ঈদগাহের গেট ভেঙে যাওয়া নিয়ে সংঘর্ষে নিহত ১
Published: 27th, February 2025 GMT
মেহেরপুর গাংনী উপজেলায় ট্রাক্টরের ধাক্কায় ঈদগাহের গেট ভেঙে যাওয়াকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে হৃদয় হোসেন নামে এক তরুণ নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন। বুধবার দুপুরে রামনগর গ্রামের রামনগর বাজার-সংলগ্ন তিন রাস্তার মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত হৃদয় হোসেন (২২) উপজেলার চরগোয়াল গ্রামের রিফুজিপাড়ার সাহাদত হোসেনের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রামনগর গ্রামের বাসিন্দা মিরাজুল ইসলাম সম্প্রতি একটি নতুন ট্রাক্টর কিনেছেন। বুধবার সকালে ট্রাক্টরটি তাঁর ছেলে সামিউল্লাহ চালিয়ে চরগোয়াল গ্রামে নিয়ে যায়। এ সময় ট্রাক্টরের ধাক্কায় চরগোয়াল গ্রামের ঈদগাহের গেট ভেঙে যায়। এ ঘটনায় চরগোয়াল গ্রামের লোকজন ওই ট্রাক্টরের চাবি ছিনিয়ে নেয়। বিষয়টি নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ওইদিন দুপুরে রামনগর গ্রামে সালিশ বসে। সালিশ চলাকালে দুই পক্ষের বাগ্বিতণ্ডার এক পর্যায়ে লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে হৃদয় হোসেনের মাথায় লাঠির আঘাত লাগলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে হৃদয়ের মৃত্যুর খবর চরগোয়াল গ্রামে পৌঁছালে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী রামনগরে গিয়ে একটি মোটরসাইকেল ওয়ার্কশপ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এতে কয়েকটি মোটরসাইকেলসহ ওয়ার্কশপটি ভস্মীভূত হয়। খবর পেয়ে মেহেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল করিম ও গাংনী থানার ওসি বানী ইসরাইলের নেতৃত্বে পুলিশের একাধিক টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
চরগোয়াল গ্রামের বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম মন্টু ও স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ঘটনার শুরুতে স্থানীয় ফাঁড়ির এক দারোগাকে ফোন করি। তিনি ঘটনাস্থলে আসার কথা বলেও না আসায় এ ঘটনা ঘটেছে। তিনি এলে হয়তো বড় ধরনের অঘটন ঘটত না।
ঘটনা নিশ্চিত করে গাংনী থানার ওসি বানী ইসরাইল বলেন, সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও র্যাব পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। জড়িতদের আটকের চেষ্টা চলছে। নিহত হৃদয়ের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র মনগর স ঘর ষ এ ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
ভাঙা বেড়িবাঁধ, আমন নিয়ে দুশ্চিন্তায় মাতারবাড়ীর চাষিরা
চলতি মৌসুমে আমন চাষ করার জন্য এক ব্যক্তির এক একর জমি ১৮ হাজার টাকায় ইজারা নেন কক্সবাজারের মহেশখালীর সাগর উপকূলীয় মাতারবাড়ী ইউনিয়নের নয়াপাড়ার কৃষক জাকের হোছাইন। এই মাসের শেষের দিকে আমন চাষ শুরু করার কথা তাঁর। তবে সাগরে বিলীন হওয়া বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে বর্ষায় ফসলি জমিতে পানি ঢুকে পড়ার শঙ্কায় আমনের চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কেবল জাকের হোছাইন নন, তাঁর মতো একইভাবে আমনের চাষাবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন মাতারবাড়ী ইউনিয়নের অন্তত ২০০ চাষি।
কুহেলিয়া নদীর পশ্চিমে আর বঙ্গোপসাগরের পূর্বে জেগে ওঠা প্রায় ১২ বর্গকিলোমিটার চর নিয়ে মহেশখালীর মাতারবাড়ী ইউনিয়ন। এর পশ্চিম পাশে রয়েছে আট কিলোমিটার বেড়িবাঁধ, যার মধ্যে প্রায় এক কিলোমিটার ভাঙা অবস্থায় পড়ে রয়েছে এক দশক ধরে। ওই অংশ দিয়ে আশপাশের লোকালয় ও ফসলি জমিতে পানি ঢুকে পড়া ঠেকাতে সর্বশেষ চার বছর আগে বসানো হয়েছিল জিও টিউব। তবে গত ২৯ ও ৩০ মে নিম্নচাপের প্রভাবে সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে জিও টিউব বিলীন হয়ে গেছে। এ অবস্থায় বেড়িবাঁধের ওই ভাঙা অংশ দিয়ে লোকালয় ও ফসলি জমিতে পানি ঢুকে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সম্প্রতি তিন দফায় লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে ভেঙে গেছে অন্তত ১০টি কাঁচা বসতঘর। স্থানীয় মানুষের চোখে ঘুম নেই। চাষিরাও আমন ধানের চাষাবাদ আদৌ করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।সরওয়ার কামাল, সদস্য, মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদবেড়িবাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত অংশটি ইউনিয়নের ষাইটপাড়া এলাকায়। গত শনিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙা বেড়িবাঁধের পাশে বসানো জিও টিউব সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। সাগরের পানি ঢেউয়ের সঙ্গে বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ উপচে পাশের ফসলি জমিতে ঢুকে পড়ছে। সেখানে স্থানীয় মাঝের ডেইল এলাকার বাসিন্দা আবদুল কাদেরের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, বেড়িবাঁধের জিও টিউব বিলীন হওয়ার দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা খুবই উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। আমনচাষিরা চাষাবাদ করতে পারবেন কি না তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মানুষ তাঁদের ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন। জরুরি ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার করা উচিত।
মাতারবাড়ী ইউনিয়নে দায়িত্বরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নুরুল হোছাইন মোহাম্মদ তৈয়ব প্রথম আলোকে বলেন, ভাঙা বেড়িবাঁধের কারণে ষাইটপাড়াসহ আশপাশের চারটি গ্রামে জলাবদ্ধতার শঙ্কা রয়েছে। এ কারণে এসব এলাকার অন্তত ৮০ একর জমিতে আমন চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য সরওয়ার কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সম্প্রতি তিন দফায় লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে ভেঙে গেছে অন্তত ১০টি কাঁচা বসতঘর। স্থানীয় মানুষের চোখে ঘুম নেই। চাষিরাও আমন ধানের চাষাবাদ আদৌ করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।’ ইউপি সদস্য সরওয়ার কামাল আরও বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম এলেই এলাকার মানুষের উদ্বেগ বাড়ে। অথচ ভাঙা বেড়িবাঁধ সংস্কারের কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড।
মহেশখালীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হেদায়েত উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, জরুরি ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলা হয়েছে। জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি নিম্নচাপের প্রভাবে মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় অন্তত ১ হাজার ৬০০ মিটারের বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আপাতত বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানি টেকানোর জন্য ভাঙা বেড়িবাঁধের ওপর জিও টিউব বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিগগিরই কাজ শুরু হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কক্সবাজারের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. জামাল মুর্শিদ প্রথম আলোকে বলেন, মাতারবাড়ী ও ধলঘাট ইউনিয়নে স্থায়ী বাঁধের জন্য প্রায় ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় চারপাশে ১৭ দশমিক ৯ কিলোমিটার সুপার ডাইকের আদলে স্থায়ী বেড়িবাঁধ ও ৭টি স্লুইসগেট নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া খনন করা হবে সাড়ে ১৯ কিলোমিটার কুহেলিয়া নদী। গত এপ্রিলে প্রকল্প প্রস্তাবনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।