সাম্প্রতিক সংঘাতের জের ধরিয়া উদ্ভূত পরিস্থিতিতে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-কুয়েট যেইভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হইয়াছে, উহা দুঃখজনক। কুয়েটের অঘটনের পর এই সম্পাদকীয় স্তম্ভেই আমরা উদ্বেগ জানাইয়াছিলাম, সংঘর্ষের পর অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষাঙ্গন বন্ধের পুরাতন সংস্কৃতি হইতে বাহির হইতে হইবে। তৎসত্ত্বেও কুয়েট প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনিতে ব্যর্থ।
ফলস্বরূপ মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের জরুরি সভা হইতে সকল আবাসিক হলসহ অনির্দিষ্টকালের জন্য কুয়েট বন্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত লওয়া হইল। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করিলেও অবশেষে নিরাপত্তার কারণে বুধবারের মধ্যে তাহারা প্রায় সকল আবাসিক হল শূন্য করিয়া দিয়াছেন। আমরা মনে করি, কুয়েট প্রশাসনের এই ব্যর্থতা মন্দ নজির হইয়া থাকিবে।
চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের অঙ্গীকার– সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গন। অর্থাৎ পুরাতন ধারার সন্ত্রাসবাদের পরিবর্তে শিক্ষাঙ্গনে সুস্থ ধারার ছাত্র রাজনীতি চলিবে এবং শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত হইবে। আমরা দেখিয়াছি, ছাত্রলীগ গত দেড় দশকে যেইভাবে শিক্ষাঙ্গনকে কলুষিত করিয়াছিল, সেই কারণেই সন্ত্রাসী ছাত্র সংগঠন হিসেবে তাহারা নিষিদ্ধ হয়। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগসহ তাহাদের বিরুদ্ধে ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে অধিকাংশ ছাত্র সংগঠন ঐক্যবদ্ধ হইয়া আন্দোলন করিয়াছিল। বলা চলে, ছাত্র সংগঠনগুলির সদিচ্ছার কারণেই অধিকাংশ শিক্ষাঙ্গনে সেই সংঘাতের পরিবেশ এখন নাই। এমনকি বুধবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কদের উদ্যোগে যেই নূতন ছাত্র সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটিয়াছে; ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’ নূতন বন্দোবস্তের ছাত্র রাজনীতির কথা বলিয়াছে। তবে তাহাদের মধ্যে যে ধরনের হস্তলড়াইয়ের ঘটনা ঘটিয়াছে, উহাও কাম্য নহে। একইভাবে কুয়েটের ঘটনায় যেই অস্ত্রের ব্যবহার দেখা গিয়াছে, উহা নূতন বন্দোবস্ত ও জনপ্রত্যাশার সম্পূর্ণ বিপরীত।
বিস্ময়কর হইল, সংঘর্ষের এক সপ্তাহ অতিক্রান্ত হইলেও শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয় নাই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন তাহাদের গ্রেপ্তার করিতে ব্যর্থ হইয়াছে? অথচ ইতোমধ্যে হস্তে অস্ত্র থাকা আক্রমণকারীদের আলোকচিত্র সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পাইয়াছে।
বলা বাহুল্য, শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ না হইবার কারণেই তাহারা আন্দোলন চালাইয়া গিয়াছে। আমরা মনে করি, এই ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়িত্ব উপেক্ষা করিতে পারে না। রোববার কুয়েট শিক্ষার্থীরা খুলনা হইতে আসিয়া প্রধান উপদেষ্টার নিকট হামলায় সংশ্লিষ্টদের বিচার, উপাচার্যের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবির পক্ষে স্মারকলিপি দেওয়ার পরও দাবিসমূহ কেন পূরণ হয় নাই? এই ক্ষেত্রে সরকারের শিক্ষা প্রশাসনই বা কীরূপে নির্লিপ্ত ছিল?
ছাত্র সংগঠনগুলিও কুয়েটে নৈরাজ্যের দায় পরিহার করিতে পারে না। বস্তুত ছাত্রদল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রশিবিরের মধ্যকার দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করিয়াই তথায় এহেন পরিস্থিতির উদ্ভব হইয়াছে। আমরা চাহিব, ছাত্র সংগঠনগুলি সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করিবে। মনে রাখিতে হইবে, চব্বিশের আন্দোলনে তাহাদের মধ্যে যেই ঐক্য দেখা গিয়াছিল, সেই ঐক্যে ফাটল ধরিবার কারণেই শিক্ষাঙ্গনে সংঘাতের সূচনা হইয়াছে। সেই কারণে এখন অনির্দিষ্টকালের জন্য আবাসিক হলসহ সমগ্র ক্যাম্পাস বন্ধ করিবার পর্যায়ে গড়াইয়াছে, যাহাতে শেষ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হইতেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ১৮ ফেব্রুয়ারির পর হইতেই কুয়েটে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ এবং মঙ্গলবারের সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের পর উহা কবে খুলিবে, স্বাভাবিকভাবেই তাহা অনিশ্চিত।
কুয়েট বন্ধের সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মানিয়া লওয়া যায় না। অচিরেই শিক্ষা প্রশাসনকে উদ্যোগী হইয়া কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সহিত বসিয়া দ্রুততম সময়ের মধ্যে কুয়েট খুলিয়া দিয়া শিক্ষার পরিবেশ ফিরাইয়া আনা জরুরি।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ে বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ বিএসইসির
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। শুভেচ্ছা বিনিময়কালে পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি ও বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
রবিবার (১৫ জুন) দুপুর ১২টায় ঢাকার আগারগাঁওয়ে সিকিউরিটিজ কমিশন ভবনে এ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এ জন্য দেশের পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। উভয় পক্ষের এ বৈঠকে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু সুপারিশ অন্তুর্ভুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে। এ বৈঠকে বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, “বিএসইসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে আজকে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে আমরা পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা আনার লক্ষ্যে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরব। বিশেষ করে প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে কিছু সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে আমরা বিএসইসি চেয়ারম্যানের কাছে দাবি জানাবো। আলোচনার মাধ্যমেই যে কোনো সমস্যার সমাধান হতে পারে।”
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত পরিষদের সভাপতি আ ন ম আতাউল্লাহ নাঈম রাইজিংবিডিকে বলেন, “ঈদের আগেই এ বৈঠকের বিষয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছে বিএসইসি। আমরা বিএসইসির সঙ্গে আলোচনা করব। আলোচনার মাধ্যমে পুঁজিবাজারের সমস্যাগুলোর সমাধান করা হবে।”
তবে বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমআইএ) সভাপতি এস এম ইকবাল হোসেন রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “আমরা বিএসইসির এ আমন্ত্রণকে প্রত্যাখ্যান করেছি। একই সঙ্গে আমরা বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করছি।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম রাইজিংবিডিকে বলেন, “বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় করা হবে। এ জন্য আজকে বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।”
ঢাকা/এনটি/ইভা