বিরল খনিজ সম্পদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বড় ধরনের একটি চুক্তি করতে এর বিভিন্ন শর্তে সম্মত হয়েছে ইউক্রেন। এ প্রেক্ষাপটে শুক্রবার ওয়াশিংটন সফর করবেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এ সময় হোয়াইট হাউসে এ চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, ইউক্রেনের মূল্যবান খনিজ উত্তোলনের সুবিধা পাবে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্পের প্রত্যাশা, যুদ্ধ শেষ হলে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে’ ইউক্রেনে মার্কিন সেনা অবস্থান করবে। 

বুধবার রয়টার্সের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। দুটি সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়ার সঙ্গে চলমান এ যুদ্ধ শেষ করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেষ্টার মধ্যে ওয়াশিংটনের সমর্থন পেতেই এ চুক্তিতে সম্মত হয়েছে কিয়েভ। তবে এ চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বা অস্ত্র সরবরাহ চালিয়ে যাওয়ার কোনো শর্ত নেই। একটি সূত্র বলছে, ভবিষ্যতে ইউক্রেনে কোনো মার্কিন অস্ত্র যাবে কিনা– ওয়াশিংটন ও কিয়েভের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতেই তা নির্ধারিত হবে। 

চুক্তির বিষয়ে কিয়েভের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, তারা বেশ কিছু ভালো সংশোধনী নিয়ে একমত হয়েছেন। এটিকে একটি ইতিবাচক ফল হিসেবেই দেখছেন তারা। যুক্তরাষ্ট্র প্রাথমিকভাবে ইউক্রেনের ৫০০ বিলিয়ন ডলারের প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর যে অধিকার দাবি করেছিল, সেটি থেকে সরে এসেছে। তবে একই সঙ্গে ইউক্রেনকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তাও দিচ্ছে না তারা, যা দেশটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দাবি ছিল।
 
ট্রাম্পের আশা, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ওয়াশিংটনে এসে এ সপ্তাহেই চুক্তিতে সই করবেন। আগামীকাল এ চুক্তিটি হওয়ার কথা রয়েছে। গত মঙ্গলবার ট্রাম্প বলেছেন, চুক্তির বিনিময়ে ইউক্রেন লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অধিকার পাবে। তিনি বলেন, তারা খুব সাহসী। তবে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ ও সামরিক উপকরণ ছাড়া যুদ্ধ অল্প সময়ের মধ্যেই শেষ হয়ে যেত। যুক্তরাষ্ট্র কি অস্ত্র সরবরাহ করে যাবে– এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, হয়তো রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের একটি চুক্তি হওয়া পর্যন্ত। আমাদের একটি চুক্তিতে পৌঁছানো দরকার, না হয় এটা (যুদ্ধ) চলতে থাকবে। এর পরই ট্রাম্প বলেন, শান্তিচুক্তির পর ইউক্রেনে ‘কোনো এক ধরনের শান্তিরক্ষা’ কার্যক্রমের দরকার হবে। কিন্তু সেটি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। এর আগে গত সপ্তাহে ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে ‘স্বৈরশাসক’ বলে বর্ণনা করেন এবং যুদ্ধ শুরুর জন্য তাঁকেই দোষারোপ করেন। 

ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে ৩০০ থেকে ৩৫০ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে। আমরা সেই অর্থ ফেরত চাই। আমরা বড় সমস্যায় থাকা দেশকে সাহায্য করেছি। কিন্তু মার্কিন করদাতারা এখন তাদের অর্থ ফেরত পেতে চান। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় নেতৃত্ব দেওয়া ইউক্রেনের উপপ্রধানমন্ত্রী ওলহা স্টেফানিশায়না ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, ‘চুক্তি পুরো ছবির একটি অংশ মাত্র।’ 

অনেকেই মনে করছেন, ইউক্রেনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির নতুন মোড়ের সূচনা হতে যাচ্ছে। আগামী চার বছরে ট্রাম্প ও তাঁর বৈদেশিক নীতিবিষয়ক দল ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির প্রয়োগ করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। ইউক্রেনের গণমাধ্যম ইউক্রেরাইনস্কা প্রাভডা বলছে, খনিজ চুক্তিতে সই করবেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। এর মাধ্যমে দুই দেশ একটি পুনর্গঠন বিনিয়োগ তহবিলও গঠন করবে। 

ইউক্রেনে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার মূল্যের লিথিয়াম, টাইটানিয়াম, কয়লা, গ্যাস ও তেলের মজুত আছে, যা বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামালের ৫ শতাংশ বলে মনে করা হয়। সেখানে ১৯ মিলিয়ন টন গ্রাফাইটের প্রামাণিত মজুত আছে। এ পদার্থটি ইলেকট্রিক যানবাহনের ব্যাটারি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ইউরোপে যত লিথিয়াম মজুত আছে, তার এক-তৃতীয়াংশই ইউক্রেনে। এটি এখন যে ব্যাটারি তৈরি হয়, তার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউক র ন ইউক র ন র প র একট করব ন

এছাড়াও পড়ুন:

গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা

কারিগরি ক্ষতির (সিস্টেম লস) নামে গ্যাস অপচয় বাড়ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্যাস বিতরণ লাইনে অপচয় হয়েছে গড়ে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ গ্যাস। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) মার্চ পর্যন্ত অপচয় হয়েছে ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এতে আর্থিক ক্ষতি ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এর বাইরে সঞ্চালন লাইনে অপচয় হয়েছে ২ শতাংশ।

‘দেশের জ্বালানিনিরাপত্তা: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়; গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এতে বলা হয়, ২ শতাংশ অপচয় গ্রহণযোগ্য, তাই ওইটুকু সমন্বয় করেই আর্থিক ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে। গ্যাসের অপচয় রোধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে ছয়টি গ্যাস বিতরণ সংস্থা।

পেট্রোবাংলা বলছে, গ্যাস অপচয়ের জন্য দায়ী হচ্ছে পুরোনো, জরাজীর্ণ পাইপলাইন; গ্যাস সরবরাহ লাইনের গ্যাসস্টেশন রাইজারে লিকেজ (ছিদ্র); তৃতীয় পক্ষের উন্নয়নকাজে পাইপলাইন ছিদ্র হওয়া এবং আবাসিক খাতে প্রচুর অবৈধ সংযোগ। তবে এসব অপচয় রোধে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় পেট্রোবাংলা। এর মধ্যে রয়েছে গ্যাস সরবরাহব্যবস্থায় মিটারিং/ মনিটরিং ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা; লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কারিগরি ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখা; অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও উচ্ছেদ কার্যক্রম জোরদার করা এবং আবাসিক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা।

দেশের গ্যাস খাতের চিত্র তুলে ধরে সেমিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন। তিনি বলেন, দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে কমতে ১৫ বছর আগের জায়গায় চলে গেছে। গ্যাস অনুসন্ধান জোরদারের কোনো বিকল্প নেই। গ্যাস চুরি ও অপচয় কমাতে হবে। সঞ্চালন ও বিতরণ মিলে কারিগরি ক্ষতি প্রায় ১০ শতাংশ, যা অনেক বেশি। সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতি কোনোভাবেই ২ শতাংশ হওয়ার কথা নয়। এটা ভালো করে দেখা উচিত।

শিল্পে নতুন সংযোগে গ‍্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান বলেন, সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতির বিষয়টি গভীরভাবে দেখা হচ্ছে। অবৈধ সংযোগ বন্ধে পেট্রোবাংলা তৎপর আছে, খোঁজ পেলেই বিচ্ছিন্ন করা হবে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিল্পে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে গ‍্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যেহেতু তারা বেশি দাম দেবে। তাই অগ্রাধিকার বিবেচনা করে তিনটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রথম ধাপের তালিকায় থাকছে, যেসব কারখানায় এখনই সংযোগ দেওয়া যাবে। এগুলো পরিদর্শন প্রায় শেষের দিকে, আগামী সপ্তাহে শেষ হয়ে যাবে।

সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহ করতে নতুন টার্মিনাল নির্মাণে অগ্রাধিকার পাচ্ছে স্থলভাগের টার্মিনাল। মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলাকায় এটি করা হবে। এটি হলে কম দামের সময় বাড়তি এলএনজি কিনে মজুত করা যাবে। তবে এগুলো রাতারাতি করা যায় না, পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে।

জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে

তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি) নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) মো. শোয়েব। তিনি বলেন, স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য তৈরি পিএসসির খসড়া জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ৫০টি কূপ সংস্কার, উন্নয়ন ও খননের প্রকল্পে ইতিমধ্যে ১৮টির কাজ শেষ হয়েছে। জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে। ৪টি কূপের কাজ চলমান। এ ছাড়া পেট্রোবাংলার বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রম তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. আবদুল মান্নান পাটওয়ারী।

সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে

পেট্রোবাংলার আর্থিক দিক তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে পেট্রোবাংলার রাজস্ব আয় ৫৪ হাজার ১১৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে অর্ধেক বকেয়া। গত মে পর্যন্ত গ্যাস বিল বকেয়া ২৭ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। এটি ধীরে ধীরে কমে আসছে। ১৩–১৫ হাজার কোটিতে বকেয়া নেমে এলে সন্তোষজনক। সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে ১৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এরপর সার কারখানায় বকেয়া আছে ৯৬৪ কোটি টাকা। তবে বিদেশি কোনো কোম্পানির কাছে বিল বকেয়া নেই পেট্রোবাংলার। সব বিল শোধ করা হয়ে গেছে।

গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা

পেট্রোবাংলা বলছে, এলএনজি আমদানি শুরুর পর থেকে লোকসান শুরু হয় সংস্থাটির। প্রতিবছর সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নিচ্ছে পেট্রোবাংলা। ২০১৮-১৯ সালে এলএনজি আমদানি শুরু হয়, ওই বছর ভর্তুকি ছিল ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এরপর এলএনজি আমদানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভর্তুকিও বাড়তে থাকে। গত অর্থবছরে তারা ভর্তুকি নিয়েছে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত পেট্রোবাংলা মোট ভর্তুকি নিয়েছে ৩৬ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। পেট্রোবাংলার হিসাবে গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিট গ্যাস সরবরাহে পেট্রোবাংলার খরচ হয়েছে ২৭ টাকা ৫৩ পয়সা। তারা বিক্রি করেছে ২২ টাকা ৯৩ পয়সায়। এর মানে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা ৬০ পয়সা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইরানের ভুলে আজারবাইজান যেভাবে ইসরায়েলের দিকে ঝুঁকে পড়ল
  • গাজায় দুর্ভিক্ষের অংক
  • গ্যাস সংকট
  • ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতে যেসব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে
  • ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ
  • কাফকো সার কারখানায় গ্যাস বিক্রির চুক্তি সই
  • গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা
  • পাবনায় আগাম পাটের বাজার চড়া, বেশি দাম পেয়ে কৃষক খুশি
  • নবায়নযোগ্য জ্বালানির যুগ কড়া নাড়ছে দরজায়
  • ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধে জয় হচ্ছে বোয়িংয়ের