‘চলন্ত বাসটি হঠাৎ থেমে যায়। শেষ বাসে আমরা অভিভাবকেরা ছিলাম। বাসের দরজা ভেঙে একদল ডাকাত মুহূর্তেই ভেতরে প্রবেশ করে। চালককে মারধর করে জিনিসপত্র নিয়ে এবার আমাদের কাছে আসে। গলায় দেশি অস্ত্র ও দা ঠেকিয়ে সবার শরীর চেক (তল্লাশি) করে মুঠোফোন ও মানিব্যাগ নিয়ে যায়। আর নারী অভিভাবকদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয় স্বর্ণালংকার। এ সময় ভয় পেয়ে শিশুরা কান্নাকাটি শুরু করে।।’

টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে শিক্ষাসফরের চারটি বাস আটকে ডাকাতির ঘটনাটি এভাবে বর্ণনা করছিলেন আবদুল্লাহ আল মামুন নামের এক অভিভাবক। আজ বুধবার বিকেল চারটার দিকে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার এনায়েতপুর ইউনিয়নে সোয়াইতপুর উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে ভুক্তভোগী শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কয়েকজন অভিভাবকদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।

গত মঙ্গলবার সড়কে গাছ ফেলে শিক্ষাসফরের বাসগুলোতে ডাকাতির সময় ঘটনাস্থলে ছিল এসএসসি পরীক্ষার্থী নুসাইফা জাফরিনও। সে বলে, ‘এক গাড়িতে নবম-দশম শ্রেণির মেয়েরা, আরেকটিতে অভিভাবক, একটিতে ছেলে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক এবং অন্যটিতে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ছিল। আমরা প্রথম বাসে ছিলাম। হঠাৎ রাস্তায় গাছ দেখে সবাই ভয় পেয়ে যাই। এ রাস্তায় ডাকাতি হয়, আমরা আগেও শুনেছি। আমাদের বাসে ডাকাতেরা না উঠলেও পেছনের বাসগুলোতে উঠে যায়। এ অবস্থায় সবাই ভয় পেয়ে কান্না শুরু করেছিলাম।’

ডাকাতির দৃশ্যের কথা মনে করে শিউরে ওঠেন দশম শ্রেণির কয়েকজন ছাত্রী। সেই সঙ্গে নিরাপদে ফেরায় স্বস্তির নিশ্বাসও ফেলেন। সাইমা সুলতানা, রোকসানা আক্তার ও মিম আক্তার নামের শিক্ষার্থীরা জানায়, আল্লাহর রহমতে ডাকাতেরা তাদের বাসে ওঠেনি। ডাকাতদের গাড়ি আটকানোর সেই মুহূর্ত মনে হলে এখনো ভয় লাগে। গল্প শুনলেও জীবনে প্রথমবার সেদিন ডাকাত দেখেছেন তাঁরা।

ডাকাত দল মেয়েদের এড়ালেও ছেলেদের বাসে প্রবেশ করেছিল। এ বিষয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী সাদিকুল ইসলাম বলে, ‘ডাকাতেরা সবাই দা নিয়ে বাসে ঢোকে। সবাইকে ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে বলতে থাকে, ‘যার কাছে যা আছে বের কর, না অইলে মাইরালবাম।’ শুরুতে কেউ কিছু দিতে না চাইলে ডাকাতেরা নিজেদের মধ্যে বলতে থাকে, বোমাগুলো নিয়ে আয়। কিছু বের না করলে বোমা মেরে বাস উড়িয়ে দেব।’

গত সোমবার সোয়াইতপুর উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকসহ মোট ১৮০ জন শিক্ষা সফরে রওনা হন। ওই দিন রাত তিনটার দিকে স্কুল চত্বর থেকে চারটি বাসে নাটোরের গ্রিনভ্যালি পার্কের উদ্দেশে রওনা হন তাঁরা। ভোর সোয়া চারটার দিকে বাসগুলো ঘাটাইল-সাগরদীঘি সড়কে ঘাটাইল উপজেলার সাগরদীঘি ইউনিয়নের লক্ষ্মণের বাধা এলাকায় পৌঁছালে ডাকাত দলের কবলে পড়ে। গজারি বনের ভেতর দিয়ে চলা এ সড়কের পাশ থেকে একটি গাছ কেটে রাস্তা আটকে দেয় ডাকাতেরা।

আরও পড়ুনটাঙ্গাইলে শিক্ষাসফরের বাসে ডাকাতির ঘটনায় মামলা, জড়িত সন্দেহে আটক ২২ ঘণ্টা আগে

ডাকাত দেখে দ্রুতই মানিব্যাগের টাকা ও মুঠোফোন লুকিয়ে ফেলেন স্কুলটির সাবেক শিক্ষার্থী মামুন মিয়া। পরে সেগুলো আর ডাকাতেরা খুঁজে পায়নি। তিনি বলেন, ‘ডাকাত দেখে মানিব্যাগের টাকা ও মুঠোফোন লুকিয়ে ফেলি। তখন আমাকে চেক করে কিছু না পেয়ে ডাকাতেরা চড়-থাপ্পড় শুরু করে কেন মানিব্যাগে টাকা নেই জানতে চান। ডাকাতের তাড়াহুড়া করছিল। মালামাল নিয়ে দ্রুত তাঁরা বাস থেমে নামতে চাইছিলেন।’

এ ঘটনার পর পর জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশের সহায়তা চাওয়া হয়। পরে অল্প সময়ের মধ্যেই পুলিশ সদস্যেরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। ততক্ষণে ডাকাতেরা পালিয়ে যায়। পুলিশের সহায়তায় আবার নির্ধারিত গন্তব্য নাটোরের উদ্দেশে রওনা দেয় দলটি। ভুক্তভোগী শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দাবি, ততক্ষণে তিনটি বাস থেকে ১০টি স্মার্ট মুঠোফোন, একটি হাতঘড়ি, প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা ও দেড় ভরির মতো স্বর্ণালংকার নিয়ে যায় ডাকাত দল।

সোয়াইতপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ খলিলুর রহমান বলেন, ‘স্কুল থেকে ডাকাতির ঘটনাস্থলের দূরত্ব মাত্র সাত কিলোমিটার। কাছাকাছি এলাকায় গিয়ে ডাকাতের কবলে পড়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা জানান, পিকনিকে গেলে তাঁদের ট্রমা কেটে যাবে। তাই আমরা শিক্ষা সফরটি সম্পন্ন করি।’

খলিলুর রহমান আরও বলেন, ‘আমরা ফেরার পথে রাত ১০টার দিকে ঘাটাইল থানায় যাই। পরে অজ্ঞাতপরিচয় ১০-১২ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ করে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে পুলিশ মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে। মামলা শেষে পুলিশ আমাদের ফুলবাড়িয়া সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছে দেয়।’

আরও পড়ুনটাঙ্গাইলে শেষ রাতে শিক্ষাসফরের চারটি বাস আটকে ডাকাতি, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মারধর২১ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ক ষ সফর র

এছাড়াও পড়ুন:

ভারত–পাকিস্তান লড়াই: একসময় আগুন জ্বলত, এখন শুধু ধোঁয়া

ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেটীয় সম্পর্ক সব সময়ই দুই দেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক কৌশল অনুযায়ী এগিয়েছে।

অতীতেও দ্বিপক্ষীয় সিরিজে লম্বা বিরতি দেখা গেছে। ১৯৫৪ থেকে ১৯৭৮—টানা ২৪ বছর পাকিস্তান সফরে যায়নি ভারত। আবার ১৯৬০ সালের পর পাকিস্তানও প্রথমবারের মতো ভারতে খেলতে যায় ১৯৭৯ সালে।

এরপর ১৯৮২ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ভারত-পাকিস্তান নিয়মিত মুখোমুখি হয়েছে। এই সময়ে ভারত তিনবার পাকিস্তান সফরে গিয়ে খেলে ১২ টেস্ট, পাকিস্তানও ভারতে গিয়ে খেলে ৮ টেস্ট।

দীর্ঘ বিরতির পর ১৯৯৯ সালে পাকিস্তান তিন টেস্ট খেলতে ভারতে যায়। এর মধ্যে একটি ছিল কলকাতার ইডেন গার্ডেনে প্রথম এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। ভারত ফিরতি টেস্ট সিরিজ খেলতে পাকিস্তানে যায় ২০০৪ সালে, যা ছিল ১৯৮৯ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শচীন টেন্ডুলকারের অভিষেকের পর প্রথমবার।

২০০৪ সালের পাকিস্তান সফরে কড়া নিরাপত্তায় ব্যাটিংয়ে নামেন শচীন টেন্ডুলকার

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৩ দাবিই পূরণ চান অনশনরত জবি শিক্ষার্থীরা
  • জকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা, নির্বাচন ২৭ নভেম্বর
  • অস্ট্রেলীয় সাংবাদিকের প্রশ্নে কেন চটে গেলেন ট্রাম্প, আলবানিজের কাছে নালিশেরও হুমকি দিলেন
  • সানসিল্কের আমন্ত্রণে প্রথমবারের মতো ঢাকায় পাকিস্তানি তারকা হানিয়া আমির
  • গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন চালাচ্ছে ইসরায়েল: প্রথমবারের মতো বলল জাতিসংঘ
  • ভারত–পাকিস্তান লড়াই: একসময় আগুন জ্বলত, এখন শুধু ধোঁয়া