এখনো যেন আগের মতো খণ্ডিত, আংশিক দৃষ্টিভঙ্গিতে চলছে শিক্ষাব্যবস্থা। শিক্ষা নিয়ে একটি কমিশন গঠনের প্রত্যাশা থাকলেও তা হয়নি। তাই সমগ্র শিক্ষা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা দরকার। পুরো রূপকল্প সামনে রেখে কৌশলগুলো ঠিক করতে হবে। আর শিক্ষার উন্নয়নের জন্য আসন্ন অর্থবছরের মোট বাজেটের অন্তত ১৫ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ করতে হবে।

আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে শিক্ষা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা গণসাক্ষরতা অভিযান আয়োজিত ‘শিক্ষার হালচাল ও আগামীর ভাবনা’ শীর্ষক এক পরামর্শক সভায় বিশিষ্টজনেরা এ কথা বলেন।

পরামর্শক সভায় সভাপতিত্ব করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান। দেশে নানা ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বৃদ্ধির কথা বলতে গিয়ে তিনি তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের শিক্ষকতা শুরুর কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ১৯৫৭ সালে ২২ বছর বয়সে যখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন, তখন দেশে একটিমাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। তাঁর ছাত্র ছিলেন বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.

ফখরুদ্দীন আহমদ। ওই সময় বেশির ভাগ ছাত্র গ্রামাঞ্চল ও জেলা পর্যায়ের বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে আসতেন। এখন দেশে ৫৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ের কথাও তুলে ধরেন তিনি।

বৈষম্য কমানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, এ জন্য টাকা লাগবে। তবে রাজনৈতিক ও সুশাসনের অঙ্গীকারও লাগবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। সামাজিক বৈষম্যের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নত করতে পারলে সেটি সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণে কিছুটা সাহায্য করতে পারে। তিনি সেটাই করছেন।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য ‘মিড ডে মিল (স্কুলে দুপুরের খাবার)’ চালু করা হচ্ছে বলে জানান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা। তিনি আশা করেন, আগামী জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এই প্রকল্প অনুমোদন হবে। প্রথম পর্যায়ে ১৫০টি উপজেলা বাছাই করে তা চালু করা হবে।

সভা সঞ্চালনা করেন আয়োজক সংস্থা গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী। শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, সরকারি চাকরিজীবীদের মহার্ঘ ভাতা বাড়ানোর প্রসঙ্গ আসতে সময় লাগে না। মূল্যস্ফীতি সমন্বয়ের জন্য মহার্ঘ ভাতার কথা বলা হচ্ছে। তাহলে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি কেন সমন্বয় হবে না?

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গের কথা উল্লেখ করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদ বলেন, শিক্ষা শেষ করে চাকরি, জীবন-জীবিকার কী উপায় হবে, সেই বৈষম্যটি ছিল প্রধান একটি বিষয়। তা থেকে আন্দোলন শুরু হলো। পরে মানুষের নানা রকম পুঞ্জীভূত ক্ষোভ-অভিযোগ মিলে বিগত স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটল। কিন্তু পরিহাসের বিষয়, শিক্ষার বৈষম্য থেকে যে আন্দোলন শুরু হলো, তারপর শিক্ষা নিয়ে তেমন কিছু দেখা গেল না, একটি কমিশন করার প্রত্যাশা ছিল, সেটি হয়নি। আগের মতো খণ্ডিত, আংশিক দৃষ্টিভঙ্গিতে যেন শিক্ষা চলছে।

বেসরকারি সংস্থা গণসাক্ষরতা অভিযান আয়োজিত ‘শিক্ষার হালচাল ও আগামীর ভাবনা’ শীর্ষক পরামর্শক সভায় আলোচকেরা। আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট ব সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ইভ্যালির রাসেল ও তাঁর স্ত্রীর আরও এক মামলায় ৩ বছর কারাদণ্ড

প্রতারণার আরও একটি মামলায় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেল ও তাঁর স্ত্রী প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে তিন বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। তাঁদের পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ডও দেওয়া হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মনিরুল ইসলাম এ রায় দেন। রায় ঘোষণার পর রাসেল ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। এ নিয়ে প্রতারণার পৃথক পাঁচটি মামলায় রাসেল ও শামীমা নাসরিনের ১২ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হলো।

এর আগে সর্বশেষ গত ১৪ এপ্রিল প্রতারণার একটি মামলায় রাসেল ও তাঁর স্ত্রীর তিন বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত।

আজ যে মামলায় রাসেল দম্পতির সাজা হয়েছে, সেই মামলায় প্রতারণার মাধ্যমে ২৩ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০২৩ সালের ৭ ডিসেম্বর তাঁদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন আবুল কালাম আজাদ নামের একজন গ্রাহক।

৬ এপ্রিল ঢাকার সিএমএম আদালত প্রতারণার আরেকটি মামলায় এই দম্পতিকে তিন বছর কারাদণ্ড দেন। এ ছাড়া গত ২৯ জানুয়ারি প্রতারণার অভিযোগে করা আরেকটি মামলায় তাঁদের দুই বছর কারাদণ্ড দেন আদালত।

গত বছরের ২ জুন চেক প্রত্যাখ্যানের মামলায় রাসেল ও তাঁর স্ত্রী শামীমা নাসরিনকে এক বছর করে কারাদণ্ড দেন চট্টগ্রামের আদালত।

২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে রাসেল ও শামীমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে দুজন জামিনে মুক্ত হন।

আরও পড়ুনইভ্যালির রাসেল ও তাঁর স্ত্রীর আরও ৩ বছর কারাদণ্ড১৩ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ