Samakal:
2025-11-03@05:35:56 GMT

প্রশাসনের মন্দ নজির

Published: 27th, February 2025 GMT

প্রশাসনের মন্দ নজির

সাম্প্রতিক সংঘাতের জের ধরিয়া উদ্ভূত পরিস্থিতিতে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-কুয়েট যেইভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হইয়াছে, উহা দুঃখজনক। কুয়েটের অঘটনের পর এই সম্পাদকীয় স্তম্ভেই আমরা উদ্বেগ জানাইয়াছিলাম, সংঘর্ষের পর অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষাঙ্গন বন্ধের পুরাতন সংস্কৃতি হইতে বাহির হইতে হইবে। তৎসত্ত্বেও কুয়েট প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনিতে ব্যর্থ।

ফলস্বরূপ মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের জরুরি সভা হইতে সকল আবাসিক হলসহ অনির্দিষ্টকালের জন্য কুয়েট বন্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত লওয়া হইল। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করিলেও অবশেষে নিরাপত্তার কারণে বুধবারের মধ্যে তাহারা প্রায় সকল আবাসিক হল শূন্য করিয়া দিয়াছেন। আমরা মনে করি, কুয়েট প্রশাসনের এই ব্যর্থতা মন্দ নজির হইয়া থাকিবে।

চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের অঙ্গীকার– সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গন। অর্থাৎ পুরাতন ধারার সন্ত্রাসবাদের পরিবর্তে শিক্ষাঙ্গনে সুস্থ ধারার ছাত্র রাজনীতি চলিবে এবং শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত হইবে। আমরা দেখিয়াছি, ছাত্রলীগ গত দেড় দশকে যেইভাবে শিক্ষাঙ্গনকে কলুষিত করিয়াছিল, সেই কারণেই সন্ত্রাসী ছাত্র সংগঠন হিসেবে তাহারা নিষিদ্ধ হয়। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগসহ তাহাদের বিরুদ্ধে ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে অধিকাংশ ছাত্র সংগঠন ঐক্যবদ্ধ হইয়া আন্দোলন করিয়াছিল। বলা চলে, ছাত্র সংগঠনগুলির সদিচ্ছার কারণেই অধিকাংশ শিক্ষাঙ্গনে সেই সংঘাতের পরিবেশ এখন নাই। এমনকি বুধবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কদের উদ্যোগে যেই নূতন ছাত্র সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটিয়াছে; ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’ নূতন বন্দোবস্তের ছাত্র রাজনীতির কথা বলিয়াছে। তবে তাহাদের মধ্যে যে ধরনের হস্তলড়াইয়ের ঘটনা ঘটিয়াছে, উহাও কাম্য নহে। একইভাবে কুয়েটের ঘটনায় যেই অস্ত্রের ব্যবহার দেখা গিয়াছে, উহা নূতন বন্দোবস্ত ও জনপ্রত্যাশার সম্পূর্ণ বিপরীত। 

বিস্ময়কর হইল, সংঘর্ষের এক সপ্তাহ অতিক্রান্ত হইলেও শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয় নাই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন তাহাদের গ্রেপ্তার করিতে ব্যর্থ হইয়াছে? অথচ ইতোমধ্যে হস্তে অস্ত্র থাকা আক্রমণকারীদের আলোকচিত্র সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পাইয়াছে।

বলা বাহুল্য, শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ না হইবার কারণেই তাহারা আন্দোলন চালাইয়া গিয়াছে। আমরা মনে করি, এই ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়িত্ব উপেক্ষা করিতে পারে না। রোববার কুয়েট শিক্ষার্থীরা খুলনা হইতে আসিয়া প্রধান উপদেষ্টার নিকট হামলায় সংশ্লিষ্টদের বিচার, উপাচার্যের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবির পক্ষে স্মারকলিপি দেওয়ার পরও দাবিসমূহ কেন পূরণ হয় নাই? এই ক্ষেত্রে সরকারের শিক্ষা প্রশাসনই বা কীরূপে নির্লিপ্ত ছিল?

ছাত্র সংগঠনগুলিও কুয়েটে নৈরাজ্যের দায় পরিহার করিতে পারে না। বস্তুত ছাত্রদল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রশিবিরের মধ্যকার দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করিয়াই তথায় এহেন পরিস্থিতির উদ্ভব হইয়াছে। আমরা চাহিব, ছাত্র সংগঠনগুলি সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করিবে। মনে রাখিতে হইবে, চব্বিশের আন্দোলনে তাহাদের মধ্যে যেই ঐক্য দেখা গিয়াছিল, সেই ঐক্যে ফাটল ধরিবার কারণেই শিক্ষাঙ্গনে সংঘাতের সূচনা হইয়াছে। সেই কারণে এখন অনির্দিষ্টকালের জন্য আবাসিক হলসহ সমগ্র ক্যাম্পাস বন্ধ করিবার পর্যায়ে গড়াইয়াছে, যাহাতে শেষ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হইতেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ১৮ ফেব্রুয়ারির পর হইতেই কুয়েটে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ এবং মঙ্গলবারের সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের পর উহা কবে খুলিবে, স্বাভাবিকভাবেই তাহা অনিশ্চিত।

কুয়েট বন্ধের সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মানিয়া লওয়া যায় না। অচিরেই শিক্ষা প্রশাসনকে উদ্যোগী হইয়া কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সহিত বসিয়া দ্রুততম সময়ের মধ্যে কুয়েট খুলিয়া দিয়া শিক্ষার পরিবেশ ফিরাইয়া আনা জরুরি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র পর ব হইয় ছ

এছাড়াও পড়ুন:

জকসু নির্বাচন নিয়ে একে অপরকে দোষারোপ ছাত্র সংগঠনগুলোর

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচন নিয়ে একে অপরকে নানাভাবে দোষারোপ করছে ছাত্র সংগঠনগুলো। সরাসরি নাম উল্লেখ না করে কেউ কাউকে কিছু না বললেও ছাড় দিতে নারাজ তারা।

গত ৩০ অক্টোবর জবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ রফিক ভবনের নিচে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের নেতারা জকসু নির্বাচনের বিধিমালা প্রণয়নে প্রশাসন একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে তাড়াহুড়ো করেছে বলে অভিযোগ করে।

আরো পড়ুন:

জবি প্রশাসনের কাছে ২০ দাবি জানাল ইউটিএল

পিএইচডি গবেষকদের জন্য বৃত্তি চালু করা হবে: জবি উপাচার্য

রবিবার (২ নভেম্বর) ভাষা শহীদ রফিক ভবনের নিচে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জকসু নির্বাচন পেছাতে নির্বাচন কমিশন ‘বিশেষ উদ্দেশ্যে’ কাজ করছে বলে অভিযোগ করেছেন জবি শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. রিয়াজুল ইসলাম।

পরে সন্ধ্যায় একই স্থানে ‘জকসু নির্বাচনের আচরণবিধি ও স্পোর্টস কার্নিভাল’ বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শাখা জাতীয় ছাত্রশক্তি অভিযোগ করে, জকসু নির্বাচন নিয়ে একটি সংগঠন তড়িঘড়ি করে নির্বাচন আয়োজন করতে চাচ্ছে এবং আরেকটি সংগঠন নির্বাচন পিছিয়ে জাতীয় নির্বাচনের সময়ের কাছাকাছি নিয়ে যেতে চাচ্ছে।

রবিবার দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, “নির্বাচন কমিশন একটি বিশেষ কারো ইশারায়, বাইরের প্রেসক্রিপশনে নির্বাচনের খসড়া প্রস্তুত করেছে। আমাদের দাবি, ২৭ নভেম্বরই শিক্ষার্থীদের নিয়ে জকসু নির্বাচন বাস্তবায়ন করা। নির্বাচন কমিশনের সবাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অংশ। তারা ২৭ নভেম্বর নির্বাচন হওয়ার বিষয়টি আগেই জানতো। কিন্তু তবু ১০ ডিসেম্বরকে সামনে রেখে খসড়া রোডম্যাপ তৈরি করেছে। এতে একটি গ্রুপকে সুবিধা দিয়ে অন্যদের ভোটাধিকার হরণের চেষ্টা চলছে।”

তিনি বলেন, “প্রশাসন ও কমিশন আগে জানিয়েছিল, আইন প্রণয়নের পরই প্রস্তুতি কমিটি গঠনের কাজ শুরু হবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, তারা নতুনভাবে সব কাজ করতে চাচ্ছে—যেন নির্বাচন বিলম্বিত হয়। আলোচনার টেবিলে নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছে।”

তিনি আরো বলেন, “একটা পক্ষের সব কথা শোনা হচ্ছে। কিন্তু অন্যদের মতামত গুরুত্ব পাচ্ছে না। এতে স্পষ্ট, নির্বাচন পেছানোর মানসিকতা নিয়েই তারা আলোচনায় বসছে। ১৩ ডিসেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন শিক্ষা বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা, ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় বিজয় দিবসের কর্মসূচির কারণে সে সময় নির্বাচন গ্রহণ করা সম্ভব নয়।”

“এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন ১৬ ডিসেম্বরের পর ভোট আয়োজন করতে চাইছে। কিন্তু তখন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে বা ছুটি শুরু হলে জকসু নির্বাচন করা অসম্ভব হয়ে পড়বে,” যুক্ত করেন শিবির সভাপতি।

আপ বাংলাদেশের সঙ্গে প্যানল ঘোষণার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা ইনক্লুসিভ প্যানেল করতে চাচ্ছি। আমাদের প্যানেলে কারা থাকবেন সেটা এখনো নির্দিষ্ট হয়নি। শিগগিরই এ বিষয়ে জানতে পারবেন।”

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জবি ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল আলিম আরিফ, অফিস সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল ও বাইতুল মাল সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচন নিয়ে একটি সংগঠন তড়িঘড়ি করে নির্বাচন আয়োজন করতে চাইছে, আরেকটি সংগঠন নির্বাচন পিছিয়ে জাতীয় নির্বাচনের সময়ের কাছাকাছি নিয়ে যেতে চাইছে বলে অভিযোগ করেছে শাখা জাতীয় ছাত্রশক্তি।

অপরদিকে, ‘জকসু নির্বাচনের আচরণবিধি ও স্পোর্টস কার্নিভাল’ বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শাখা জাতীয় ছাত্রশক্তি সদস্য সচিব শাহিন মিয়া বলেন, “একটি সংগঠন নির্বাচনকে পেছানোর চেষ্টা করছে, আরেকটি সংগঠন তড়িঘড়ি করে দিতে চাইছে। আমরা চাই এমন একটি নির্বাচন, যেখানে শিক্ষার্থীরা অবাধভাবে অংশ নিতে পারবে এবং সবাই সমান সুযোগ পাবে। নির্বাচন কমিশন যেন প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে একটি গ্রহণযোগ্য সময়সূচি ঘোষণা করে এবং কোনো পক্ষের প্রভাবে না পড়ে।”

তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের যে সাহসী ও নিরপেক্ষ ভূমিকা দেখানোর কথা, আজকের মতবিনিময় সভায় আমরা তা দেখতে পাইনি।”

জবি শাখার আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদ বলেন, “আমরা সব সময় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে। আমরা চাই না যে ক্লাস-পরীক্ষা বাদ দিয়ে হঠাৎ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। অন্যদিকে, ছাত্রশিবির দ্রুত নির্বাচন চায়, আর ছাত্রদল সেটি পেছাতে চায়—যা নির্বাচনী পরিবেশকে জটিল করে তুলছে। জাতীয় নির্বাচন ও জকসু নির্বাচন একই সময়ে পড়লে তা প্রশাসনিকভাবেও বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।”

এর আগে, গত ৩০ অক্টোবর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেছিলেন, “আমাদের প্রত্যাশা ছিল প্রশাসন একটি আধুনিক, যুগোপযোগী ও বাস্তবসম্মত জকসু নীতিমালা প্রণয়ন করবেন। কিন্তু আমরা দেখেছি, প্রশাসন একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে তাড়াহুড়ো করেছে, যা হতাশাজনক।”

তিনি বলেছিলেন, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবার জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আমরা চাই এটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হোক—যাতে জকসু শিক্ষার্থীদের প্রকৃত প্রতিনিধি নির্বাচনের মুক্ত মঞ্চে পরিণত হয়, কোনো দলীয় প্রভাবের শিকার না হয়।”

ঢাকা/লিমন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জকসু নির্বাচন নিয়ে একে অপরকে দোষারোপ ছাত্র সংগঠনগুলোর