিখে দেন। টাকা দিলে সহজেই কাজ হয়ে যায়। আর টাকা না দিলে মাসের পর মাস ঘুরায়। ফোন করে টাকা চেয়েছেন আমার কাছে। আমাকে বলা হয়েছে, আপনার কাবিন আছে, বউ নাই। অথচ আমার প্রতিপক্ষের কাবিন নাই, সে বউ নিয়ে ঘুরছে। এটা কি অন্যায় নয়? এটা তো অবৈধ।’’ 

পরে ঢাকা থেকে একদল বিশেষজ্ঞ টিম পাঠিয়ে জমি সংক্রান্ত সকল অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান কমিশন।

এরকমভাবে গণশুনানীতে পাবনার বিআরটিএ, পাসপোর্ট অফিস, জেনারেল হাসপাতাল, নির্বাচন অফিস, সাব রেজিস্টার অফিস, বিভিন্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিসহ বিভিন্ন সরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানারকম হয়রানীর অভিযোগ ‍তুলে ধরেন সেবা প্রত্যাশীরা। অভিযোগগুলো পর্যায়ক্রমে সমাধানের আশ্বাস দেয় কমিশন।

ঢাকা/শাহীন/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গণশ ন ন ত ট অফ স

এছাড়াও পড়ুন:

৬ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দেবে ৮ দল

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি, সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) বহাল এবং নির্বাচনের আগে গণভোটসহ পাঁচ দফা দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিসসহ আন্দোলনরত আট দল।

সোমবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর পুরনো পল্টনে খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক।

আরো পড়ুন:

৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাই প্রায় চূড়ান্ত: তারেক রহমান

বরগুনায় জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মামুন 

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, আগামী বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) বেলা ১১টায় প্রধান উপদেষ্টা বরাবর গণমিছিল সহকারে স্মারকলিপি প্রদান। এতে সন্তোষজনক অগ্রগতি না হলে আগামী ১১ নভেম্বর (বুধবার) ঢাকায় গণসমাবেশ কর্মসূচি পালন করা হবে। তবে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি, গণভোটসহ বিষয়গুলোর সুন্দর সমাধানে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম, পীর সাহেব চরমোনাই ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ তাহের।

এর আগে খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন আট দলের শীর্ষ নেতারা। দলগুলো হলো বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) ও ডেভেলপমেন্ট পার্টি।

নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে মামুনুল হক বলেন, “বাংলাদেশ ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে উপনীত। তবে জুলাই সনদ নিয়ে দেশের মানুষ যে স্বপ্ন দেখেছিল এবং নতুন বন্দোবস্তের স্বপ্ন এখনো অধরা।’’

পূর্ব ঘোষিত ৫ দফা দাবি আদায়ে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে তিনি বলেন, “আমাদের আটটি দলের পাঁচ দফা দাবিতে সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। আমরা জুলাই সনদের আইনিভিত্তি দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছি। অবিলম্বে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি করতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগেই পৃথকভাবে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট করতে হবে। আরপিও সংশোধন করা হলে আমরা সেটা মানব না। অর্থাৎ আরপিও আগের মতোই রাখতে হবে। এগুলোই এখন আমাদের মূল দাবি।

“আশা করি আলোচনার ভিত্তিতে সকল রাজনৈতিক দল সমাধান করতে পারব এবং জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির মাধ্যমে আগামী নির্বাচন হবে’’ বলেন তিনি।

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ও গণভোট আয়োজন নিয়ে মতপার্থক্য নিরসনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ আয়োজন করে সেই আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘রেফারির’ ভূমিকায় থাকার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের।

সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, ‘‘আমরা যে ঐকমত্যে পৌঁছেছিলাম, তাতে হঠাৎ করে একটি দল বিরোধিতা করছে। আমরা আশা করি, তারা তাদের দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করবে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হলে গণভোট আগে আর পরে করে লাভ নেই। বরং গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে। কারণ নির্বাচনের দিন ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোটে কারও মনযোগ থাকবে না।’’

তাহের বলেন, “আমি গতকালকে (২ নভেম্বর) দলগুলোর মধ্যে একটি আলোচনার আহ্বান করেছিলাম। আজকে উপদেষ্টা পরিষদও সেই রকম একটি আহ্বান দলগুলোর কাছে জানিয়েছে। আমরাও দেখতে চাই, মেইন স্টেক হোল্ডার দলগুলো এই আহ্বানে যেন সাড়া দেয়। তারাও যদি আমাদের মতো একইভাবে সাড়া দেয়, তাহলে একটা রাস্তা বেরিয়ে আসবে।’’ 

জামায়াতের এই সিনিয়র নেতা বলেন, “উপদেষ্টা পরিষদ যে মনে করেছে, তাদের আর কোনো দায়িত্ব নেই, তারা আর কিছুই করবে না, দলগুলো মিলে করবে… তাহলে এখানে একটা রেফারির অভাব হতে পারে। উপদেষ্টা পরিষদের পক্ষ থেকে, বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টা এখানে একটা রেফারির ভূমিকা পালন করবেন আগের মতো, এটা আমরা আশা করি।’’

মুফতি রেজাউল করীম বলেন, ‘‘জুলাই সনদের আইনিভিত্তি হলো প্রধান বিষয়। এটা না হলে এই সরকার, জুলাই গণঅভ্যুত্থান সবকিছু আইনি প্রশ্নের মুখে পড়বে। ৫ আগস্টের পরে সংস্কার, বিচার ও নির্বাচনের দায়িত্ব নিয়ে সরকার গঠিত হয়েছিল। সেই লক্ষ্যে সংস্কার কমিশন হয়েছে, ঐকমত্য কমিশন হয়েছে। গণভোটের বিষয়ে সবাই একমতও হয়েছে। এখন গণভোটের দিনক্ষণ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে বিভেদ তৈরি হয়েছে, তা দুঃখজনক। এই ক্ষেত্রে বিএনপির আচরণের কোনো অর্থ আমি বুঝি না।’’ 

উপদেষ্টা পরিষদের আজকের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সকল রাজনৈতিক দলের একত্রে বসে চলমান বিভেদ দূর করে শান্তিপূর্ণ অবস্থা তৈরির আহ্বান জানান পীর সাহেব চরমোনাই।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (পীর সাহেব চরমোনাই), বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসে আমীর মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ডা. আব্দুল্লাহ আবু তাহের, খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা আব্দুল বাসিত আজাদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা মাহবুবুল হক ও মাওলানা কুরবান আলী কাসেমী, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর মাওলানা সাখাওয়াত হুসাইন, জাগপার সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দিন আহমাদ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আজাদ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইজহার, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদিক হক্কানী, খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির মহাসচিব মো. কাজী নিজামুল হক নাঈম।
 

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ